আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরিচিত মুগ্ধতা !!



বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বিকালের অধিকাংশ সময় কাটে প্রতীকের। বিকাল বেলা তার মন ঘরে টিকে না বেশি একটা। একদিন বিকালে প্রতীক হঠাৎ করে উত্তরাতে তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবে। তার আর এক বন্ধুও আসবে উত্তরাতে। প্রতীক গেলো উত্তরা বন্ধু সরনের ও সৌরভ এর সাথে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিল।

প্রতীকের বাসা আসাদ গেটের ঐ দিকে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে সে অনেকক্ষণ ধরে বাস আসছে না, অবশেষে একটা বিআরটিসির লাল রঙের ডাবল ডেকার বাস এলো। যথারীতি সে বাসে উঠল বাসটা বেশ ফাঁকা লাগছে, ভাগ্যক্রমে সে জানালার পাশের সিটটি পেল। বাস চলতে শুরু করল। এয়ারপোর্ট এর স্ট্যান্ড পর্যন্ত আসতে আসতে বাসে লোকজনে ভরে গেল।

প্রতীকের পাশের সিটটি খালি আসলে প্রতীক নিজে বুঝতে পারছিল না কেউ তার পাশের সিটটা দেখছে না কেন? যাইহোক হঠাৎ করে প্রতীক দেখতে পেল তার পাশে খুব হুরুম তারুম করে কেউ একজন বসল। প্রতীক কানে হেডফোন দিয়ে মাথা জানালার দিকে দিয়েছিল তাই আওয়াজ ভালো মত শুনতে পাই নাই। তবে দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে একজন মেয়ে বসছে তার পাশে। রাস্তায় বেশ জ্যাম দেখা যাচ্ছে। বাস বেশ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ।

কিছুক্ষণ পর বাসের কন্ট্রাকটারের আগমন ভাড়া আদায়ের জন্য। একে এক সবার ভাড়া আদায়ের পর বাসের কন্ট্রাক্টর এলো প্রতীকের সিটের কাছে। কন্ট্রাক্টরঃ মামা কোথায় যাবেন? প্রতীকঃ এইতহ আসাদ গেট যাব। কত দিব মামা? কন্ট্রাক্টরঃ ৩০ টাকা দেন মামা । প্রতীকঃ এত দিব কেন মামা।

আমি স্টুডেন্ট ১৫ টাকা দিচ্ছি রাখ। কন্ট্রাক্টরঃ মামা রাত্রে বেলাও আপনেরা যদি স্টুডেন্ট ভাড়া দেন ? প্রতীকঃ কেন আমি কি রাত্রে বেলা চাকরিজীবী হয়ে গেছি? কথা শুনে আসের পাশের সবাই বেশ হা হা করে হাসল । কিন্তু প্রতীকের পাশে বসা মেয়েটি বেশ চুপ চাপ। এইবার কন্ট্রাক্টর মেয়েটির কাছে ভাড়া চাইল । জিজ্ঞেস করল কন্ট্রাক্টরঃ কোথায় যাবেন আপা ? মেয়েঃ আসলে আমি তো কখনও বাসে উঠি নাই ।

বাবা মায়ের উপর রাগ করে গাড়িতে না এসে একা একা বাসে উঠছি । যাব বনানীর দিকে। তাহলে কোথায় নামব ? মেয়েটির কথা শুনে বাসে ভিতরে কেমন যেন এক নিশ্চুপ অবস্থা বিরাজ করল কয়েক সেকেন্ড । অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা এমনও কেউ আছে যে বাসে উঠে নাই । প্রতীকের বিশ্বাস হচ্ছে সে এবার একটু তাকাল মেয়েটির দিকে।

কন্ট্রাক্টরঃ আপা আপনি কাকলি তে নামেন সুবিধা হবে আপনার। মেয়েঃ ভাড়া কত দিতে হবে ? আমার কাছে তো বেশি টাকা নাই। রাগ করে ব্যাগটা ফেলে আসছি। কন্ট্রাক্টরঃ বলল আপা আপনি টাকা না দিলেও চলবে। মেয়েঃ কেন টাকা না দিলে চলবে ? কন্ট্রাক্টরঃ না আপা আপনি তো কখনও বাসে উঠেন নাই।

