আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরো (হাসবেন না কিন্তু)



Disclaimer: এই গল্পের সব চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবে কারও সাথে মিলিয়া গেলে লেখক দায়ী নয়, সমস্ত দায় কী-বোর্ড ও মাউসের 1. রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাশি বাজাচ্ছিল বাবা-মার একমাত্র ছেলে নিরো, বয়স ১০ বছর। অনেক অপেক্ষার পর বাবা-মার মুখে হাসি ফুটিয়ে দুনিয়াতে এসেছিল নিরো, তাই আদর-যত্নের কোন সীমা ছিল না, সে যা চাইত তাই করত। কোনদিন কোন কিছুর জন্য বকা দেয়নি তারা। তাই সবাই তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়ার কথা বললেও নিরোর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে স্কুলে ভর্তি করায়নি তার বাবা।

তার বাবার অনেক ছাগল ছিল। নিরো সেগুলো মাঠে নিয়ে চড়াত। এটাই তার কাজ ছিল। সকাল বেলা সব ছেলে-মেয়েরা যখন স্কুলে যেত তখন নিরো কেবল ঘুম থেকে উঠত। নাস্তা খেয়েই ছাগলগুলো নিয়েই বেরিয়ে পরত সে।

ছাগলগুলোই ছিল তার সাথী। আর একটা জিনিস করত সে, নিরো খুব ভাল বাশি বাজাত। তো সকাল বেলা নাস্তা সেরে যথারীতি ছাগল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নিরো। গ্রামের জমির ভেতর দিয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সে। জমিতে কাজ করতে থাকা গফুর কাকা জিজ্ঞেস করেন , ' কি নিরো বাবা।

সকাল সকাল কই যাও? মাঠে নাকি, সাথে দেখি ছাগলও আছে?' 'জি না চাচা, চান্দে যাইতেছি , আর সাথে এরা হইল গিয়া পাইলট , প্লেন চালাইতে হইব তো ' বলিয়াই হাটা শুরু করিল নিরো। পোলাটা তো পুরাই বেয়াদব হয়ে যাইতেছে , ভাবল গফুর, তারপর নিজের কাজে মন দিল। মাঠে যাইয়া একটা গাছের নিচে বসিয়া নিজের আইফোন টা বাহির করিল সে। তারপর ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার খুলিয়া চ্যাট করিতে থাকিল কানাডার লুসিডার সাথে। গত ৩ দিন ধরিয়া মেয়েটির সাথে চ্যাট করিতেছে সে।

মেয়েটি বারবার এক জায়গায় গিয়া আটকায় যায় , আর সামনে এগুতে চায় না। নিরো ভাবিল না একে দিয়ে হবে না, গ্রামের মাইয়া দিয়ে তার চলবে না। এইবার অন্য কাওরে ধরিতে হইবে। একটু পরে রিমা আসিয়া উপস্থিত হইল সেখানে। নিরো চট করিয়া মোবাইলটা লুকাইয়া ফেলিলো , এরপর ব্যাপক একটা ভাব ধরিল।

রিমা নিরো কে খুব পছন্দ করে কিন্তু নিরো মাইটারে পাত্তাই দেয় না। 'কি করিতেছিস?' অত্যন্ত আবেগ লইয়া কহিল রিমা । গলাটারে একটু মোটা করিয়া নিরো জবাব দিল , ' আইন্সটাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটির ভুল বাহির করেতিছি' 'তুই আমার সাথে সবসময় এমন করে কথা বলিস কেন? আমাকে কি তোর ভাল লাগেনা ? আমি কি দেখিতে এতই খারাপ?' ' না না তোর রুপের প্রশংসা করা আমার কম্ম নয়। তোর রুপ দেখিয়া শামুক রা এক ঘণ্টায় ঢাকা চলিয়া যাই। ' 'তুই খুব নিষ্ঠুর' 'তা তুই আজ স্কুলে যাস নি কেন?' 'তোকে দেখব বলে' 'দুরবিন আনিয়াছিস? আনিসনি ? বলি কি তুই এক কাজ কর আমার এক খান ফটু তুলিয়া বড় করিয়া বাধাই করিয়া নিজের ঘরে লাগিয়ে রাখ' নিরোর এহেন আচরনে ব্যথিত হইয়া নীরবে কাদিতে কাদিতে চলিয়া যাই রিমা।

