আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শর্ত প্রযোজ্য

অনেক আগে শোনা একটা গানের অন্তরা ছিল এমন- 'ভালোবাসা হয় না শর্ত দিয়ে, কিনতে চেয়ো না তাকে অর্থ দিয়ে। ' আমি কথাগুলো মন থেকে বিশ্বাস করতে চাইলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কারণ অনেককেই আমি দেখেছি শর্ত দিয়ে ভালোবাসা করতে। আমার এক চাচাত ভাইকে ধরা যাক। পাশের বাড়ির এক মেয়ে তার জন্য পাগল ছিল।

কিন্তু সে তাকে পাত্তা দিত না। অবশেষে মেয়েটার পাগলামি যখন বেড়ে গেল, চাচাত ভাই একটা কঠিন শর্ত ছুড়ে দিল- তুমি যদি আমার সঙ্গে প্রেম করতে চাও তা হলে আর কোনো ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে পারবে না। আমি তোমাকে কয়েক মাস পর্যবেক্ষণে রাখব। দেখব আমার শর্ত মেনে চলছ কি না। মেয়েটা শর্তে রাজি হয়ে গেল।

দুই মাস পরের কথা। এর মধ্যে চাচাত ভাই মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মেয়েটাকে সে এখন আগের মতো পায় না। মেয়েটা তার সঙ্গে এসে দেখাও করে না, বাড়িতে গিয়েও মেয়েটার সঙ্গে সে দেখা করতে পারে না। যতবারই যায়, জানতে পারে মেয়েটা বাড়ি নেই।

একদিন সে মেয়েটাকে শক্ত করে ধরল, তুমি আমার সঙ্গে দেখা কর না কেন? সারা দিন কোথায় থাক? মেয়েটা বলল, তোমার শর্ত পালন করতে গিয়েই তো আমাকে বাইরে বাইরে থাকতে হচ্ছে। তুমি শর্ত দিয়েছ কোনো ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে পারব না। তাই আমি এখন মোবাইলে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলি না। স্পটে গিয়ে সামনাসামনি কথা বলে আসি।

দুঃখ বুক ছাড়া পকেটে রাখা সম্ভব হলে তারপর তাই করা যেত।

কিছুদিন আগে ডিশওয়ালা আমাকে একটা শর্ত দিল, বিল প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এই শর্ত না মানলে পরের দিনই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। আমি শর্ত মেনে নিলাম। পরের মাসে ৫ তারিখের মধ্যে বিল দেওয়ার জন্য রেডি থাকলাম। কিন্তু ডিশওয়ালা ফোনও দিল না, এলোও না।

৬ তারিখ সকালে কেউ কলিংবেল বাজাল। দরজা খুলে দেখি ডিশওয়ালা। সঙ্গে তার এক কর্মচারী। ডিশওয়ালার চোখে-মুখে এমন রাগ যে, তার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে গুরুগম্ভীর গলায় বলে উঠল, আপনি শর্ত পালন করেননি, অতএব আমি এখন এসেছি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য।

আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম, আপনি গতকাল বিলের জন্য চলে এলেই পারতেন। আসেননি কেন? ডিশওয়ালা রেগে বলল, ফোন দিয়ে না এলে তো আপনারা আবার মাইন্ড করেন। কিন্তু ফোন যে দেব সেই উপায়ও ছিল না। বিল দেওয়ার ভয়ে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, দেখেন, আমি মোবাইল বন্ধ করে রাখিনি।

এই বাসায় নেটওয়ার্ক সমস্যা করে। হয়তো নেটওয়ার্ক ছিল না। এই দেখেন, এখনো নেটওয়ার্ক নেই। আমি যখন ডিশওয়ালার সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন তার সঙ্গে আসা লোকটা ধ্যান ধরে তাকিয়ে ছিল আমার ড্রয়িংরুমের টিভিটার দিকে। আমার কথা সে পুরোপুরি না শুনলেও যখন আমি বললাম 'এখনও নেটওয়ার্ক নেই', সঙ্গে সঙ্গে সে চড়া গলায় বলে উঠল, কেডা কয় নেটওয়ার্ক নেই।

ওই তো নেটওয়ার্ক আছে। উল্লেখ্য, আমার মেয়ে তখন টিভিতে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখছিল। বাড়িওয়ালারা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় কী পরিমাণ শর্ত দেয় তা তো সবারই জানা। তবে ভাড়াটিয়া যদি একটু বিটলা ধরনের হয়, তা হলে বাড়িওয়ালাকে নাজেহাল করতে ছাড়ে না। আমার পাশের বাসার এক ভাড়াটিয়াকে তার বাড়িওয়ালা শর্ত দিল হাঁটার সময় স্যান্ডেল টেনে টেনে হাঁটা যাবে না।

কিন্তু পরদিন রাতে শোনা গেল বাইরে কেউ স্যান্ডেল টেনে টেন হাঁটছে। বাড়িওয়ালা বাইরে বের হয়ে দেখে সেই ভাড়াটিয়া। রেগে যায় বাড়িওয়ালা, হেই মিয়া, আপনাকে না বলেছি স্যান্ডেল টেনে টেনে হাঁটা যাবে না? ভাড়াটিয়ার সাবলীল উত্তর- আমি আপনার শর্ত মেনে নিয়েছে। তাই স্যান্ডেল না। শু পরে হেঁচড়িয়ে হাঁটছি।

এই দেখেন কেবল আপনার শর্ত পালন করতে গিয়েই আমি লুঙ্গির সঙ্গেও শু পরেছি। বলা বাহুল্য, শর্ত দিয়ে শর্ত মানার ব্যবস্থা না করলে বোধহয় এমনই হয়!

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।