আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গৌরবের স্বর্ণালি অতীত

বগুড়ার কৃষি যন্ত্রাংশ উদ্ভাবন এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পের শুরুটা হয়েছিল কার্যত কামারশালায় সারাইয়ের কাজে জড়িত কয়েকজন কারিগরের হাত ধরে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার কৃষি যন্ত্রাংশ ও হালকা প্রকৌশল শিল্প উদ্ভাবনের নেপথ্যে কারিগরদের কোনো সুদূর চিন্তা ছিল না। যন্ত্রাংশের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কামারশালায় লোহা পিটিয়ে বিকল যন্ত্র সারাতেন তাঁরা। এভাবে লোহা পিটিয়ে যন্ত্রাংশ তৈরি করতে গিয়ে  একের পর এক কৃষি ও হালকা যন্ত্রাংশ উদ্ভাবন করেন তাঁরা।
একাধিক কৃষিযন্ত্রের উদ্ভাবক মো. আমির হোসেন প্রথম আলোকে জানান, কার্যত এ শিল্পের শুরু ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে।

সে সময় বৃহত্তর বগুড়া জেলার (বগুড়া ও জয়পুরহাট) গ্রামে-গঞ্জে ও হাট-বন্দরে পাকিস্তানি ও জার্মানির তৈরি বিকো, ইত্তেফাকের মতো ধান ভাঙানোর যন্ত্র ব্যবহার শুরু হয়। ওই সব যন্ত্র বিকল হলে তা মেরামতের জন্য যেতে হতো কলকাতার যজ্ঞেশ্বর কোম্পানিতে।
আবার ধান ভাঙানোর যন্ত্র বিকল হলে কলকাতা ও ঢাকা থেকে আসতেন কারিগরেরা। তাঁঁরা বিকল যন্ত্রের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ বানিয়ে নিতে আসতেন কামারশালায়। কামারেরা কারিগরদের নির্দেশমতো পিটিয়ে যন্ত্রাংশ সারাই করে দিতেন।

ষাটের দশকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মাধমে দেশে সেচযন্ত্র আসে। এসব সেচযন্ত্র বিকল হলে তা সারানো হতো কামারশালায়। সত্তর দশক থেকে কামারশালায় সেচযন্ত্রের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়। এ সময় কয়েকজন কারিগরের হাত ধরে উদ্ভাবন হতে থাকে একের পর এক নানা কৃষি যন্ত্রাংশ। আশির দশকে এসে কৃষি যন্ত্রাংশের পাশাপাশি উদ্ভাবন হতে থাকে হালকা প্রকৌশল শিল্প।


বগুড়ায় যে কারিগরদের হাত ধরে কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি ও উদ্ভাবন শুরু হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন শহরের কাটনার পাড়ার প্রয়াত কারিগর ধলু মিয়া, হক মেটাল ওয়ার্কশপের সামছুল হুদা, এস ইসলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের আনিছুর রহমান, গোহাইল সড়কের হবিবর রহমানের মতো হাতে গোনা কারিগরেরা।

আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ষাটের দশকে শহরের নিউ মার্কেট পুকুরপাড়ে ছিল ধলু কারিগরের কামারশালা। ১ নম্বর রেলগেটে ছিল আফসার মিয়া নামের একজনের ছোট একটি ওয়ার্কশপ। ঠনঠনিয়া হক মেটালের পাশে ছিল মজিবর রহমান নামের আরেক কারিগরের দোকান। সে সময় জয়পুরহাট সদর, কালাই, ক্ষেতলাল, পাঁচবিবি ও আক্কেলপুর, গোবিন্দগঞ্জের কামদিয়া, বগুড়ার সাস্তাহার, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম থেকে লোকজন বিকল ধান ভাঙানোর যন্ত্র মেরামতের জন্য নিয়ে আসতেন এসব দোকানে।

একসময়  জার্মানি ও ইংল্যান্ডের তৈরি লেদ মেশিন আসে শহরে। এই লেদে শুধু যন্ত্র মেরামত হতো।

আনিছুর রহমান আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের কামাল হোসেন, ঢাকার আবদুল করিম, নওগাঁর জসিম উদ্দিন, যশোরের নূরুল ইসলাম গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিকল যন্ত্র মেরামতের কাজ করতেন। তাঁদের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ শিখি। ’ বিদ্যুতের সরবরাহ তখনো শুরু না হওয়ায় একসময় ধলু কারিগর উদ্ভাবন করেন হস্তচালিত লেদ।

প্রবীণ কারিগর আনিছুর রহমান জানান, ১৯৭৮ সালে কাঠের কাঠামো দিয়ে তিনিই প্রথম পানির সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প উদ্ভাবন করেন।

নব্বই দশক থেকে ধলু কারিগরের ছেলে মো. আমির হোসেন ইট ভাঙা, ইট তৈরি, সেমাই তৈরি, মুরগি ও মাছের খাদ্য তৈরির যন্ত্র, ভুট্টা ভাঙানো ও মাড়াই, প্লাস্টিক পাইপ তৈরি, গো-খাদ্য, পামতেল ও পাটের ছাল ছাড়ানোর যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন।

 

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.