আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রিকশায় একদিন

স্মৃতিচারণ ও এলোমেলো ভাবনা। বেশিরভাগই জগাখিচুড়ি।

রিকশায় আসছিলাম ঢাকা কলেজ থেকে লালমাটিয়া। সময়টা হবে 1998 সালের মাঝামাঝি। তখন এতো নিয়ম-কানুন ছিল না।

সব রাস্তাতেই রিকশা চলত। আর অফিসের সময় পার হলে রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই থাকত। তা রিকশাওয়ালা ভাই খুব জোশে ছিলেন ওই দিন। এলিফ্যান্ট রোডের মোড় পেরিয়ে রিকশা চালানো শুরু করলেন উল্কাবেগে। ভাব-সাব দেখে মনে হলো কপালে খারাবি আছে।

এই গতিতে চলতে থাকলে ট্রাকের নিচে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। একথা বলতেই এক গাল হেসে বললেন, "ভাইজান কি ডরাইছেন"। আমার মেজাজ গেল খিঁচড়ে, বললাম আমার ভয়ের তো কিছু নাই। বিয়ে-শাদী করি নাই। তাই আমি মরলে দুনিয়াতে কোন লেজ রেখে যাব না।

আরও বললাম "আপনি মরলে আপনার পরিবারের কি হবে?" এর উত্তরে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে মরার নাকি কোন চান্স নেই। আর তার কাচ্চা-বাচ্চা নাই। তাই মারা গেলে নাকি তেমন কিছু হবে না। আমি আর কথা বাড়ালাম না। দেখতে দেখতে রাপা প্লাজার মোড় চলে আসল।

তখন ওই মোড়টাকে 27 নম্বর মোড় বলে সবাই চিনত। যাই হোক, বেরসিক ট্রাফিক সার্জেন্ট কথা-বাতর্া নেই, হাত তুলে থামতে আদেশ দিলেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভাই যে স্পিডে যাচ্ছিলেন, তাতে এত স্বল্পসময়ের নোটিশে থামা সম্ভব ছিল না। আবার ততক্ষনে অন্যদিকের গাড়ি চলা শুরু হয়ে গেছে। বেগতিক বুঝে সে কষে ব্রেক করল।

কিছুক্ষন মাথা কাজ করছিল না। একটু ধাতসহ হতে দেখলাম, আমি রিকশাওয়ালার সিটে, রিকশাওয়ালা রিকশার বাইরে হাত-পা ছড়িয়ে চিৎপটাং আর সামনের চাকার আঘাতে ট্রাফিক সার্জেন্ট ধরাশয়ী। আর আশেপাশের যাত্রীরা আমাদের দুরবসহা দেখে 32 পাটি দাঁত বের করে হাসছে। সার্জেন্ট সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে প্রথমেই রিকশাওয়ালাকে দু'ঘা লাগিয়ে দিলেন। তারপর দেখি 2 কনস্টেবল এসে আরও চার ঘা বসিয়ে দিলেন।

বাঘে ছুলে 18 ঘা আর পুলিশ ছুঁলে নাকি ছত্রিশ ঘা, তা বেচারা রিকশাওয়ালার অবসহা দেখে বুঝতে পারলাম। ট্রাফিক সার্জেন্টকে একটু অনুরোধ করে বললাম যে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, উনারা যদি একটু রিকশাওয়ালাকে ছেড়ে দেন তাহলে আমার বিশেষ উপকার হয়। আমি বাংলাদেশের যে কয়জন পুলিশের শরনাপন্ন হয়েছি বা পুলিশ আমার শরনাপন্ন হয়েছেন, তাদের সিংহভাগ-ই খাঁটি ভদ্্রলোক ছিলেন। কখনও কেউ আমার কাছে ঘুষ চান নি বা আমাকে হয়রানি করাননি। ইনিও ব্যতিক্রম ছিলেন না।

আমার কথায় আরও দু'ঘা লাগিয়ে বেচারাকে ছেড়ে দিলেন। বলাইবাহুল্য এতে 2 কনস্টেবল খুবই মনঃক্ষুন্ন হয়েছিল। এর বছর দু'য়েক পর, আমি এক ভদ্্রলোককে একই অবসহায় ধানমন্ডিতে দেখেছিলাম। রিকশার ব্রেকের কারনে স্যুট-প্যান্ট পরা ভদ্্রলোক ছিলেন রিকশার সিটে, আর রিকশাওয়ালা যথারীতি রিকশার বাইরে। খুবই হাস্যকর দৃশ্য।

কিন্তু মন খুলে হাসতে পারি নাই। হাসব কিভাবে? নিজেও যে ওই একই ঝাঁকের কই!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.