আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ১৫২ জনের ফাঁসি

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ ও নৃশংসতম বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। একই সঙ্গে ১৬১ জনকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়েছে আরও ২৬২ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন ২৭১ জন। বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ার ২০তম দিনে, অধিকাংশ আসামির উপস্থিতিতে, জনাকীর্ণ বিচারকক্ষে, গতকাল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও।

আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবে ব্যক্তি বা সংক্ষুব্ধ পক্ষ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিপুলসংখ্যক মৃত্যুদণ্ডসহ একসঙ্গে এত আসামির শাস্তির ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে এটাই প্রথম। আর এ কারণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও দৃষ্টি ছিল এই বিচারের দিকে। রায় ঘোষণা উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় আদালতপাড়ায়। সকাল ১০টায় কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও আদালত বসেন বেলা ১২টা ৩৪ মিনিটে।

এ সময় এজলাসে আসন গ্রহণ করেন বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। বিচার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য প্রথমে মামলাসংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান আদালত। পরে দেওয়া হয় আদালতের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ। এতে উঠে আসে বিডিআর বিদ্রোহের কারণ ও অপারেশন ডাল-ভাত কর্মসূচি সম্পর্কে আদালতের মূল্যায়ন। উঠে আসে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিডিআরের গৌরবোজ্জ্বল এবং ত্যাগী ভূমিকার কথাও।

বাংলায় লিখিত রায়ে একে একে দণ্ড ঘোষণা করেন আদালত। মাঝখানে আদালত একবার বিরতিতে যান বেলা আড়াইটার দিকে। পরে দণ্ড ঘোষণা করে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এজলাস ত্যাগ করেন আদালত।

বিচারকক্ষ : এজলাসকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বসেন বাঁ পাশে। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সামনে ও ডানে বসেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

বিচারকক্ষের পেছনে গ্রিলের তৈরি একাধিক ছোট কক্ষে অবস্থান করেন ডাণ্ডা বেড়ি পরা অভিযুক্তরা। নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন বিচারকক্ষে। এদের মধ্যে কর্নেল মুজিব, কর্নেল আনিস, কর্নেল শামসুল আরেফিন, কর্নেল কাজী এমদাদুল হক, লে. কর্নেল ইমসাদ ইবনে আমিন, লে. কর্নেল শামসুল আজম, লে. কর্নেল আবু মুসা মো. আইয়ূব কায়সার, মেজর মোসাদ্দেক এবং মেজর সালেহর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন আদালতে। এ ছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে আসামির স্বজনদের দেখা যায়নি আদালত চত্বরে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ : রায় ঘোষণার আগে ঘটনার ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ দেন আদালত। এ সময় আদালত বলেন, 'অপারেশন ডাল-ভাত' কর্মসূচি এ ঘটনার একটি বড় কারণ। কোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী- যেমন, সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে যুক্ত রাখা উচিত নয় অপারেশন ডাল-ভাতের মতো কর্মসূচিতে। পিলখানার ভেতরের স্কুলগুলোতে বিডিআর জওয়ানদের সন্তানদের ভর্তির ব্যাপারে আরও ছাড় দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও স্কুল তৈরি করা যায় কি না, তা কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।

' আদালত বলেন, 'সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মতো বিডিআর সদস্যদেরও শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো যায় কি না, জাতিসংঘের সঙ্গে সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে দেখতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেনাসদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে দেশের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বিডিআর সদস্যরা। এ জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতো ২০ শতাংশ ভাতা বিডিআর সদস্যদেরও পাওয়া উচিত। বিডিআর সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখা উচিত। ' পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, 'বিডিআর বিদ্রোহের কারণ হিসেবে সামরিক নিরাপত্তা-সম্পর্কিত কারণও থাকতে পারে; যাতে নষ্ট করা যায় আমাদের সেনাবাহিনীর মনোবল।

