আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে পিরামিড তৈরি করতে হয়?

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

ইজিপ্টের গিজায় অবস্থিত প্রাচীন ইজিপশিয়ান রাজা বা ফারওদের সমাধিক্ষেত্র বা নেক্রোপলিস। এ সমাধিক্ষেত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, সাধারণভাবে এ সমাধিগুলো মাটি খুড়ে বা ছোট মিনার গড়ে তৈরি করা হয়নি। এগুলো তৈরি হয়েছে বিরাট পিরামিড আকারে। এই পিরামিডের ভেতরে সমাহিত করা হতো রাজা, রাণীকে।

রাজারা তাদের জীবৎকালেই তৈরি করতেন একেকটি পিরামিড। এই পিরামিডগুলোর মধ্যে ফারাও খুফুর পিরামিডটিই সর্ববৃহৎ। এ পিরামিডটি গ্রেট পিরামিড অফ গিজা নামে পরিচিত। এ পিরামিডটি শুধু আকারের দিক থেকে নয় নির্মাণ কৌশলের দিকে থেকেও সম্পূর্ণ। কিভাবে প্রাচীন ইজিপ্টে এই বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয়েছিল এবং তাতে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল এ নিয়ে অনেক তত্ত্ব ও হাইপোথিসিস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ আর্কিওলজিস্টরা।

কিন্তু এগুলোর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গৃহীত হয়নি। এখন হাজির হয়েছে নতুন আরেক তত্ত্ব। এ নতুন তত্ত্বটি প্রাচীন ইজিপশিয়ান নির্মাণ কৌশলে নতুন আলো ফেলেছে। এ বিষয়ে বব ব্রিয়ারের লেখা থেকে অনুবাদ করেছেন মাহবুব মোর্শেদ। প্রাচীন পৃথিবী সাতটি আশ্চর্য স্থাপনার মধ্যে মাত্র একটি এখনও টিকে আছে।

গিজার বৃহৎ পিরামিড। একটি হিসেব মতে, ২ মিলিয়ন পাথরের খ- ব্যবহৃত হয়েছিল এটি তৈরিতে। পাথরগুলোর গড় ওজন ছিল ২.৫ টন। যখন এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখন এই ৪৮১ ফুট উঁচু পিরামিডই ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা। এ অবস্থান বজায় ছিল নির্মাণের সময় থেকে ৩ হাজার ৮শ’ বছর পর্যন্ত।

মাত্র ৪৪ ফুট বড় ইংল্যান্ডের লিনকন ক্যাথিড্রাল একে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা জানি, কে এই বৃহৎ পিরামিড তৈরি করেছিল। খৃষ্টপূর্ব ২৫৪৭ থেকে ২৫২৪ পর্যন্ত সময়কালে ইজিপ্টের শাসক ফারাও খুফু তৈরি করেছিলেন এটি। আমরা এও জানি কে এই কাজ তত্ত্বাবধান করেছিলেন, খুফুর ভাই হেমিইনু। হেমিইনু ছিলেন রাজার সব ধরনের নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়ক।

পিরামিডের লাগোয়া তার সমাধি সমাধিক্ষেত্রের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে জানি না কিভাবে এটি তৈরি হয়েছিল। আর এ বিষয়টি নিয়েই হাজার হাজার বছর ধরে বিতর্ক চলছে। গৃক ইতিহাসবিদ হিরোডোটাসের উত্থাপিত তর্কই এ যাবতকালের সর্বপ্রাচীন দলিল। তিনি খৃস্টপূর্ব ৪৫০ সময়কালে ইজিপ্ট সফর করেন।

তখন পিরামিড মোটামুটি ২ হাজার বছরের পুরনো ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ‘পাথরের টুকরোগুলো ওপরে ওঠানোর জন্য ‘যন্ত্র’ ব্যবহার করা হয়েছিল। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল সংকীর্ণ আকারের ক্রেন। তিনশ বছর পর সিসিলির ডিডোরাস লেখেন, ‘নির্মাণ কাজের জন্য মাটির স্তূপ তৈরি করা হয়েছিল। ’ এটা অনেকটা র‌্যাম্পের মতো যা ব্যবহার করে সিড়ি ছাড়াই এক তলা থেকে অন্য তলায় যাওয়া সম্ভব।

