আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিশন স্মার্টনেস! (আব্‌জাব)

কত অজানারে!

সিলিকন ভ্যালির নাম শুনেছেন নিঃশ্চয়। ঐ যে, যেখানে মরুভুমির মধ্যে কিছু তথ্য প্রযুক্তিবিদ আর সফটওয়ার প্রকৌশলিকে আটকে রাখে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো! অবশ্য মোটা বেতনের ব্যবস্থাও থাকে তার সাথে। এরা এখানে বসে বসে সারাদিন একটা কাজই করে তা হল বিভিন্ন প্রযুক্তির উদ্ভাবন আর উৎপাদন। তো এখানে বসে বসে সারাদিন কম্পিউটার টেপাটেপি করতে করতে তারা নাকি তাদের সভ্যতা ভব্যতা সব গুলিয়ে ফেলে! হয়ে ওঠে আমার মতই আনস্মার্ট!! আর এইখানেই সিলিকন ভ্যালিতে আমার ইন্টারেস্ট। আফটার অল আমিও তো ৭/৮ ভাগ সফ্‌টঅয়ার প্রকৌশলি।

উপরন্তু আনস্মার্ট হবার কাজটা আগেই সেরে বসে আছি। বুয়েটে ভর্তি হবার আগেই কোন এক খবরে পড়েছিলাম, এই সব গর্ধবরা যখন তাদের দুপকেট ভরা টাকা নিয়ে সভ্যসমাজে আসে তখন বেশ বিপদে পড়ে যায়। কোথায় যে কি করতে হবে তাতো আর তারা জানে না! সব কিছুই ভজঘট পাকিয়ে ফেলে। তাই এদেরকে স্মার্টনেসের সবক দেবার জন্যেই এক মহিলা লন্ডনে এক স্মার্টনেসের স্কুল খুলেছেন! সেই স্কুলের বেতন শুনলে অবশ্য সবার মাথা চক্কর দিয়ে উঠবে। তাই আর বলছিনা।

আর এইসব গাধাদেরতো একটা জিনিষেরই অভাব নেই তা হল টাকা। এদিকে আমারও স্মার্ট হবার খুব শখ(এবং প্রয়োজন)। কিন্তু কি আর করা এত টাকা আমার নেই। সেজন্যই ভাবলাম বুয়েটে যাই, সেখান থেকে সিলিকন ভ্যালি, তারপর কিছু টাকা পয়সা কামিয়ে সোজা স্মার্টস্কুলে উচ্চশিক্ষা!! আমাকে আর পায়কে তখন! কিন্তু বুয়েটতো আর বিচ্ছিন্ন মরুভুমি নয়, সভ্য সমাজেরই অংশ। তাই সেকেন্ড ইয়ারে(লেভেল টু) উঠতেনা উঠতেই আমিও এখানে সবকিছু ভজঘট পাকাতে শুরুকরলাম।

তার উপর পিতাজী আজ্ঞা দিলেন। স্মার্ট হতে!! প্রবল দুঃশ্চিন্তায় পড়েগেলাম। সারাদিন হন্যে হয়ে এর ওর কাছে যাই আর বলি, “দোস্ত আমারে একটু স্মার্ট বানাতো!” বিভিন্ন জন বিভিন্ন টিপ্‌স দেয়। কেউ কেউ আবার ইঙ্গিত পুর্ণ হাসি দিয়ে বলে, “তোর কি লাগবে তা আমি জানি”!! বড় ভাইরাও কোন সাহায্য করতে পারেনা। যখন হতাশায় প্রায় ভাঙ্গে পড়েছি, তখনি এক বন্ধু মারফত এক স্মার্টনেস স্কুলের খবর পেলাম! এই বাংলাদেশেই!! তাও আবার ঢাকাতেই!!! এক বুক আশা আর তার দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে হাজির হলাম স্মার্ট স্কুলে।

গিয়ে দেখি অবাক কান্ড! আমার মতই আনস্মার্ট আরো বিশ পঁচিশ জন হাজির হয়েছে! এবং তাদের মধ্যে দশ এগার জন আবার মেয়ে!!! ক্লাস নিচ্ছেন পাকিস্থানী এক ভদ্রলোক। পাকিস্থানী দেখে বিরক্ত হলাম, কিন্তু স্মার্ট হওয়া আমার খুবই দরকার। তার উপর আফ্রীদি কাট্‌ চেহারা। দারুন স্মার্ট!! আমি ভাবলাম, পেয়েছি বাছাধন! বুয়েটেতো বেশি ভাল করতে পারলাম না তবে এইখানে আর ছাড়ছিনা। এমন পড়াশুনা করব যেন টিচার হিসেবে এখানেই জয়েন করতে পারি।

প্রথম তিনদিন ফ্রী ক্লাস। ক্লাসে অই পাকিস্থানী ব্যাটা এটা সেটা কি জানি বলে। কিভাবে হ্যান্ডসেক করতে হবে শেখায়। আরো অনেক কিছুই শেখায়। আর দুয়েক মিনিট পরেই বলে, “এখন আপনারা দাড়ান।

এক হাত উপরে তুলুন। তার পর একটা লাফ দিন”। কখনোবা হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল মুঠি পাকিয়ে ধরে পাঁচটা লাফ দিতে বলে! আমার হচ্ছে ব্রেইন খারাপ! তার উপর শুধু হ্যান্ডসেক করারই নাকি পাঁচ রকমের নিয়ম!!! এত কিছু কি আর মনে থাকে। তাই ওসব না পারলেও লাফ গুল বেশ উৎসাহের সাথেই দেই। কখনো বা পাঁচটার জায়গায় সাতটা দেই।

আর মনে মনে স্মার্টনেস থেকে আর কত লাফ পিছনে আছি তা হিসাব করি। ফ্রী তিনটা ক্লাস শেষ হয়ে গেল। এর পর ভর্তি হবার পালা। কিন্তু ভর্তি ফী দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ! এখানে পড়াশুনা করার জন্যও যে মাঝারি সাইজের একটা সিলিকন ভ্যালি থেকে ঘুরে আসতে হবে আগে!! তার উপর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে কোন বৃত্তির ব্যবস্থা নেই। তাই বিরস বদনে, মনে মনে ‘হে দারিদ্র তুমি মরে করেছ মহান’ আবৃতি করতে করতে ফিরে আসলাম হলে।

তবে হ্যান্ডসেক করার কোন নিয়ম মনে না থাকলেও কিভাবে এক হাত আর এক পা উপরে তুলে পাঁচটা লাফ দিতে হয় তা মনে আছে বেশ। তাই আমি দারুন স্মার্ট! (বুঝতেই পারছেন!!) বিদায়।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।