আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমার জন্য ভালোবাসা



প্রতিদিন বন্ধুদের লিখা পড়ি, ছোট ভাইদের লিখা পড়ি। বেশির ভাগই ফেসবুক স্টাটাস। কিন্তু কী চমৎকার তাদের বাচনভঙ্গিমা। দেখে ভালোও লাগে আবার ঈর্ষাও হয়। জীবনের ছোটবড় ঘটনাগুলোকে কত সাবলীল ভাবে অল্প কথায় তুলে ধরতে একেকজন ওস্তাদ প্রায়।

একটু যত্নবান হলেই হয়ত এদের মাঝেই কাউ কে আমরা পেয়ে যাব আগামীদিনের গল্পকার হিসেবে। হ্যা গল্পকার। আমাদের ক্ষূদ্র জীবন যেটা ব্যাস্ততার মায়াজাল, রুজি রোজগার আর সমাজে টিকে থাকার যুদ্ধে বিপর্যস্ত সেখানে একজন পুরদস্তুর সাহিত্যে নিবেদিত সুজন খুজেবের করা বা হয়ে ওঠা আসলেই শক্ত, আশা করাটাও একটু বেশি। কিন্তু সাধারণ একজন গল্পকার আমরা পেতেই পারি। যার কাছ থেকে সাহিত্যের অমৃত রস না হোক কিছু ভালোলাগা গল্প পাব, কিছু চরিত্র পাব।

যেসব চরিত্র হয়ত মিলে যাবে আমদের একঘেয়ে জীবনের সাথে কিছু হয়ত কাল্পনিক পাগলের প্রলাপের মত মনে হবে অথবা ফ্যান্টাসি। আমি হুমায়ূন আহমেদের কথা বলতে চাই। অনেকে হয়ত আমার এ চাওয়াকে ধৃষ্টতার চোখে দেখবেন অনেকে দেখবেন তামাসার চোখে। কিন্তু আমার কিছু যায় আসে না তাতে। হুমায়ুন স্যার কে সাহিত্যে অনেকে প্রবাদ পুরুষ বলেছেন, অনেকে বলেছেন ছাতার মাথা।

কিন্তু ঊনি নিজেকে একজন গল্পকার হিসেবেই ভাবতেন। আসলেই তো উনি একজন গল্পকারই বটে। আমার জীবনে তো তাই। আমার জীবনে প্রথম উপন্যাস হুমায়ূন আহমেদ এর ইরিনা। তের বছর বয়সে এই ইরিনা আমার মাঝে এক হাহাকার তৈরী করেছিল।

অসম্ভব রূপবতী কথাটার সাথে তখনই প্রথম পরিচয়। সমাজের স্তর নিয়ে ভাবনার প্রথম খোরাক, ভালোবাসার অনুভুতি ক্রোধের অনুভুতি ছাপার অক্ষরে প্রথম পড়তে শেখায় এই ইরিনা। তারপর কত গল্প (সাহিত্য বলব না গল্পই সই)। কত চরিত্র। কত মনে রাখা কত ভুলে যাওয়া।

হঠাৎ দেখা হিমুর সাথে। আশ্চর্‍্য মানুষ। শুধু হেটে বেড়ায়, মানুষের মায়ার জালে আটকায় না কিন্তু যার বুক মানুষের মায়ায় ক্ষতবিক্ষত। দেখা অসম্ভব রূপবতী সেই রূপার সাথে, মারিয়ার সাথে, বাদলের সাথে, মাজেদা খালার সাথে, জয়গুনের সাথে নাম না জানা গলির কুকুরের সাথে, সৎ পুলিশ অফিসারের সাথে, রাশিয়ান পরীর সাথে। কত ভালোলাগা।

শুধু কী মানুষ ? এই যে জোছনা এর প্রতি ভালোলাগা আমার মাঝে জাগাল যে, সে তো হিমুই। জীবনে কতবার মনে হয়েছে হিমু হয়ে যাব। একজন রূপা দাঁড়িয়ে থাকবে বারান্দায় রেলিং ধরে আমার অপেক্ষায় কিন্তু আমি অবিচল হেটে যাব, দূর থেকে দূরে হলুদ পাঞ্জাবী আর খালি পায়। মিসির আলীর সাথে পরিচয় তখনি একদম হিমুর বিপরীত সব কিছুতেই যুক্তি, হিমু যেখানে বিশ্বাস করে যুক্তি হল অন্ধকার মিসির আলী সেই যুক্তিকেই আলোভেবে এগিয়ে যায় রহস্যের অন্তরালে। কিন্তু তারপরও এদের মাঝে মিল খুজে পাই।

মিল খুজে পাই মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে। নিতান্ত অপরিচিত অভাজন এর জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়ার যে ভালোবাসাটা প্রয়জন, মানুষের কল্যানে নিজের জীবন বিকিয়ে দেয়ার যে সাহস জরুরী এ সবই আমি এই দুই চরিত্রে পেয়েছি। আমার নিজের নাম শুভ্র। হুমায়ূন সাহেবের শুভ্রের সাথে আমার কোন মিল নাই। কিন্তু বলতে দ্ব্বিধা নাই এই শুভ্র চরিত্রের শুভ্রতা আমাকে কতবার অহংকারী করে তুলেছে শুধু নামের সাথে মিলের কারনে।

মানুষ নির্ভেজাল পবিত্র মানুষের কাঙ্গাল এটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখতে পেয়েছি শুভ্র উপন্যাসের প্রতিটা গল্পে। আজ আমি কোথাও যাব না বইটা যতবার পড়ি শেষ পাতায় চোখ ভিজে ওঠে ভালোলাগায় মন ভরে ওঠে। জছনা ও জননীর গল্প অসামান্য গল্প। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গল্প। কখনই ইতিহাস না এটাও একটা গল্প অসামান্য গল্প।

একে ইতিহাসের পান্ডুলিপি ভেবে অনেকে কটাক্ষ করেন কী আসে যায়? সেই সময়ের গল্প এত আবেগ দিয়ে নিজের মত করে নিজস্ব কায়দায় অসামান্য গল্প ভঙ্গিমায় বলতে পারার ক্ষমতা আর লক্ষ পাঠকের কাছে পৌছে দেয়ার ক্ষমতা আর কার ছিল এই সময়? এত পড়লাম উনার বই। কী শিখলাম ? সাহিত্য শিখলাম? না। শিখলাম মানুষের প্রতি ভালোবাসা। জীবনের সাবলীলতা। শিখলাম বই পড়া।

বই কে ভালোবাসা। আমার ক্ষুদ্র যান্ত্রিক জীবনে একটু জোছনার অলৌকিকতা অনুভব করতে শিখলাম, এটাই বা কম কী? কেউ একজন হয়ে উঠুক এমন এক গল্পকার। আমরাই তো বাংলাদেশ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.