আজ অবশ্য আমাদের হাতে অন্য গ্রহের সাহায্য থিওরও আছে। আদ্যিকালের এই ইজপ্টিশিয়ানরা নিজেদের দক্ষতা ব্যবহার করে এই বিপুল আয়তনের স্থাপনা তেরি করতে পারে না। নিশ্চয়ই ভিনগ্রহ থেকে প্রাণীরা এসে নিশ্চযই তাদের সাহায্য করছে। আধুনিক বিশেষজ্ঞরা প্রথম দুইটি থিওরিতেই তাদের সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু মনের গভীরে তারা জানতেন এ দুটোর কোনোটাই সঠিক নয়।

আরেকটি মৌলিক ও নতুন তত্ত্ব এক্ষেত্রে সহাযক হতে পারে। আর এটি যদি সত্য হয় তবে আগে যেমন ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি বিস্ময় জন্মাবে ইজিপ্টিশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টদের সম্পর্কে। বাইরের র‌্যাম্প ও ক্রেন থিওরি প্রথম থিওরি হলো, পিরামিডের একদিকে একটি র‌্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল। পিরামিড যত উপরে উঠতে থাকলো র‌্যাম্পও ততো ওঠানো হতো। যাতে নির্মাণ কাজের সময় পাথর খ-গুলো শীর্ষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়।

এ ক্ষেত্রে র‌্যাম্প যদি খুব খাড়া হয় তবে পাথর উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত শ্রমিকরা পাথর উপরে তুলতে সক্ষম হবে না। ৮% ঢালু হলে র‌্যাম্পে এ কাজ সম্ভব, এর কম হলে তা করা কঠিন। আর এটাই একক র‌্যাম্প পদ্ধতির সবচেযে বড় সমস্যা। একে যদি বিবেচনার মধ্যে নিয়ে আসা হয় তবে পিরামিডের চূড়া পর্যন্ত পৌছাতে র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য হবে এক মাইল। কিন্তু গিজা মালভূমিতে এ ধরনের র‌্যাম্প তৈরির কোনো জায়গা নেই আর এ ধরনের বিশাল কাঠামো তৈরি কোনো নজিরও নেই।

আবার এক মাইল লম্বা র‌্যাম্প প্রায় পিরামিডের মতোই বিশাল এক স্থাপনা। এটি পিরামিড নির্মাণের সময়কে প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে পারে। কারণ, খাড়া র‌্যাম্প থিওরি কার্যকর হত পারে না। কোনো কোনো পিরামিড বিশেষজ্ঞ তাই পরিবতিৃত র‌্যাম্প থিওরি বেছে নিয়েছেন। এই থওরি অনুসারে, র‌্যাম্প পিরামিডের বাইরের দিকে আড়াআড়িভাবে তৈরি হয়েছিল অনেকটা স্পাইরাল বিন্যাসের পাহাড়ি পথের মতো করে।

এই আড়াআড়ি র‌্যাম্পের ধারণা এক মাইল লম্বা র‌্যাম্পের ধারণাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আর এর সপক্ষে কোনো আলামতও পাওয়া যায়নি। কিন্তু নতুন থিওরিতে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। পিরামিডের বাইরে আড়াআড়িভারে র‌্যাম্প তৈরি করলে এর কোনাগুলো নির্মাণ কাজের শেষ পর্যায়ে ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা বোঝা যায় যে কোনাগুলো যেন সঠিকভাবে চূড়া পর্যন্ত পৌছাতে পারে এজন্য কোণাগুলোর সতর্ক মাপজোখ ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। মেট্রপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্টের বিখ্যাত পিরামিড বিশেষজ্ঞ ডিয়েটার আর্নল্ড তার বিল্ডিং ইন ইজিপ্ট নামের বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘এ পদ্ধতিতে নির্মাণ কাজের পুরো সময়ে হয়তো পিরামিডের কাঠামো পুরোপুরি র‌্যাম্পের নিচে চাপা পড়েছিল।