মেয়েঃ ১০ টাকা দিলে হবে। কন্ট্রাক্টরঃ আপনার যা খুশি ! প্রতীক ছোট বেলা থেকে দেখে আসছে রিক্সাওয়ালা আর বাস ওয়ালাদের মেয়ে দেখলে স্বজন প্রীতির শেষ থাকে না। এর মাঝে মেয়েটির মোবাইল কল করছে কে যেন । রিংটোন বাজছে। মেয়েটি ফোন ধরে বেশ আহ্লাদের কণ্ঠে বলছে পাপা মামনী খালি আমাকে বকা দেই কেন এত।

আমি পারলে আজকে বাসায় আসব না। কথাবার্তা শুনে প্রতীক বুঝতে পারল অপর প্রান্ত থেকে মেয়ের অভিমান ভাঙ্গাবার চেষ্টা করছে বাবা। যাইহোক কুড়িল বিশ্বরোড থেকে জ্যাম শুরু। গাড়ি নরছে না তো নরছে না। মেয়েটি বির বির করে বলছে এত কষ্ট করে মানুষ যায় কিভাবে বাসে।

এইবার মেয়েটি হঠাৎ করে প্রতীককে বলল "একটু এইদিকে বসবেন আমি একটু জানালার পাশে বসব, গরম লাগছে অনেক" প্রতীক কিছুক্ষণ ভেবে বলল " আচ্ছা আপনি এই দিকে বসুন" মেয়েটি এইবার বড় সর থ্যাংকস জানাল। আসে পাশের মানুষ গুলার দৃষ্টি এখন প্রতীকের সিটের দিকে। এইবার মেয়েটি প্রতীকের সাথে কথা বলা শুরু করল। মেয়েঃ আচ্ছা এত জ্যাম কেন? প্রতীকঃ আসলে সবাই বাসায় ফিরছে অফিস করে তাই জ্যাম হয়ত বেশি। মেয়েঃ ফ্লাইওভার করে আসলে কোন লাভ হয় না এই দেশে।

আচ্ছা আপনি কি করেন? প্রতীকঃ এইতহ পড়ালিখা করি। স্টুডেন্ট আমি। মেয়েঃ আমিও স্টুডেন্ট ! প্রতীকঃ আব্বুর আম্মুর উপর রাগ করে বাসে কেন উঠলেন আপনি ? মেয়েঃ আসলে আমি এমনি । রাগ হলে মাথা অনেক গরম হয়ে যায়। আকচুয়ালী সামনে বাস পেয়েছিলাম বাসে উঠে পরছি।

আমার মামনি আমার বাসের পিছনে আসছে হয়ত। প্রতীকঃ হুম বাসা চিনবেন একা? মেয়েঃ হ্যাঁ চিনব কিন্তু একা একা গেলে তো রাগ অর্থহীন হয়ে যাবে। ( কথাটা শুনে পাশের সিটের এক লোক হেসেই দিল) এর মাঝে প্রতীকের বাসা থেকে ফোন। কখন সে বাসায় ফিরবে চিন্তা করছে বাসার মানুষ। প্রতীকের মোবাইলটি দেখে বেশ মেয়েটি মুচকি হাসি দিল।

কারন মোবাইল বাটন গুলা কাজ করছিল না। মেয়েটি একপর্যায় বলে উঠল "কিছু মনে করবেন না" "আমার মনে হয় আপনার মোবাইলটি চেঞ্জ করা উচিত" প্রতীকঃ একটু হাসি দিয়ে বলল। ভাবছি অনেকদিন ধরে পালটাব মোবাইল । দেখতে দেখতে বাস কাকলীর দিকে এসে পরল বাসের কন্ট্রাক্টর বলল " আপা কাকলী চলে আইছে" "এইখানে নামলে আপনার সুবিধা হইব" মেয়েটি এইবার নামার জন্য প্রস্তুত হল। যাবার সময় প্রতীক কে বলল " আচ্ছা তাহলে আমি যায়" প্রতীকঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

মেয়েটি নেমে গেল যথারীতি বাসটি চলতে রইল। বাসের মধ্যে প্রতীক শুধু এইটাই ভাবছিল একটা অপরিচিত মেয়ে কত সাবলীল ভাবে গল্প করছিল। বাসে উঠে নাই কখনও তারপরও সে কত সাধারনভাবে প্রতীকের পাশে বসে কিছু সময় কথা বলে গেল। ভাবতে ভাবতে সে বাসায় ফিরল। একটু আপসোসও হল তার এত কথার মাঝে সে মেয়েটির নামটা জিজ্ঞেস করতেই সে ভুলে গেছে।

অসাধারন জীবন যাপন যার এত সাধারন তার আচরন । সত্যি এক অপরিচিত মুগ্ধতায় পরল প্রতীক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।