আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দের পোস্টমর্টেম -৪১



বাংলায় 'সাহেব' শব্দটি বেশ দাপুটে। দাপট না থাকলে সাহেব শব্দটিকে হয়তো বেমানানও মনে হতে পারে। আবার শব্দটির রয়েছে নানা রূপ। রয়েছে নানামুখী ব্যবহার। বাংলায় সাহেবেরও রয়েছে অকৃপণ ছড়াছড়ি।

অমুক সাহেব, তমুক সাহেব, ভাই সাহেব, তালই সাহেব, বেয়াই সাহেব, লাট সাহেব, বড় সাহেব, ছোট সাহেব, মেজ সাহেব, মাওলানা সাহেবসহ হাজারো কিসিমের সাহেব আমাদের জিবের ডগায় নিত্য লাফায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা পশ্চিমা বিশ্বের সাদা চামড়ার লোককেও সাহেব বলি, আবার অফিসের কাউয়ার মতো কালো কর্তাকেও সাহেব বলি। আবার তাস খেলায়ও রয়েছে সাহেব। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় এই সাহেবের কথা শুনুন : 'সেখানে কেবল তাসের সাহেব, তাসের বিবি টেক্কা এবং গোলামের বাস'। সাহেবের সঙ্গে কি মহানবীর (স.) সাহাবী সম্পর্ক আছে? অবশ্যই আছে।

কারণ সাহেব আর সাহাবী তো একই জিনিস। বাংলা সাহেব শব্দটির মূল আরবি। আরবি সাহব বা সাহিবান থেকে সাহেব শব্দটির সৃষ্টি। আরবি সাহব মানে সহচর, সঙ্গী বা সাথী। আরবিতে এ সাহব থেকেই সাহাবি শব্দটি তৈরি।

সাহেব শব্দটি অবশ্য আরব ভূমি থেকে সরাসরি বাংলায় আসার ভিসা পায়নি। বরং ইরানি পাসপোর্ট নিয়েই ইতিহাসের ডানায় চড়ে বাংলায় ঢুকেছে। আরবি সাহব ইরানের নাগরিকত্ব পাবার পর এটার অর্থ পাল্টে যায়। শব্দটির মাঝে বেশ চাঞ্চল্য আছে। স্বভাবটি বাংলায় ঢোকারও পরও যায়নি।

তাই নানা শ্রেণীর লোকের সঙ্গে সাহেব শব্দটির মাখামাখি রয়েছে। তাই বাংলায় কে আসল সাহেব আর কে নকল সাহেব, তা চেনতাই ভার। তবে বাংলা সাহেবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটা আরবি সাহবের মতো মানুষের সঙ্গী বা সাথী হতে পারেনি। বরং ইরানি কায়দায় বাংলায় সাহেব প্রথমে হয়েছে প্রভু, তার পর হয়েছে সম্ভ্রান্ত মুসলমান বা মুসলমান ভদ্রলোক এবং তারও পরে হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের সাদা চামড়ার লোকজন। বাংলায় এখন ক্ষমতাবান যে কোনো ব্যক্তিই সাহেব এবং সাহেব বাংলা ভাষার এমন একটি শব্দ, বিভিন্ন সময়ে যার অর্থের রূপান্তর ঘটার পরও এখনো কোনো অর্থই সে পরিত্যাগ করেনি।

অভিধানে সাহেব বলতে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, মহাশয়, কর্তা, প্রভু, ইউরোপিয়ন, ইংরেজ ইত্যাদিকে নির্দেশ করে। এক সময় আমাদের দেশে সাহেব-ই-নহবত ছিলেন। যাকে বাদশাহ সম্মানের উচ্চ চিহ্ন স্বরূপ নিজের বাড়িতে নহবত বাজানোর অধিকার দিতেন (ফরমানী মহারাজ মসনবদার সাহেব নহবত আর কাননগোই ভার - ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর) (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।