আবার আইফোনটা বাহির করিয়া নিরো দেখে লুসিডা চলিয়া গিয়াছে। কি আর করা । নিরো মোবাইলটা দিয়া তাহার প্রিয় ছাগল গুলার সাথে গেঞ্জি খুলিয়া খালি গায়ে হাজারখানেক ফটু তুলিল আর ফেচবুকে আপলোড করিল। মিনিট দশেকের মধ্যেই তাতে হাজারখানেক কমেন্ট আর লাইক পরিল। এরপর নিরো তার ছাগলগুলো লইয়া গ্রামের পাশের ছোট নদীতে (আসলে খাল) হাটু সমান পানিতে নামিয়া রেস লাগাইল আর ব্যাপক সফলতার সাথে ৬ টি ইভেন্টেই জাতীয় রেকর্ড ভাঙ্গিয়া সোনা জিতিল।

এমন সময় রোম তার সাঙ্গ পাঙ্গ লইয়া হাজির হইল। রোম হইল এই গ্রামে তার সবচেয়ে বড় দুশমন। সে তার সাঙ্গ পাঙ্গদের কহিল,' যেমন রাখাল তেমনি তাহার ছাগল' । . নিরো প্রতি উত্তরে কহিল, ' যেমন বলদ তেমনি তাহার চামচা। ' বলার সাথেই সাথেই রোম হুঙ্কার দিয়া উঠিল ,'নিরো তর এত বড় সাহস , তুই আমাকে বলদ বলিস আজকে তোকে আমি ছিরে ফেলব।

' নিরো গর্জন করিয়া বলিল , ' তবে হয়ে যাক। ' সাথে সাথে রোম তার চ্যালাদের নির্দেশ দিল অস্ত্র নিয়ে আসতে আর নিরোও ফোন দিয়া তার বন্ধুদের ডাক দিল। রোমের চ্যালারা ak-47, m-16, smg আর বস্তা ভরিয়া গ্রেনেড লইয়া আসিল, ওইদিকে নিরোর বন্ধুরাও hmg,ingram,uzi আর রকেট লাঞ্চার লইয়া হাজির হইল। এরপর সেখানে এক বিরাট যুদ্ধ বাধিয়া গেল। আর মাঝখান দিয়া কিছু আম পাবলিক নামের নিরিহ জীব ক্রসফায়ারে পরিয়া গেল।

তাহারা তরিমরি করিয়া কোনরকমে সেখান থেকে জান লইয়া ভাগিয়া পুলিশ কে খবর দিতে গেল। এরি মধ্যে গ্রামের বাকি সব গ্যাং গ্রুপ গুলো আসিয়া পাহারের উপর উঠিয়া উত্তেজনাকর এই ম্যাচটি উপভোগ করিতে লাগিল। খবর পাইয়া সাংবাদিকরাও ততক্ষনে হাজির, আর ইতিমধ্যে ২/১ টি চ্যানেল আসিয়া উহার লাইভ সম্প্রচার শুরু করিয়া দিল যুদ্ধে নিরোর গ্রুপের অবস্থা যখন বেগতিক , তখন নিরো দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য একটা রকেট লাঞ্চার বাহির করিয়া রোম কে লক্ষ্য করিয়া মারিল। কিন্তু ভাগ্য তাহার সহায় হইল না। রকেট লাঞ্চার রোমকে ফাকি দিয়া গিয়া পড়ল একে বারে গ্রামের চেয়ারম্যানের শখের প্রাইভেট নাইট ক্লাবে গিয়া।

আর মুহুরতেই সব কিছু খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়ল। অবস্থা খারাপ দেখিয়া ২ পক্ষ রনে ভঙ্গ দিয়া লেজ তুলিয়া পালাইতে লাগিল। ইতিমধ্যে পুলিশও সেখানে আসিয়া পরিল। সবাই যে যেদিকে পারিল ভাগিল। নিরো তার carera gt লইয়া দৌর লাগাইল।

অবশেষে পুলিশ গনহারে ধর পাকর শুরু করিল , ভয়ে সমস্ত পুরুষ গন গ্রাম ছারিয়া পলাইল। পুরা গ্রাম পুরুশশুন্য হইয়া পরিল। নিরো তার আন্ডারগ্রাউন্ড আস্তানায় গিয়া গা ঢাকা দিল। সেইখানে এক মহা সমস্যা দেখা দিল। টয়লেট লক হইয়া যাওয়াতে নিরো মহা সমস্যায় পরিল।