এ বিবেচনার ক্ষেত্রে সার্ভেয়াররা চারটি কোনা, প্রান্তভাগ পিরামিডের ভিত্তিকে বিবেচনার মধ্যে আনেননি। ’ এর মধ্য দিয়ে মোডিফাইড র‌্যাম্প থিওরিতেও বিশাল সমস্যা দেকা দিল। দ্বিতীয় থিওরির কেন্দ্রে আছে ডিরোডোটাসের মেশিন। এখন পযৃন্ত ইজপ্টিশিয়ান কৃষকরা শাদৌফ নামে ক্রেন ধরনের একটি যন্ত্র ব্যবহার করে নীল নদ থেকে পানি উত্তোলনের কাজে। এই যন্ত্রটি পুরাতন সামধি চিত্রগুলোতে আমরা দেখতে পাই।

ফলে এটা বোঝা যায়, পিরামিড তৈরি সময়ে এগুলোর অস্তিত্ব ছিল। ন’তন আইডিয়া হলো, পাথর উত্তোলনের জন্য পিরামিডের বিভিন্ন স্তরে এ ধরনের শত শত ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছিল। এই থিওরির এটি সমস্যা হলো, এই কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঠের দরকার পড়েছিল কিন্তু ইজিপ্টে সোজা কথায় কোনো বন নেই যেখান থেকে কাঠের জোগান করা যেতে পারে। এত বেশি তক্তা আমদানীর ধারণাও বাস্তব। জাহাজ তৈরির জন্য লেবানন থেকে বিশাল আকারের কাঠ আমদানী করা হতো বটে কিন্তু সেটা ছিল ভীষণ ব্যয়বহুল একটি উদ্যোগ।

সম্ভবত ক্রেন থিওরির আরও একটি বড় ক্রটি হলো, এত ক্রেন স্থাপনের জায়গা সেখানে ছিল না। ওপরের দিকে পিরামিডের পাথরগুলো আকারে ছোট হয়ে এসেছে। আমি ১৯৭০ ও ৮০’র দিকে বহুবার এ ওপরে উঠেছি। তখন ওপরে ওঠার অনুমতি দেয়া হতো। চূড়ার দিকে পাথর খ-গুলোতে আঠারো ইঞ্চিরও কম দাড়ানোর জায়গা পাওয়া গেছে।

এখানে ক্রেনের জন্য এমন কোনো জায়গা নেই যার মাধ্যমে এত বড় পাথর ওপরে ওঠানো যাবে। ক্রেন থিওরি এ ব্যাখ্যা দিতে পারে না যে কিভাবে গ্রেট পিরামিডের পাথরগুলো ওপরে তোলা হয়েছিল। তাহলে কিভাবে এটি হয়েছিল? ভেতরের দিকে র‌্যাম্প পদ্ধতি ফ্রেঞ্চআর্কিটেক্ট জঁ পিয়েরে হুদিঁ সম্পূর্ণ নতুন একটি আইডিয়ার কথা জানিয়েছেন সম্প্রতি। তিনি গত সাত বছর ব্যস্ত ছিলেন কম্পিউটারে মিরামিডের নানা মডেল তৈরি কাজে। থৃ ডি সফটওয়্যার ব্যবহার করে তিনি দেখিয়েছেন যে, পাথর ওপরে তোলার কাজে র‌্যাম্প ব্যাবহার করা হয়েছিল আর এই র‌্যাম্প এখনও আছে পিরামিডের ভেতরে! এই থৃ-ডি সফটওয়ার ডেভেলপ করছে ড্যাসল্ট সিস্টেম।

