আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি কি কেবলি ছবি?

ছোটবেলায় শীতল যুদ্ধের সময় দেখতাম বামপন্থীদের একটি বৈশ্বিক অবস্থান ছিল। নিকারাগুয়ার সান্দানিস্তা সরকারের সাথে কন্ট্রা বিদ্রোহীদের সংঘাতে কিংবা পেরুর পিনোচে বা ফিলিপাইনের মারকোসের বিরুদ্ধে গনঅভ্যুত্থানে এদেশের বামপন্থীরা একটি পক্ষ নিতেন। ভিয়েতনামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকার রাস্তায় প্রতিবাদের সময় পুলিশের গুলিতে দু’জন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী নিহত হবার ঘটনা সবার জানা। কালের বিবর্তনে এখন বামপন্থীদের কথা আর কেউ শোনে না। রামপাল বা ফুলবাড়ীর আন্দোলন আমরা সমর্থন করলেও সযতনে এইসব আন্দোলনের underlying philosophy-কে এড়িয়ে যাই।

Global neo-liberalism-এর বিষয়ে আমাদের কোন অবস্থান থাকে না, বক্তব্য থাকে না।
কিন্তু, ডানপন্থী চক্র ক্রমেই বিশ্বে নিজেদের সংগঠিত করে চলেছে। মৌলবাদী - সে যে ধর্মের-ই হোক যে দেশের-ই হোক ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করেছে। বুশ-সাদ্দাম-লাদেনের তৈরী করা প্রতিক্রিয়াশীল বিশ্বে মোদি আর মোরসিদের আজ জয়জয়কার। এরই মধ্যে পাশ্চাত্যের global capitalism-এর বিপক্ষে সালাফি/ওয়াহাবি ভাবধারার global Islamism-এর একটি বিকাশ ঘটেছে।

যদিও সিরিয়া আর লিবিয়াতে এই ভাবধারার অনুসারীদের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের স্বার্থকেই সুরক্ষা করতে দেখা গেছে, যদিও আফগান মুজাহিদ এবং পরবর্তী সময়ের তালেবানদের লালন পালনে তথাকথিত পাশ্চাত্য ঘরানার আতিথেয়তার কোন কমতি ঘটেনি, যদিও পাকিস্তানের বিষয়ে এত কিছুর পরেও পাশ্চাত্য কেমন যেন একটা প্রাক্তন প্রেমিকসুলভ সলজ্জ সহানুভূতি নিয়ে থাকে তারপরেও বিশ্বের এবং বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন যে দুই পক্ষের এই বিরোধ একালের জিহাদ, একালের ক্রুসেড।
আল কায়েদার হিংস্র সন্ত্রাসী রূপ থেকে বেরিয়ে এসে global Islamism এখন ভর করেছে অপেক্ষাকৃত নিয়মতান্ত্রিক মুসলিম ব্রাদারহুডের উপর। এরা অনেক আগে থেকেই পারস্য, উত্তর আফ্রিকা আর সাবেক অঠোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এদের রাজনৈতিক বিস্তার যে আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মানে অন্তরায় হতে পারে সেটা বিগত শতাব্দীর এই অঞ্চলের দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়করা (কামাল আতাতুর্ক, নাসের, আনোয়ার সাদাত) উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তাঁরা কেউ এই ধর্মোন্মাদ রাজনৈতিক শক্তিকে প্রস্রয় দেন নি।


ব্রাদারহুডের হালের রাজনৈতিক উত্থান কাহিনী আমরা সবাই জানি। এর সাথে বাংলাদেশের জামাতের সখ্যতা নতুন কিছু নয়। ব্রাদারহুডের উত্থানের পেছনে কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের appeasement নীতি বা সৌদি আরবের ভূ-রাজনৈতিক এবং সুন্নিভিত্তিক সালাফি/ওয়াহাবি স্বার্থ নিহিত রয়েছে বলে মনে করেন। মজার বেপার হল ২০১১/১২-র দিকে ওবামা ব্রাদারহুডকে উদার-গনতান্ত্রিক দল বলে অভিহিত করেছিলেন, আর পারস্যভিত্তিক আল-জাজিরার ব্রাদারহুড প্রেম দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হয় না যে লোহিত সাগরের উভয় পাড়েই ক্ষমতার বলয়ের কাছের মানুষদের সাথে দলটির ভালই দহরম মহরম রয়েছে। মজার বেপার হল এই প্রত্যেকটি বিষয়ে ব্রাদারহুডের সাথে জামাতের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

