আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প: অনেকটা পথ পেরিয়েছি বলেই (2)

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

ডাক্তারের কথায় চিন্তার রশিটা ছিড়লো আমার। কেমন আছেন আজ ? একগাল হাসি নিয়ে দাড়িয়ে ডাক্তার তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে। আমি আমার চেহারাটা যতোটা সম্ভব করুন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তুষারের কথা মনে করে যে হাসিটা ভর করেছিলো চেহারায়, তা দুর করতে পারলাম না। সুতরাং বলতেই হলো, ভালো আছি।

তিনি আমার ডান হাতটা ধরে পালস মাপলেন। তার খসখসে আঙ্গুলের চাপে বিরক্ত লাগছিলো আমার। যে নার্সটি মাঝে মাঝে এ কাজটি করেন, ডাক্তার সাহেব তাকে নিয়েওতো বেরুতে পারেন ! ব্যথা আছে বুকে ? প্রশ্ন করলেন তিনি। না, আজ তেমন নেই। আপনার ছেলে এসেছিল আজ ? আমি অবাক হলাম।

ডাক্তারও দেখছি সব খবর রাখেন। ছেলে খুব ঘনঘন আসে না এখানে। আসতে চেয়েছিলো। আমি নিজেই না করে দিয়েছি। থাকুক না নিজের জীবন নিয়ে।

অসুস্থতার মাঝে এসে কি লাভ ? তাছাড়া আমি নিজেইতো একা একা থাকতে ভালোবাসি। তারপরও এসেছিলো আজ, আর ডাক্তার সে খবরও রেখেছেন। আমি হেসে বললাম, আপনার সাথে তো কথা বললো যাবার সময়। ও, তাইতো ! দেখুন ভুলেই গিয়েছিলাম। কিছুটা লজ্জিত হলেন ডাক্তার।

বেশ ভালো ছেলে। কি পড়ছে ? প্রশ্ন করলেন তিনি। আপনি যা পড়েছেন। উত্তর দিলাম আমি। খুব ভালো, খুব ভালো, বলে আবারো একগাল হাসলেন ডাক্তার।

একজন নার্সকে আড়ালে ডেকে কিছু একটা বলে বিদায় নিলেন। আমি একা হয়ে গেলাম আবার। উপরে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কতোন। একটু ঘুম ঘুম ভাব এলেও দু:সপ্ন দেখার ভয়ে ঘুমোতে চাইলাম না। আমি ঘুমোলেই যে দু:সপ্ন দেখি, তা নয়।

কিন্তু যখন দেখি, তা এতোই ভয়াবহ ও সে কারণে স্নায়বিক চাপ এতোটা বেশী পড়ে যে, আমার বেশ ক্থদিনের শারিরীক উন্নতি উল্টোদিকে মোড় নেয়। আজ সকালের সপ্নও আমাকে শারিরীক দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। কেয়া অনেকদিন যাবৎ এখানে আসা বন্ধ করেছে। ভালোই করেছে। যা হবার নয়, তা নিয়ে আর তোলপাড় করে কি লাভ ? শুনেছি ডিভোর্সের কাগজপত্র নাকি যোগাড় করছে।

আমার আর কি, নিজে তো তাই চেয়েছিলাম। আমরা দুজন একেবারেই আলাদা মেরুর মানুষ। যে ক্থটা বিষময় বছর কাটিয়েছি একসাথে, তা থেকে আমাদের দু'জনেই দুই ধরণের মুক্তি পেতে যাচ্ছি। তা যত দ্রুত হয়, ততই ভাল। তাই সই করে দেবো যা দরকার, সবকিছুতেই।

কোথাও ঝাঁপ দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে এসব নিয়ে ভাবার অবকাশ কি থাকে ? তুষার কি ঝাঁপ দেবার আগে অন্য কিছু ভেবেছিল ? এতো কথা বললো আমাদের কিন্তু যে কথাটা জন্যে এতোটা আচমকা থেমে গেলো ওর পৃথিবী, তা তো বলে গেলোনা ! প্রায় দেড় মাস আগে এসেছিল কেয়া। অন্যান্য বারের মতো হাজারো প্রশ্নে জর্জরিত না করে চুপচাপ বসেছিলো একপাশে। আমি হাসপাতালের খাবার গলাধরণ করার চেষ্টায় নিমগ্ন ছিলাম। না পেরে একপাশে সরিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাজ কেমন চলছে ? ম্লান হাসলো সে। চোখের তারায় কান্তি আর অবসন্নতার ছোঁয়া।

আমার আবার কাজ ! চলছে একরকম। দেশের খবর পেয়েছো কোন ? হ্যা, ফোন করেছিরাম ক'দিন আগে, ভালো আছে সবাই। তোমার কথা জিজ্ঞেস করলো। তাই নাকি ? একটু খুশী হলাম আমি। তোমার রাজনীতিবিদ ভাইয়ের কি খবর ? আজ কেমন করে যেনো প্রশ্ন করার পালাটা আমার হাতেই এসে গেলো।

ভালো। জেল থেকে বেরিয়েছেন। নতুন সরকার আসার মন্ত্রী হয়েছেন এবার। ভাইএর সাফল্যে কেয়ার চোখে আনন্দের ঝিলিক। চলবে......


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।