আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা চলচ্চিত্র ধর্ষণের প্রতিবাদে!

মুভি ক্রিটিক ব্লগ (প্রথম বাংলা মুভি ব্লগ) ★★★★★ © ২০০৭ - ২০১৩ ওয়েবসাইট: www.saifsamir.com ক্রিটিক'স কাট#৩ সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন নির্মাতাদের কিছু কাজ দেখে আমি মুগ্ধ! মনে হতে পারে আমি বুঝি একটু বাড়িয়ে বলছি। বাড়িয়ে যদি বলিও তাতে কি দোষের কিছু হবে? ভালো কাজের প্রশংসা সামান্য বাড়িয়ে করলে পাপ হয় না। আমি অন্তত সেই সব নিন্দুকদের মতো করছি না, যারা বাংলা চলচ্চিত্রের কথা শুনলেই নাক সিটকায়। যারা সিনেমা বলতে শুধু ইংরেজি বা হিন্দি ছবি বোঝেন। যারা দেশপ্রেমের কথা বলেন কিন্তু দেশের ছেলেদের ভালো কাজগুলো অ্যাপ্রিশিয়েট করতে জানেন না।

যারা সিনেমায় নতুনদের প্রচেষ্টাগুলোকে উপহাস করেন। যারা বাংলা ছবিকে লেখার মাধ্যমে উপর্যুপরি ধর্ষণ করছেন। তারা নিজেদেরকে খুব কৌতুকবোধ সম্পন্ন ভাবেন। তাদের ধারণা বিদ্রূপ করে করে সিনেমার খুব উপকার সাধন করছেন। তারা মনে করেন এতেই বাংলা সিনেমা শুদ্ধ হবে।

সত্যিই কি তাই? এর ফলে কোন ক্ষতি হচ্ছে না তো? ক্রমাগত পজেটিভ হয়ে ওঠা দর্শক-চিত্তকে আবার উল্টো পথে হাঁটানো হচ্ছে না তো? এরা কারা? এদের উদ্দেশ্যটা কি? সিনেমার গালমন্দ করে মজা লুটা? নিজেদেরকে খুব চলচ্চিত্র সমঝদার সাজিয়ে জাতে আরোহণ? যারা মনে করেন এই করে করে বাংলা সিনেমা শুদ্ধ হচ্ছে তারা আসলে বোকার জান্নাতে বাস করছেন। নাম খারাপ করে তো আর ইমেজ বাড়ানো যায় না। আসলে দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে ওরা মোটেও চিন্তিত নয়। বাংলা ছবির ভালো-মন্দ ওরা থোরাই কেয়ার করেন। খুব ভাব দেখান যে নতুন ছবিগুলোকে উৎসাহ দিতে হলে গিয়ে ছবি দেখছেন! কিন্তু ফিরে এসে করেনটা কি? মাউস-কীর্বোড নিয়ে ঘাড় গুজে বসে যান রসিয়ে রসিয়ে চলচ্চিত্র ধর্ষণে।

ভাব যেন সব রস তাদের কোষে কোষে। বলি রসের হাঁড়ি উল্টে দিলেই কি রস আস্বাদন হয়ে গেল? প্রকৃত রস স্বাদনে সেরকম জিহ্বা লাগে যে! আছে ওটা? তাদের ভাষার যে ছিরি দেখি তাতে তো মনে হয় ওটা কোথাও বন্ধক দেয়া আছে। শুধু বাংলা নয় সামগ্রিক ছায়াছবির রস উদযাপনে রুচির যে বলি হারি! আরেক দল আছেন যারা এদেরকে গুরু মেনে পিছন থেকে হাততালি আর জয়ধ্বনি দেয়। এই দুই দলের মূল্যবোধ যে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে ভাবতেই ঘেন্না লাগে! আসলে এদের অনেকে সিনেমার অ আ ক খ পর্যন্ত জানেন না। কিছু ইংরেজি-হিন্দি হাল ফ্যাশনে কোরিয়ান ছবি দেখে আইএমডিবির ভরসায় একেকজন আইএমপি (আই এম পণ্ডিত) বনে গেছেন।

ফিল্ম নিয়ে দু-চার মিনিট কথা বলতে গেলে আলাপ জমার আগেই উনারা জমে বরফ হয়ে যান। মুভি বড়ই রহস্যময়। ইনারা যা জানেন তাকে বলে হিপোক্রিসি। অন্যের ভাষা জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করেন, নিজের ভাষার কুছিরি নিয়ে দ্বিধা নেই। এই সব উপজীবীদের বলছি, মুভি কটাক্ষ করে আপনারা নিজেরা হয়তো তথাকথিত 'জনপ্রিয়' হতে পারেন, কিন্তু চলচ্চিত্রে শিল্পের এতে কোন উপকার হবে না।

খুব খেয়াল করে দেখুন; আপনারা স্বার্থপর, হীনম্মন্য, আত্মোপকারী কিনা। আপনারা কোন গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারছেন না। আপনারা যা করছেন তাকে বলা যায় 'চলচ্চিত্র ধর্ষণ'। সমালোচনা এমন এক শক্তি যা সুদক্ষ ও যোগ্য হাতের গুণে আদরণীয় ও সার্থক হয়ে ওঠে। কিন্তু কিছু অপাংক্তেয় ও দূষিত লোকের যথেচ্ছ ব্যবহারেই সমালোচনা সচরাচর নিন্দা-কীর্তনে পরিণত হয়।