বহির্বিশ্বে আমাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীকে 'উচ্ছৃঙ্খল' দেখানো, যাতে ক্ষুণ্ন হয় দেশের ভাবমর্যাদা। দেশে গণ্ডগোল থাকলে উচ্ছৃঙ্খলতা থাকবে বাহিনীর মধ্যে। এতে হবে না বিনিয়োগ। অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড দুর্বল করার জন্যও হতে পারে এমন কাজ। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করাও হতে পারে এ ঘটনার একটি কারণ।

' আদালত উল্লেখ করেন, 'সুরতহাল প্রতিবেদন পড়ে শিউরে উঠেছে আমারও গা। নূ্যনতম সম্মানটুকুও প্রদর্শন করা হয়নি লাশের প্রতি। যা তার পাওয়ার কথা ছিল। ' আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, 'আমাকে রায় দিতে হবে। আমার বিবেচনায় যা মনে হয়েছে তা-ই দিয়েছি।

আসামিরা উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। এটাই সর্বশেষ বিচার নয়। '

দণ্ডিত ৫৭৫ : হত্যা মামলায় বিচার অনুষ্ঠিত হয় ৮৫০ জনের বিরুদ্ধে। বিচারে দণ্ডিত হয়েছেন সর্বমোট ৫৭৫ জন। এর মধ্যে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্য করার নির্দেশ দেওয়া হয় ১৫২ জনকে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন- বিডিআরের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন খান, মেজর গোফরান, সাজ্জাদ হোসেন, শাহ আলম, সেলিম রেজা, মিজানুর রহমান প্রমুখ। ৩০২ ধারায় ১৬১ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন দণ্ড। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি নেতা পিন্টু এবং আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের এই দণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন; অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদণ্ডেরও আদেশ দেন আদালত। এই ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি আবার এদের প্রত্যেককে অবৈধভাবে অস্ত্র লুণ্ঠনের দায়ে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ডও দেন আদালত।

একই সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয় আরও ২৬২ জনকে। এ ছাড়া চারজনের মৃত্যু হয়েছে বিচার চলাকালে।

২৭১ জনকে অব্যাহতি : এ ছাড়া প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭১ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। আদালতের রায়ে জানানো হয়, এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আপিল প্রসঙ্গ : এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ।

আপিল করতে হবে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে। এরপর আবেদন করা যাবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগেও। তবে আপিল করতে পারবেন না পলাতক আসামিরা। আপিল করতে হলে তাদের গ্রেফতার বা আত্দসমর্পণ করতে হবে।

নিরাপত্তাচাদর : রায় ঘোষণা উপলক্ষে গত সোমবার মধ্যরাত থেকে নিরাপত্তাচাদরে জড়ানো হয় আদালত ও এর আশপাশের এলাকা।

পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। পুলিশের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা জানান, ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাত হাজার সদস্য। রাস্তার প্রতিটি গলির মুখে বড় বড় ভবনের ছাদেও দায়িত্ব পালন করেন র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। বিপুল সংখ্যক পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিচয় নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্টদের কড়া নিরাপত্তায় প্রবেশ করানো হয় আদালতে।

আপিল করবে আসামিপক্ষ : দেড়শর বেশি আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর আপিল করার কথা জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, 'ন্যায়বিচার হয়নি এই রায়ে। ' রায়ের পর আসামি পক্ষের আইনজীবী শামীম সরদার বলেন, 'আমরা মনে করি, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। ' আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী এস এম রিফাজ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, 'ন্যায় বিচার পাইনি।

আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে পারেনি একটি অভিযোগও। তবু মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে। আপিলে যাব এর বিরুদ্ধে। '

ন্যায় বিচার বলছে রাষ্ট্রপক্ষ : পিলখানা হত্যা মামলায় ১৫২ আসামির ফাঁসির রায়ে ন্যায়বিচার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনার ওই দিন সেনা কর্মকর্তাদের খুন করা হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে করা হয়েছে নিষ্ঠুর আচরণ।

অসম্মান করা হয়েছে তাদের মৃতদেহকেও। এখন যে বিচার পেয়েছি, তাতে মনে হচ্ছে ন্যায়বিচারই পেয়েছি আমরা। '

