আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীরব মৃত্যুর নাম খালিশপুর

নক্ষত্রের রাত

"এখানে অভাব মৃত্যু অনাহার অপঘাত সকাল বিকাল মাসে মাসে মারীর মড়ক ........... এখানে সভ্যতা নেই, হৃদয় শুকনো দীঘি, বুদ্ধিমজা খাল, চোখ-কান সব বোধ চোরাইমালের চেয়ে বাসি...। " -বিষ্ণু দে \ স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যত নাগরিক হৃদয়ের শুকনো দীঘিতে সাড়া জাগে না। মুঠোফোনে পাওয়া খবরে খুব একটা উত্তাপ ঠেকে না। পরের দিন পত্রিকার পাতায় খবর দেখে কিছুটা নড়ে চড়ে বসি। খুলনার খালিশপুরে শ্রমিকাঞ্চলে বন্ধ পাটকলগুলোর শ্রমিক কলোনিতে মানুষ মরছে না খেয়ে।

চলছে ুধা এবং মৃত্যুও সহবাস। প্লাটিনাম পাটকলের সিকিউরিটি গার্ড তবিবুর রহমান তৈয়ব, পিপলস জুট মিলের সাধারণ শ্রমিক সিরাজুল হক, প্লাটিনামের আবুল কালাম ইতিমধ্যে পার পেয়েছে পরবাসে। ুধার কারণে এই অন্তিমযত্রা। কল্যাণ অর্থনীতির জনকদের একজন নোবেল বিজয়ী বাঙালি অমর্ত্য সেনের ‘ৎীবনযাত্রা ও অর্থনীতি’ বইটি নামাই ধুলো ঝেড়ে। খুঁজি ‘খাদ্য, অর্থনীতি, স্বত্বাধিকার, খাদ্যের লড়াই বিবিধ অধ্যায়।

‘মিডিয়া স্বাধীন থাকলে দুভি ক্ষও দেখে ঝিম ধরে বসে থাকি। তাহলে খালিশপুরের এই মৃত্যু কি ুধা ও দুর্ভিক্ষের স্বরূপ নয়? নাকি অন্য কিছু? ভাবতে থাকি। পাকুরিয়া ফেরিঘাটে ঠাঁয় সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা, যানজট এসব ছাড়িয়ে পথবাহন যখন খুলনা মহানগরীতে এসে পৌঁছায় তখন প্রায় সন্ধ্যে। লোডশেডিং আর বৃষ্টিপাত উপচেপড়া প্রধানসড়ক, উপসড়ক ছুয়ে ছুয়ে খুঁজে বার করি সহপাঠী- বন্ধু- স্বজন শামীম মাহাবুবুল হককে গল্লামারির বুক চিরে দাঁড়িয়ে থাকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থতলায়। গবেষণার টেবিল ছেড়ে, কম্পিউটারের মাউস নাড়তে নাড়তে স্বজন, বান্ধবের স্মৃতিকাতরতায় আমরা যখন সুদূর অতীতে, তখন খেয়াল হয় মৃত্যু খুঁজতে, ুধার কারণ জানতে আমার এই শহওে আগমন।

গা ঝাড়া দিয়ে উঠি। জানতে চাই পাটকলগুলোর শ্রমিকদের কথা। জানতে চাই সরকারি বিধি ব্যবস্থার কথা। শিক্ষকসুলভ কুশলতায় গবেষকের মতো গাম্ভীর্য নিয়ে শামীম জানান এক অনানুষ্ঠানিক গবেষণার সারসংক্ষেপ। যখন খুলনার খালিশপুরে বিএডিসি সড়ক ঘেঁষে থাকা প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, পিপলস, স্টার জুট মিলগুলো সচল-সরব-সম ছিল, তখন প্রতি বৃহস্পতিবার সপ্তাহান্তে এখানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মতো লেনদেন ঘটত।