পুরা ১ দিন এভাবেই পার করিয়া দিল। ইতিমধ্যেই গ্রামে খবর ছরাইয়া পরিল পুলিশ রা সব চলিয়া গিয়াছে। বিপদ কাটিয়া গিয়াছে মনে করিয়া সবাই গ্রামে ফিরিয়া আসিল। নিরোও ২ দিন ধরিয়া মানবেতর জীবন যাপন করিয়া অবশেষে বাইর হইয়া আসিল আর ঝোপের ধারে গিয়ে মনের শুখে প্রাকৃতিক কাজ কর্ম সারিতে লাগিল আর গান ধরিল 'ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ' । .এই সময় কোথা থেকে এক দল পুলিশ আসিয়া তার টুটি চাপিয়া ধরিল।

তারা তাকে মাথায় এক খান কালো কাপড় পরাইয়া দিল। মজা লইবার এরকম মোক্ষম সুযোগ দেখিয়া রোম টিটকারি মারার জন্য সেইখানে পৌছিয়া গেল । এদিকে নিরো কে গ্রেপ্তার করিতে দেখিয়া রিমার বুক ব্যাথায় চিন চিন না করিয়া বাংলাদেশ বাংলাদেশ করিয়া উঠিল। সে পুলিশের সামনে যাইয়া গান আর নৃত্য শুরু করিয়া দিল আর কোথেকে একদল বাদক আসিয়া বাজনা বাজাইতে আরম্ভ করিল । আর নিরো তৎক্ষণাৎ তার মেমোরিতে 'খোঁজ' দ্যা সার্চ লাগাইয়া ব্লগে পড়া পুলিশের হাত থেকে পালাবার ১০১ টি উপায় পরিয়া লইয়া আপ্লাই করিল আর রোমকে দেখিয়া বলিল তার জায়গায় যদি রোম গিয়া বসিয়া থাকে তবে সে রিমা কে রাজি করাইয়া তার হাতে তুলে দিবে।

এমন লোভনীয় প্রস্তাবে লুল রোমের জিহবায় লালা ঝরিতে লাগিল । সে এই প্রস্তাবে রাজি হইয়া কালো কাপড় মাথায় দিয়া নিরোর জায়গায় গিয়া বসিয়া পরিল আর নিরো ভাগিয়া গেল। ইতিমধ্যে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামীকে খুজিয়া বার করিতে পাড়ার সাফল্য সংবাদ সুনিয়া পুলিশের সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য আসিয়া গেল। প্রথমে তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করিয়া ৩০০ হাত কে নিরাপদ দুরত্ব ঠিক করিয়া পুলিশের সাক্ষাতকার লইবার চেষ্টা করিল। কিন্তু তাহাদের এই হিসাব কে ভুল প্রমাণ করিয়া পুলিশ সাংবাদিক দের লাঠিপেটা করিয়া ছত্র ভঙ্গ করিয়া দিল আর নিরো মনে করিয়া রোমকে নিয়া চলিয়া গেল।

যাইতে যাইতে রোমের মনে হইল আরে পুলিশে এইবার রিমান্ডে লইয়া পিটাইয়া তার ছাল তুলিয়া নিবে আর তাকে জোর করিয়া দোষী সাব্যস্ত করিবে। এরপর তাহার জেল হইয়া গেলে সে কোথায় রিমা কে পাইবে। নিজের এমন বোকামিতে রোম আগুনে জ্বলিতে লাগিল আর তখন নিরো মনের সুখে রিমা কে নিয়া বাঁশি বাজাইতেছিল। 2. গুপ্তধন কয় দিন ধরিয়া রিমাটা বড়ই জ্বালাতন করিতেছে। ঘন ঘন তার সাথে দেখা করিতে আসে আর নানা ধরনের প্রেম বাক্য দিয়া নিরোর জীবন বিতৃষ্ণা করিয়া তোলে।

