আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিপক্ষ যখন টেন্ডুলকার

ব্রায়ান লারা, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার- স্ব স্ব সময়ের তারকা ক্রিকেটার। সবাই এখন মুম্বাইয়ে। উদ্দেশ্য একটাই- এক সময়ের 'কঠিন' প্রতিপক্ষ 'অলটাইম গ্রেট' শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ী টেস্ট স্বচক্ষে দেখা এবং গ্রেট ক্রিকেটারের বিদায়কে আজীবন মনের কোঠরে গেঁথে রাখা। শুধু ক্রিকেটাররাই নন, পুরো ভারত তাদের ক্রিকেট দেবতার বিদায়ের আবাহনে শোকাতুর। দেশের সূর্য সন্তানকে বিদায় জানাতে, বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার কোনো কমতি নেই আরব সাগরের তীরবর্তী শহর মুম্বাই বাসিন্দাদের।

টেন্ডুলকারের বিদায়ের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও। এই গ্রেট ক্রিকেটারের সঙ্গে যে আত্দিকভাবে জড়িয়ে আছে গাঙ্গেয় 'ব-দ্বীপটি'। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে প্রতিপক্ষ হয়ে খেলেছেন এই মারাঠি। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট মিলিয়ে ১০০ নম্বর সেঞ্চুরিটি এই বাংলার মাটিতে এবং সর্বোপরি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরও বাংলাদেশের বিপক্ষে। সুতরাং টেন্ডুলকারের বিদায়ের সঙ্গে কিছু কিছু মুহূর্তও স্মৃতি হয়ে যাবে, সন্দেহ নেই!

২০১২ সালের এশিয়া কাপটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সময়।

ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দুই ক্রিকেট পরাশক্তিকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের ফাইনাল খেলেছিল টাইগাররা। ১৬ মার্চের যে ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, ওই ম্যাচেই ১০০ নম্বর সেঞ্চুরিটি করেছিলেন গ্রেট টেন্ডুলকার। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০ বা তার চেয়েও অনেক বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে। ইংল্যান্ডের জ্যাক হবসের সেঞ্চুরি সংখ্যা ১৬৭। কিন্তু ১৩৬ বছরের টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে শচীন টেন্ডুলকারই প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার যিনি সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করেছেন।

আর সেই বিরল মুহূর্তটির সাক্ষী মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। ওই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ২৮৯ রান করেছিল ভারত। টেন্ডুলকার ১৪৭ বলে খেলেছিলেন ১১৪ রানের ইতিহাস গড়া ইনিংস। আউট হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজার বলে। আউটটি নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক বলেন, 'টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি ছিল।

এমন গ্রেট ক্রিকেটারের উইকেট নেওয়া স্বপ্নের মতো। আমি উইকেটটি নিয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিলাম। তার মতো ক্রিকেটারের বিপক্ষে খেলাটাও অনেক। ' এত গেল শততম সেঞ্চুরির রেকর্ডের কথা। এখন আসা যাক বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকের কথায়।

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ক্রিকেটের এলিট শ্রেণীতে নাম লেখায় বাংলাদেশ। অভিষেক টেস্ট নিয়ে উৎসবে মেতেছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পুরো দেশ। বাংলাদেশের সেই অভিষেক টেস্টে খেলেছিলেন টেন্ডুলকার। ব্যাট করেছিলেন তৃতীয় দিন। মাত্র ১৮ রান করে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের অফ স্পিনে অতিরিক্ত ফিল্ডার রাজিন সালেহকে ক্যাচ দেন।

সেই উইকেট পাওয়ার মুহূর্তটির বর্ণনায় দুর্জয় বলেন, 'টেন্ডুলকার তখন তারকা ক্রিকেটার। তার উইকেট যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্ন। আমারও স্বপ্ন ছিল তার উইকেট। উইকেটটা পাওয়ার মুহূর্তটা ছিল আমার অসাধারণ। সেই ম্যাচে আমি আরও উইকেট পেয়েছিলাম।

কিন্তু টেন্ডুলকারের উইকেটটি ছিল তার মধ্যে সেরা। আমার সারা জীবন মনে থাকবে তাকে আউট করার ওই মুহূর্তটি। ' প্রথম টেস্ট উইকেট যেমন দুর্জয়ের, তেমনি টেন্ডুলকারের প্রথম উইকেট বাঁ হাতি স্পিনার মো. রফিকের। ১৯৯৪ সালে শারজাহতে টেন্ডুলকারকে বোল্ড করেছিলেন রফিক।

অভিষেক টেস্টের চার বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামেন টেন্ডুলকার।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টেই করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। ২৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা। ১৯৯ টেস্ট ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি করেছেন ৫১টি। ডাবল সেঞ্চুরি ৬টি এবং সর্বোচ্চটার প্রতিপক্ষই বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে রান করেছেন ১৫৮৪৭।

এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ টেস্টে তার রান ১৩৬.৬৬ গড়ে ৮২০। কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই এবং সেঞ্চুরি ৫টি। ওই টেস্টে তিনি দশম উইকেট জুটিতে বাঁ হাতি পেসার জহির খানকে নিয়ে ১৩৩ রান যোগ করেছিলেন। যা দশম উইকেট জুটিতে রেকর্ড।

১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে যখন প্রথম খেলতে নামেন টেন্ডুলকার, তখন তাকে ঘিরে স্বপ্নের জাল বুনেছিল ভারতীয়রা।

সেই কিশোর গত দুই যুগ ধরে যেভাবে ২২ গজি উইকেটে একের পর এক সিনেমা করে গেছেন, তার মহিমা টিকে থাকবে অনাধি কাল। ক্যারিয়ারের ২০০ নম্বর টেস্ট খেলার পর থেকে যখনই আলোচনায় আসবেন টেন্ডুলকার, তখন আসবে ৫৫ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশেরও নাম। কেননা ক্রিকেট লিজেন্ডের বহু রেকর্ডের অনেকগুলো যে এই সবুজ বাংলায়!

 

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।