আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিশ্চিত ইহকালের জন্য কত প্রস্তুতি নিশ্চিত পরকালের জন্য কোনো প্রস্তুতি নিয়েছেন কি ?

প পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি- আমরা মানব জাতি দুনিয়াতে এমন একটা ধারনা নিয়ে বেচে থাকি যে, এ দুনিয়াটা আমাদের । এটাই আমদের থাকার স্থান , ঘরবারি এখানেই আছি থাকব যেন এটা আমাদের চিরদিনের আবাস স্থান। কিন্ত যে বাস্তবতা আমরা জানিনা বা জানতে চাইনা সেটা হলো আমরা মুলত একটা ট্রেনে ভ্রমন করছি যে ট্রেনটা একটা একটা স্টেশন পার করে সর্বশেষ একটা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই দুনিয়ার জীবন হচ্ছে এমনি একটা স্টেশনের শুরুমাত্র। আমরা এই দুনিয়ার নই বা এই দুনিয়াও আমাদের নয়।

আমাদের হাতে একটি টিকেট রয়েছে যেই টিকিটের তিনটি অংশ রয়েছে। যখন আমরা মায়ের গর্ভে থেকে পৃথিবীতে আসি সেই টিকেটের প্রথম অংশটুকু ছিরে ফেলা হয়, তার পরদুনিয়াতে একটা নতুন জীবনের পর যখন আমরা মৃত্যুবরন করি তখন টিকিটের দ্বিতীয় অংশটাও ছিরে ফেলা হয়। আমদারে হাতে থেকে যায় টিকেটের একটি অংশ যেটা জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশের সাথে সাথে ছিরে ফেলা হবে যেটা হবে আমাদের চুরান্ত গন্তব্য স্থল। এই দুনিয়ার চিরস্থায়ী বাসিন্দা আমরা নই, আমাদের দীর্ঘ সফরের ক্ষুদ্র একটা অংশ এই দুনিয়ার জীবন। তাই রাসুল (সাঃ ) বলেছেন-"এই দুনিয়াতে তুমি এমন ভাবে বেচে থাক যেন তুমি একজন মুসাফির" রাসুল (সাঃ ) দুনিয়ার বাস্টবাতাকে আরো ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য তুলনা করে বলেছেন যে - ধর একটা মানুষ মরুভুমির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সে দেখলো একটা গাছ সে এটার নিচে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলো তারপর পুনরায় উঠে তার অসম্পুর্ন যাত্রার পথে চলা শুরু করলো।

আমাদের জীবনটা গাছের নিচে বিশ্রাম নেওয়ার মত সামান্য সময়ই মাত্র। প্রতি সেকেন্ডেই আমাদের জীবনের একটা অংশ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে আমরা এই দুনিয়ার কেউ নই তাই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে মৃত্যুর জন্য। আর এবিষয়টা নিয়েই আমরা শুরু করতে যাচ্ছি আমাদের লেকচার সিরিজ "পরকালের পথে যাত্রা'। আসুন প্রথমেই আমরা জেনে নেই কেন এই বিষয়টা নিয়ে আমরা ধারাবাহিক আলোচনা করবো, কেন আমরা এগুলি শুনব ? আসলেই সব কাজের পূর্বে এর উ্দ্দেশ্য জেনে নেয়া দরকার। ১নং কারন হলো আখিরাতের উপর বিশ্বাস ইমানের একটি অংশ।

এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই পড়েছি। ২নং বিষয়টা নিয়ে আমরা বর্তমান সমাজচিত্র নিয়ে একটু আলোচনা করব। কেন আজ এজন মুসলিম মদপান করছে, ব্যাবিচার করছে , সুদের সাথে জরিয়ে পরছে, মিথ্যা বলছে অথচ সে একজন মুসলিম। এগুলো কেন হচ্ছে ? আমাদের মূল সমস্যাটা কোথায় ? ভালো করে খেয়াল করুন সায়েদেনা আয়েশা (রাঃ ) একটা কথার দিকে, ওনার এই একটি কথাতেই আমাদের সামাজিক জীবনের একটা ইস্টেহার বা প্রোগ্রাম দেওয়া আছে। তার এই একটি কথা যদি আমরা মেনে নেই তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা আমদের জীবনে ব্যপক পরিবর্তন দেখতে পাব।

