আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেদিন ভাত খাওয়ার পয়সা থাকতো না...



(এই লেখাটি লিখেছেন সোহেইল জাফর) ঢাকায় বাসা হলেও য়্যুনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সারা বছর আমি হলেই থাকতাম। মাসখরচা হিসেবে বাড়ি থেকে আনতাম দু'হাজার টাকা। কোনো কোনো মাসে অবশ্য বাবা বোনাস দিতেন। যে মাসে জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রছাত্রীরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ধর্ষকদের ক্যাম্পাসছাড়া করলো, তার পরের মাসে বাসায় গেলে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, "এই যে আন্দোলন হইলো, এর সাথে ছিলি?" আমি বললাম "হ্যা"। বাবা বললেন, "এই যে মেয়েরা হল থেকে র‌্যাপিস্টদের বের করে দিলো, এই মেয়েদের সাথে ছিলি?" আমি বললাম "ছিলাম"।

বাবা আমাকে দর্জির দোকানে ধরে নিয়ে গেলেন এবং দুটি নতুন শার্ট বানিয়ে দিলেন। ওই মাসে মাসোহারা রূপে দুই হাজারের বদলে বোনাস পাঁচশো সহ মোট আড়াই হাজার পেলাম। কিন্তু সচরাচর দুই হাজারই পেতাম। মাহবুব-ও পেতো প্রায় একই পরিমাণ টাকা। টাকাটা খুব কম না হলেও, প্রতিমাসশেষেই আমাদের টানাটানি পড়ে যেতো।

বটতলায় তাজুর দোকানে আমাদের একটা যৌথ বাকির একাউন্ট ছিল, কিন্তু নানা অজুহাতে তাজুর দোকান প্রায়ই বন্ধ থাকতো এবং মাসের শেষের দিকে আমাদেরকে অকুল পাথারে ভাসিয়ে তাজু বাড়ি চলে যেতো। সেই সময়ে আমরা খেতাম কাঠালতলায় খালার দোকানে। কিন্তু মাসখরচের টাকাটা তো আমাদের আগেই ফুরিয়ে যেতো, সুতরাং আমাদেরকে তখন দুপুরের খাবার জোগাড়ের উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই অভিযানে বের হতে হতো। কী সেই অভিযান? একটা এপিঠ-ওপিঠ কাগজ আমরা ফটোকপি করতাম বাকিতে ১৫-২০ কপি। খরচ পড়তো ১৫ টাকার মতো।

ওটাকে আমরা বিক্রি করতাম ২ টাকা করে, মণিশঙ্কর দাশগুপ্তের মতো কেউ কেউ খুশি হয়ে ৫ টাকা পর্যন্ত দিতো। খরচা মিটিয়ে প্রায় ৩০ টাকার মতো লাভ থাকলেই খালার দোকানে ২ জনের খাওয়ার পয়সা উঠে যেতো, এমনকি কোনো কোনোদিন বেশি লাভ হলে আমরা কোমল পানীয় পর্যন্ত কিনে খেতাম। কী থাকতো ওই কাগজে? আমাদের একটা যৌথ লেখা। পদার্থবিজ্ঞানী শিমুলের (বর্তমানে সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে কর্মরত) বদৌলতে আমরা লেখাটার একটা কম্পোজড কপি পেতাম। ওটাকেই বিপদের দিনে ফটোকপি করে বিক্রি করতাম।

কী ছিলো ওই লেখাগুলোর বিষয়? হাবিজাবি নানা বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়ে সাধারণ ভাষায় লেখাপত্র নেই, সেইসব বিষয়ে রীতিমতো "গবেষণা" করে আমরা লেখা তৈরি করতাম যৌথভাবে। যেমন- আমেরিকার আদি মানুষ, গুহাশিল্পকলা, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ইত্যাদি। ওই লেখাগুলো এবং কিছু নতুন লেখা দিয়ে এই ব্লগটিকে সাজানো হচ্ছে। জানাবেন আপনাদের কথা।

সনির্বন্ধ অনুরোধ রইলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।