আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেবদাস কথন - ৩

ভালবাসতে সবাই জানে , দুঃখ পেতে সবাই জানে তবে কস্ট কে বুকে ধরে সেটা উপভোগ করা কতটা নির্মম সেটা কেউ কেউ জানে । এখানে থাকবে দেবদাস এর ডায়েরি কথন - ইহসাক ভাইদের বাসায় সেবার বেশ বড়সড় আম ধরেছিল । তাদের বাসার পাশেই যূথী আপুদের বাসা । আর যূথী আপুদের বাসার পাশেই হল মাঠ যেখানে আমাদের বিকেলের খেলার স্থান । সাতচারা অথবা ফুটবল যখন ই যূথী আপুদের বাসায় যেতো ভুলে ও কেউ সেখানে পা মাড়াতো না , অতঃপর জরিমানা দিতে হইতো ।

অনেক শুনেছি যে ইহসাক ভাইদের পাকা বড় আমগুলি নাকি সেখানেই পড়ত কিন্তু অই টাইগার টার জন্য কিছু করতে ভয় হত । টাইগার হ্যা ওর নাম ছিল টাইগার । দেখতে পিচ্চি হলে কি হবে চেচাতো বেশ জোড়েসড়ে । মাঝে মাঝে বেশ লাফিয়ে লাফিয়ে চেচাতো । পাঠক সকুল আপনাদের ভাবনা হচ্ছে কে এই টাইগার ? আচ্ছা বলছি এইটা হইল একটা কুকুর ।

কুকুরটা দেখতে বেশ কিউট কিন্তু ছুডু খাট এটাই আমাদের ভয়ের উপর রাখত । আমারা ছোট ছিলাম বিধায় সেখানে পা বাড়াতাম না । এভাবে বেশ কয়েকবছর পার হবার পর ক্লাস ৭ কি বা ৮ এ থাকা কালিন আমার প্রথম যাত্রা সেই বাসায় । আমাদের এলাকায় এক খালা থাকতেন , তার দুটি সন্তান । তারা আমাকে অনেক আদর করতেন ।

ভাইয়াটা তখন শাহিন কলেজে আর আপুটা সবে এসসি দিবে । যথারিতি যূথী আপুর বান্ধুবী ছিলেন অই আপুটা । আপনারা হয়ত লক্ষ করবেন শবেবরাতে অনেকেই হালুয়া রুটি বানিয়ে পাশের বাসায় অথবা কারো কারো ঘরে বিলান । অই দিন আমার একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ল আর সেটা হইল হালুয়া পরটার প্লেট নিয়ে যূথী আপুদের বাসায় সাপ্লাই করা । কি ভয়ানক একবার বুঝেন , আমি তো পারি না ভয়েই চুমশে যাই কিন্তু আপুর ধমাকাধমকি খেয়ে শেষে যেতে হল ।

না হলে আপু আমারে বলছে - তুই কি কাপুরুষ ভিতু হয়ে থাকতে চাস নাকি মহাপুরুষ । আমি মহাপুরুষ হতে চাই বলেই নিজেই জিব্বায় কামড় দিয়ে হালুয়া নিয়ে প্রবেশ করলাম আপুদের বাসায় । গেটের কাছে এসে কলিং বেল দিয়েছি কি এমন সময় ঘেউ ঘেউ , ওরে আল্লাহ্‌ কই যাই । ওপাশ থেকে তখন একটা স্পিকারে ভেসে আসল - কে ? আমি কোনমতে আমার নাম বলেছি তখন ই বলল ভিতরে কব্জাটা উপরে উঠাইয়ে চলে আসো । আমি কইলাম - আফা টাইগার ? ভিতর থেকে বলল , নাহ ও কিছু করবে না ও ওর রুমে তালা বাধা আছে তুমি চলে এসো ।

আমি দোয়া যা আছে সব পইড়া ( বাই দা ওয়ে কুলহুয়াল্লাহ সূরাটা ৩ বার পড়ছিলাম মনে হয় ) থুথু দিয়ে বুকটা ভিজিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম । ভিতরে ঢুকেই দেখলাম বাসাটা সোজা চলে গেছে ভিতরে আর দেয়াল জুড়ে গাছ -গাছালি । পরে জেনেছি সেগুলো পাতাবাহার । ডানে ছোট্ট একটা ঘরে দেখলাম সাদা বিলাইয়ের মতন একটা ছুডু কুত্তা । ওরে এটাই বুঝি টাইগার , এতু ছুডু ।

অতঃপর ভিতরে থেকে বীরবিক্রমে বেরিয়ে আসার আগে ২ টা টেনিস বল আর একটা পাকা আম যূথী আপু গিফট করল আমারে আর কইলো নেক্সট টাইম বাসায় আসলে হাফ পেন্ট না পইরা ফুল পেন্ট পরে আসতে । যথারীতি বিকেলে মাঠে গিয়ে বল গুলো যখন দেখালাম বন্ধুদের তখন তো এক একটার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো । আমি ও তাদের কাছে গোপন করেছি যেটা সেটা হচ্ছে - টাইগার কিন্তু দেখতে বিলাইয়ের লাহান না সে কিন্তু অনেক ওচা আর ইয়া বড় বড় দাঁত ও আছে তার । যদি কইতাম ছুডু তাইলে তো সবাই বল আনতে যাইতো আর সেই সাথে আম ও , আমি চাই নাই এটা হোক । অতএব প্রতি সপ্তাহে একদিন হলে ও আপুদের বাসায় এই বীরপুরুষের গমন নিশ্চিত ।

চলবে ...............................। অবশ্যই ফুল প্যান্ট পরে গেছিলাম , আফনাগো কি ধারনা । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।