আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এশিয়ান না ইন্ডিয়ান হাইওয়ে?

এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com

নোমান বিন আরমান : হাসিনার সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকেই কথা বলার ইস্যু তৈরি হচ্ছে স্রোতের মতো। কেউ যদি বলে জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত বা আন্দোলনী ইস্যু তৈরিই ৯ মাস বয়েসী সরকারের মোটা দাগের সাফর‌্য; তাহলে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না। টিফা, ট্রানজিট, করিডোর, টিপাইমুখ প্রকল্প, দ্রব্যমূল্য, তেল-গ্যাস, সরকার গঠন, পার্বত্য এলাকা ইত্যাদি বিষয়ে একটির সাথে একটি বিতর্কের বিষয় সৃষ্টি করা হয়েছে।

ইস্যু তৈরি হয়েছে। http://www.numanbinarmansyl.blogspot.com তবে, ভালো খবর ছিলো এ সবের কোনোটির সাথে প্রধানমন্ত্রীসূলভ আচরণের দ্বন্দ্ব ঘটেনি হাসিনার। যে যাই বলুন হাসিনা এইসব ক্ষেত্রে নিজেকে অন্তত প্রধানমন্ত্রী রাখতে পেরেছেন। কোনো বিতর্কে কথা বলেননি। পর্যবেক্ষণ করেছেন।

মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য-যুক্তি নীরবে শুনেছেন। নিজের কোনো সিদ্ধান্তের কথা এসব বিষয়ে জুড়ে দিয়ে বিতর্ককে উস্কে দেননি। দেননি কারণ প্রধানমন্ত্রী ভালোই জানতেন, আগুণে ফুঁ দিয়ে লাভ নেই। আগুন বাড়বে শুধু। কিন্তু সেদিন কী হলো কে জানে, প্রধানমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী থাকলেন না।

দলীয় নেতাই হয়ে গেলেন তিনি। দলমত নির্বিশেষে দেশের কল্যাণও স্বার্থ রক্ষা যার প্রতিশ্র“ত দায়িত্ব, সাংবিধানিক কর্তব্য, সংসদে দাঁড়িয়ে, সেই তিনি বললেন, আমরা জুজুর ভয়ে দরোজা বন্ধ করে বসে থাকবো না। এশিয়ান হাইওয়েতে বাংলাদেশ যুক্ত হবেই! প্রধানমন্ত্রী এমন প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্য দিলেন যখন এশিয়া হাইওয়েতে যুক্ত হওয়া না হওয়া নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলছে, মহলবিশেষ ও চিহ্নিত বুদ্ধিব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এর ফযিলত বয়ান করা হচ্ছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য নাগরিকমাত্র সকলকেই আহত করেছে। দেশের মানুষকে অপমান করেছে।

হাসিনার এমন তড়িৎ সিদ্ধান্তে স্বভাবতইে মনে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কী এমন অসুবিধা ছিলো, বিষয়টি সম্পর্কে সংসদে এতো দ্রুত তার বক্তব্য দিতে হলো। হাসিনা এখন দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ক্ষমতায় বসেছিলেন ৯৬ এ। ছিলেন পাঁচ বছর। তারপরে ক্ষমতায় বসেন খালেদা।

তখন প্রায়ই তারমুখে মুখে শোনা যেতো ‘চাপ আছে’। ভিন্ন রাষ্ট্রের চাপে থাকতে হতো তাকে। চাপেই অনেক সিদ্ধান্ত নিতেন। আবার চাপেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতেন। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোর প্রধানদের এমন চাপ দেয়ার লোকের, দুঃখিত, রাষ্ট্রের অভাব নেই।

মহাজোট সরকারও কি তবে কারো চাপে আছেন। বলছেন না কেনো। দেশের নিজেরই হাজারটা সমস্যা রয়েছে। জঙ্গি তো এই সরকারের প্রধান শত্র“। ক্ষমতায় বসার পর থেকেই জঙ্গি খুঁজে হয়রান সরকারের লোকেরা।

তাদের তৎপরায় মনে হচ্ছে জঙ্গি ছাড়া এদেশে মানুষ খুব কমই আছে। তো এই জঙ্গিদের যখন কিছু করা যাচ্ছে না এখনো তখন মরকার কীভাবে অন্য চিন্তায় মন দেয়। সরকার এশিয়ান হাইওয়ে নামে আমাদের য গিলাতে চাচ্ছে, তা তো ইন্ডিয়া বা ভারতই। তবে কি এশিয়া বলতে কেবল ইন্ডিয়াকেই বুঝায়। দিন বদলের সবক বুঝি ভূগোগও শিখে ফেলেছে।

না হয়, বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়াকে যাবার রাস্তাকে ইশিয়ান হাইওয়ে বলা হচ্ছে কেনো। এশিযান হাইওয়ের এই বিষয়টি তো অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান হয়েছে, যা এসেছিলো, ট্রানজিট ও করিডোর নামে। জনগণ ভারত > বাংলাদেশ > ভারত কোনো কিছুইÑ হোক তা এশিয়ান হাইওয়ে, কানেক্টিভিটি বা ট্রানজিট নামে; সমর্থন করে না। ভারতের সাথে সবরকমের করিডোরের বিপক্ষে বাংলাদেশের আজন্ম অবস্থান। এটি সরকারকে বুঝতে হবে।

কিন্তু তা না করে বারবার নাম বদল করে এই বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে। নাম বদল হয়েছে ট্রানজিটের। এখন বলা হচ্ছে এশিয়ান হাইওয়ে। তবে নাম বদল হলেও একটি জায়গায় কিন্তু এরা দারুণ মিল রাখছেন। সেটিকে কখনো পরিবর্তন করছেন না।

হোক ট্রানজিট বা কানেক্টিভিটি; ফযিলত হিসাবে বয়ান করা হচ্ছে, বড় রাষ্ট্রের সাথে ‘বন্ধুত্ব’ সোয়াব হিসাবে দেখানো হচ্ছে বেহিসাব অর্থপ্রাপ্তি, অবকাঠামোর উন্নতি, সমৃদ্ধি ....। কিন্তু এটি বলছেন না এতো ফযিলতের অধিকারী ভারত কেনো আমাদের করতে চাচ্ছে, বলছেন না; সোয়াব হিসাবে বেহিসাব অর্থ দিয়ে কী পরিমাণে পূণ্য তারা চাইবে। আর এই হাইওয়ে দিয়ে যদি ইন্ডিয়ান জঙ্গিগুলো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কিংবা বাংলাদেশকে নিশানা করে সরকার কীভাবে তার মোকাবেলা করবে। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে বাংলাদেশও যুক্ত হোক, সহজ সুলভে বাংলাদেশের মানুষ সড়ক পথে এশিয়ান রোড়ে বিশ্বসড়কে যাতায়াত করুক তা সব নাগরিকেরই কাম্য। কিন্তু এই আকাঙ্খাকে কারো ইচ্ছের কাছে দলিত হতে দেয়ার অধিকার কারো নেই।

এতে যদি জুজুই হয় বা ভারত হয়, তবু তাকে ভয় কতে হবে। প্রথম প্রকাশ : কালকণ্ঠ ২০০৯।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.