আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকার এপার ওপার : অবশেষে ক্যালিফোর্নিয়া (শেষ পর্ব)

জাদুনগরের কড়চা

নেভাডার উইনেমুকা থেকে যাত্রা করতে করতে ১১টা বেজে গেলো। পাহাড়ি রাস্তা, একবার উঠছে, আবার নামছে। ছোটবেলায় নাইট রাইডার নামের সিরিজটা দেখতাম, মরুভূমির মধ্যের রাস্তা দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে। নেভাডার রাস্তা ঘাটও এরকম। তবে অন্য মরুভূমির সাথে পার্থক্য হলো, এই মরুভূমিটা ধুধু বালুচর নয়, বরং ক্যাকটাসে ছাওয়া মলিন, বিরান প্রান্তর।

মাঝে মাঝে গড়িয়ে আসছে গোলাকার বলের মতো মরা ক্যাকটাস। নেভাডার শেষপ্রান্তে প্রায় ৫০ মাইল সোজা সরল রেখার মতো রাস্তা গেছে। এখানে পাহাড় থেকে নেমে আসছে বলেই বোধহয় পুরোটাই দেখা যায় নামার সময় ... খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। নেভাডা পেরিয়ে যখন ক্যালিফোর্নিয়ার সীমানায় পৌছালাম, শুরু হয়ে গেলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চমৎকার প্রকাশ। ক্যালিফোর্নিয়া আবিষ্কার করেছিলো স্প্যানিশরা, সেই ৫০০ বছর আগে।

স্পেনের হাত থেকে মেক্সিকোর শাসনে ছিলো শ দেড়েক বছর আগেও। তার পর উনবিংশ শতকের মাঝের দিকে মেক্সিকোর সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে আমেরিকা ছিনিয়ে নেয় ক্যালিফোর্নিয়া সহ পশ্চিম দিকের অনেক গুলো রাজ্য। আর এর ঠিক পরে পরেই এখানে সোনা পাওয়া যায়, উনবিংশ শতকের গোল্ড রাশ শুরু হয় তখন। সেই থেকেই ক্যালিফোর্নিয়া স্বপ্নরাজ্য হিসাবে আমেরিকাতে সমাদৃত। চারিদিকের ল্যান্ডস্কেপ যে পালটে গেছে, ঢোকার সাথে সাথেই বুঝেছিলাম।

মরুভূমি গায়েব, তার বদলে গাঢ় সবুজ গাছে ঢাকা পাহাড় শুরু। ঢোকার মুখেই পড়লো লেক টাহো, এই এলাকার বেশ নাম করা একটা টুরিস্ট স্পট। এখানে থেমেছি কিছুক্ষণ, দেখলাম আশে পাশের সব গাড়িতেই হয় মাউন্টেইন বাইক, অথবা জেট-স্কী বাঁধা আছে। বোঝা গেলো, সপ্তাহান্ত পেয়ে অনেকেই ছুটি কাটাতে এসেছিলো। লেক টাহোর পরে শুরু হলো প্রচন্ড খাড়া আরো বেশ কিছু পাহাড় ডিঙানো।

অনেক জায়গাতেই প্রচন্ড বাঁক। আর ক্যালিফোর্নিয়া বলেই ঝাঁকে ঝাঁকে গাড়ি। প্রায় ঘন্টা দুয়েক এই পাহাড়ে উঠা আর নামা করতে করতে অবশেষে পৌছালাম সমতলে। ক্যালিফোর্নিয়াতে এসে রাস্তার দুপাশে বাগান দেখে মনটা ভরে গেলো। ৬টা স্টেট পার হয়ে আসলাম, আর কোথাও হাইওয়ের দুপাশে ফুলের গাছ লাগানো নেই।

আর এখানে ঠান্ডা মোটেও পড়ে না, গরমও খুব বেশি পড়ে না, সেজন্য নানা গাছপালার প্রাচুর্য। যাত্রার শেষের দিক - ইন্টারস্টেট ৮০ ছাড়তে হলো, ৬৮০ আর ৮৮০ ঘুরে যখন এসে পৌছালাম আমাদের গন্তব্য - সিলিকন ভ্যালির মাউন্টেইন ভিউ, তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের চাবি নিয়ে রেখেছিলো বন্ধু শিশির, ওর সাথে যখন অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে পৌছালাম, রাত প্রায় ১০টা। গাড়ির ওডোমিটারের দিকে তাকালাম - যাত্রা শুরুর পর প্রায় ২২৫০ মাইল পেরিয়ে গেছে! আর সময় লেগেছে চার দিন ৩ ঘন্টা। বুধ বার সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে পৌছেছি রবিবার সন্ধ্যায়।

[সমাপ্ত]


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.