আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নামেই পদত্যাগ, কাজ করছেন আগের মতোই

নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির কাছে না পাঠানো পর্যন্ত তাঁরা দাপ্তরিক ও নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে না। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠিত হবে। তিনি জানান, গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

কেউ অবশ্য আগেও জমা দিয়েছেন। তবে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য কেউ কেউ নতুন করে শপথ নেবেন।

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দিলেও পতাকাবাহী গাড়িতে করেই ঘুরছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁরা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা আরও বলেন, বর্তমান কাঠামোয় সম্ভবত মন্ত্রিসভার এটাই শেষ বৈঠক।

কিছু পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। আর কিছু রেখে দেওয়া হবে। তাঁরাই পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন। এই মন্ত্রিসভায় নতুনদেরও যুক্ত করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সংবিধানে সর্বদলীয়, একদলীয় বা অন্তর্বর্তী সরকার বলে কোনো কথা নেই।

প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি এই মন্ত্রিসভার সংখ্যা বা আকারের ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে এই মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে।

বিএনপি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় না এলে কী হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে প্রস্তাব দিয়েছেন, সে প্রস্তাব কে কে গ্রহণ করলেন, কে কে করেননি, সে তথ্য তাঁর কাছে নেই। তবে সেখানে বিভিন্ন দলের সদস্য থাকবেন।

পদত্যাগপত্রে যা আছে: ‘তারিখবিহীন’ এসব পদত্যাগপত্র একই ধাঁচে লেখা। কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ‘বিষয়—পদত্যাগপত্র’ উল্লেখ করে নিজ মন্ত্রণালয়ের প্যাডে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখেছেন, ‘দশম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময় আপনার প্রস্তাবিত সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের নিমিত্তে আমি...মন্ত্রিসভার সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের অভিপ্রায় ঘোষণা করছি। অতএব, আপনার সদয় বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পদত্যাগপত্র পেশ করছি। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বদলীয় সরকার গঠনের পথ সুগম করতে আমরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যখন পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন এবং যখন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, তখনই এই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে।

পদত্যাগের পর পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এতে নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়। কিন্তু যতক্ষণ না প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রীরা কাজ করে যাবেন।

একই বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এটা অগ্রিম পদত্যাগপত্র। প্রধানমন্ত্রী যেদিন চূড়ান্ত করবেন, সেদিন মন্ত্রীরা দায়িত্ব শেষ করবেন। তত দিন পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ ও নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।

প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, সর্বদলীয় সরকারে বিরোধী দল না এলে খুঁত থেকে যাবে। তাই বিএনপিকে আনার চেষ্টা থাকবে।

এর আগে ৪ নভেম্বরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে যেন সবাই পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর পর থেকে পদত্যাগপত্র জমা পড়তে শুরু করে।

প্রথমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদত্যাগপত্র জমা দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কমলওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ১৪ নভেম্বর শ্রীলঙ্কায় যেতে পারে, ফিরবেন একদিন পর। এরপর সর্বদলীয় সরকার গঠনের কাজ শুরু করবেন। তবে আরেকজন মন্ত্রী বলেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বা পরপরই সর্বদলীয় সরকার গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে দোয়া: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে দোয়া চেয়েছেন মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য। গতকালের বৈঠকের শুরুতে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া চান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অনেকের মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন। বর্তমান সরকারের আমলে মোট ২২৫টি মন্ত্রিসভার বৈঠক হলো।

 



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.