আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসিড সন্ত্রাস বারবার টার্গেট সেই আমাদের অভাগী মা- বোন

আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে। একটু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বলি এসব হচ্ছেটা কি একের পর এক হায়রে আমরা বাংলাদেশী আর কত এভাবে আমাদের ঝরে যেতে হবে ? আমরা কি এতই হীন মন্য আর বিকৃত রুচির হয়ে গেলাম !!! আরও একবার গর্জে উঠার সময় এসেছে । ওরা যে আমাদেরই মা - বোন । সাধু সাবধান কাল হয়ত টার্গেট আপনারই পরিবারের কেউ। আসুন এখনই সময় সব শকুনের ভয়াল থাবা রুখে দেবার।

আমার সাথে কে আছেন আসুন প্রতিবাদী হই এসমস্ত সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে । আঁখির জীবনে এখন গাঢ় অন্ধকার। প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইডেন কলেজের ছাত্রী আঁখিকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। এরপর মাথা, মুখমণ্ডল ও ক্ষতস্থানে এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে আঁখির দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর চানখাঁর পুল চৌরাস্তা সংলগ্ন কাজী অফিসের সামনে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, মেয়েটির নাম শারমিন আক্তার আঁখি (২৪)। ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যারয়ের বাংলা বিভাগের (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। বিস্তারিত খবর এখানে Click This Link বর্তমান সময়ে দেখা যায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, লেনদেনসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব, সম্পত্তির লোভ, পারিবারিক কলহ, যৌতুকের দাবি, কন্যাশিশুর প্রতি বিরাগ প্রভৃতি কারণেও নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

অ্যাসিডের মাধ্যমে নারীর মুখশ্রী কিংবা শরীর ঝলসে দেয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। আর এর মূলে রয়েছে নারীকে আঘাত করা সহজ, আক্রান্ত নারীর যন্ত্রণা পুরো পরিবারকেই কাতর করে তোলে। অ্যাসিড সন্ত্রাস পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব। মানুষ যদি দেখে অ্যাসিড নিক্ষেপের দায়ে তারও মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে; তাহলে কেউ এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সাহস পাবে না। আগে অ্যাসিড সংক্রান্ত মামলা শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যেত।

এখন বিচারকাজ তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অপরাধীদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ শাস্তি পাচ্ছে। বাকি ৯০ ভাগ মাফ পেয়ে যাচ্ছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখা যায়, এসংক্রান্ত মামলায় উপযুক্ত সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই অপরাধীরা শাস্তি থেকে বেঁচে যাচ্ছে। আসামি ধরা না পড়া এবং পালিয়ে যাওয়া, পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকারও কিছুটা অভাব আমরা এ ক্ষেত্রে লক্ষ করি। এ ছাড়াও আইনি প্রক্রিয়ার কারণে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অ্যাসিড সন্ত্রাসীরা; ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অ্যাসিড আক্রান্তরা।

অ্যাসিড সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান এবং কার্যকর করতে এই যে দীর্ঘসূত্রতা, তা অ্যাসিড সন্ত্রাসকে আরো উসকে দিচ্ছেএমনই মত অ্যাসিড সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন কর্মীদের। দেশজুড়ে অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন এনজিও। অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে অ্যাসিড দগ্ধ নারী ও শিশুদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার জন্য। অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা বেশ জোড়াল, যা অ্যাসিড সন্ত্রাসবিরোধী ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করে। যে নারী আজ স্বপ্ন দেখে এগিয়ে চলার কিংবা যে নারী আজ এগিয়ে গেছে বহুদূর অথবা যে নারী আজো পায়নি তার ন্যায্য অধিকার, পায়নি ন্যায়বিচার; তাদের সবাইকে ব্যথিত করে নারীর প্রতি সহিংস ঘটনাগুলোর ভয়াবহতা নারীকে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য করেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধ্য করছে সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি পরিবার।

বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংসতা নারীর জয়ের আনন্দে এনে দিয়েছে পরাজয়ের গ্লানি। এই কষ্ট শুধু সহিংসতার শিকার নারীরাই উপলব্ধি করে তা নয়, এই কষ্ট নারীসমাজের চেতনায়, উপলব্ধি তাদের নিজস্ব মনোজগতে; আর তাই নারীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হউক। পুলিশের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে গত ৯ বছরে দেশে মোট ১হাজার ৬৩৭টি এসিড সন্ত্রাসের মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত বিগত ৯বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সারাদেশে মামলার সংখ্যা ছিল ২০০ এর উপরে। এরমধ্যে ২০০২ সালে ২০৯টি, ২০০৩ সালে ২৫৮টি, ২০০৪ সালে ২০৮টি, ২০০৫ সালে ২০৬টি।

২০০৬ সালে তা আরো কমে আসে। ওই বছরে সারাদেশে মামলা হয় ১৪৬টি, ২০০৭সালে ১৭৭টি, ২০০৮ সালে ১৬৩টি, ২০০৯ সালে ১২৯টি। ২০১০ মামলা হয় ৯৭টি আর মাত্র ৪৪টি মামলা হয় ২০১১। ২০১২ এর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। মামলাগুলোর মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে ৯৭৯টি, ৬৪০টির চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে।

তদন্তাধীন আছে ১৮টি মামলা। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা ১৬৭টি। আসামির সংখ্যা ২৮১ জন। এদের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১০২ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ১৬৬ জনের।

খালাসপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা ৪৬৮টি। আর আসামি ছিল ১হাজার ৫৬৭ জন। বিচারাধীন মূলতবি মামলার সংখ্যা ৩৩২টি। তবে এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থা এসিড সারভাইভারস ফাইন্ডেশন এএসএফ কিছুটা গড়মিল রয়েছে। এএসএফ’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০২ সালে এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে ৪৯৪টি, ২০০৩ সালে ৪১৬টি, ২০০৪ সালে ৩২৬টি, ২০০৫ সালে ২২১টি, ২০০৬ সালে ১৮২টি, ২০০৭ সালে ১৬২টি, ২০০৮ সালে ১৪৩টি, ২০০৯ সালে ১২৫টি, ২০১০ সালে ১২০টি এবং ২০১১ সালে ৯১টি।

২০১২ সালে আগস্ট মাস পর্যন্ত সারাদেশে ৪৪টি এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়। এখনো এসিড নিক্ষেপ হচ্ছে। ঝলসে যাচ্ছে শরীর। ধরা পড়ছে না সন্ত্রাসীরা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.