এটি পিয়েরে ব্যবহার করেছিলেন তারা বাবা ইঞ্জিনিয়ার হেনরি হুদিঁর পারমর্শে। এই থিওরি অনুসারে, নিচের এক তৃতীয়াংশ তৈরির সময় পাথর সোজাসুজি ওপরে তোলা হয়েছিল বাইরের র‌্যাম্প ব্যবহার করে। চূড়ার পৌছাতে যত দীর্ঘ র‌্যাম্প দরকার ছিল তার চেয়ে এই র‌্যাম্প অনেক ছোট। এটি তৈরি করা হয়েছিল লাইমস্টোনের ব্লক দিয়ে। কিছুটা ছোট আকারের পাথর দিয়ে পিরামিডের নিচের তৃতীয়াংশ তৈরি করা হয়েছিল।

রাইরের র‌্যাম্পের সাহয্যে ভিত্তিটা তৈরি হওয়ার পর পিরামিডের ভেতর দ্বিতীয় র‌্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে পিরামিডের দুই তৃতীয়াংশ পযৃন্ত ব্লক ওঠানো হয়েছিল। হুদিঁর মতে, ভেতরের র‌্যাম্পটি ভিত্তিতে শুরু হয়েছিল। এটি ৬ ফুট প্রশস্ত ছিল, এটি ছিল ৬% গ্রেডে হেলানো। বাইরের র‌্যাম্পের সাহায্যে পিরামিডের এক তৃতীয়াংশ তৈরি হওয়ার পরই এটি স্থাপন করা হয়েছিল।

ভেতরের র‌্যাম্পের ডিজাইনের কিছু আলামত পিরামিডের ভেতরের দিকের ডিজাইন থেকে পাওয়া গেছে। হেমিইনু জানতেন তার ও ফারও খুপুর বাবা স্নেফেরু কোন কোন বাধা মোকাবিলা করেছিলেন। নিজের সমাধির জন্য একটি সুন্দর পিরামিড তৈরি করতে গিয়ে স্নেফেরু বেশ কিছু কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত গিজার দক্ষিণে তিনটি পিরামিড তৈরি হয়েছিল। প্রথমটির মাঝামঝি পর্যায়ে সম্ভবত সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং এটা কখনোই ব্যবহৃত হয়নি।

দ্বিতীয়টি তৈরি হয়েছিল দাশুরে। এটি বাকা পিরামিড হিসেবে পরিচিত। এর মাঝের দিকটি বাকা হয়ে গিয়ে সামাধি কক্ষের দিকে ঢুকে গেছে। লেবানন থেকে প্রচুর পরিমাণে পাইন কাঠ কিনতে হয়েছিল ভেতরের দিকে ঠেস দেওয়ার জন্য। যাতে দেয়াল ভেতরের দিকে ভেঙে না পড়ে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটিও পরিত্যক্ত হয়েছিল। নিশ্চয়ই স্নেফেরুর মৃত্যুর আগে একটা তীব্র তোড়জোড় তৈরি হয়েছিল তৃতীয় ও সফল পিরামিডটি তেরি করতে গিয়ে। এটা হলো দাশুরের লাল পিরামিড। শুরু থেকে হেমিউনু তিনটি সমাধির কথা চিন্তা করেছিলেন যাতে খুফু মারা গেলে তাকে যথাযথভাবে সমাধিস্থ করা যায়। একটি তৈরি হয়েছিল পিরামিডের ভিত্তের ওপরেই নির্মাণ কাজের শুরুর দিকেই।