আয়েশা (রাঃ ) বলেন -" যদি কোরআনে সর্বপ্রথম নাজিল হতো যে তোমরা মদ খেয়োনা, তাহলে লোকে বলত আমরা মড খাওয়া কখনই ছারব না। যদি সর্বপ্রথম এই আয়াত নাজিল হতো 'তোমারা যেনা ব্যাবিচারে লিপ্ত হইয়ো না তাহলে লোকরে বলত আমরা কখনই যেনা ব্যাবিচার থেকে বিরত হব না । কেন ? প্রথেমই যডি এই ধরনের আয়াত নাজিল হতো লোকেরা এগুলি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে অস্বীকার করত। কিন্তু কোরআনে সবার আগে সে বিষয়টা বলা হয়েছে সেটা হলো জান্নাত এবং জাহান্নাম। মানুষের মন আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়ার পর এসেছে হালাল এবং হারামের হুকুম গুলো।

আপনি যদি খেয়াল করেন দেখবেন মক্কা জীবনে শরিয়তের আইন কানুন বা বিধি নিষেধ তেমন একটা নাজিল হয় নি । বিধি নিষেধ বেশি নাজিল হয়েছিলো মাদানী জীবনে। মাক্কী জীবনে ছিলো এই বিধি নিষেধ মেনে চলার জন্য একটা প্রস্তুতির সময়। এ সময়টা ছিলো নিজেদের ইমানকে পরিপূর্ন করার সময়। আর সেটি কিভাবে ছিলো সেটি ছিলো জান্নাত ও জাহান্নাম বারবার স্মরন করার মাধ্যমে।

আখিরাতের জীবনকে স্মরন করার মাধ্যমে। তাই মাক্কী জীবনে বারাবার বলা হয়ে গায়েব বা অদৃশ্যের কথা। যেন মানুষের হ্রদয় আল্লাহ (সুবঃ ) প্রতি অনুগত হতে পারে। এর পর আল্লা(সুবঃ ) হালাল এবং হারামের আয়াতগুলো প্রকাশ করা শুরু করলেন, যখন মানুষের অন্তরগুলো আল্লাহর হুকুম আহকাম মানার জন্য তৈরী হয়ে গেলো। ইসলাম সম্পর্কে বর্তমান মুসলিমের একটি বড় সমস্যা হলো অগ্যতা তারা ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেনা।

এটি যে একমাত্র সমস্যা তা নয় যেমন সবাই জানে মদ পান হারাম তবু কিছু মানুষ মদ পান করছে, সুদ হারাম তবু অনেকে সুদের সাথে জরিত, সবাই জানে জামাতে সালাত আদায়ে গুরুত্বের কথা তবু মানুস এগুলোর ব্যাপারে একেবারে উদাসীন। এর কারন হলো আমাদের ইমান বা বিশ্বাসের অপর্যাপ্ততা। আমাদের অন্তরগুলো আজ পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। পরাকালের জীবনের প্রতি ভয়ই পারে আমাদের এই পাথর অন্তরকে নরম করতে। রাসুল ( সাঃ ) বলেন - আমি যা জানি তোমারা যদি তা জানতে তাহলে বেশি বেশি কাদতে আর অল্পই হাসি ঠাট্রা করতে।

