আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালু ও পাখিদের গল্প

বাকি সময়টা পাখিদের পেছনেই কেটে যায় লালুর। এছাড়া আরেকটা কাজ করতে হয় ওকে- পাখির খাঁচার কাছে এবং পায়ে শেকল পরিয়ে খোলা জায়গায় রাখা পাখির কাছে যেন সাহেবের ছেলেমেয়েরা না যেতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। এটাকে অবশ্য কাজ না বললেও চলে। কেননা অথৈ আর হৃদ্যকে পাখির খাঁচার কাছে কিংবা পায়ে শেকল পরিয়ে খোলা জায়গায় রাখা পাখিদের কাছে যেতে বারণ করতে করতে ব্যাপারটা ওদের মনে গেঁথে গেছে। তাই পাখি দেখতে এলে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা।

হৃদ্যর কখনো কখনো পাখিদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়। তখন দূরে দাঁড়িয়েই হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলে ও। এমন লক্ষ্মী-শান্ত ছেলেমেয়েদের নিয়ে কি আর ঝামেলা পোহাতে হয় কারও? তবু খেয়াল রাখে লালু। না হলে সাহেবের বকা খেতে হবে।
একটা ব্যাপার বেশ ভালোভাবে খেয়াল করেছে লালু।

ক্লাস-ওয়ান-পড়ুয়া হৃদ্যর পাখির কাছে যেতে ইচ্ছে হলেও লালুকে ডেকে বলে, লালু ভাইয়া, আমি ওই পাখিটার কাছে যাব। লালু তখন হৃদ্যর হাত ধরে পাখিটা থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ায়। হৃদ্য পাখি দেখে।
হৃদ্যর নজর আটকে থাকে ওই ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখির বাচ্চা দুটোর দিকে। কী যে তুলতুলে হয়েছে ওরা! হৃদ্যর ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

কিন্তু বাচ্চা দুটোর কাছে গেলেই মা পাখিটা আচ্ছা করে কামড়ে দেবে। এই ভয়ে ইচ্ছে হলেও ম্যাকাওর খুব বেশি কাছে ঘেঁষে না হৃদ্য। এমনকি লালু ওকে আরেকটু কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও না। বরং লালুর হাত টেনে ধরে থামিয়ে দেয় হৃদ্য। কেননা দুদিন আগে হৃদ্য যখন পাখি দেখতে এসেছিল, তখন ম্যাকাও আর তার বাচ্চাদের খাবার নিয়ে যেতেই মা ম্যাকাও লালুর হাতে কামড় বসিয়ে দিয়েছিল!
হৃদ্য তবু পাখি দেখতে এলে কখনও কখনও পাখির খাঁচার কাছে, শেকল পরানো পাখির কাছে যেতে চায়, কিন্তু অথৈ তাও না।

দূরে দাঁড়িয়ে পাখি দেখে চলে যায়। এমনকি হৃদ্য যদি লালুর হাত ধরে পাখির কাছে যায়, তবু দাঁড়িয়েই থাকে অথৈ।
তাই অথৈ-হৃদ্যকে নিয়ে লালুর অতটা ভাবতে হয় না।
পাখির খাঁচার কাছে গেলে রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। পাখির শরীরেও কত না রোগ-জীবাণু থাকে! অবশ্য পাখিগুলোকে নিয়মিত শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করান হয়।

পাখির খাঁচাগুলো ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। তবু রোগ-জীবাণুতে কি বিশ্বাস আছে?
হৃদ্য বলে, “লালু ভাইয়া, তোমাকেও তো রোগ-জীবাণু আক্রমণ করতে পারে। ”
লালু মুচকি হেসে বলে, “আমার তো গা-সওয়া হইয়া গ্যাছে হৃদ্য ভাইয়া। আমার কিছু হইব না। ”
“তাহলে আমারও কিছু হবে না।


“হইব, হইব। তুমি ছোট্ট তো। সাহেব কইছে, ছোট্ট পোলাপাইনের রোগ-জীবাণুর ভয় বেশি। অগোর একটুতেই রোগ অইতে পারে। ”
অথৈ বলে, “লালু ভাইয়া ঠিকই বলেছে হৃদ্য।

