আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোদসী আর স্টুপিড তানভীরের গল্প !

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! রোদসী আবার ঘড়িটার দিকে তাকালো ! ১০.১৭ ! এখনও এক ঘন্টাও হয় নি রোদসী তানভীরের সাথে ঝগড়া করেছে, আর এখন থেকেই রোদসীর মনের ভিতর কেমন একটা অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে ! বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে ! আর মনে মনে বলছে গাধাটা এখনও ফোন করছে না কেন ? স্টুপিড কোথাকার ! ফোন করতে মানা করেছি বলে ফোন করবে না ? সব কথা কি শুনতে আছে ? রোদসী নিজেই মোবাইল ফোনটা হাতে নেয় ! এই স্ক্রীন ওয়াল পেপারে তানভীরের ছবিটা রয়েছে । কিছুক্ষন এক ভাবেই তাকিয়ে থাকে তানভীরের ছবিটার দিকে । রোদসী জানে তানভীরের মোবাইল ওয়াল পেপারেও রোদসীর ছবি সেট করা আছে । প্রথম যে দিন রোদসী নিজের ছবি তানভীরের মোবাইল স্ক্রীনে দেখে সে দিন খুব রাগ করেছিল । বলেছিল -তুমি আমার ছবি মোবাইলে কেন লাগিয়েছ ? মানুষজন দেখলে কি বলবে ? তানভীর খানিকটা অবাক হয়ে বলল -কি বলবে মানে ? আমার বউয়ের ছবি আমি আমার মোবাইলে লাগিয়েছ এখানে কার কি বলা আছে ? তানভীর যে ভাবে জোর দিয়ে বলল আমার বউয়ের ছবি রোদসী আর কিছু বলতে পারলো না ।

তানভীর বলল -দেখ, মোবাইল এখন একটা জরুরী জিনিস । প্রত্যেকটা কাজে এর দরকার । আমি চাই যখনই আমি কোন কাজ করতে যাই তখনই যেন তোমার ছবিটা আমার চোখের সামনে ভেষে উঠুক ! রোদসী আবা রকেবল চুপ করে শুনে যায় তানভীরের কথা ! কি এক অদ্ভুদ ভাল লাগা ছুয়ে যায় ওর সারা মন জুড়ে ! তানভীর আবার বলল -জানো প্রতিদিন সকাল বেলা চোখ মেলেই আগে মোবাইলের দিকে চোখ যায় । তোমার ছবি দিয়ে দিনটা শুরু হয় ! যখন আমাদের বিয়ে হয়ে তখনতো এমনিতেই প্রতিদিন সকালে তোমার মুখ দেখে ঘুম ভাঙ্গবে এখন থেকেই সেই অনুভুতি নেওয়ার চেষ্টা করছি । রোদসী কেবল অনুভব করে যে তার চোখে পানি চলে আসছে ! অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নেয় ।

তানভীর কে এই চোখে রপানি দেখানো যাবে না । ও খুব রাগ করবে । রোদসী তাড়াহুড়া করে বলে -আমি এখন যাই ! মা ডাকছে মনে হয় ! রোদসী আর তানভীরদের বাড়ি প্রায় কাছাকাছি । তাই চটকরে আসা যাওয়া যায় ! আজ রাতের ঝগড়াও বেধেছে এই চট করে আসা যাওয়া নিয়েই । সন্ধা বেলার দিকে রোদসীর মনটা কিছুটা অস্থির ছিল ।

কিছুই যেন ভাল লাগছিল না ! তানভীর কে কেবল দেখতে ইচ্ছা করছিল । তানভীর কে ফোন দিল । -কি কর ? তানভীর বলল -কালকে পরীক্ষা আছে । এখন পড়ছি । -একটু আসো না ? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ।

-না সোনা এখন আসা যাবে না । বাবা বাসায় আছে । একদম গেটের কাছে বসে আছে । এখন বাসা থেকে কোন ভাবেই বের হওয়া যাবে না । আর বাইরে কি ঠান্ডা দেখেছ !! -তুমি আসবে না ? -একটু বোঝার চেষ্টা কর ! দুপুর বেলাতেই তো দেখা হল ।

-আচ্ছা এখন আমার সাথে তুমি সময় হিসাব করে দেখা করবে ? দুপুরে দেখা করেছ বলে আর এখন দেখা করা যাবে না ? ওকে ফাইন ! আমার সাথে দেখা করা যখন তোমার এতো ঝামেলা তখন আজকের পর আর দেখাই করা লাগবে না । খবরদার তুমি আর আমাকে ফোন দিবা না ! মনে থাকে যেন !! রোদসী ফোন রেখে দেয় ! তারপর মোবাইলটা বন্ধ করে রাখে । কিন্তু কিছুক্ষন পরেই রোদসীর রাগ পড়ে যায় । মনে মেন ভাবে তানভীর ঠিকই তো বলছিল । ওর বাবা গেটের সামনে বসে আছে কিভাবে বের হবে এই শীতে রাতে ।

আর এই বার সিলেটে যা শীত পরেছে । রোদসী মোবাইল অন করে । ভেবেছিল তানভীর ফোন করতে না পেরে মেসেজ পাঠাবে । কিন্তু দুতিন মিনিট পরেও যখন কোন মেসেজ আসলো তখন রোদসীর মনটা খানিকটা খারাপ হল । তারপর সময় যখন যেতে থাকলো রোদসীর মন তত খারাপ হতে লাগলো ।

