আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদত্যাগের পরও তাঁরা মন্ত্রী, প্রশাসনে অস্বস্তি

মন্ত্রীরা পদত্যাগের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার আগের মতোই দাপ্তরিক ও নির্বাহী কাজ করেছেন। তাঁরা ফাইলে সই করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।  তবে ফাইলে সই করা নিয়ে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সচিবসহ প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। প্রথম আলোকে তাঁরা বলেছেন, পদত্যাগপত্র পেশ করার পরও মন্ত্রীরা স্বপদে বহাল থেকে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। গাড়ি-বাড়িতে পতাকা উড়ছে।

কিন্তু ভবিষ্যতে অন্য সরকার এসে এই মন্ত্রীদের ‘অবৈধ’ বলে এ সময়ের সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করে দিতে পারে।

তবে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের মতে, এটা পদত্যাগ না। সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়নি। তাঁর ভাষায়, এটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কোনো মন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা কার্যকর হবে।

কিন্তু মন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য পদত্যাগপত্র দেননি। কাজেই এখন মন্ত্রীদের সুযোগ-সুবিধা নিতে ও দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই।

আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে মিল নেই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর। তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা সংবিধান মেনেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। তবে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে যতক্ষণ না উপস্থাপন হবে এবং তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত না সই করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রীরা দাপ্তরিক ও নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন।

এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী।

তবে একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া কিংবা পদত্যাগের অভিপ্রায় প্রকাশের পরপরই মন্ত্রীরা শপথের আওতা থেকে বেরিয়ে গেছেন। তাঁরা এখন মন্ত্রী নন। তিনি বলেন, ‘এখন মন্ত্রীদের নির্দেশে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে আমরা দ্বিধাবোধ করছি। ’

প্রশাসনের অন্য দুজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেননি, এটা পদত্যাগ হয়নি।

এটা একটা তামাশা। তারিখ ছাড়া কোনো চিঠি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে কোনো কোনো মন্ত্রীও পদত্যাগের এই প্রক্রিয়ায় বিব্রত।
গতকাল সচিবালয়ে বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আগের মতোই দাপ্তরিক কাজ করতে দেখা গেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু গতকাল কোস্টগার্ড ও ইমিগ্রেশনের কয়েকটি ফাইলে সই করেছেন।

একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পদত্যাগপত্র জমা দিলেও তাতে তারিখ উল্লেখ করিনি। পদত্যাগপত্রে তারিখ দেওয়ার পর থেকে এটি কার্যকর হবে। তাই ফাইলে সই দেওয়া নিয়ে জটিলতা হওয়ার কথা নয়। ’

পদত্যাগ নিয়ে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কর্মকর্তাদের অনেকে বলেন, মন্ত্রীরা নিজেরাই বলছেন, তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।

তাহলে তাঁদের এ পদে থাকা অবৈধ। আর অবৈধ মন্ত্রীদের নির্দেশে কাজ করলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, পদত্যাগের পরও মন্ত্রীরা ফাইলে সই করছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে একধরনের অস্পষ্টতা ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। একজন সচিব বলেন, ‘সকাল থেকে যে কটি ফাইলে সই করেছি, তার একটিও আমি মন্ত্রীর কাছে পাঠাইনি।

ঠিক বুঝতে পারছি না, কী করব। ’

একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছেন, পদত্যাগের কারণে তাঁর মন্ত্রী এখন আর কোনো ফাইলে সই দেবেন না।  গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী যথারীতি দাপ্তরিক কাজ করেছেন, ফাইলে সইও করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ অন্যরাও অফিস করেছেন।

অল্প কয়েকজন অন্যান্য কাজে সচিবালয় ও ঢাকার বাইরে ছিলেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকার বাইরে ছিলেন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.