যদি ফারও তাড়াতাড়ি মারা যেতেন তাহলে এটিই হতো তার সমাধি। এর পাঁচ বছর পরও ফারও ছিলেন জীবিত ও স্বাস্থ্যবান ছিলেন। ফলে দ্বিতীয় কক্ষটি তৈরির কাজ শুরু হয়, যার নাম রাণীর সামধি কক্ষ। এর পনের বছর পরও যখন খুফু রীতিমতো সুস্থ তখন এই কক্ষও অসম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয় এবং আরও উচুতে পিরামিডের কেন্দ্রে রাজার কক্ষ নামে সমাধি কক্ষটি তৈরি হয়। রাজার কক্ষের পাথরের শাবাধারে পাওয়া জিনিশপত্র থেকে প্রথম দিকের অনুসন্ধানকারীরা ভুলভাবে ধারণা করেন দ্বিতীয় কক্ষটি হয়তো রাণীর জন্য নির্মিত হয়েছিল।

রাজা ও রাণীর সমাধির ছাদের বিম তৈরির জন্য বহু গ্রানাইট, লাইমস্টোন ও কাঠের প্রয়োজন হয়েছিল। এই বিমগুলোর কয়েকটি ৬০ টনেরও বেশি ভারী এবং বেশ বড় আকারের। ভেতরের র‌্যাম্পের সাহায্যে এগুলো ওপরে তোলা সম্ভব ছিল না। ফলে, এই বড় বিমগুলো ওপরে তোলা পর্যন্ত বাইরের র‌্যাম্পটিকে রাখতে হয়েছিল। এটা হযে যাওয়ার পর বাইরের র‌্যাম্পটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

এবং এর পাথরের ব্লকগুলোকে ভেতরের র‌্যাম্পের সাহায্যে ওপরে ওঠানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় বাকী দুই-তৃতীয়াংশ পিরামিড তৈরি হয়। সম্ভবত, নিচের দিকের ব্লকের চাইতে ওপরের দিকের ব্লকগুলো আকারে ছোট, কারণ এগুলোকে ভেতরের সরু র‌্যাম্প দিয়ে ওপরে ওঠাতে হয়েছিল। ভেতরের র‌্যাম্পের ডিজাইন তৈরির জন্য আরও কিছু বিবেচনা কাজ করেছিল। প্রথমত, এটাকে সংক্ষিপ্ত আকরে তৈরি করতে হয়েছিল যাতে ভেতরের কক্ষ ও কক্ষগুলো মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী পথকে এটি ক্ষতিগ্রস্ত না করে।

দ্বিতীয়ত, যে লোকেরা এই ভারী পাথরের ব্লক সরু পথ দিয়ে ওপরে তুলবে তারা নব্বই ডিগ্রি ঘুরে পাথর রাখতে পারবে না। এমন জায়গা তাদের দরকার যেখানে তারা দাড়িয়ে পাথর তুলতে পারবে। ভেতরের র‌্যাম্পে এজন্যই ঘোরার জায়গা র‌্যাম্পে ছিল না বলে সাধারণ একটি ক্রেনের সাহায্যে পাথরের ব্লকগুলোকে ঘুরিয়ে দেয়া হতো। এই বিশ্লেষণ হুদিঁর। কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না রেখে কিভাবে এই বৃহত্তম পিরামিড তৈরি হলো এ নিয়ে বিস্তর থিওরি আছে।

ভেতরের দিকে র‌্যাম্প তেরি থিওরি কি সেগুলো থেকে আলাদা কিছু? এর পক্ষে কি কোনো প্রমাণ আছে। উত্তর হলো, আছে। সামান্য একটি প্রমাণ আছে, একটি পাটাতন যা র‌্যাম্পের এটি কোণ যা পাথর ঘোরানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। পিরামিডের দুই-তৃতীয়াংশ ওপরে উত্তর-পূর্ব কোণে এটি আছে বলে হুদিঁ ধারণা করেন। ১৯৮৬ সালে একটি ফেঞ্চ টিম পিরামিডে সার্ভে করছিল।

