আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাকা ঘুরছে না এক-তৃতীয়াংশের

বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বস্ত্র ও পাটকলগুলোর এক-তৃতীয়াংশেরই আর চাকা ঘুরছে না। বিশেষ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে হস্তান্তর করা কারখানাগুলোর কোনোটিই চালু করা যায়নি।
বেসরকারীকরণ কমিশনের হালনাগাদ করা এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব চিত্র পাওয়া গেছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে গঠিত একটি টাস্কফোর্স বিভিন্ন কারখানা সরেজমিনে জরিপ ও পরোক্ষাভাবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে, সেখানে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বছর এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে হস্তান্তরিত বন্ধ কলকারখানাগুলোর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহে ছয়টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

এর মধ্যে প্রথম টাস্কফোর্সকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কারখানাগুলো জরিপের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিশনের পরিচালক এ এইচ এম আফজাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক সেলিম হোসেন টাস্কফোর্সটির নেতৃত্বে দেন। জরিপের আওতাধীন ৬৭টি কারখানার মধ্যে ৩৯টি ছিল বস্ত্র বা টেক্সটাইল আর ২৮টি পাটকল। বিভিন্ন সময়ে এসব কারখানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়।
সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেসরকারি খাতে হস্তান্তরিত ৬৭টি বস্ত্র ও পাটকলের মধ্যে ২৪টিই এখনো বন্ধ রয়েছে।

বন্ধ মিলগুলোর মধ্যে ১৭টি বস্ত্র কারখানা আর সাতটি পাটকল।
প্রতিবেদন অনুসারে বন্ধ ১৭টি বস্ত্র কারখানা হলো—কিশোরগঞ্জ টেক্সটাইল মিলস, লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস, ক্যারোলিন সিল্ক মিলস, এম এম মাল্টি ফাইবার্স (সাবেক সাতরং টেক্সটাইল মিলস), ক্যালিকো কটন মিলস, ঈগল স্টার টেক্সটাইল মিলস, মাওলা টেক্সটাইল মিলস, জলিল টেক্সটাইল মিলস, এশিয়াটিক কটন মিলস, মোহিনী মিলস, কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলস, গোয়ালন্দ টেক্সটাইল মিলস, নিউ ঢাকা কটন মিলস, নিউ মেঘনা টেক্সটাইল মিলস, নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস, নিউ মুন্নু ফাইন কটন মিলস ও চট্টগ্রাম স মিলস (সাবেক কুলসুমা টেক্সটাইল মিলস)।
বন্ধ সাতটি পাটকল হলো—এলাইড জুট মিলস, সুলতানা জুট মিলস, মেসার্স সারোয়ার জুট মিলস, চিটাগাং জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, নবাব আসকারী জুট মিলস, সাভার জুট মিলস ও বাওয়া জুট মিলস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে হস্তান্তরিত কারখানাগুলোর মধ্যে নয়টি কারখানাকে লাভজনকভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু হস্তান্তরিত কারখানাগুলো লাভের মুখ তো দেখেনি, উল্টো মূলধনের সংকটে এগুলোকে চালু করা সম্ভব হয়নি।

শুধু একটি কারখানা তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে আংশিক চালু রাখা সম্ভব হয়েছে।
যে নয়টি কারখানা শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, সেগুলো হলো— নিউ মুন্নু টেক্সটাইল মিলস ও ফাইন কটন, নিউ অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস, নিউ মেঘনা টেক্সটাইল মিলস, নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস, নিউ ঢাকা কটন মিলস, মডার্ন ক্যারিলিন সিল্ক মিলস, মডার্ন পাইলন ইন্ডাস্ট্রিজ, মডার্ন ন্যাশনাল কটন মিলস ও ময়মনসিংহ জুট মিলস।
কারখানাগুলো চালু করতে না পারার জন্য টাস্কফোর্স ১০টি কারণ চিহ্নিত করেছে। প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে মিলগুলোর মালিকানা শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও শ্রমিকেরা এই শেয়ারের বিপরীতে কোনো ধরনের মূলধন বিনিয়োগ না করে শুধু লাভ তুলে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। ফলে মূলধন ঘাটতিতে শেষ পর্যন্ত কারখানাগুলো আর চালু হয়নি।


এ ছাড়া ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় ও পুরোনো ঋণ শোধ না করায় সুদসহ অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, শ্রমিক-কর্মচারীদের কারিগরি ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি, মিলের যন্ত্রপাতি পুরোনো ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়া, তৃতীয় পক্ষের কাছে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় মিলের মালিকানা কিছুসংখ্যক শ্রমিকনেতার কুক্ষিগত হওয়াকে এসব মিল চালু না হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর বাইরে অন্য বস্ত্র ও পাটকলগুলো বন্ধের জন্য ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, যথাসময়ে মিলগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া ও পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে টাস্কফোর্স।
এদিকে সমীক্ষার আওতাধীন মিলগুলোর মধ্যে চালু অবস্থায় রয়েছে ২২টি বস্ত্র কারখানা ও ২১টি পাটকল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চালু অবস্থায় থাকা ২২টি টেক্সটাইল মিলে প্রায় ২৯ হাজার লোক কর্মরত রয়েছেন।
এসব মিল থেকে সরকার প্রায় আট কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।

এর মধ্যে সর্বাধিক রাজস্ব দিয়েছে পাহাড়তলী টেক্সটাইল মিলস। প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে সরকারকে প্রায় তিন কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের দিক থেকে মিলগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে শারমিন টেক্সটাইল মিলস। এ মিলটিতে বর্তমানে ১০ হাজার লোক কর্মরত রয়েছেন।
এ ছাড়া ২১টি চালু পাটকলে বর্তমানে প্রায় ৩৯ হাজার লোক কর্মরত রয়েছেন।

এসব মিল থেকে সরকার প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। এর মধ্যে এককভাবে সর্বাধিক প্রায় সাত কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে জনতা জুট মিলস। পাশাপাশি মিলটি কর্মসংস্থানের দিক থেকেও শীর্ষে রয়েছে। এ মিলে বর্তমানে সাত হাজার ১০০ লোক কর্মরত রয়েছেন।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।