আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি তোমার নাম লইয়া কাঁদি....



দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনে গ্রোসারী স্টোরে যেতে হয়, নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল সহ যাবতীয় জিনিস পত্রের জন্য। এসব দেশে এধরনের স্টোরগুলোয় বলতে গেলে "পিন থেকে পর্বত" সব কিছুই পাওয়া যায়। বিভিন্ন জিনিসের জন্য সুশৃংখল ভাবে সাজানো এক একটি আইল। বিচিত্র সব পণ্যের মাঝে সবচেয়ে পীড়াদায়ক সেকশন হলো "পেট সেকশন", সেখানে কুকুর বিড়ালের জন্য জিনিস পত্রের পসরা সাজানো। তাদের খাবার দাবার থেকে শুরু করে, পোষাক, চিরুনী, বিছানা, ঘর, খেলনা আরো নানা রকমের রং বেরং এর বাহারি জিনিস।

ভুল করেও এসব সেকশনে চলে গেলে কেমন যে লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়! এসব কুকুর, বিড়ালের খেলনা আর খাবারের শুধু পসরাই নয়, লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন বানানো হয়। এদের জন্য খুব স্বাভাবিক একটি ব্যপার তবে কেন জানিনা, আমার খুব কষ্ট হয়। অন্য কারো কথা মনে পড়ে! একটি ছোট্ট দেশের পথের পাশে পড়ে থাকা অভুক্ত কংকালসার কোন শিশুর কথা, খেলনা তো দুরের কথা, দিনের পর দিন মুখে অন্ন জুটেনি এমন কিছু শিশু কিশোরদের কথা। ক্রিসমাসের আগে আগে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়, দরিদ্র শিশুদের জন্য গরম কাপড়, খেলনা আর খাবার সংগ্রহের। মানুষ, সে যে দেশের ই হোক মানুষ।

অনাহারী শিশু যে ধর্মের, বর্ণের ই হোক তাদের কষ্ট এক, তবু সেসব ডোনেশন বাক্সে সাহায্য দিতে গিয়ে খুব মন খারাপ হয়ে যায়। তীব্র কষ্ট বোধ করি কারো জন্য, এমন নয় যে এখানে বসে তাদের খাবার বা খেলনার ব্যবস্থার চেষ্টা করিনা। সবার জন্য সম্ভব না হলেও, সাধ্যমতো চেষ্টা অনেকেই করেন। এদেশের অভুক্ত শিশুরাও কষ্টে আছে তবুও মনের ক্ষুদ্রতার কারনেই হয়তো এই কান্না। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকুল এলাকার আবহাওয়া সাধারনত বেশ ভালো, শীত বা গরমের তীব্রতা তেমন নেই।

অধিকাংশ বাড়ি বা এপার্টমেন্টে হিটিং থাকলেও এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা তেমন চোখে পড়েনা। গত বছর বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যক্তি "বিল গেট'সে"র শহরে যখন কিছু দিনের জন্য তাপ দাহ হলো, শহরের মানুষ অতীষ্ট হয়ে গিয়েছিলো গরমে! সবচেয়ে অবাক হলাম টেলিভিশনে একটি খবর শুনে, সেখানে বিনামুল্যে এয়ার কন্ডিশন বিতরন করা হয়েছে। যেদিন খবর শুনেছিলাম তারা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জানালেন "৬০০ এয়ার কন্ডিশন আজ একদিনেই শেষ, আর কতো দিন এমন অসহ্য গরম চলবে?" সেই তাপ দাহ সাকুল্যে ছিলো ৮-৯ দিন! বর্ষা, বৃষ্টি আমার খুব পছন্দের তবে ইদানীং আকাশে মেঘ করে এলে, বৃষ্টি হলে কেমন যেন মনে হয়। সেসব মানুষদের কথা মনে পড়ে যাদের কাছে এই বৃষ্টি এখন একটি আতংকের নাম। বন্যা পিড়ীত এলাকায় থেকেছি, জানি সেখানে মানুষ রৌদ্রজ্জ্যল দিনের জন্য চাতকের মতো অপেক্ষা করেন।

পানির প্রকোপে মানুষ আর সাপ এক সাথে বাস করে। এক একটি রৌদ্রজ্জ্যল দিন এক একটি আশার আলো, সেসময় আকাশে মেঘ করে এলে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে, আবারো পানি বেড়ে যাবার দুঃস্বপ্ন! প্রতিদিন অনেক আশা নিয়ে বেড়ে ওঠা পানির দিকে তাকিয়ে দেখে আজ কিছু কমেছে কিনা। এই দেশের মেঘে সেখানে কোন প্রভাব ফেলছেনা তারপরও ইদানীং আকাশে মেঘ করে এলে মনে হয় সেই মুহুর্তগুলো আবার যাপন করছি। সেই মানুষদের আতংক ভরা চোখ মনে পড়ে যায়। আমার এই বিষন্নতায় কিছু এসে যায়না।

ইট ডাজ নট মেক এনি ডিফারেন্স, তবুও প্রচন্ড মন খারাপ হয়!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.