আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরদার ফিরোজের টার্মিনেশন!

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

সরদার ফিরোজ নুন এখনও জানেন না তাকে কেন বরখাস্তের নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তিনি 6 জনের বরখাস্ত পত্র টাইপ করে এইচআরডি ম্যানেজারকে দিয়েছেন এবং প্রতিবার অপেক্ষা করেছেন তার বরখাস্তের ড্রাফট এই বুঝি ম্যানেজার সাহেব তাকে টাইপ করতে দিলেন। কিন্তু না। ম্যানেজমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল সেক্রেটারীদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। অফিস খরচ কমাবার জন্য এখন থেকে ম্যানেজাররা নিজেদের সেক্রেটারিয়াল কাজ নিজেরা করবেন।

একবারে মাসে 90 হাজার টাকা বেঁচে গেল। ফিরোজ নুন সে মিটিং এর কার্য বিবরনী লিখেছেন, তিনি দেখেছেন তার বিদায়ের কথাও সেখানে বলা আছে। কিন্তু প্রতিবার নতুন একজনের টার্মিনেশন লেটার টাইপ হচ্ছে, তিনি প্রতিবারই বসে থাকেন ফাঁসির রজ্জু গলায় পড়তে। কিন্তু সমন আসে না। এভাবে তিনটি দিন তিনি অবিন্যস্ত বাসায় ফেরেন।

যতটা ভেঙে পড়ার কথা নয় তারচেয়ে নড়বড়ে তার 50 বছরের অশক্ত শরীর, দূর্বল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নিয়ে যখন ঢাকাতে বসবাসের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তেমন সময় একেবারে নাই হয়ে যাওয়া উপার্জনের গণিত তাকে আরো বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। বাসায় ফিরে স্ত্রীকে কিছু বলতে পারেন না। বড় মেয়ে গ্রাজুয়েশন করছে, এরপরে দুই ছেলে, এইচএসসি আর এসএসসিতে - মাসে 15 হাজার টাকাতে যে কিভাবে দুস্বপ্ন দেখে দিনরাত - তাতে এ প্রানাতিপাত আঘাত কিভাবে সামলাবে তার ডায়বেটিস, ভেবে অস্তির হাতে তিনি কম্পিউটারে আঙুল চালান। আজকেও আসেনি বরখাস্তের নোটিশ। আশার বানী হচেছ একজন রাখা হচ্ছে টোটাল অফিসে।

সিনিয়রিটি হিসাবে তিনি আশান্বিত হন। ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই তার মানবীয় দিকটা বিবেচনা করবেন, এ বয়সে কোথায় চাকুরী পাবেন! কিন্তু ভুল ভাঙে শেষ বিকেলে, সবচেয়ে কনিষ্ট সেক্রেটারীর জব এক্সটেনশন লেটার তাকেই টাইপ করতে হলো। সরদার নুনের চোখের তারা দপ করে জ্বলে উঠে আবার নিভে যায়। চিঠি লিখতে লিখতে তিনি বারবার সাইফুল ইসলাম নামটা কেটে নিজের নামটা লেখেন। প্রিন্ট নেন, তারপরে বসের সিগনেচারের ঘরে নিজের সিগনেচার বসিয়ে দেন।

নিজের পার্সোনাল ফাইলে সেটা ঢুকিয়ে রাখেন। এইচআরডি ম্যানেজার হাঁক দেয়, কই নুন সাহেব আপনার হলো! চিঠিটা দেন, আমি সাইন করে দিচ্ছি! ব্যতিব্যস্ত নুন সাহেব নাম পরিবর্তণ করতে ভুলে যায়, নিজের নামে এক্সটেনশন লেটার লিখে প্যাডে প্রিন্ট নিয়ে স্যারের রুমে প্রবেশ করেন! ম্যানেজার সাহেব চিঠিটা নিয়ে সেখানে চোখ বুলাবার আগে, সরদার নুনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকান, ভেজা কণ্ঠে বলেন, আমি সত্যিই দুঃখিত নুন সাহেব, এ্যাস পার দি পলিসি আমি আপনাকে টার্মিনেশন লেটারটা দিচ্ছি, আপনি তো সবই জানেন! সরদার নুনের ফ্যাকাসে চোখ হালকা নড়ে ওঠে মাত্র, নির্বিকার তিনি হয়ে গিয়েছিলেন আগেই, এবার শুনে কেবল একটা দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে আসে। একবার চোখ বুলিয়ে নেন, ইউ আর নো মোর রিকোয়ার্ড! কালকে থেকে ছুট্টি। কোন কথা তার মুখে আসে না, কিছু না বলেই স্যারের রুম থেকে বের হয়ে আসেন। দুইদিন পরে ফিরোজ নুনের বাসায় তার টাইপ করা এক্সটেনশন লেটার চলে আসে।

এইচআরডি ম্যানেজার বেখেয়ালে তাতেই সিগনেচার করে ডেসপাসে দিয়েছিলেন। ফিরোজ নুন চিঠি পেয়ে উৎফুল হয়ে ওঠেন। জীবনে এতটা খুশী হতে তাকে কখনই দেখা যায় নি। ্ল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.