শ্রমিক মজুরি পাট কেনা-বেচা, দোকানের মাল সামালের মূল্য ইত্যকার নানাবিধ দেনা-পাওনার আর্থিক লেনদেন ছিল প্রতি বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০- ৬০ কোটি টাকা। সা¤প্রতিক সময়ে মিলগুলো বন্ধ, অর্ধবন্ধ থাকায় তার পরিমাণ কয়েক লে নেমে এসেছে এখন। ’ শামীমের কথায় বুঝি এখন অবস্থা হয়তো আরও খারাপ। ভীষণতর খারাপ। ভ্যান, রিকশা, স্কুটার ঠেলে পরদিন ভোর নাগাদ পৌঁছি ক্রিসেন্ট জুট মিলের গেটে।

একটা ভাঙা চুরা নাস্তার দোকান, একটা চায়ের স্টলÑ কিছুটা জমতে শুরু করেছে। আনকোরা দুজন (আমি এবং সহযাত্রী সমাজকর্মী আলমগীর) কাউকে কিছু না শুধিয়েই নাস্তা করতে বসি। আমাদের চারপাশের জনাদশেক শ্রমিক শ্রেণীর লোকজনের কথাবার্তা শুনতে থাকি। একে একে দুচার জনের কথায় স্পষ্ট হতে থাকে বন্ধ মিলের চাকা বোধহয় পূর্ণ উদ্যমে আর চলছে না। খুব সীমিত পরিসরে মিল খুলেছে।

বকেয়া টাকা দেবার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রায় সবার অবস্থাই খারাপ। ভাবছেন সবাই বিকল্পের কথা। চানাশতার ফাঁকে এসব আলাপন শুনি মনোযোগ দিয়ে। এবার সতীর্থ আলমগীরকে পাঠাই একটু দূরে।

অন্যসব জটলাতে। অবস্থা আঁচ করতে থাকি। আর অপেক্ষায় থাকি আমাদের সোর্স কাম সম্ভাব্য সাহায্যকারী শহীদ-এর। ঢাকা থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চাুষ দেখিনি তবে শুনেছি প্রাণখোলা সরল এই যুবকটি স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজ করেন।

পাটকল শ্রমিকদের দুর্দশা চিত্র জানাতে সক্ষম। এবার আলমগীরের মুঠোফোন থেকে মিসকল পাই। এগিয়ে যাই সামনে। ক্রিসেন্ট জুটমিলের মূল গেট লাগোয়া রেল লাইন সংলগ্ন মো. ওসমান মোল্লার দোকান। জমিয়ে গল্প করছে আলমগীর।

আমি যুক্ত হই। ৩০ বছর ধরে এখানেই বসবাস ওসমান মোল্লার। বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, ড্রিংক্স এসব খাদ্য সামগ্রীর দোকান তার। দোকানে মাল প্রায় নেই। র‌্যাকগুলো ফাঁকা ফাঁকা।

গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ওসমান মোল্লার জীবন এই ক্রিসেন্ট জুট মিলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এখানে ঘর সংসার, এখানেই ব্যবসা ও জীবিকা। তার দোকানের ক্রেতাও এই মিলের শ্রমিককর্মচারীরা। হিসেবের খাতা খুলে জানালেন ৩৫- ৪০ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। শ্রমিকরা বেতন পায় না ১৪ সপ্তাহ।

তারা টাকা দেবে কোথা থেকে? তারা টাকা না পেলে তারও টাকা পাওয়া সম্ভব নয়। চোখে মুখে অন্ধকার। কি খাবেন কি করবেন জানেন না। ভরা মৌসুমে দোকানে প্রতিদিন বিক্রি হতো ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার। এখন প্রতিদিন বিক্রি ঠেকেছে ৫০-১০০ টাকায়।

একটা বড় দীর্ঘশ্বাস আর নিয়তি নির্ভরতার উপরে ভরসা এখন ওসমান মোল্লার! সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি বিস্তারিত পড়তে চাইলে কিক করুন এখানে। ডাইরেক্ট লিংক: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।