পরকালের জিবনের বাস্তবতা আমদের খুব কাছ থেকে অনোভব করতে হবে যেমনটা করেছেন সাহাবাগন ও আলী(রাঃ )। তিনি বলেন - জান্নাতকে যদি আমার সামনে আনা হয় আমি ততটাই ভালোবাসব যতটা না দেখে বাসি আর জাহান্নামকে যদি আমার সামনে আনা হয় ততটাই ভয় পাব যতটা না দেখে ভয় পাই। তিনি এই দুনিয়াতেই বেচে ছিলেন তবে এমন ভাবে যেন তিনি জান্নাত ও জাহান্ণামকে দেখতে পাচ্ছেন এটাই হলো ইমান ও বিশ্বাস। আসুন আয়েশা (রাঃ ) হাদিসে ফিরে যাই। ১৯৩০ সাল আমেরিকার কংগ্রেস মদ নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাশ করলো।

এই আইনের বাস্তবায়নে ৫লক্ষ লোক জেলে বন্ধী হলো, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যায় হলো, হাজার জাহার মানুষ নিহত হলো তবু মদপান বন্ধ করা গেলো না এমনকি বেড়ে গেলো। মানুষ নিজেদের ঘরে মদ বানানো শুরু করলো। মদ বানানোর অসাস্হ্যকার পরিবেশের কারনে কিছু রোগ মহামারি আকারে দেখা দিলো। এক পর্যায়ে সরকার বাধ্য হয়ে আইনটি বাতিল করে এই হলো বর্তমান শক্তিধর আমেরিকা। সুভানআল্লাহ মুসলিম হোক অমুসলিক হোক সবাই বুঝতে পারে মদপান শরীরের জন্য ক্ষতি।

তথাকথিত শক্তশালি আমেরিকা একটি সামান্য আইন পরয়োগে ব্যার্থ হলো। এইবার আসুন আমরা ১৪০০ বছর আগে ফিরে যাই। জীবরাইল (আঃ) আয়াত নিয়ে হাজির হলেন রাসুল(সাঃ ) কাছে-হে মুমিনগন এই যে মদ জুয়া,প্রতিমাএবং ভাগ্য নির্ধারন তীর এই গুলা সয়তানের অপবিত্র কাজ ছারা কিছুই না। অতএব এগুলো থেকে বেচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যান প্রাপ্ত হও। একটি মাত্র আয়াত ।

এই আয়াতটি নিয়ে জীবরাইল (আঃ ) রাসুল(সাঃ ) কাছে হাজির হলেন। রাসুল (সাঃ ) কোনো সেনা বাহিনী, পুলিশের সাহায্য ছারাই শুধু আয়াতটি সাহাবাদের পড়ে শুনালেন সাহাবারা সাথে সাথে মদিনার রাস্তায় বের হয়ে ঘোষনা করলেন মদ খাওয়ার বৈধতা ইসলামে আর নেই। আনাস ইবনে মালিক(রাঃ ) ঘোষনা করেন আমি কয়েকজন সাহাবাকে মদ পরিবেশন করছিলাম এমন সময় শুনলাম মদপান হারাম আমি সাথে সাথে আমার হাতে মদের জগটি ফেলে দিলাম, অন্যান্যরা তাদের হাতের গ্লাস ফেলে দিলেন যারা গিলে ফেলেছিলেন তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন বমি করে ফেলে দিতে। বলা হয়ে থাকে মদিনার রাস্তায় এর পর মদের বন্যা বয়ে গিয়েছিলো। কোনো আইণ প্রয়োগকারী সংস্থা বা জোর ছারাই বাস্তবায়ন হয়ে গেলো আল্লাহর আইন।

কেন ? যেটা ১৪০০ আগে সম্ভব হয়েছিলো সেটা কেন আধুনিক আমেরিকায় সম্ভব হলো না ? এর মুল কারন হলো ইমান ও তাকওয়া। সাহাবারা নিজেদেরকে এভাবেই আল্লাহর দেওয়া আদেশ মানতে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। আমাদেরকেও তা করতে হবে। আড় এটা সম্ভব হবে তখনই যখন আমরা আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তা করবো। আখিরাতে সম্পর্কে জানবো এবং নিজদের মধ্যে এ ব্যাপার গুলো নিয়ে চিন্তা করবো।

