আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"মরীচিকা ভালোবাসা"

আমার নিজের সম্পর্কে আমার ধারণা নেই :)

ঘুম ভাঙ্গলো পিউ এর। চোখ খুলে পাশ ফিরেই মোবাইলে হাত রাখল। ঘুম ঘুম চোখে ফেসবুকের ওয়ালে ঢুকলো, নোটিফিকেশন চেক করল। নতুন অনেক মেসেজ জমা হয়েছে। পরে দেখবে বলে রেখে দিল।

ক্লাশের জন্য রেডি হতে হবে। তাই তাড়াহুড়ো করে উঠে ফ্রেশ হলো। ফেসবুকই পিউ এর ধ্যান-জ্ঞান। সারাদিন অনলাইনেই থাকে ও বেশিরভাগ সময়। ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক, ঘুমানোর আগে ফেসবুক।

জীবনের ৮০ ভাগই ওর ফেসবুক। আজকে অনেকদিন পর টিভি দেখতে বসল পিউ। টিভি দেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে ও। চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একটা বাংলা চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো ওর। একটা টেলিফিল্ম হচ্ছে।

নায়িকাটাকে ওর ভালোই লাগে। দেখতে শুরু করল। হাতে কিছু সময় আছে ওর আজকে। একটা ছেলে আছে নাটকটাতে। অনেকদিন আগে এই ছেলেটাকে ও খুব পছন্দ করতো।

ওর আর ওর বোনের মধ্যে খুব ঝগড়াও হত এই মডেলটাকে নিয়ে। কার বয়ফ্রেন্ড হবে এই মডেলটা, এই নিয়ে দুই বোনের সে কি যুদ্ধ। পুরানো সব কথা মনে পড়ে গেলো পিউয়ের। ছেলেটার হাসিটা এত নিষ্পাপ। কেমন জানি চোখে লেগে থাকে।

মনোযোগ দিয়ে নাটকটা দেখল, আর সবথেকে বেশি মনোযোগ দিল যে যে সময় ঐ ছেলেটাকে দেখা গেলো। নাটক শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু পিউয়ের মনের মাঝে থেকে গেলো সেই হাসি। ফেসবুক ওপেন করেই ঐ মডেলের ওয়ালে ঢুকল পিউ। ওকে ফলো করল। তারপর ওর ছবি দেখতে থাকলো।

কি সুন্দর হাসি, কি মায়াবী চোখ। পাগল করা সব ছবি। এরপর থেকে পিউয়ের সারাদিনের বেশিরভাগ সময় কাটে ঐ মানুষটার ছবি দেখে , তার পোস্ট পড়ে, যে হয়তো জানেও না যে একই শহরে একটা মেয়ে বসে বসে শুধু ওকেই দেখে আর ভালোবাসার জাল বুনে যায়। অধরা ভালোবাসা। ওর ইনবক্সে মেসেজ পাঠিয়ে অপেক্ষা করে তার উত্তরের।

আর উত্তর পেলে মনে হয় যেনো চাঁদ পেয়েছে সে। শুরুটা খুব সহজ হলেও ব্যাপারটা সহজ রইলো না। পিউয়ের এই অদ্ভুত ভালোবাসা কেমন জানি ছায়ার মত, নেশার মত ওর পিছু নিয়ে রইল। ধীরে ধীরে নিজের অজান্তে ও এক মরীচিকার পিছনে ছুটতে লাগলো। ওর ধ্যানে জ্ঞানে যে বসত করতে লাগলো তার সল জীবনের কোথাও পিউয়ের ছায়া পর্যন্ত নেই।

তারকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এক তরুণের প্রেমে মগ্ন হয়ে দুনিয়ার আর সব কিছু যেন ভুলতেই বসল পিউ। প্রথম দিকে বন্ধুরা হাসি ঠাট্টা করলেও খুব কাছের বন্ধুরা বুঝতে শুরু করলো যে পিউ একটা অবসেশনে ভুগতে শুরু করেছে। খুব চেষ্টা করলো ওরা পিউকে বুঝাতে। কিন্তু তারা জানতোই না যে পিউয়ের অবসেশন এখন আর বুঝিয়ে শেষ করা যাবে না। অনেক বেশি খারাপ অবস্হা হয়ে গেছে ওর।

একটা মেয়ে প্রায়ই আনানের ইনবক্সে মেসেজ পাঠায়। ওর ওয়ালে কি কি সব লিখে, ওর সব ছবিতে কমেন্টও দেয়। মাঝে মাঝে আনান দুই একটা মেসেজের উত্তরও দেয়। ভালোই লাগে ওর। দিনে দিনে ওর ফ্যান বাড়ছে।

কেউ কেউ তো ওকে বিয়ের প্রস্টাবও দেয়। হাসি পায় , আবার খুব ভালোও লাগে ওর । খ্যাতির একটা নেশা থাকে, ওকেও সেই নেশাটা পেয়ে বসেছে। আজকে সারাদিন তেমন কোনো কাজ নেই আনানের হাতে। টিভির চ্যানেল ঘুরাচ্ছিলো আনান।

বুয়া একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে আসলো," ভাইয়া, আপনার নামে এই চিঠিটা আসছে। " আনান তো অবাক। এই মেইলের যুগে কেউ চিঠি লিখে নাকি? নিশ্চয়ই কোনো ফ্যানের কাজ। চিঠিটা খুলল আনান। " আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কেনো আপনাকে চিঠিটা লিখলাম।

ইচ্ছা করলেই আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলতে পারতাম। কিন্তু যে মানুষের চেহারা আজ আমার মেয়ের জীবন ধ্বংসের জন্য দায়ী তার চেহারা আমি দেখতে চাই না। হয়তো ভাবছেন আমার মেয়ের জীবন আপনি কিভাবে ধ্বংস করলেন, আপনি তো তাকে চিনেনই না। হয়তো সত্যিকার অর্থে আপনার কোনো দোষ নেই, কিন্তু যে মরীচিকার প্রেমে সে পড়ে তার বাস্তব জীবন ভুলতে বসেছিল সে মরীচিকাটা হলেন আপনি। কল্পনার রাজ্যে চলে গেছে মেয়েটা আমার, আর তার সেই কল্পনা থেকে কেউই তাকে বের করে আনতে পারছে না।

কেনো যে এমন হলো তার ব্যাখ্যাও কেউ দিতে পারছে না। শুধু একটাই নাম জপছে মেয়েটা আমার "আনান" । যেনো বাকি দুনিয়াটা তার অপরিচিত। আজ আমরা । ওকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে যাচ্ছি।

জানিনা ওর এই অসুখের শেষ পরিণতি কি । জানিনা আদৌ আমি আমার মেয়েটাকে,আমার পিউকে ফিরে পাবো কিনা। শুধু জানি, নিজের অজান্তেই হোক ওর এই অবস্হার জন্য দায়ী শুধু আপনি। - এক হতভাগিনী মা" মাথাটা ঘুরে উঠে আনানের। দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।

মাথার ভিতরটা ঝিমঝিম করছে ওর।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।