আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাপিত জীবন - ১: লিগ্যাল, ইলিগ্যাল ফ্যান্টাসী বনাম স্বপ্নের রাজকন্যা।



বন্ধুর বিয়ের পার্টি। বহুদিন পর বন্ধুরা সব এক হই। সাব্বিরটা একটু মোটা হয়েছে। বিশ্বজিত আগে ফর্সা ছিল, ইদানীং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রাহী বরাবরের মত আড়চোখে মেয়েদের দেখে।

মাঝে মাঝে দুষ্টু কথা শুনলে একটু আধটু হাসে। মন্টু নতুন গাড়ি কিনেছে। কর্পোরেট পয়সায় খুব সহজেই বোধ হয় গাড়ি কেনা যায়। পার্টি দুপুরে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, অথচ আড্ডা ভাঙে না।

পার্টি হলে বড় বড় করে লেখা, বিকাল ৪.৩০ এর মধ্যে হল খালি করতে হবে। আমরা পাত্তা দেই না। এসব কথায় পাত্তা দিতে নেই। পৃথিবীতে কি হয় আমরা জানি না। জানতে চাইও না।

কী দরকার এত কিছু জেনে? লেকের ওপারে টুপ করে সূর্যটা ডুবে যায়। মনটা কেমন উদাস উদাস লাগে। দূর থেকে গান ভেসে আসছে। হায়দার হোসেনের গান। গানের কথাগুলো মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করি।

শোনা যায় না। হবে নিশ্চয়ই জ্বালাময়ী কোনো গান ------- অথবা টিভি চ্যানেলগুলোতে সদ্য মুক্তি পাওয়া আর্মিকে তেল মেরে গাওয়া গান। লোকটা পারেও বাবা! এক অঙ্গে সহস্র রূপ! মোবাইলের রিঙটোন এখন আর মনে প্রত্যাশা জাগায় না। নিতান্ত বিরক্তিতেই ধরি ফোনটা । জয়িতার ফোন।

অসম্ভব মিষ্টি গলা। কিন্তু, এই মুহূর্তে কেন যেন মিষ্টি গলা শুনতে ইচ্ছে করে না। তাকবিমের খড়খড়ে গলার হাসিটাই বড্ড আপন মনে হয়। ফোনটা কেটে দেই। আবার ফোন আসে।

আন নোন নাম্বার। আননোন নাম্বার মানেই এক রহস্য। 'ফোন বুথ' সিনেমার মত, ইউ হ্যাভ গট অ্যা ফোন কল, এণ্ড ইট মাইট বি ফ্রম এনিবাডি ------------- ফোনটা রিসিভ করি। - হ্যালো। - আলভী, এটা আমার নতুন নাম্বার।

- কে? - ভয়েস শুনে চিনতে পারিস নাই? দিনে কটা মেয়ের সাথে কথা বলিস? কথোপকথনের এই পর্যায়ে আমি আমতা আমতা শুরু করি। - না , মানে চিনতে পারব না কেন? শান্তা, কেমন আছিস? - গাধা, আমি সিলভী। - ও সিলভী। তোর গলাটা কেমন যেন লাগছে। আমার সেটে সমস্যা বুঝলি, ভয়েসটা কিয়ারলি শোনা যায় না।

ওয়ারিদ আসলে নাকি সস্তায় নোকিয়া এন সিরিজের সেট দেবে। তখন চেঞ্জ করব, বুঝলি? - চাপাবাজি করার আর জায়গা পাস না। তোর সেটে কোনো সমস্যা নাই। নাহ, সিলভীকে হাইকোর্ট দেখানো যাবে না। সেয়ানা মেয়ে।

এরচেয়ে প্রসঙ্গ ঘোরানো ভাল। - হ্যালো, সিলভী শোন, নাম্বার চেঞ্জ করলি ক্যান? - আমার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঝগড়া হইছে। রাগ করে মোবাইল জানালা দিয়ে ফেলে দিছি। - তোর কয়টা বয়ফ্রেন্ড? মাঝে মাঝে তো আমারেও জান ডাকিস। - তুইও আমার বয়ফ্রেন্ড।

- ও: ---------- আচ্ছা, আচ্ছা, ভাল। - অভিক আমার লিগাল বয়ফ্রেন্ড ---- আর তুই ইলিগ্যাল। - তোর এরকম আর কে কে আছে, সত্যি করে বলতো। লুকোবি না কিন্তু। - যাহ্, তোর কাছে লুকোবো কেন? মানুষ লিগ্যালের কাছে ইলিগ্যাল লুকোয়।

কোনোদিন শুনছিস, ইলিগ্যালের কাছে লিগ্যালটা লুকোয়? তোকে বলতে আমার কোনো সমস্যা নাই। এরপর সিলভী তার ইলিগ্যালদের গল্প বলতে শুরু করে। আমি আস্তে করে ফোনটা কোলের ওপর নামিয়ে রাখি। ওপাশ থেকে সিলভী কী বলছে তা শোনার আর দরকার নেই আমার। দিনটিই যেন কেমন! মন বিষণ্ন করা! আজ কারো ইলিগ্যাল হতে ইচ্ছে করে না।

লেকের ওপর কাল হয়ে যাওয়া অন্ধকার দেখে স্বপ্নের কোনো রাজকন্যার কথা ভাবতে থাকি - যে লিগ্যাল, ইলিগ্যাল বোঝে না। [বানান ভুলগুলো মাপ করে দিয়েন। আমি ইউনিকোডে অভ্যস্ত না। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।