জামাতের প্রতি পশ্চিমের এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রচ্ছন্ন এবং সরাসরি সমর্থন নতুন নয়। বাংলাদেশের মার্কিন রাষ্ট্রদুত বা তাদের সহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে জামাতের বোঝাপড়া ভালই বজায় থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের শেখরা জামাতকে তাদের উপপত্নীর ঘরে জন্ম নেয়া সন্তানের মতই ব্যাবহার করে। আর হালে তুরকী সরকার সবার সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রমান করে দিল যে জামাত তাদের half brother।
জামাতের সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডের organizational & philosophical মিলের সাথে সাথে operational মিলও খুঁজে পাওয়া যায়।

দুই দলেই একদিকে যেমন শিক্ষিত সুশীল স্তাবক থাকে, অন্যদিকে তেমনি থাকে একটি কপট, ধুরন্ধর আর মিথ্যাশ্রয়ী ground level activists যারা অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মানুষদের টার্গেট করে propaganda চালায়। অনেকটা Toyta কোম্পানির মতঃ বিত্তবানদের জন্য আছে Lexus আর মধ্যবিত্তদের জন্য Yaris. একটির brand image অন্যটিকে ছুঁবে না। ব্রাদারহুডের একদিকে আছে পাশ্চাত্য শিক্ষিত তুখোড় ইংরেজি জানা dedicated PR এবং বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় যারা BBC, CNN, Al-Jazeera তে দিন রাত কথা বলে যাচ্ছে সুশীল ভাষায়, অন্যদিকে আছে uncouth আম জনতার জন্য বিশেষভাবে তৈরি propaganda machine. এধরনের একটি গোষ্ঠী ইদানিং জর্ডানে মোরসিকে চাঁদে দেখার কাহিনী প্রচার করেছে। ছবিটির লিঙ্ক নীচে দেয়া হল। Google Translation থেকে বোঝা যায় “যে মোরসিকে NASA-র তোলা ছবি থেকে চাঁদে দেখা গেছে।

কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা এই ছবি দ্রুতই মুছে ফেলে” এভাবে এই ছবিটি social networking site-এর মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমার মিশরীয় বন্ধুর কাছে থেকে আরো জানতে পারলাম ব্রাদারহুডের মিথ্যাচারের কাহিনী যা আমাদের জামাত/হেফাজতের মিথ্যাচারের সাথে সংগতিপূর্ণ। বাংলাদেশী পাঠকদের এর পরেও বলে দেবার প্রয়োজন নেই যে সাঈদি, মোরসি আর তাদের সমর্থকদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মিল কতটা প্রকট।
মজার বেপার হল জামাতের propaganda machine-এও দুই ধরনের positioning strategy বিদ্যমান। জামাত একদিকে David Bergman, আসিফ নজরুল বা ফরহাদ মাজহারদের বক্তব্য ব্যাবহার করে (তারা নিজেরা জামাতপন্থী কি না সেই বিতর্কে না-ই গেলাম, পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম সেই সিদ্ধান্ত)-এরা হল জামাতের Lexus ব্রান্ড – টার্গেট মার্কেট হল শহুরে শিক্ষিত সম্প্রদায়, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার ব্যাবসায়ী আর তাদের স্নেহধন্য প্রচার মাধ্যম।

অন্যদিকে গ্রাম পর্যায়ে তারা ব্যাবহার করে অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষি মসজিদের ইমাম/ধর্ম ব্যাবসায়ী। Toyota-র মতই এই দুই brand সমান্তরালে থাকে – একীভূত হয় না। সামাজিক মাধ্যমেও দেখে যায় একদিকে দেশি/প্রবাসী শিক্ষিত লেবাসধারী, অন্যদিকে বাঁশের কেল্লা and co.
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম – হ্যাঁ বৈশ্বিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন আজ আর নেই। আছে কেবল global capitalism যা কি না Tom and Jerry খেলা খেলছে তথাকথিত global Islamism-এর সাথে। এই খেলা থেকে সচেতন বিবেক বুদ্ধিমান মানুষ বিনোদন পায়, আর নির্বোধরা রোমাঞ্চিত হয়, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে।


Ref: http://www.shorouknews.com/news/view.aspx?cdate=25092013&id=9c7953d2-e08a-42e0-a8ea-28a9c0683ce6

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।