আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশেষ সুযোগ পাবেন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী÷

বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিশেষ নির্বাচনী আচরণবিধি তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রধানকে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি প্রতিটি পার্টির বিশেষ কিছু ব্যক্তিকেও দেশব্যাপী প্রচার-প্রচারণার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ না থাকায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি খসড়া করা হচ্ছে। নভেম্বরের শুরুতে তা চূড়ান্ত অনুমোদন হতে পারে।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের অংশগ্রহণের বিশেষ সুযোগ রেখেই আচরণবিধি সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বা দলীয় প্রধান সব নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন। মন্ত্রীরা প্রার্থী হলে তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারবেন। পাশাপাশি প্রটেকশনও পাবেন তারা। সংসদ সদস্যরা নিজ পদে থেকেই প্রার্থী হতে পারবেন। এ ছাড়া বিরোধী দলের প্রধান বা পার্টির প্রধানসহ প্রতি দলের প্রায় ২০-২৫ জনের প্রচারণায় পৃথক সুযোগ থাকছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীসহ সব প্রার্থীর জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ রাখতে শুধু আচরণবিধিতে পরিবর্তন আনলে হবে না। এর জন্য রুলস অব বিজনেস সংশোধন করতে হবে। কারণ অনেক বিষয় এখনো স্পষ্ট হয়নি। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সরকার চাইলে নির্বাচনের প্রয়োজনে সংসদের অধিবেশনও আহ্বান করতে পারবে। সংসদ সদস্যদের পদে থেকে নির্বাচন করার বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হলে সবার জন্য সমান সুযোগ রাখা কমিশনের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি। দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দেশের আচরণবিধি পর্যালোচনা করে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে তথা রুমের দরজা বন্ধ করেই রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০১৩-এর খসড়া তৈরি করেছে কমিশন। নভেম্বরের শুরুতেই খসড়া প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করে ইসি নির্বাচনের দিকে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধিতে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিলবোর্ড, ব্যানার ব্যবহারে শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। তবে এ রকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে না বলে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে কমিশনকে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদীয় আসন বিন্যাসসহ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪০ শতাংশ নির্বাচনী মালামাল এরই মধ্যে কমিশনে পেঁৗছেছে। ২৪ অক্টোবরের মধ্যে বাকি মালামাল পেঁৗছাবে। ২৫ বা ২৬ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবেন। পরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। যে ধরনের সরকারের অধীনেই এ নির্বাচন হোক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির কোনো সমস্যা হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করবে। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা ইসির জন্য কঠিন কাজ হবে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেছেন, নির্বাচনের আচরণবিধি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে। কারণ নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। সব দলের জন্য সমান সুযোগ রাখতেই বিভিন্ন দেশের আচরণবিধি দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশন অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে সংসদ নেতা থেকে সংসদ সদস্য, স্পিকার থেকে হুইপ, প্রত্যেকেই নিজ নিজ পদে বহাল থাকছেন। তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পাবেন। তবে প্রটোকল না পেলেও প্রচারণায় নিরাপত্তা প্রটেকশন পাবেন। তবে মন্ত্রীদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে যাওয়ারও সুযোগ রাখা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম সারা দেশে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবে।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হলেও বাস্তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সব প্রার্থী ও দলের জন্য সমান সুযোগ থাকছে না। দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকায় নির্বাচনের সময় প্রশাসনের পুরো নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকছে। সংবিধান ও আরপিও অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণায় আচরণবিধিতে সমান সুযোগ দেওয়ার এখতিয়ার ইসির নেই।

রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার ১৪(১ক) ধারায় সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে- 'সংসদের সাধারণ নির্বাচন বা কোনো শূন্য আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান হইবার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীদের পদমর্যাদাসম্পন্ন সরকারি সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি নির্বাচনপূর্ব সময়ের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারিবেন না।' তবে (১ক) উপবিধির এক উপধারায় বলা হচ্ছে- 'পদধারীগণ প্রার্থী হইলে তাহার নির্বাচনী এলাকার প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না। এছাড়া দলীয় প্রধানের ক্ষেত্রে উপবিধি (১) প্রযোজ্য হইবে না।' একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের প্রতিটি আসনের জন্য নির্বাচনী জনসভা ও নির্বাচনী ক্যাম্পের সংখ্যাও নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিলবোর্ডের প্রচারণা ও প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যানার ও ডিজিটাল ব্যানার ব্যবহারে শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে নির্দিষ্ট মাপের সাদা-কালো ব্যানার ব্যবহারের বিধান রাখা হচ্ছে। সংসদ সদস্যপদ লাভজনক নয় বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ। এ কারণে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা থাকছে না। আচরণ বিধিমালার খসড়ায় সংসদ সদস্যদের নিজ আসনে প্রচারণায় কোনো ধরনের বিধিনিষেধ থাকছে না। এর ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.