আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপির পিছু পিছু এরশাদ!

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দেওয়া হবে না’ বলে গত রোববার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে খুলনার জনসভায় ঘোষণা দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে প্রকল্পটি বাতিলের দাবি জানান জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

খালেদা জিয়া সুন্দরবন ও সেখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কা ব্যক্ত করে বিদ্যুৎ প্রকল্পটির বিরোধিতা করেন। এরশাদও এটাকে সুন্দরবনকে ধ্বংস করার একটি আত্মঘাতী প্রকল্প বলে আখ্যায়িত করেন।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালের আগস্ট মাস থেকে।

এর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রতিবাদ করে এলেও বিএনপি এত দিন নীরব ছিল। এরশাদও কিছু বলেননি। জাতীয় কমিটির ঢাকা থেকে রামপাল পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরদিন প্রথম প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। এর এক ঘণ্টা পর একই প্রতিক্রিয়া জানান এরশাদও।

অবশ্য এরশাদের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় দাবি করেন, খালেদা জিয়ার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতার সঙ্গে এরশাদের বিবৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।

জাপার রাজনীতির একাধিক পর্যবেক্ষক জানান, দেশের চলমান নানা রাজনৈতিক ঘটনা এবং বিভিন্ন জাতীয় বিষয়ে এরশাদ এ ধরনের কৌশল নিয়েছেন অনেক আগে থেকেই। এর শুরু হয় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিএনপির কঠোর অবস্থানের পর থেকে। ওই সময় এরশাদ ভারত সফর করে দেশে ফিরে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সিলেটের জকিগঞ্জ অভিমুখে লংমার্চ করেন। এরপর তিস্তা ও ফেনী নদী অভিমুখেও লংমার্চ করেন।

একইভাবে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করার বিরোধিতা, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি, পুঁজিবাজার ও হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সমালোচনা এবং হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পর পর এরশাদও একই ভাষায়, ক্ষেত্রবিশেষে আরও কঠোর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।

জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, জাপার নিজস্ব সত্তা ও রাজনৈতিক ভিন্নতা আছে। কাউকে অনুসরণ করে নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে যখন যা বলা উচিত, এরশাদ তা-ই বলেছেন। তিনি দাবি করেন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা ও হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন এবং বিশ্বজিৎ হত্যার বিরুদ্ধে এরশাদই প্রথম কথা বলেছেন।

অবশ্য জাপা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এরশাদের এই কৌশলের পেছনে নীতি-আদর্শের চেয়ে ‘রাজনৈতিক মতলব’ হাসিলই প্রধান। তিনি সরকার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই বলে বুঝ দিচ্ছেন যে তাঁর মূল লক্ষ্য, উল্লিখিত বিষয়গুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে সৃষ্ট জনমত যেন একচেটিয়া বিএনপির দিকে চলে না যায়।

তাতে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছেন তিনি। আর দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে বিএনপি না গেলে তাতে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাপা অংশ নেবে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সায় নিয়ে দুই বছর আগে থেকেই এরশাদ সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন। যাতে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা গায়ে না পড়ে, সে জন্য আগেভাগে রাজনীতির মাঠে একটা অবস্থান তৈরি করতে চান।

অপর দিকে এরশাদ বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন বলে জানা গেছে।

শেষ মুহূর্তে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে কোনো সমঝোতা হলে কিংবা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের কাছ থেকেও সুবিধা গ্রহণের পথ খোলা রাখছেন তিনি। এ কারণে বিএনপিকে খুশি রাখতে একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না বলে এরশাদ সভা-সমাবেশে বলে বেড়াচ্ছেন। তবে এরশাদ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবেন, সেটা নিয়ে তাঁর দলের অন্য নেতারাও নিশ্চিত নন।

দায়িত্বশীল একাধিক নেতা মনে করেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী একটি দেশের প্রভাব এরশাদের ওপর খুব ক্রিয়াশীল। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এরশাদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই থাকার সম্ভাবনা বেশি।

জাপার একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে এরশাদ একাধারে সরকারের সমালোচনা, মহাজোট ছাড়ার হুমকি ও আগামী নির্বাচনে একা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এলেও মহাজোট ছাড়েননি। বরং এরই মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ব্যাংক ও টেলিভিশনের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়েছেন। জানতে চাইলে এটাকে এরশাদের রাজনৈতিক কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন জাপার মহাসচিব।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.