মামলার ইতিবৃত্ত : পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় মামলা হয় মোট তিনটি। বিদ্রোহের মামলার আসামি ছয় হাজার ৪৬ জন। হত্যা মামলার আসামি ৮৫০ জন।

আর বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামি ৭৮৭ জন। বিদ্রোহের ঘটনায় ঢাকার লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবজ্যোতি খিসা প্রথমে লালবাগ পরে নিউমার্কেট থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন দুটি। এই দুই মামলায় আসামি ছিলেন দুই হাজার ৩২৮ জন। এদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় দুই হাজার ৫৫৯ জনকে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ৫৫৯ জন।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এক হাজার ৪৭৪ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয় প্রাথমিক তদন্তে। মামলার তদন্তের সময় মারা যান সাতজন আসামি। ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলা এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ। বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে পোশাকধারী বিডিআর সদস্য ৮২৭ জন। আর বেসামরিক লোক ২৩ জন।

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয় মামলা। এই মামলায় নথির সংখ্যা ৮৭ হাজার পৃষ্ঠা। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয় ৮৫০ আসামির বিরুদ্ধে। আসামিদের মধ্যে পলাতক ২০ জন।

ফিরে দেখা সেই ট্র্যাজেডি : ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের সময় ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে ঘটে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড।

এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ প্রাণ হারান ৭৪ জন। বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৮৫০ বিডিআর জওয়ানকে। আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সূচনা হয় সুসজ্জিত দরবার হল থেকে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের বক্তব্যের সময় অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন দুই সিপাহি।

এরপর জওয়ানেরা দুই দিন ধরে বিডিআর মহাপরিচালকসহ হত্যা করেন ৭৪ জনকে। লুটপাট ও ভাঙচুর চালান কর্মকর্তাদের বাড়িঘরে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সরকারি নথিপত্রেও। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে বিদ্রোহ শুরুর ৩৩ ঘণ্টা পরে। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুনর্গঠন করা হয় রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে।

নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।

বিশ্ব মিডিয়ায় বিডিআর বিদ্রোহের রায় : বিডিআর বিদ্রোহের ঐতিহাসিক রায় গতকাল বাংলাদেশের মতো বিদেশি মিডিয়াতেও আলোড়ন তোলে। রায় ঘোষণার পরপরই তা গুরুত্ব সহকারে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হয়। তাৎক্ষণিক ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করে বিবিসি, আল-জাজিরা ও ডন। গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এএফপি, এপি, নিউইয়র্ক টাইমস, ইয়াহু নিউজ, হাফিংটন পোস্ট, ভয়েস অব আমেরিকা, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এঙ্প্রেস, পিটিআই, এবিসি নিউজসহ বিশ্বের প্রখ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলো।

'বাংলাদেশে বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড' শিরোনামে প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ২০০৯ ?সালে রক্তাক্ত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে অন্তত ১৫০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্য দোষীদের কারাদণ্ড ও নির্দোষদের খালাস দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। আল-জাজিরার খবরে শিরোনাম করা হয় 'বাংলাদেশে বিদ্রোহের ঘটনায় কয়েকশ জনের দণ্ড'। এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে বিদ্রোহের মাধ্যমে কয়েক ডজন সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় কয়েকশ জওয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। এ মামলায় ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১৫৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিশেষ আদালতের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।

'২০০৯ সালে বিদ্রোহের ঘটনায় বাংলাদেশের আদালতে ১৫২ জওয়ানের মৃত্যুদণ্ড' শিরোনামে প্রতিবেদন করে এএফপি। বলা হয়, এ বিদ্রোহ ঘটিয়ে বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ১৫২ জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বাংলাদেশের বিশেষ ?আদালত। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এএফপির বরাতে খবর প্রচার করে টাইমস অব ইন্ডিয়া। আর এপির বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করে এনডিটিভি অনলাইন।

'বাংলাদেশে ২০০৯ সালে বিদ্রোহের ঘটনায় ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড' শিরোনামে ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিআরের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল ইসলামসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।