আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামনে অমানিশা, তারপর ভোর...........

আসুক যত ঝড় বিপতি বাধা.... উননত করি শির ,নোয়াবোনা মাথা

মানুষ মাত্রই ধবংস হতে পারে, কখনো পরাজিত হয় না। আর্নষ্ট হেমিংওয়ে কথাটা বোধ করি বাঙ্গালিদের জন্যই বলে গেছেন। কারন আমাদের ধবংস হওয়ার ইতিহাস আছে, পরাজিত হওয়ার নয়। আমরা বাঙ্গালীরা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি। আমাদের আছে মাথা না নোয়ানোর এক গৌরবময় ইতিহাস।

বহু কাল থেকেই এদেশের আকাশটাকে সংকট নামক ভয়ংকর কালো মেঘ গ্রাস করেছে বার বার। রাজনৈতিক ,সামাজিক,অথনৈতিক এবং সাংষ্কিতিক আগ্রাসনের যতবারই শিকার হয়েছি আমরা, তত বারই জেগে উঠেছি। রুখে দাড়িয়েছি উম্মুক্ত বুকে, মাথা তুলে। বহু প্রাচীন কাল থেকেই এদেশের বুকে কারনে অকারনে আঘাত হেনেছে দখলদার বেনিয়ারা। রাজা শশাঙ্ক থেকে শুরু করে নবাব সিরাজউদ্দোলা পর্যন্ত বহু দেশপ্রেমীক শাসক, জমিদার, রাজা, বাদশা, সম্রাটরা এই দেশ শাসন করেছেন।

বিদেশি বেনিয়াদের হাত থেকে পবিত্র স্বভুমিকে রক্ষা করার জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন। । বার বার আঘাত এসেছে তাদের উপর। কিন্তু দমে যাননি তারা। জীবন দিয়েছেন, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তবু মাথা নত করেন নি।

এই জাতি যখনি কোন না কোন সঙ্কটের আবর্তে পতিত হয়েছে ঠিক তখনি তারা স্বমহিমায় বীর চিত্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ১৭৫৭ সালের পালাশী যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধাংশ জুড়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, উপমহাদেশের স্বধীনতা আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন ইত্যাদি ছিলো আমাদের ইতিহাসের একেকটি গৌরবময় অধ্যায়। যা এই জাতির মনোজাগতিক স্বাধীনতা কিংবা মুক্ত চিন্তার চেতনাকে প্রজ্জ্বলিত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ শে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর দুইশত বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম আমরা। এক নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মানে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম আমরা সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার কাজে।

কিন্তু অল্প দিনেই তৎকালীন শাসক শ্রেনীর বিমাতাসূলভ আচরন হতাশ করে আমাদের। বুজতে পারি এই স্বাধীনতা আমাদের নয়। আঘাত আসে আমাদের উপর, আমাদের ভাষার উপর। তারা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চাইল। আমরা মানলাম না।

বায়ান্নতে আমরা জেগে উঠলাম। সালাম রফিক বরকত সহ নাম না জানা আরো অনেক শহীদের টুকটুকে লাল তাজা রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করলাম আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে। এলো চুয়ান্ন। বাঙ্গালি সেই রক্তের বদলা নিলো ব্যালটের মাধ্যমে। মুসলিম লীগ দালাল সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নিলো নিজেদের হাতে।

কিন্তু পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক বেনিয়ারা আমাদের ক্ষমতার অংশ না দিয়ে তা কুক্ষিগত করলো। এই প্রথম আমরা বুঝতে পারলাম স্বাধীনতার গুরুত্ব। স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাষট্রি্তে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র রুখতে আবার আমরা জেগে উঠি। শত্রুর প্রতি চোখ রাঙ্গিয়ে ৬৬-র মুক্তির সনদ ছয় দফার পক্ষে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছিলাম তো আমরাই। উনসত্তরে গন অভুথ্থানের নায়কও আমরাই ছিলাম।

সত্তরের নির্বাচনে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গনরায় তুলে দিতে একটুও ভূল করেনি এই জাতি। অবশেষে এলো একাত্তর। নিরীহ ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর শুরু হল পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বরতম হত্যাযঞ্জ। আবার আমরা জেগে উঠলাম। স্বভুমিকে মুক্ত করার জন্য শুরু হলো যুদ্ধ।

অস্ত্র কেবল মনোবল আর দৃড়সঙ্কল্প। শত্রুকে ধবংস করার জন্য এটুকুই ছিলো যথেষ্ট। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বীর বাঙ্গালী ছিনিয়ে এনেছিলাম স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য'কে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙ্গালি জাতি আবার ফিরে পেল হাজার বছরের কাঙ্খিত সেই স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীন হলো।

তিরিশ লক্ষ শহীদ, দু-লক্ষ মা বোনের ইজ্জত আর চারদিকে ধ্বংসের পাহাড় ভাংতে পারে নি আমাদের সামান্যতম মনোবল। নতুন উদ্যমে আমরা আবার নেমে পড়ি আপন দেশ গড়ার কাজে। একটা সুন্দর সুখী সমৃদ্বশালী দেশ গড়ার স্বপ্নে আবার আমরা বিভোর হই। কিন্তু আবার আমাদের স্বপ্ন ভাঙ্গে। নেমে আসে ঝড়।

ঘাত আর প্রতিঘাতের খেলায় মেতে উঠে কিছু স্বার্থন্বেষী মহল। সামরিক স্বৈরাচাররা চেপে বসে জাতির ঘাড়ে। গনতন্ত্র পালিয়ে যায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। বিপন্ন হয়ে পড়ে অগ্রযাত্রা। কিন্তু আমরা তো হাত গুটিয়ে বসে থাকার জাতি নই।

আমাদের রক্তে মিশে আছে সংগ্রাম। তাদের অস্ত্রের ভাষা আর চোখরাঙ্গানি মেনে নিতে পারি না আমরা। তাই আবারো আগুন জ্বলে উঠে আমাদের রক্তে। স্বৈরাচারের বিরুদ্বে রাজপথ মুখরিত হয় আমাদের পদচিন্হে। রক্ত ঝরে, আসে আরেক বিজয়।

শুরু হয় আবার নতুন পথ চলা। নতুন স্বপ্ন বুনা। কিন্তু আমরা আবার হতাশ হই। জাতির ভাগ্যাকাশ ডাকা পড়ে বিষাদের কালো মেঘে। দুষ্ট চক্রের বেড়াজালে আবদ্ব হয়ে পড়ে গোটা জাতি।

গনতন্ত্রের নামে শুরু হয় আরেক স্বৈরতন্ত্র। যা আমাদের স্বপ্নগুলোকে প্রতিনিয়ত পদ্মার মত ভেঙ্গে বিলীন করে দিছে। এই চক্রের গ্রাস থেকে মুক্তির জন্য এখন শুধু জেগে উঠার অপেক্ষা। সিডর আইলা নার্গিসের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের দমাতে পারেনি। অন্য কোন শক্তিও আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না ইনশআল্লাহ্‌।

আমরা আবার জেগে উঠবই । আজ কিংবা আগামীকাল..........।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.