নিরো ভাবিল মেয়েটিকে আজ একটা চরম শিক্ষা দিতে হইবে। তাছারা জাপানের মিয়োকির সাথে তার সম্পর্ক অনেকদূর আগাইয়া গিয়াছে। মাঠের ধারে গাছের নীচে বসিয়া সে আপন সুরে বাঁশি বাজাইতে লাগিল। মিয়োকি এখনও অফলাইনে। একটু পর রিমা নাচিতে নাচিতে আসিয়া একেবারে নিরোর কলের মধ্যে ঝাপাইয়া পড়িল।

নিরোর ভিতর থেকে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসল। সে বুঝিতে পারিল রিমার বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের যথেষ্ট যোগ্যতা আছে। রিমা তার কোলেই মাথা রাখিয়া বলিয়া উঠিল , ' আমার জন্যই বুঝি অপেক্ষা করিতেছিলে। নিরো রাগটা নিজের মধ্যেই চাপিয়া রাখিয়া বলিয়া উঠিল , ' না না আমি ইংল্যান্ডের রানী ২য় এলিজাবেথের অপেক্ষা করিতেছিলাম, উনি বোধ হয় ঢাকার জ্যামে আটকা পরিয়াছেন। ' রিমা বলিল, ' চল না আজ আমরা নদী থেকে বেরিয়ে আসি।

আর দুপুরের খাবারটা মেরিডিয়ান থেকে খেয়ে আসি, শুনেছি আজকে নাকি মাত্র ৬০০ টাকায় বুফে খানা দানা হইবে। ' নিরো প্রত্যাখান করিয়া বলিল, ' সে হবার উপায় নেই, মা বলেছে আজ বারিতে গিয়ে দুপুরের আগেই সমস্ত গোয়ালখানা পরিষ্কার করিয়া দিতে হইবে। ভাবিতেছি এত বড় গোয়ালখানা কিভাবে একলা পরিস্কার করিব, সাথে কেউ থাকিলে খুবই উপকার হইত। ' রিমা কথা অন্যদিকে ঘুরাইয়া নেয়ার চেষ্টা করিল, ' আচ্ছা সমস্যা নেই দুপুরের খানা নাই খাইলাম, এখন চল নদিতে যাই, অনেকদিন নদীর পানিতে গোসল করিনা। ' এই কথা সুনিয়া নিরোর পিলে চমকিয়া উঠিল, সে বলিল ' গোসল করিয়া কি হবে আসিয়া তো আবার ওই গো-মুত্র পরিষ্কার করিতে হইবে, সাথে কেউ থাকিলে বড়ই উপকার হইত।

' রিমা আবার অন্যপ্রসঙ্গ এ যাওয়ার চেষ্টা করিল, ' দেখ দেখ আকাশে কি সুন্দর সাদা মেঘের ভেলা' 'কিন্তু বাসায় গিয়া তুলিতে হইবে কালো গোবরের দলা, ইস সাথে যদি কেউ থাকত। ' রিমা বুঝিতে পারিল নিরো এইভাবে বারবার তাকে গোয়ালঘরে নিয়া যাইবে,' তোর কি হইছে বারবার গোবরের কথা তুলছিস কেন। তুই কি এটাই চাস আমিও তোর সাথে গিয়া গোবর পরিষ্কার করি। তোকে বলে দিচ্ছি তা হবার নয়। আমি পরিষ্কার করিব গোয়ালঘর, এটা তুই ভাবলি কি করিয়া?' 'হু , কথা থেকে আসিয়াছেন আমার মহা রানী তার কি ঢং, বল আমার সাথে যাবি কিনা পরিষ্কার করতে ?' 'না না না ' ' তাহলে আমার চোখের সামনে থেকে ভ্যানিশ হইয়া যা, ভবিষ্যতে যেন তোকে আমার আশে পাশে ত্রি সিমানায় না দেখি, নাহলে চুল মন্দন করিয়া চুন কালি মাখাইয়া গ্রামে ঘুরাইব, দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে' 'আরে যা যা কত দেখেছি তোর মত, তোর চেয়ে বহু ভাল ছেলে সারাদিন আমার পিছনে ঘোরে' বলিয়া সেইখান হইতে প্রস্থান করিল রিমা।

