আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেনাপোল থেকে ওয়াগা-০৫

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠলাম। আমাদের আশেপাশের সব যাত্রীই পাঞ্জাবী শিখ। সবারই মুখে দাঁড়ি আর মাথায় পাগড়ি আর প্রত্যেক শিখই যেন “হাসি মাস্টার”- কথায় কথায় শুধু হাসে। ট্রেইন এটেন্ডেন্স আমাদের জানালো যে, ট্রেইন ২ঘন্টা লেইট তাই আমরা এখন বেলা এগারোটাইয় পৌঁছাবো অমৃতসারে। সময়মত(পরিবর্তিত) আমরা পৌঁছে গেলাম অমৃতসারে।

ওয়াগা বর্ডার খোলে সোমবার আর বৃহস্পতিবার (আর পাকিস্তান থেকে মঙ্গলবার আর শুক্রবার) আর আমরা পৌঁছে একদিন আগেই অর্থাৎ একদিন আগেই। একদিন আমাদের থাকতে হবে অমৃতসারে। রফিক ভাইয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী রেলস্টেশনেই এক রিকশাচালক কে পাওয়া যাবে নাম “জগজিৎ”, সে রিকশা চালনার পাশাপাশি টুরিস্ট গাইড হিসেবেও কাজ করে। আমরা স্টেশনে নেমে সেই তথাকথিত জগজিৎ কে খুঁজে পেলাম না, সে যাত্রী নিয়ে কোথাও গিয়েছে; এখন কী করা? ঠিক সেই সময় আরেক রিকশাওয়ালা বলল-সে আমাদের জন্য হোটেল ঠিক করে দেবে আর আর জগজিৎ ও সেই হোটেলেই নিয়ে যায়। আমরা সস্তায় ভাল মানের হোটেল পেয়ে গেলাম (প্রতিদিন ৪০০ রুপি)।

ওই রিকশাওয়ালাকে বলে দিলাম সে যেন জগজিৎ পাঠিয়ে দেয়। আমি শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছি আর তৌহিদ গোসল করছে ঠিক সেই সময় কাঁচা-পাকা চুলের মধ্যবয়স্ক এক লোক এসে হাজির হল, বুঝতে পারলাম ইনিই জগজিৎ। উনাকে বললাম যে আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি আর পাকিস্তানে যাবো। উনারও সব জানা,বললেন কাল সকালে ট্রেইন চলবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আজকের দিনটা কিভাবে কাটানো যায়? ঊনি বললেন অনেক অপশন আছে—মুভি দেখা, গোল্ডেন টেম্পলে(স্বর্ণ মন্দির) যাওয়া,জালিয়াওয়ালাবাগ দেখা ইত্যাদি।

আমি বললাম ঠিক আছে সব জায়গায়ই যাব। কিন্তু প্রথম কাজ হল দুপুরের খাবার খাওয়া। খাবার খাওয়ার পর জগজিৎ বলল এখন মুভি দেখে ফেলেন আর গোল্ডেন টেম্পলে বিকালে যাওয়া যাবে। গেলাম মুভি দেখতে। মুভি দেখছি “লাগে রাহো মুন্না ভাই”; সিনেমা হল টা বাইরে থেকে দেখতে তেমন কিছুনা কিন্তু ভেতরে জটিল সাউন্ড সিস্টেম লাগানো আমাদের মধুমিতা আর স্টার সিনেপ্লেক্স থেকেও ভাল।

যাই হোক মুন্না ভাইইয়ের “কেমিক্যাল লোচা” দেখে খুব মজা পেলাম। এবার আমরা যাচ্ছি স্বর্ণ-মন্দির। এটা হচ্ছে শিখদের উপাসনালয়। খুব সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন এই স্বর্ণ-মন্দির-ভেতরে ঢুকেলেই একটা পবিত্র ভাব আসে মনে। এর ভেতরে যাবার জন্য মাথার চুল বাঁধতে হয়(টুপির মত)।

আমরা অবাক হয়ে স্বর্ণ-মন্দির এর নির্মাণশৈলী দেখলাম। পুকুরের মাঝখানে ছোট একটা সোনালী রঙয়ের মন্দির আর ভেতরে ধর্মীয় গান হচ্ছে। এরপর আমরা গেলাম জালিয়াওয়ালাবাগ এ। ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ারের কুকীর্তি আজও বিদ্যমানওখানে । এই পুরো জায়গাটি ইন্ডিয়ান কংগ্রেস কিনে নিয়েছে আর রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

ঘুরাঘুরি শেষে আমরা রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম। লম্বা সফর করে শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়লাম। অমৃতসার থেকে সকাল ৭.৩০টায় ট্রেইন যাবে আটারীতে আর সকাল ৯.৩০টায় আটারী থেকে ট্রেইন ছাড়বে পাকিস্তানের ঊদ্দেশে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.