বাবা এ কথা আমাকেও বলেছে। ”
লালুর কথায় অথৈ আপুও সায় দেওয়াতে হৃদ্য এ নিয়ে আর কথা বলে না। কিন্তু লালু ভাইয়ের কথায় একমত হতে পারে না ও। সে যে বলল, তার কিছু হবে না। লালু ভাই কি ওদের দুজনের চেয়ে বয়সে খুব বেশি বড় হবে? তাছাড়া তার তো পাখির সাথেই বসবাস।

তাই তার নাম দেওয়া যায়- ‘লালুপাখি’। এ কথা ভেবে হাসি পেল হৃদ্যর। খিলখিল করে হেসে ফেলল ও।
অথৈ জিজ্ঞেস করে, “হাসছ কেন হৃদ্য?”
কথা বলে না হৃদ্য। হাসতে থাকে।


“আহা, বল না হাসছ কেন? আমাকে বলে তারপর না হয় হাস। ” অথৈ তাড়া দেয়।
হাসি থামিয়ে হৃদ্য বলে, “লালু ভাইয়ের একটা নতুন নাম পেয়েছি। ”
“কী নাম?”
“লালুপাখি। ”
শুনে অথৈরও খুব হসি পেল।

হাসতে হাসতে বলল, “দারুণ নাম দিয়েছ তো! কাল থেকে লালু ভাইকে আমরা লালুপাখি বলেই ডাকব।
নামটা শুনে লালুও হো হো করে হেসে উঠল। নিজেই কয়েকবার নামটা উচ্চারণ করল- লালুপাখি...লালু পাখি...
রাতে ঘুমাতে গিয়ে নামটা মনে পড়তে একা একা হেসে উঠল লালু। তখনই ওর মনে হল, অথৈ-হৃদ্য ভুল নাম দেয়নি। ওর তো পাখির সঙ্গেই বসবাস।

ছাদের চিলেকোঠায় থাকে ও। চিলেকোঠা থেকে হাত চারেক দূর থেকে সারা ছাদ ঘেঁষেই তো পাখির খাঁচা। আর ছাদের মাঝখানে থাকে শেকল পরানো খোলা পাখিগুলো। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে ওর। কোনো কোনো দিন পাখির জন্য কেনা ফল থেকে একটা-দুটো খেয়ে নাস্তাটাও সেরে নেয়।

কখনও আবার পাখির আধ-খাওয়া ফলটুকুতে কামড় বসায়। কিংবা উড়ে এসে যে দেশি পাখিরা ছাদে নামে ওদের খেতে দেয়।
অনেক অনেক পাখি দেখে, তাদের ডাকাডাকি শুনে দেশি পাখিরা আসে ঠিকই, কিন্তু বিদেশি পাখিদের রাজকীয় হাল দেখে হয়ত মন খারাপ করে অলস ভঙ্গিতে উড়ে যায় আবার! ওদের দেখে পোষা বিদেশি পাখিরা খুব একটা গা করে না। কেবল একটা মাত্র তোতাপাখি টি টি করে ওঠে। লালুর তখন মনে হয়- বিদেশি পাখিদের মতো দেশি পাখিদেরও যদি এমন করে যত্ন নেওয়া যেত! কত কত দেশি পাখি তো হারিয়েই যেতে বসেছে।

গ্রামে গেলে তো আগের  মতো ডাহুক পাখির ডাক শোনা যায় না। হলদে পাখিও চোখে পড়ে না আর। এমন আরও কত পাখি আছে। অথচ এই বিদেশি পোষা পাখিগুলোর পেছনে কত না খরচ! চীনা বাদাম, সূর্যমূখী ফুলের বীজ, আপেল, কমলা, খেজুর, আঙ্গুর, বেদানা আর বিদেশ থেকে আসা উন্নতমানের প্যাকেটে ভরা খাবার কিনে খাওয়াতে হয়। লালু নিজেই বাজার থেকে এসব কিনে আনে।


