আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কষ্টগুলো এমন কেন ?.......

প্রতিটি সর্যাস্তে বুক বাঁধি একটি অন্যদিনের সূর্যোদেয়র প্রত্যাশায়.......

আজকের আকাশটা ঘন মেঘে ঢাকা। বৃষ্টি হবে। কেমন একটা মন খারাপ করা ওয়েদার। ওয়েদার মানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে বা আদৌ প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে কি না আমি জানি না। তবে আজকে যে আমার মনটা ভীষণ, ভীষণ খারাপ হয়ে আছে এটা সত্যি।

অনেক গুলো মন খারাপ করা ব্যাপার আমার মনের ছোট্র আকাশটা ঢেকে রেখেছে। আমি চেষ্টা করি সব সময় মন ভাল রাখতে। কিন্তু মাঝে মাঝেই কপট ভাল লাগায় কষ্টগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি না। প্রবাসের এই একাকী জীবনে খারাপ লাগা দিন গুলো কি ভয়াবহ ভাবে কাঁটে, অনেকের পক্ষেই তা বুঝা সম্ভব নয়। গত রাতে আমাদের কানাজাওয়া বাংলাদেশী কমিউনিটি-র একজন সদস্য, মনি ভাই, জাপান ত্যাগ করেছেন।

আগামী সাতাশ তারিখে আরো একজন দেশে ফিরে যাবেন। কারো দেশে যাওয়া দেখলে কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে যায়। আজকের মন খারাপ লাগাটা যতটা না ওয়েদার ইনফ্লুয়েনস্ড, তার চেয়ে বেশী মনি ভাইয়ের দেশে ফেরা। যতটা সম্ভব যেষ্টা করি দেশকে, দেশের সুন্দর স্মৃতি, মনের আনাচে কানাচে একটু একটু করে স্থান দখল করে থাকা মানুষ গুলো, গ্রাম, নদী, খোলা প্রান্তর, দখিনা বাতাস, গ্রামের পায়ে চলা মেঠো পথ, সেই পথে হেটে বেড়ানোর সময় পায়ে জড়িয়ে যাওয়া ধুসর মায়ার ধুলো, সব সব ভূলে থাকতে। তারপর ও যখন মাঝে মাঝেই নষ্টালজিয়াতে ভুগী, পারি না।

কেন জানি অতীতটা মনের ক্যানভাসে হঠাৎ করেই জীবন্ত হয়ে ওঠে। তারপরও মনকে বলি এইতো আর ক'টা দিন। তারপরই তো আবার সবাইকে কাছে পাব। মাকে জড়িয়ে ধরে আদর নেব। বাবার বকুনি খেতে ও আমার আর খারাপ লাগবে না।

রাত দুপুরে বিলের ঠিক মাঝখানটায় ছেট্র ব্রীজে বসে ঝিরিঝিরি বাতাসে মন এলিয়ে দিয়ে মাটির সোঁধা গন্ধ নেব। অন্ধকার রাতে ঘরের পেছনের ছোট্র ঝোপটাতে অসংখ্য জোনাকীর মিটিমিটি আলোর পেছনে ঘুরে ঘুরে অস্থির হব একটা জোনাকী ধরে আদরের নিয়াজ কে দিতে। একদম ভরদুপুরে পুকুর পাড়ের বড় কড়ই গাছটাতে বসে যখন কোন অলস পাখি, ফিঁঙ্গে কিংবা দোয়েল, আপন মনে ডেকে যাবে, আমি সিঁথানের দখিনা জানালা খুলে দিয়ে সেই গান সুনে যাব আধবোঁজা চোখে। কম্পিউটার কিংবা সিডি প্লেয়ারের গানের চেয়ে আমার গ্রামের সেই ছোট্র পাখির গান যে আরো বেশী করে ছুঁয়ে যায় আমার হৃদয়। গাছের সবচাইতে বড় জাম্বুরাটি পেরে ভর্তা বানিয়ে নিয়ে এসে ছোট বোনটি যখন দরজার পাশে দাড়িয়ে ডাকবে, আমি তখন তার আনন্দে চিকচিক করা মুখ খানির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকব।

মায়ের হাতে বেড়ে দেয়া এক মুঠো ভাত আর এক চামচ লাউ শাক দিয়ে পেট পুড়ে খেয়ে নেব। এক বারও বড় মাছ কিংবা তাজা গরুর গোস্ত খাওয়ার বায়না ধরব না। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে গোয়াল থেকে গরু বের করে দুধ দোইয়ে এনে মাকে বলব মাটির চুলোয় হালকা তাপে গরম করে দিতে। তারপর সিলভারের মগে নিয়ে সমস্ত তৃপ্তি মিশিয়ে একটানে শেষ করে ফেলব। এক চামচ চিনি ও চাইব না।

বন্ধুদের সাথে অভিমান করে রাত দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে সোজা চলে যাব অন্ধকারে ঘুমিয়ে থাকা আমার শান্ত গ্রামে। নির্জন মাঠ, ঘাট, তেপান্তর পেড়িয়ে দুপুর রাতে দরজায় প্রথম বার কড়া নাড়ার শব্দ শুনেই মা বলবে, কে ? আমি ছোট্র করে বলব, মা আমি। মা আমার ঘুম জড়ানো চোখ নিয়ে দরজার কপাট খুলে দেবে। তারপর মায়ের গলা জড়িয়ে লক্ষ্যি সোনা হয়ে ঘুমিয়ে পড়ব। শীত লাগলে মায়ের আচল টেনে শরীর ঢেকে নেব।

আর মায়ের কানে কানে বলব, মা আমি আর কখনোই তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবনা। তুমি তোমার ছোট্র আঁচল আগলে রেখ আমাকে। ভরদুপুরে বাংলো ঘরের সামনের ছোট্র আম গাছটার নীচে সবুজ ঘাসে গা এলিয়ে বসে শীতল বাতাসে মন জুড়াবো। বলব, এই ছায়া ছেড়ে আমি আর কোন ছায়ায় যেতে চাই না। মরলে ও যেন এই ছায়ায়-ই ঘুমিয়ে থাকতে পারি অনাদি অনন্ত।

কেউ কি বলতে পারেন, উপরে উঠার এই সিঁড়িটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে ? এই মায়ার সিঁড়িটা যে আমাকে আমার কাছের মানুষ, কাছের সব কিছু থেকে দিন দিন দূরে আরো দূরে নিয়ে যাচ্ছে ! আমি আর উপরে উঠতে চাই না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।