তখন টিমের একজন সদস্য দেখতে পান ওই পাটাতনের কাছের একটি গর্তে একটি মরু শেয়াল দেখতে পান। যাতে অনুমান করা যায় ওখানে একটা পাটাতন আছে। সম্ভবত সেটাই র‌্যাম্প। কিন্তু এটা প্রায় অবিশ্বাস্য যে, একটি শেয়াল পিরামিডের অর্ধেক পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। হতে পারে, নিচের দিকে এমন কোনো অসনাক্ত জায়গা আছে যেখান থেকে শেয়ালটি র‌্যাম্পে উঠেছিল এবং ওই পাটাতন পর্যন্ত পৌছেছিল।

একটি টেলিমেটৃক যন্ত্র কোনো শেয়ালের গায়ে লাগিয়ে তাকে ওই পাটাতনে রেখে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। পাটাতনটি আশা সঞ্চার করে। কিন্তু ওই ফ্রেঞ্চ যা বলেছিলেন তা আরও বেশি গরুত্বপূর্ণ। সার্ভে করার সময় ফ্রেঞ্চ টিম মাইক্রোগ্রাভিমেটৃ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল। যা পিরামিডের ভেতরকার বিভিন্ন সেকশনের ঘনত্ব নিরূপন করে।

এভাবেই লুকানো চেম্বারের অস্তিত্ব বের হয়ে আসে। ফ্রেঞ্চ টিম উপসংহারে বলেছিল, ভেতরে বড় কোনো লুকানো চেম্বার নেই। পিরামিডের ভেতরে যদি র‌্যাম্প থেকে থাকে তবে ফ্রেঞ্চ টিমই কি সেটা বের করেনি? ২০০০ সালে হেনরি হুদিঁ একটি সায়েন্টিফি সেমিনারে এই তথ্যটি উপস্থাপন করছিলেন। সেখানে ১৯৮৬ সালে ফ্রেঞ্চ টিমের এক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি হুদিঁকে বলেন তাদের কম্পিউটার ইমেজ পিরামিডের এমন একটি কৌতুহল উদ্দীপক চিত্র দিয়েছিল যা তারা ব্যাখ্যা করতে পারেননি।

ফলে, বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। জঁ পিয়েরে হুদিঁ যা অনুমান করেছিলেন তাই দেখা যায় ওই ছবিটিতে। একটি র‌্যাম্প স্পাইরাল বিন্যাসে পিরামিডের ওপরের দিকে উঠে গেছে। আরেকটি তত্ত্ব হিসেবে ভেতরের দিকে র‌্যাম্প থিওরির পক্ষে বিবেচনাযোগ্য বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ জড়ো হয়েছে। জঁ পিয়েরে হুদিঁ ও রাইনার স্টাডেলমানের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

তারা একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন কতৃপক্ষ বরাবর। তারা চান ননডেসট্রাকটিভ পদ্ধতিতে পিরামিড সার্ভে করতে। যাতে এই থিওরিটিতে বিচার করা সম্ভব হয়। স্টাডেলমান কায়রোতে জার্মান আর্কিওলজিকাল ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর ও পিরামিড বিষয়ে নেতৃস্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ। তারা আশাবাদী সুপৃম কাউন্সিল অফ অ্যান্টিকুইটিজ হয়তো তাদের অনুমতি দেবে।

এক্ষেত্রে মাইক্রোগ্রাভিমেটৃ, হাই রেজুলেশন ইনফ্রারেড ফটোগ্রাফি এমনকি সোনারের মতো বেশকিছু শক্তিশালী পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে। যদি তা হয় তবে এ বছরের কোনো এক সময় আমরা জানতে পারবো কিভাবে খুফুর বিখ্যাত সমাধি তৈরি হয়েছিল। এবং যদি র‌্যাম্পটি থেকেই থাকে তবে বাইরের দিকের কয়েকটি পাথর সরিয়ে হয়তো এক মাইল লম্বা র‌্যাম্প বেয়ে পিরামিডের ওপর পর্যন্ত পৌছানো যাবে। যে র‌্যাম্প হেমিইনু গোপন রেখেছিলেন বহু বছর। আর্কিওলজি ম্যাগাজিন-এ প্রকাশিত বব বৃয়ারের লেখা থেকে অনুবাদ।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.