আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুহাম্মদ: তাঁর নবী হয়ে ওঠা -1

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

মাইকেল হার্ট তাঁর "হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পিপল" বইটাতে এক নম্বরে দিয়েছেন মুসলিমদের রসুল মুহাম্মদ (সা) এর নাম। অনেকেই একমত হবেন, অনেকে হবেন না। তবে যারা একমত হবেন, তাদের একমত হওয়ার কারণটাও থাকবে ভিন্ন ভিন্ন। কেউ কেউ বলবেন এখনকার বিশ্বের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তাঁর প্রভাব বিদ্যমান, অপর আরেক দল বলবেন, পশ্চিমা বিশ্বের আলোর মশালটা মুহাম্মদ (সা) এরই জ্বালানো।

ডেনিশ কার্টুন নিয়ে সারা বিশ্বে যা ঘটে গেল, তাতে পৃথিবীর যে কোন সচেতন নাগরিককে ভাবাতে বাধ্য, মানুষটা কে? একজন নিয়ে হালকা পাতলা বিদ্রুপের জন্য এত কিছু কেন? মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে আমার বিস্তারিত জানার ইচ্ছার কারণ আরও গভীরে। ছোট বেলা থেকেই জেনে আসছি মুহাম্মদ (সা) আমাদের রসুল। এত শ্রদ্ধা, এত কত কিছু... কিন্তু দু:খজনক তাঁর জীবন সম্পর্কে গুছিয়ে কিছু জানতাম না। বিচ্ছিন্ন হাদিস পড়েছি, স্কুলের ধর্ম বইয়ে প্রতিবছর তাঁর সম্পর্কে অল্প স্বল্প কিছু থাকতো। এখানে সেখানে তাঁর জীবনের কত ঘটনাই পড়লাম।

কিন্তু কোনটা আগে যায়, কোনটা পরে, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিলো না একদম। সত্যিই প্রয়োজন বোধ করছিলাম মুহাম্মদ (সা) এর জীবনী পড়ার। ইয়াহিয়া এমেরিক সম্পর্কে আগেই শুনেছি। আমেরিকার কনভার্টেড মুসলিম এবং লেখক। তিনি লেখালেখি করতেন মুসলিম হওয়ার আগেই।

মুসলিম হওয়ার পরে লেখক সত্ত্বাকে কাজে লাগিয়েছেন ' কমপ্লিট ইডিয়টস গাইড টু আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইসলাম' এর মত চমৎকার কিছু বই লিখে, যেগুলো মূলত অমুসলিমদের জন্য লেখা। শক্তিশালী লেখনীর সাথে তাঁর বিশ্লেষণী ক্ষমতা তো আছেই, সাথে যুক্ত হয়েছে এমেরিকের কনভার্শন ফ্যাক্টর। কোন রকমের পূর্ব ধারণা (বা পূর্ব 'ভালো ধারণা') ছাড়া ইসলাম এবং মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে পড়াশোনা করে তিনি নিজের জীবন বদলে দেয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন... এই ব্যাপারটা করার সুযোগ জন্মগত মুসলিমদের থাকে না। 'ত্রিটিক্যাল লাইভস: মুহাম্মদ' বইটা লেখা হয়েছে একজন বিশ্বাসীর বিশ্লেষনী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। লেখা পড়ে বুঝা যায়, লেখকের কাছে বিশ্বাসটা অযৌক্তিক না।

মরুভূমির মাঝখানে একটু খানি ভূখন্ডে খুনাখুনিরত অনাচারময় মানুষের মধ্যে মুহাম্মদ (সা) এর মত একেবারেই আলাদা, বিপ্লবী, বিশুদ্ধ মানুষ আকাশ থেকে পতিত হওয়ার মত হঠাৎই এসেছেন... ঠিক এরকম একটা ধারণাই বেশির ভাগ মুসলিমের মধ্যে। কিন্তু লেখক প্রাচীন ইতিহাসের পাতা থেকে আপনাদের তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধার্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে নিয়ে যাবে। কি করে মুখে মুখে কবিতা বলিয়ে অতিথি পরায়ন বেদুঈন দুধ মা হালিমার কল্যাণে শহুরে মক্কার কুরাইশদের থেকে একেবারেই আলাদা এবং মার্জিত ছিল তাঁর বাচনভঙ্গি, আচার আচরণ। বাড়ি ফিরে মা হারানো ছোট্ট ছেলেটার দিন কাটতো সমাজ নেতা দাদা আবদুল মুত্তালিবের পাশের কুশনে বসে। চোখে চোখে রাখতে চাইতেন আবদুল মুত্তালিব বাবা মা হারানো ছোট্ট ছেলেটাকে।

চাচার কল্যাণে কৈশোর কেটেছে মাঠে মেষ চড়িয়ে। মক্কা 'নাইট লাইফ' এর জন্য সে কালে বেশ বিখ্যাত ছিল। রাত হতেই নর্তকীদের মেলা, মদের বন্যা এবং অবশ্যই জুয়া। মাঠে মাঠে মেষ চড়াতেন এবং সেখানেই থাকতেন বলে রাতের মক্কা দেখেননি কখনও মুহাম্মদ (সা), সমবয়সী ছেলেদের থেকে এই ব্যাপারটা তাঁকে আলাদা করে দেয়, পরিশুদ্ধ রাখে শুরু থেকে শেষ। এরকম ছোট খাট ঘটনা একটু একটু করে গড়ে তুলে মুহাম্মদ (সা) কে, যা মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, আল্লাহর ডাইরেক্ট অবজারভেশনে হওয়া।

আর অবশ্যই তিনি নিজে 'রিসেপ্টিভ' ছিলেন, তাই ঘটনাগুলো তাঁকে এভাবে বদলাতে পেরেছে। [পাঠকের অনুরোধে পোস্টটা দুই ভাগে দেয়া হলো। পরের পর্ব পাবেন পর্ব দুই

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।