ভারি মন খারাপ হয় ওর। আহা, ও কিংবা ওর ভাইবোনেরা কখনও এসব ফল খেতে পায়? ও না-হয় এখন পাখির জন্য কেনা ফল থেকে একটা-দুটো খেতে পায়। কিন্তু এর বেশি নয়। তাহলে সাহেব আবার বলে বসবেন- তুই খেয়ে ফেলিস পাখির ফল। না-হলে এত ফল যায় কোথায়?
কিন্তু এসব ধিঙ্গিধিঙ্গি পাখিগুলো যে একসঙ্গে তিন-চারটা ফল গপাগপ খেয়ে ফেলে, তা কিছু নয়! সেদিন ডাক্তার সাহেবও পাখিদের সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এসে সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন- জাকির সাহেব, কাকাতুয়া গোত্রের এসব পাখিদের খরচ কুলিয়ে উঠতে পারবেন তো? এরা যে পরিমাণ খায়! এই রক পাবলার, পিন্যান্ট, পেস্ট লিংকন, রেইনবো লরি, রেড ইস্টার্ন এরা তো ...
ডাক্তার সাহেবকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে সাহেব হেসে বলেন, “ডাক্তার সাহেব, অলরেডি কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে।

আরও খরচ হবে। হতেই থাকবে। কিন্তু কিছু লাভও হবে। এসব পাখির বাচ্চার অনেক দাম। আর আমার মতো অনেকেই শখের বশে পাখি পোষে।

পাখির বাচ্চাগুলো তাদের কাছে বিক্রি করলেই তো অনেক টাকা আয় হবে। এই যে ব্লু ম্যাকাওর দুটো বাচ্চা হয়েছে, এরা একটু বড় হয়ে উঠলেই অনেক টাকায় বিক্রি করা যাবে। কেননা এরা বিরল প্রজাতির ম্যাকাও। সেই আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে! ভাবুন তো একবার, কত খরচ হয়েছে আমার! তবে এর বাইরে আরও একটা লাভ আছে। ”
“সেটা কী রকম?” ডাক্তার সাহেব জানতে চাইলেন।


একগাল হেসে জাকির সাহেব বললেন, “আমি পাখিপ্রেমী বলে এই যে মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আমাকে দেখাচ্ছে, সাক্ষাতকার নিচ্ছে, পত্র-পত্রিকায় আমার ছবি-সাক্ষাতকার ছাপা হচ্ছে এসবই বা কম কীসে?”
শুনে অদ্ভুত চোখে জাকির সাহেবের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার সাহেব বললেন, “এমন করে ভাবিনি তো!”
“ভাববেন কেমন করে? আপনি তো আর পাখি পুষছেন না। পুষছি তো আমি! হা হা হা। ”
বিভোর হয়ে সাহেবের কথা শুনছিল লালু। পোষাপাখিদের পেছনে সাহেবের এত এত খরচ নিয়ে ওর ভেতরে যে সব ভাবনা ঘুরপাক খেত, তার অনেকটাই কেটে গেল। তবে লালু জানে, সাহেবের টাকার অভাব নেই।

সাহেব বাসায় থাকলে কখনও কোনো কাজে নিচে গেলে ও শুনতে পায়, সাহেব ফোনে লাখ-কোটি টাকার আলাপ করেন। বড় ব্যবসায়ী না হলে লাখ-কোটি টাকার আলাপ করতে পারে কেউ? তাছাড়া লালু খেয়াল করে দেখেছে, টেলিভিশন কিংবা পত্রিকার লোকজন এলে সাহেবের মুখে-চোখে আনন্দ খেলা করে। নিজেকে টেলিভিশনে দেখে তার আনন্দ যেন ধরে না! পাখিদের দেখাশোনা করে বলে দুচারবার লালুকেও দেখিয়েছিল টেলিভিশনে। খুশিতে সাহেবের মোবাইল ফোন থেকে ওদের পাশের বাড়ির করিম গাজীকে ফোন করে লালু ওর বাপকে ডেকে দিতে বলেছিল। বাপকে বলল, “আমারে টিভিতে দ্যাহাইতেছে।

করিম চাচাগো টিভিতে দেইহা লও। ”
কিন্তু লালুর কি আর এতে পেট ভরে? ও তবু এখানে খেতে-পরতে পায়। গ্রামে ওর বাপ-মা, ভাইবোনের যে কত বেলা না খেয়ে কাটে!
কাল রাতে ঘুমাতে পারেনি লালু। খাঁচায় একটা পাখি সারারাত বেশ ছটফট করেছে। কাল সকাল থেকে ওটা ঠিক মতো খাবার খায়নি।