এই মহা বিপদের হাত থেকে উদ্ধার পাইয়া নিরো তার লুঙ্গি খুলিয়া মাথার উপরে বাতাসে ঘুরাইতে ঘুরাইতে পুরা মাঠ চক্কর দিতে থাকিল আর এই দৃশ্য অবলোকন করিয়া গোটা কয়েক ছাগল জ্ঞান হারাইল। হুঁশ হইতেই আশে পাশে তাকিয়ে দেখিল কেউ দেখেনি । ইদানিং পাপ্পারাজিদের জ্বালায় কোথাও কিছু করার উপায় নেই। এরপর খুসি মনে বাড়ির পথ ধরিল নিরো । পথিমধ্যে সে খবর পাইল তাহার বাবা ঘোড়ার উপর থেইকা পরিয়া হাত-পা ভাঙ্গিয়াছে।

তৎক্ষণাৎ সে হাসপাতালের দিকে সাইকেল নিয়া দৌড় লাগাইল। হাস্পাতালে গিয়া দেখে তার বাবার ২ টি পাই ইতিমধ্যে ডাক্তার কাটিয়া লইয়াছে। এটা দেখিয়া চিৎকার দিয়া উঠিল নিরো। বাবাকে জিজ্ঞেস করিল কিভাবে এই ঘটনা ঘটিল। জানিতে পারিল তার বাবা পালসার হোন্ডা করিয়া আষাঢ় সময় একটা তেলাপকা হঠাৎ চাকার সামনে আসিয়া পড়িল, তাকে বাচাইতে গিয়া তাহার বাবা রাস্তার পাশেই রাখা খরের গোদায় পড়িল।

'কিন্তু এতে তো এত চোট পাওয়ার কথা না যে ২ খান পাই কাটিয়া ফেলিতে হইবে। ' 'না না পা কাটার দরকার ছিল না, কিন্তু ডাক্তার ভুল করিয়া অন্য রোগীর বদলে আমার পা কাটিয়া ফেলে। ' তাহার বাবা তাকে কাছে ডাকিল , এবং কানে কানে অথবা কানে মুখে তাকে বলিল, ' তোকে একটা গোপন কথা বলিব , আমাদের বংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ' নিরোর চোখ কৌতূহলে জ্বল জ্বল করিয়া উঠিল, এতদিন লোক মুখে যে গোপন সিন্দুকের কথা শুনিয়াছে সে তা আজ জানিতে পারিবে। 'আমার যে রুমটা আছে ' নিরো হ্যাঁ হ্যাঁ বলিয়া কানটা আরও একটু আগাইয়া দিল।

' ওই রুমে না, পাশে যে তোর দাদির রুম আছে না' নিরো আবার হ্যাঁ হ্যাঁ করিয়া উঠিল ' ওই রুমেও না, তার পাশে যে স্টোর রুম আছে' এবার নিরো আরও উৎসাহের সহিত হ্যাঁ হ্যাঁ করিয়া উঠিল, ' ওই রুমেও না ' নিরো বলিয়া উঠিল' বুঝিতে পারিয়াছি কোন রুমেই না, থাক আমি নিজেই খুজিয়া নিব' ' আরে তুই খুজিয়া পাইবি না, শোন এই তিন ঘর পরে যে খালি ঘর টা রহিয়াছে। নিরো বলিয়া উঠিল' ওই ঘরটাতেও না ' ' আরে গাধা ওই ঘরটাতেই রহিয়াছে। ওই ঘরের মাটির নিচেই একটা সিন্দুক আছে' এই কথা শুনিবামাত্র নিরো দৌড় লাগাইতে গেল অম্নি তাহার বাপ তার হাত ধরিয়া টান দিয়া বলিল,' আরে গাধা আগেই কোথায় যাচ্ছিস , সব কথা শুনিয়া যা। তুই চাইলেও ওই ঘরের মাটি সরাইয়া সিন্দুকটা বাহির করিতে পারিবি না। ' 'তাহলে উপায়?' নিরো জিজ্ঞেস করিল।

