আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চারদিকে ককটেল আতঙ্ক

ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটছে যত্রতত্র। বাদ যাচ্ছে না মন্ত্রী বিচারপতি থেকে শুরু করে রাজনীতিক ও ভিআইপিদের বাসা-বাড়ি। হঠাৎ করে ককটেল বোমা আতঙ্ক ছড়িয়েছে সবার মধ্যে। ১৮ দলের গতকালের হরতাল শুরুর দুই দিন আগে থেকেই এই আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। মানুষ ঘর থেকে বেরুতেই ভয় পাচ্ছেন।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এখন ককটেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ককটেল বোমা তৈরির সরঞ্জাম এখন খোলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশ থেকে বৈধপথে কাঁচামাল হিসেবে বিস্ফোরক দ্রব্যের কেমিক্যাল আমদানি করে অবৈধপথে খোলা বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাচ্ছে এসব বিস্ফোরক কাঁচামাল। ফলে এর অপব্যবহার হচ্ছে।

দুর্বৃত্তরা এসব সরঞ্জাম দিয়ে ককটেল ও বোমা তৈরি করে তা তুলে দিচ্ছে পথশিশুদের হাতে। নির্দেশ মতো তারাই ককটেলগুলো ছুড়ে মারছে বিভিন্ন স্থানে। গত তিন দিনে রাজধানীতেই পাঁচ শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিচারপতি, মন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুদক চেয়ারম্যান, থানা, পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয় ও বাসভবন টার্গেট করে ককটেল নিক্ষেপ করছে দুর্বৃত্তরা। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠছে রাজধানী।

গতকাল আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের একটি ফ্ল্যাট থেকে ১৭টি তাজা ককটেল এবং শতাধিক ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও গত তিন দিনে রাজধানী থেকে উদ্ধার হয় দেড় শতাধিক অবিস্ফোরিত ককটেল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর বোমা তৈরির কারিগরদের তালিকা নিয়ে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তবে জঙ্গি সদস্যরা এখন বোমা তৈরিতে পারদর্শী হওয়ায় তাদের নাম পুলিশের তালিকায় নেই। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, দেশে আতশবাজি ও পটকা তৈরির লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আতশবাজি ও পটকা তৈরি বন্ধ করা গেলেও ককটেল ও বোমা তৈরি বন্ধ করা যায়নি। দিয়াশলাই, সার, সিমেন্ট, ওষুধ, রড, কসমেটিকস, চামড়া শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে সালফার, পটাশিয়াম ক্লোরেট, আর্সেনিক ডাইসালফাইড, এমোনিয়াম নাইট্রেড, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের মতো কেমিক্যাল। এসব কাঁচামাল দিয়েই তৈরি হচ্ছে ককটেল-বোমার বিস্ফোরকদ্রব্য। অনেক শিল্প কারখানা, বিশেষ করে ম্যাচ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও তাদের লাইসেন্সের মাধ্যমে এ ধরনের কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। খোলা বাজারে ছেড়ে দেওয়া এসব কাঁচামাল দিয়ে ককটেল-বোমা তৈরি করা হচ্ছে।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অনেকেই উন্নত প্রযুক্তি রপ্ত করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী ককটেল-বোমা তৈরি করছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে ককটেল, গ্রেনেড ও বোমা ব্যবহার শুরু করে জঙ্গিরা। জঙ্গি দমন করা হলে এসব বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবহার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অতীতের ন্যায় আবারও ককটেল ও বোমার ব্যবহার শুরু হয়েছে। এসব বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে মানুষজনের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

কিন্তু বিস্ফোরক দ্রব্যের উৎসের ব্যাপারে তেমন কোনো তদন্ত হয় না। এমনকি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হলেও কারও শাস্তি হয়েছে এমন নজির খুবই কম। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, জঙ্গি তৎপরতা, খুন, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধী তৎপরতা, রাজনৈতিক আন্দোলনের হরতালের মতো কর্মসূচিতে ভয়ঙ্কর ককটেল-বোমা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট প্রধান এডিসি সানোয়ার জানান, খোলা বাজারে বিস্ফোরক দ্রব্য ছেড়ে দেওয়া কিছু কেমিক্যাল আমদানিকারকের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের নজরদারির আওতায় নেওয়া হয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।