আমাদের এই আলোচনায় পরকালের দিকে সেই মহা যাত্রায় পর্যায়ক্রমে অনেক গুলি বিষয় আসবে যেমন- ছোট বিচার দিবস, মৃত্যু, কবরের জীবন, কিয়ামতের আলামত যেগুলোর মধ্যে ছোটো বড় সব গুলো আলমাত নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর পর আসবে বিচার দিবস, পুনরুথ্থান ও বিচার দিবসের সেই ভয়ানক পরিস্হিতি, জবাদিহিতা হিসাব নিকাশ ও প্রতিফল ফলনের বর্ননা। সবশেষে চুরান্ত গন্তব্য জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ননা। এটা এমন এক যাত্রা যেটাই সবাই অংশ গ্রহন করে। আখিরাতের যাত্রা শুরু হয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

মৃত্যু হলো ছোট বিচার দিবস। বুখারীতে আছে একবার রাসুল (সাঃ ) কাছে কিছু বেদুইন এসে জানতে চাই লেন বিচার দিবস কখন শুরু হবে ? রাসুল (সাঃ ) বেদুইনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বালকটিকে দেখিয়ে বললেন এই বালকটি বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তোমাদের সকলের বিচার দিবস শুরু হয়ে যাবে অর্থাৎ মৃত্যু হয়ে যাবে। আল্লাহ (সুবঃ ) বলেন - আল্লাহর সত্বা ব্যাতিত সব কিছুই ধ্বংস হবে। বিধান তারই এবং তোমরা তারই কাছে ফেরত আসবে আল্লাহ (সুবঃ ) বলেন - প্রত্যেক প্রানীই মৃত্যুর সাধ গ্রহন করবে । আমাদের মৃত্যু কবে হবে সে সময়টিও পুর্বে নির্ধারিত।

আল্লাহ( (সুবঃ ) বলেন- আল্লাহর হুকুম ছরা কেউ মৃত্যুবরন করতে পারে না সে জন্য একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে এই সময় আমাদেরর মৃত্যু হবে। আল্লাহ(সুবঃ ) আরো বলছেন- প্রত্যেক জাতি এবং সকলের জন্যই একটি নির্ধারিত মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের এ মেয়াদ এসে যাবে তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে না এক মুহুর্ত এগিয়ে আসতে পারবে। একদিন রাসুল(সাঃ ) স্ত্রী উম্মে হাবিবা (রাঃ ) আল্লাহর কাছে সুন্দর একটি দোয়া করছিলেন দীর্ঘ হায়াত কামনা করে এমন সময় রাসুল(সাঃ ) এসে হাজির হন এবং তিনি বলেন- তুমি আল্লাহ(সুবঃ) এমন এক বিসয়ের জন্য দোয়া করছো যেটা তিনি আগে থেকেই তোমার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং তোমাদের রিজিক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং বন্টনও করে দিয়েছেন। তুমি যদি আল্লাহ (সুবঃ ) কাছে জাহান্নামের আগুন ও কবরের আজাব হতে মুক্তির জন্য দোয়া করতে সেটা তোমার জন্য আরো ভালো দোয়া হতো।