' ওই ঘরের দেয়ালে একটা সুইচ আছে , ওইটা টিপ দিলে সিন্দুক অটোমেটিক বাহির হইয়া আসিয়া পরিবে। ' ' সুইচ কোন জায়গায় আছে?' 'সুইচটা দেয়ালে এমন ভাবে আছে যে খালি চোখে সেটা বুঝার কোন উপায় নাই, তোকে পুরু চার দিকের দেয়াল চাটিতে হইবে, যেইখানে তুই মেটাল মেটাল স্বাদ পাইবি, বুজবি ওইটাই সুইচ। তারপর ওইটা পাক্কা ৫ মিনিত টিপিয়া ধরে থাকবি, তখন দেখবি একটা বক্স বাইর হইবে , সেখানে মুখ লাগাইয়া বলিবি 'চিকলু পিকলু টিকলু টাক, এইটা হল পাসওয়ার্ড , তারপর দেখবি নিচ থেকে একটা ...... এরপর তাহার বাবার ভয়ানক কাশি শুরু হইয়া গেল আর ডাক্তার আসিয়া একটা ইনজেকশন দিয়া তাহাকে অজ্ঞান করিয়া ফেলিল। নিরো ভাবিল নিজেই যাইয়া চেষ্টা করিলে অবশ্যই সে পারিবে, সে দ্রুত ছাদে যাইয়া হেলিকপ্টারে উঠিয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। 3. অদৃশ্য নিরো বাসায় আসিয়ায় প্রথমে সদর দরজা লাগাইল।

তাহাতে সে প্রথমে একটি তালা দিল। অতঃপর চেইন দিয়া খুব ভাল করে বাধিল, এরপর কাঠের তক্তা আনিয়া পেরেক দিয়া গাথিয়া দিল, এরপর পুরা দরজার সাইড দিয়া ওয়েল্ডিং করিয়া দিল , এরপর ফেভিকল দিয়া গোটা কয়েক সিমেন্টের পিলার লাগাইয়া দিল। অতঃপর বাথ্রুমে যাইয়া প্রথমে পেস্ট দিয়া নিজের জিহবা পরিস্কার করিল, অতঃপর মাজন দিয়া পরিস্কার করিল, তারপর সার্ফ এক্সেল দিয়া ধুইল এবং সবশেষে হারপিক দিয়া পরিস্কার করিল। কিন্তু তাও তাহার মনে ধরিল না। তাই রান্নাঘরে গিয়া ছাই আনিয়া পরিস্কার করিল।

তারপরে সে যে ঘরে সিন্দুক আছে সেই ঘরে যাইয়া জিহবা দিয়া পুরা দেয়াল চাটা শুরু করিল। ঘন্টা খানেক চাটিয়াও সে কোন মেটাল মেটাল স্বাদ পাইলো না। ক্লান্ত হইয়া সে বসিয়া পড়িল। তাহার মনে হইতে লাগিল তাহার জিহবা মনে হয় অরধেক ক্ষয় হইয়া গিয়াছে। একটু পর নিরো আবার নতুন উদ্দমে চাটা শুরু করিল , এইবার কিছুক্ষন চাটিবার পর এক জায়গায় আসিয়া সে কেমন একটা তিতা স্বাদ পাইল।

তাহার মনে হইল এইটাই হবে সুইচ। তাই সে ওই জায়গায় একটা টিপা দিল। কিন্তু কিছুই হল না। আবারও টিপা দিল। এবারো কিছু হইল না।

সে আরেকবার চাটিয়া দেখিল জায়গাটা, এইবার তার একেবারে বমি আষাঢ় উপক্রম হইল। সে নিশ্চিত এইটাই সুইচ। এইবার সে একটা ভয়ানক টিপা দিল। কিন্তু এইবারেও কোন লঙ্কা কাণ্ড ঘটিল না । হঠাত তার মনে পড়িল তাহার বাবার কথা, অতঃপর সে ৫ মিনিট ওই জায়গায় টিপা দিয়া ধরিয়া থাকিল।

টিপা দিয়া ধরিয়া থাকিতে থাকিতে তাহার আঙ্গুল ব্যাথা হইয়া গেল। এরপর সে কহিল ' চিক্লু পিক্লু টিক্লু টাক' কিন্তু তাহাতে কিছু না হইতে দেখিয়া সে চরম বিরক্ত হইল আর তাহার বাপের চৌদ্দগুস্টি উদ্ধার করিল। তাহার বাবা এই অবস্থায় এরকম একটা মজা করিল, সে ভাবিয়া কোন কুল কিনারা পাইতেছিল না, ঠিক এমন সময় চিচিংফাঁক করিয়া মেঝের মাটি দুই ভাগ হইয়া দুই দিকে সরিয়া যাইতে লাগিল। অতঃপর মাটির নিচ থেকে একটি আশ্চর্য পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি সিন্দুক উঠিয়া আসিল। এ ধরনের সিন্দুক সে কেন পুরা দেশের কেউ দেখিয়াছে কিনা সন্দেহ।