বারবার মনে হতে লাগলো গাধাটা ফোন করছে না কেন ? ফোন করতে মানা করেছি বলে ফোন করতে হবে না নাকি ? গাধা !! উল্লুক !! স্টুপিড !! তানভীরের ফোন আসলো আরো বিশ মিনিট পরে । এতোক্ষন তানভিরের ফোনের জন্য রোদসী অপেক্ষা করছিল । আর যখনই ফোনটা এসে হাজির হল তখনই আবার এক বুক অভিমান এসে জড় হল ! বারবার মনে হল এতোক্ষন পরে কেন ফোন দিল ? আরো আগে কেন দিল না । ফোন রিসিভ করবো না !!! করবে করবে করেই শেষ মুহুর্তে ফোনটা রিসিভ করেই ফেলল। রিসিভ করেই বলল -এতোক্ষন ফোন দেও ন কেন ? -আরে আজিব তো ! তুমিই তো নিজেই বললে ফোন না দিতে ! আর এখন বলছো কেন ফোন দাও নি ! তোমাদের মেয়েদের সাইকোলজি বড় জটিল ।

-কেন ফোন ফোন দাও নি আগে বল ! -আরে বাবা ! ফোনে টাকা ছিল না একদম । তুমি যখন ফোন রেখে দিলে তোমাকে ফোন দিতে গিয়ে দেখি একদম টাকা নাই । আবার মোড়ের মাথায় গেলাম । রিচার্ড করে তার পর আসলাম । -মোড়ের মাথায় ? এতো রাতে ? -কি করবো ? আমার পাগলী টা আমার উপর রাগ করে আছে ।

রাগ ভাঙ্গাতে হবে না ? -তাই বলে এই শীতের ভিতর এতো দুরে যাবে ? রোদসীর খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে । ব্যাচারা এই শীতে ভিতরে এতো দুরে গেল কেবল ওর একটা ছেলে মনুষীর জন্য ! নিজেকে খুব খারাপ মনে হল রোদসীর । রোদসী বলল -আমি তোমাকে খুব জ্বালাতন করি ! তাই না ? তারপর আপনা আপনি খানিকটা ফোঁপানী চলে এল । তানভীর বলল -আরে আরে ! এই পাগলী কোথাকার !! তুমি আমাকে জ্বালাবে না তো কে জ্বালাবে ! বল আর কেউ আছে আমার । এখন কান্না বন্ধ কর ! তা না হলে কিন্তু আমি বাসায় চলে যাবো ! রোদসী অবাক হয় ! বাসায় চলে যাবো মানে ঠিক বুঝতে পারে না ।

বলল -বাসায় যাবো মানে ? তুমি এখন কোথায় ? -আরে তুমি না বললে আমার সাথে দেখা করতে মন চাইছে । এইতো আমি তোমাদের বাড়ীর পিছন পাশে ! জানলা টা একটু খোল ! বাইরে যা ঠান্ডা না !! আবার কালকে পরীক্ষাও আছে । হঠাৎ করেই রোদসীর সব কিছু যেন এলো মেলো হয়ে গেল । ওর কেবল একটা কথাই মনে হল তানভীর ওর জন্য এই শীতের ভিতর বাইরে দাড়িয়ে আছে । জানলা খুললে হবে হবে না ।

যে কোন মূল্যেই ওকে এখন ওর সাথে দেখা করতে হবে ! হবেই ! কেবল একটা চাদর গায়ে দিয়েই রোদসী বের হয়ে গেল । ওর মা পেছন থেকে ডাক দিয়েছিল বলল নীলুদের বাড়ি যাচ্ছে । নীলুদের বাড়ি ঠিক ওদের বাড়ির বাড়ির পাশেই । রোদসী জোড়ে পা চালায় ! ঐ তো তানভীরকে দেখা যাচ্ছে । রোদসীর বুকটা কেমন আন্দোলিত হতে থাকে ।

যেন মনে হচ্ছে কত প্রতীক্ষার পরে ওদের দেখা হতে যাচ্ছে !! একরাশ ভাল লাগা ওর সারা দেহমনটাকে বিমোহিত করে ফেলে ! গল্পের বাকীটুকু আমি আর লিখলাম না । আপনারা নিজেরাই কল্পনাই করে নিন ! গল্পে যে নায়ক তানভীরের কথা বলা হয়েছে সেই তানভীর কিন্তু আমি না ! অন্য এক তানভীর । কারন মরে গেলেও শীতের রাতে আমি লেপের ভিতর থেকে বের হতাম না ! কোন ভাইবেই না ! আমার ফেসবুক পেইজে রোদসীর সাথে আমার প্রায়ই কথা হয় ! রোদসীর মনের মানুষটার নাম তানভীর ! তাদের ভিতর এমন খুনটুসী ভালবাসা লেগেই থাকে ! আমার এই ছোট্ট আপুটার জীবনটা যেন সব সময় সুন্দর হয় ! আপনারা সবাই এই জুটিটার জন্য দোয়া করবেন !! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।