পাখিটার ছটফটানি দেখে কী যে মায়া লাগল লালুর!
সকালবেলা সাহেবকে জানাতেই ডাক্তার ডেকে আনতে বললেন।
ডাক্তার এসে পাখিটাকে দেখে-টেখে বললেন, “পাখিটার ডায়রিয়া হয়েছে। ”
শুনে লালু অবাক। পাখির আবার ডায়রিয়া হয় নাকি? পরক্ষণেই ওর মনে হল- ইস্, পাখিগুলার কী ভাগ্য! আমাগো রোগ-টোগ হইলে ডাক্তার জোটে না, ওষুধ জোটে না; সেইখানে পাখি একটু কাশি দিলেই লগে লগে ডাক্তার হাজির। শুধু কি তাই? অগো তো অসুস্থ হওয়ারই উপায় নাই।

প্রতি সপ্তাহে ডাক্তার আইসা দেইখা যাইতেছে! ভাবতে ভাবতে ভীষণ মন খারাপ হল লালুর।
বিকেলবেলা অথৈ আর হৃদ্য এলো অসুস্থ পাখিটাকে দেখতে।
হৃদ্য বলে, “লালুপাখি, অসুস্থ পাখিটাকে দেখতে এসেছি আমরা। ”
লালু বলে, “কাছে যাওন যাইব না হৃদ্য ভাইয়া। পশু-পাখির অসুখ ভালো না।

অসুইখ্যা পাখির কাছে যাওন ঠিক না। ”
অথৈ বলে, “তুমি তো সারক্ষণই পাখির কাছে থাক। তোমারও তো সমস্যা হতে পারে!”
শুকনো হাসি হেসে লালু বলে, “আপামনি আমার তো এইটাই কাম। এইটা দিয়া আমার প্যাট চলে। ”
লালুর কথা শুনে ভীষণ মন খারাপ হল অথৈর।


দুদিন ধরে পাখি দেখতে ছাদে এলে অথৈ আর হৃদ্য দেখে, লালু সটান হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে। ওদের কাছে আসে না। অথচ আগে ওরা ছাদের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেই লালু ওদের কাছে ছুটে আসত।
ছাদ থেকে ঘরে ফিরে অথৈ আর হৃদ্য লালুকে নিয়ে কথা বলছিল।
হৃদ্য বলে, “আপু, লালুপাখি আমাদের দেখেও অমন করে শুয়ে থাকল কেন?”
“লালুপাখি হয়তো অসুস্থ।

না হলে এমন তো হয় না কখনও। আমাদের দেখলেই ছুটে আসে ও। ” একটু থেমে অথৈ বলে, “চল তো হৃদ্য, লালুপাখিকে আবার দেখে আসি। অসুস্থ হলে বাবাকে বলব, ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। ”
আবার ছাদে উঠে এল ওরা।

সোজা চিলেকোঠায়, লালুর কাছে।
লালুর গায়ে হাত ছুঁইয়ে অথৈ বলল, “লালুপাখি, জ্বরে তো তোমার গা পুড়ে যাচ্ছে! তোমার যে জ্বর তা বলনি কেন? আচ্ছা, বাবা এলে বলব, তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। ”
অথৈর কথা শেষ হতে না হতে দুর্বল গলায় লালু বলল, “না, আপামনি। এইটা কইরেন না। আমি অসুস্থ এই কথা হুনলে সাহেব আর আমারে কামে রাখব না।

তহন আমার কী অইব?”
অথৈ বলে, “তাই বলে তুমি এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবে?”
হৃদ্য বলে, “বাবা কিচ্ছু বলবে না। তুমি চিন্তা কর না লালুপাখি। ”
ভাইয়ের সঙ্গে গলা মেলায় অথৈ, “হ্যাঁ লালুপাখি, তুমি একদম ভেব না। বাবাকে আমরা বুঝিয়ে বলব। ”
লালু আগের চেয়েও ব্যাতিব্যস্ত হয়ে অথৈ আর হৃদ্যর হাত ধরে বলল, “আপামনি, হৃদ্য ভাইয়া, আপনেরা আমারে ভালোবাসেন না?”
হৃদ্য বলে, “হ্যাঁ বাসি।


অথৈ বলে, “আমিও। ”
“তাইলে আমার ভালো চাইলে সাহেবরে আপনারা কিছুই কইবেন না। ”
লালুর আকুতিভরা কথা শুনে অথৈ, হৃদ্য দুজনেরই ভীষণ মন খারাপ হল। মন খারাপ নিয়ে ঘরে ফিরল ওরা।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.