আমরা অনেকেই আমাদের পিতা মাতা বা আত্মীয় স্বজনের দীর্ঘ্য হায়াত কামনা করে দোয়া করি অথচ এটা পূর্ব নির্ধারিত যা হাজির হবে কোনো ঘোষনা ছারাই। মৃত্যু হবে ঠিক সেখানেই যেখানে আল্লাহ সুবঃ আপনার জন্য আমার জন্য নির্ধারন করে রেখেছেন। আপনাদের একটা সত্য ঘটনা বলছি ঘটনাটি ঘটেছিলো সৌদিআরবের রিয়াদে। একটি বিল্ডিংয়ের নির্মান কাজ চলছিলো এবং এর সাত তলা থেকে হঠাৎ এক লোক নিচে পরে যায়। এত উপর থেকে একেবারে নিচে কনক্রিটের উপর পরার পর সবাই দৌরে এলো ভাবলো লোকটি মারা গেছে।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে লোকটি নিজের পায়ে উঠে দারালো। লোকটি যখন দেখলো সে মরেনি সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। এই খুশিতে পালন করার জন্য সে উপস্হিত সবাইকে পানি পানের আমন্ত্রন জানালো এবং ড্রিংকস কেনার জন্য রাস্তার অপর পাশে দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন । রাস্তা পার হওয়ার সময় সে একটু অমনোযোগী হয়ে হাটতেছিলো তখন একটি গাড়ি তার উপর দিয়ে যায় এবং লোকটি মারা যায়। দেখুন লোকটি এত উপর থেকে পরেও মরলো না অথচ রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা গেলো।

আল্লাহ (সুবঃ ) তার জন্য সময় ও স্থান ঠিক করে রেখেছিলেন সেখানেই তার মৃত্যু হলো। আল্লাঃ তাকে তার নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে আসলেন । লোকটি ভেবেছিলো এমন একটি ঘটনার পর হয়তো এত তারাতারি তার মৃত্যু হবে না সে এই খুশিতে বিভোর ছিলো ঠিক সে সময়ই তার মালাকুল মউতের সাথে দেখা হয়ে গেলো। সুতরাং যখনমৃত্যু এসে যাবে তখন আপানার মেধা, টাকা, বিল্ডিং, ছেলেসন্তান কেউ আপনাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আপনি হয়ত ভাবছেন আপনার সামনে একট দীর্ঘ্য জীবন আছে আপনি তখন মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহন করবেন কিন্তু কোনো ঘোষনা ছারাই এসে হাজির হবে তার নির্ধারিত সময়ে যা আপনি জানেন না।

যে কোনো সময় আমপনার সাথে দেখা হয়ে যাবে মালাকলমাউতের। মনে করুন আপনি একটি বার্গার খাচ্ছেন হয়তো সেটি শেষ করার আগেই আপনি মরে যেতে পারেন। আমাদের এ কারনেই বারবার মৃত্যুর কথা স্মরন করা উচিত। কারন রাসুল (সাঃ ) বলেছেন- তোমরা বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরন কর। মুসলিম কিংবা অমুসলিম কেউ মৃত্যুকে অবিশ্বাস করে না।

ইমাম হাসান আল বাসরি- মৃত্যুর মত নিশ্চিত আর কোনো বিষয় নেই ^তবু মানুষ মৃত্যু নিয়ে এমন অনিশ্চতায় ডুবে আছে যে সে সারা জিবন এই দুনিয়াতে বেচে থাকবে। ভেবে দেখুন আমরা জানিনা আগামিকাল আমাদের জন্য কি রিজিক আছে সেই অনিশ্চিত জিনিসের জন্য আমরা কত প্লান প্রোগ্রাম করছি অথচ যে বিষয়টা শুনিশ্চিত তার জন্য আমরা কি প্রস্তুতি নিচ্ছি ? এটা অবাক করার মত মৃত্যুর জন্য সত্যি আমরা কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছিনা। অনেকেই আবার মৃত্যুর পর কবরের জন্য জায়গা ঠিক করে রাখে, বা জানাজা কোথায় হবে বা অন্তষ্টেক্রিয়া করে থাকে অথচ তারা মৃত্যুর পরে কি হবে তার জন্য তারা কোনো প্রস্তুতি নেয় না। বিখ্যাত সাইন্সফিকশন লেখক আই জ্যাক আসিমভকে তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে জানতে চাওয়া হয়ে ছিলো মৃত্যুর পরের কথা তিনি বলেছিলেন কিছুই হবে না আমি মরে গেলে আমার লাশ পচে মাটিতে পরিনত হবে। তার এত গেয়ান, খ্যাতি , সম্পদ , জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও ১৪০০ আঘের মুর্খ্য কাফিরের সাথে মূলত কোনো পার্থক্য নেই।

