আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এশিয়ান এডভাইজারদের সমস্যা

ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।



আমার মনে হয় আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শতকরা ষাট ভাগ প্রফেসরই এশিয়ান। মূলত: এদের দ্্বারাই ইউনিভার্সিটি গুলো চলে। এশীয়া বলতে আমি মূলত ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্থান এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা বুঝাচ্ছি। একটা তুলনা মূলক চিত্র সমস্যাটা ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাই আগে উদাহরন টেনে বলি আমেরিকান প্রফেসরদের কথা।

আমার স্ত্রী মৌটুসীর প্রফেসর আমেরিকান। এই সামারে তাদের রিসার্চের কিছু কাজ করার কথা ছিল। প্রফেসর ব্যাটা গিয়েছিল ফ্রানসে। তাই এদিকে রিসার্চের অগ্রগতি খুব ইমপ্রেসিভ না। সেই প্রফেসর ফিরে এসে বুঝল অবস্থা।

তাই ওদের ডেকে কিছু রিসার্চ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করতে বলল। উইকএন্ডে সমাধান করার কথা। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল আচ্ছা তোমরা উইকএন্ডে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছো নাতো? মৌটুসী উত্তর দিল যে হ্যাঁ তার সেডোনা যাবার ইচ্ছে ছিল। সেটা শুনে সে ব্যাটা তার কাজ কমিয়ে অর্ধেক করে দিল। এটা হলো অনেক গুলো ভাল ব্যাপারের একটা।

যখন এই ইউনিভার্সিটিতে আপ্লাই করি তখন আমার রোবোটিক্স বা মেকাট্রনিক্স পড়ার ইচ্ছা এমনটা জানিয়ে ছিলাম। এখানকার রোবোটিক্সের প্রফেসর খুব ভাল মানুষ কিন্তু পযর্াপ্ত পরিমান ফান্ড নেই তার। সুতরাং আমাকে অলটারনেট কিছু খুঁজতে হয়। আর তখনই এই পাকিস্থানী প্রফেসরকে চোখে পড়ে। মেইল করে ফোন করে যোগাযোগ করে বুঝতে পারলাম ব্যাটার ছাত্র দরকার।

আর আমার বাবা-মা তো আর দশটা বাঙ্গালী বাবা-মার মতো বলেই বসলেন, পাকিস্থানী মুসলমান তো নিশ্চয়ই ভাল হবে। তাই প্রথমদিন এসেই যখন ফান্ডিং পেয়ে গেলাম আমি ব্যাটার উপর যারপরনাই কৃতজ্ঞ হয়ে ছিলাম। ধীরে ধীরে টের পেতে লাগলাম এই ব্যাটার সমস্যা। ব্যাটা একে তো খুব দেরী করে ছাড়ে ছাত্রদের তদুপরী তার ব্যবহার খারাপ। এক একজন ছাত্রের মাস্টার্স করতে গড় সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর, যেখানে অন্যান্য প্রফেসরের কাছে লাগে দুই থেকে আড়াই বছর।

আর পিএইচডি ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর। ব্যাটার ফান্ডিং ভাল, রিসার্চও ভাল বিষয়ের উপর করে, পাবলিশিং ভাল হয়। কিন্তু এতোটা সময়তো দেয়া সম্ভব না - তাইনা? তার উপর ব্যবহার খারাপ, টাকা দেয় তাই এমন ভাব করে যেন পুরো মাথা কিনে ফেলছে। পুরোনো স্টুডেন্টদের ততদিনে যাবার সময় হয়ে এসেছে। আমাকে উপদেশ দিতে লাগল "পালাও, নিজেকে বাঁচাও"।

কি করি আমি? দিশেহারা দিশেহারা লাগে। একদিকে একটা স্টেবল ফান্ডিং এর হাতছানি অন্যদিকে অনিশ্চয়তার ভয়। তারপরও আমি চেষ্টা করলাম পালিয়ে যাবার। ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সব জায়গায় চেষ্টা করে বুঝলাম না হবে না পালানো আমাকে দিয়ে। এরমধ্যে আরো গোটা চারেক ছেলে এসেছিল।

সবাই ইন্ডিয়ান - কিভাবে কিভাবে যেন অন্য প্রফেসরদের ম্যানেজ করে তারাও পালাল। এর মধ্যে পুরোনোদের গ্রাজু্যয়েশন শেষ। ল্যাবে শুধু আমি একা। ব্যাটা একটা কাজ করতে বলে আমি কিছুতেই বুঝিনা ব্যাটা কি চায়। যারা রিসার্চ করেন তারা হয়ত জানেন - ল্যাবে কো-অপারেশনটা গুরুত্বপূর্ণ।

একলা একলা আর কি করা যায়? এছাড়া আরো কয়েকটা ইন্ডিয়ান, বাঙ্গালী প্রফেসরদের কিচ্ছা শুনেছি। অনেকটা এরকমই তাদের গল্প। বিভিন্ন কোর্সে বিভিন্ন দেশের প্রফেসরদের সাথে ইন্টার্যাকশন হয়েছে - নন-এশিয়ান প্রফেসর অনেক উদার আর ভাল। হয়ত কারন হিসেবে সমাজবিজ্ঞানী শোমোচৌ হযবরলের পোস্টে যা বলেছেন সেটাই সত্যি। হয়ত আরো কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে।

এখন মাঝে মাঝে মনে হয়। আমি কি একই জায়গায় গেলে একই রকম আচরন করব? আমি তো একই রকম পরিস্থিতি হয়ে এসেছি। কি জানি? সময়ই বলে দেবে হয়ত... (হযবরলের পোস্ট 'দেশী এডভাইজর বনাম বিদেশী এডভাইজর' থেকে অনুপ্রানিত হয়ে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.