এরপর সে সিন্দুক খোলার চেষ্টা করিল। কিন্তু সিন্দুক খোলার কোন পথ সে দেখিতে পাইল না। না তাহাতে কোন তালা আছে, না তাহাতে কোন সিটকানি আছে আর না তাহাতে কোন বোতাম আছে । তাহার মেজাজ খারাপ হইয়া গেল। সে কষিয়া একটা লাথি বসাইল সিন্দুকের বরাবর আর তাহাতেই সিন্দুক টি মাঝ বরাবর ফাটিয়া দুই ভাগ হইল আর তাহা হইতে একটি অদ্ভুত যন্ত্র বাহির হইয়া আসিল।

নিরো তাহার ইহজীবনে এরকম অদ্ভুত যন্ত্র আর দেখে নাই। সে যন্ত্রটাকে তুলিয়া সেটাকে নাড়িয়া চারিয়া দেখিতে লাগিল। এইটা যে একটা ভয়ানক অস্ত্র সেটা বুঝিতে তাহার বাকি থাকিল না। সে যন্ত্রটি চালাইবার নিয়ম বুঝিতে চেষ্টা করিল। সে একটা সুইচ দেখিতে পাইল উহার মধ্যে।

সে বুঝিল এইটা দিয়া হয়ত গুলি করা হয়। কিন্তু কোথায় সে এটা পরিক্ষা করিবে বুঝিতে পারিতেছিল না। অতঃপর সে ঠিক করিল আকাশের দিকে লক্ষ্য করিয়া সে গুলি করিবে ফলে ঘরের কোন কিছু হইবে না আর কেউ জানিতেও পারিবে না। তারপর উঠানে যাইয়া সে আকাশের দিকে তাক করিয়ে সুইচ টিপ দিতেই ধরাম! খুব হাল্কা একটি চিকন আওয়াজ হইল আর যন্ত্র হইতে খুব সামান্য পরিমান পানি বাইর হইয়া পিছনে বাগানের দিকে যাইয়া পড়িল। সে বড়ই আশ্চর্য হইল।

এইটা তো বাচ্চাদের খেলনা বন্দুক। এইটা তাদের বংশের মুল্যবান সম্পদ। তাহার মেজাজ টা খারাপ হইয়া গেল। সে বিরক্ত হইয়া সেখানে বসিয়া পড়িল । এইসময় তার সামনে হঠাৎ কোথেকে রিমা আসিয়া হাজির হইল আর নিরো একটা বিকট চিৎকার দিয়া বসিল যেন সে ভুত দেখিয়াছে ।

'তুই ভিতরে ঢুকলি কিভাবে?' 'কেন দরজা দিয়ে' রিমা জবাব দেয়। নিরো ভাবিতে লাগিল তবে কি রিমা জাদু জানে। রিমা নিরোর হাতে অদ্ভুত যন্ত্র টা দেখিয়া অবাক হইয়া জিজ্ঞেস করিল ' এটা কি গো রে?' নিরোর এমনিতেই মেজাজটা খারাপ হইয়া ছিল। সে ভাবল রিমা কে একটু ভয় দেখানো যাক। সে যন্ত্র টা রিমার দিকে তাক করিয়া বলিল ,' এইটা হল মানুষ কে ছোট করার যন্ত্র, এইবার এইটা দিয়া তোকে আমি ছোট করিয়া দিব' এই কথা শুনিয়া নিরো তার সাথে মজা করিতেছে মনে করিয়া রিমা ভয়ানক হাসা শুরু করিল।

এই অবস্থা দেখিয়া নিরোর মেজাজ টা আরও খারাপ হইয়া গেল। সে রিমার দিকে যন্ত্র তাক করিয়া সুইচ টিপিল আর অমনি যন্ত্রের ভিতর থেকে কিছু সবুজ পানি বের হইয়া রিমার উপর পড়িল আর সাথে সাথে রিমা চিত হইয়া পড়িয়া গেল। রিমা মারা গেছে মনে করিয়া নিরো ভয় পাইয়া 'আম্মা আম্মা' বলিয়া চিৎকার করিয়া দরজার দিকে দৌড় দিল আর দরজার সাথে বাড়ি খাইয়া অজ্ঞান হইয়া গেল । to be continued......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.