সমালোচনার মানে গিয়ে দাঁড়ায় ভালো করে ধুয়ে দেওয়া। ধোপার কাজটাই কি আপনাদের? অন্যদিকে- 'মুভির গল্পটা দারুণ হয়েছে কিন্তু প্লটটা জমেনি, সংলাপ যাচ্ছেতাই হলেও চিত্রনাট্য অসাধারণ। নতুন অভিনেতাটির অভিনয় গুণ চমৎকার, সেক্ষেত্রে পরিচালক অতি সৌভাগ্যবান' - এই হলো সুশীল (ভণ্ড) 'সমালোচকের' খণ্ড দৌড়। তা মশায়, গল্পের সাথে প্লটের বা সংলাপের সঙ্গে চিত্রনাট্যের কোন সম্পর্ক নেই? এগুলো কিভাবে কাজ করে জানেন? আর খুব যে বলে দিলেন, নতুন অভিনেতাটির জন্য পরিচালক সৌভাগ্যবান- আপনি কি জানেন সেই আনকোরা অভিনেতা থেকে কাজ আদায় করতে বেচারা পরিচালককে কি খাটুনিটাই না খাটতে হয়েছে? কোথাকার ক্রেডিট কোথায় দিবেন, কিসের জন্য কাকে ডিসক্রেডিট করতে হবে সেসব তো আগে জানতে হবে! যা মুখে এলো অমনি বলে দিলেন!! আইএমপি বটে! সবশেষে একটু নিবেদন করি;- যে মুভিটি দেখছেন তার পজেটিভ দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন, অহেতুক নেগেটিভ বলার দায় থেকে বাঁচবেন। ভালো কথা যদি মুখ দিয়ে না-ই আসে চুপ থাকাটাই ভালো।

মনীষী বলেছেন, 'বেফাঁস কথা বলার চেয়ে চুপ থাকাটাই নিরাপদ'। এটা চলচ্চিত্র কর্মীদের জন্য যেমন নিরাপদ, আপনার জন্য তেমন নিরাপদ। শুধু নেগেটিভ ও বাজে কথা বলার যে অসুস্থ কালচার চালু হয়েছে এটা বন্ধ হওয়া দরকার। অনাবশ্যক নিন্দা-মন্দায় আত্মসুখ উপলব্ধি 'অসুস্থ' নয় কি? দয়া করে ভেবে দেখুন। ভেবে-চিন্তে যদি বলেন, আরে ভাই এগুলো স্রেফ নির্মল আনন্দ! তবে সম্পূরক প্রশ্ন করি, কুৎসা রটানো কি 'নির্মল' আনন্দের পর্যায়ে পরে? তরুণরা যেখানে এতো কষ্ট করছেন বাংলা সিনেমার উন্নতিতে, সেখানে আপনারা কেন পথটা সহজ না করে আরও কঠিন করে দিচ্ছেন? আপনাদের স্বার্থটা 'ব্যক্তিগত' স্বার্থে সীমাবদ্ধ থাকছে কেন? দেশের চলচ্চিত্রে যে নতুন হাওয়া লেগেছে, বাংলা ছবির দর্শকের মনোভাবে যে সুখকর পরিবর্তন আসছে তা আপনাদের মানসলোককে স্পর্শ করছে না কেন? কথা প্রসঙ্গে না হয় ধরেই নিলাম বাংলা সিনেমার দর্শক মানে স্রেফ রিকশাওয়ালা বা গার্মেন্টস ওয়ার্কার ভাই-বোনেরা।

এরা কি ভাই এদেশের নাগরিক না? এরা কি মানুষ জাতির মধ্যে পরে না? এরা কি সংখ্যায় নগণ্য? এদের কি বিনোদনের প্রয়োজন নেই? আপনার-আমার মতো আমরা যারা সমাজের 'উচ্চ শিক্ষিত' 'উঁচু শ্রেণীর' লোক আমাদের বিনোদন আর এদের বিনোদন সমান হবে কি করে? বাংলা সিনেমা কি আমাদের মা-খালা-চাচি-ফুপিরা টিভিতে দেখছেন না? শৈশব-কৈশোরে আমাদের টিভিতে যখন হিন্দি চ্যানেলগুলো ছিল না তখন একটি শুক্রবারও কি আমরা বিটিভিতে বাংলা ছবি না দেখে থেকেছি? সেক্ষেত্রে আমরাও রিকশাওয়ালা বা গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের চেয়ে কম ছিলাম না। আমরা শিক্ষিতরা হয়েছি ভ্রদ্র সমাজের সম্মানিত বাসিন্দা। বাংলা ছবি হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী ও গ্রাম্য সমাজের বিনোদন। এখন আমাদের রুচি 'পশ্চিমা মানসম্পন্ন' হয়েছে দেখে আমরা বাংলা সিনেমার কথা শুনলেই নাক সিটকায়। যদিও আমার আলোচ্য বিষয় এফডিসির গতানুগতিক বাংলা সিনেমা না, আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তরুণ প্রজন্মের নতুন সিনেমার দিকে- তবুও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে কথাগুলো যোগ করলাম।

অনেক কথা বলেছি, আরও কথা বলার থাকলেও আপাতত কিছু কথা উহ্য-ই রেখেছি পাঠক/দর্শকদের সৃজনি চিন্তা শক্তির ওপর ভরসা রেখে। _______ ভালো মুভি, মন্দ মুভি চেনার সহজ উপায় সেরা মুভি কিভাবে নির্বাচিত হয়?  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.