তার তথাকথিত এই গেয়ান কোনো কাজেই আসেনি। আমরা একজন লোককে যতই বুদ্ধিমান মনে করিনা কেন প্রকৃত পক্ষে তার বুদ্ধি শুন্যের কোঠায় যদি সে আখিরাতকে বিশ্বাস না করে। আল্লাহ (সুবঃ ) বলেন - তারা আরো বলবে যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম তাহলে আমরা জাহান্নাম বাসিদের মধ্যে থাকতাম না। বুদ্ধি খাটানোর কথা আল্লাহ (সুবঃ ) বিশেষ ভাবে বলেছেন যদি তারা এগুলো কাজে লাগাতো তাহলে তারা অবশ্যই আখিরাতের উপর বিশ্বাস করতো। সুতরাং মানুস যদি টার বুদ্ধিকে খাটাতো তাহলে আখিরাতকে বিশ্বাস করতো।

এত মেধা ও বুদ্ধি থাকার পরও যদি আমাদের জাহান্নামের আগুনে পুরতে হয় তাহলে এর কি মূল্য থাকল। আল্লাহ (সুবঃ ) বলেছেন কেন আমাদের এই মেধা , বুদ্ধি বিবেক কেন দিয়েছেন। আল্লা(সুবঃ ) বলেন- তোমাদেরকে তিনি দেন চক্ষু, কর্ন এবং অন্তকরন অর্থা্ৎ মন তোমরা সামন্যই কৃতগ্গতা প্রকাশ কর। সুতরাং আল্লা(সুবঃ ) আমদের চোখ , কান , মন দিয়েছে যাতে আমরা শুনি, দেখি এবং চিন্তা করি এবং আল্লাহর কৃত্গ্গতা প্রকাশ করি। আমরা যখন মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করি সেটা আমাদের দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমিয়ে দিবে।

দুনিয়াকে নিয়ে আমরা এতটাই ব্যাস্ত যে মৃত্যুর কথা আমরা ভুলে যাই গাফেল হয়ে যাই। তাই মৃত্যুকে বেশি বেশ স্মরন করতে হবে। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত বা আগের মুহুর্তটার একটা নাম আছে সেটাকে বলা হয় "আল ইহতিদার"। এটা একদম মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত যখন মালাকাল মাউত আজরাইল (আঃ ) জান কবজের জন্য হাজির হন। আল্লাহ (সুবঃ) এই সম্পর্কে বলেন- যখন তোমাদের কারো মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেস্তারা তার আট্মা হস্তগত করে নেয়।

ফেরেস্তারা যখন জান কবচ করতে আসে মৃত্যু পথযাত্রী ব্যাক্তি ফেরেস্তাদের দেখতে পায় যদিও আমরা সাধারনত ফেরেস্তাদের দেখিনা। রাসুল (সাঃ ) বলেন মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুর পথে যাত্রা শুরু করে ফেরেস্তারা তখন উজ্জল চেহারা নিয়ে উপস্হিত হন এবং বলে পবিত্র আত্মা আল্লাহর ক্ষৃমা ও সন্তুষ্টির দিকে চলে আসো। এবং তারা খুব কোমল ভাবে টার ডেহ থেকে আত্মাকে বের করে নেয়। কিন্তু পাপিদের সামনে মালাকাল মাউত ভয়ংকর চেহারা নিয়ে হাজির হবে এবং বলবে হে পাপি আত্মা আল্লাহ(সুবঃ ) ক্রোধ এবং রোশের দিকে তুমি ছুটে আস। (আনোয়ার আল আওলাকির বিখ্যাত লেকচার দি হেয়ারআফটার বা পরকালের যাত্রার বাংলা অনুবাদ।

চলবে সাথে থাকুন) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।