আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিপক্ষ

শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি

অল্প-বিস্তর কষ্ট সবার জীবনেই থাকে। তবু কারো কারো হাসি-খুশি আর উজ্জ্বল মুখশ্রী তাদের আশপাশের লোকজনের মনে কিছুটা হলেও শক্তি আর সাহসের যোগান দিয়ে যায় স্বল্প সময়ের জন্যে হলেও। তবু যেন খুব বেশিক্ষণ মনের স্বাভাবিক অবস্থাটা ধরে রাখতে পারেন না সায়রা বেগম। সর্বক্ষণ যেন বিগত দিনের ক্ষয়ে যাওয়া পানসিটাকেই তিনি দেখতে পান স্মৃতির পরিত্যক্ত সৈকতে। যেখানে কেবল নিষ্ঠুরতা আর প্রতারণার জলোচ্ছ্বাস অবিরাম।

সহানুভূতি মাখা নমনীয় দৃষ্টির বদলে প্রতিহিংসা আর শাসনের লকলকে দৃষ্টির আস্ফালন। মানুষ মানুষের জন্যে কথাটি ঠিকই আছে, কিন্তু তা যে কেবল মঙ্গলের জন্যেই সে কথা স্পষ্ট করে বলা নেই কোথাও। মশিউর রহমান তেমন একটা সুপুরুষ না হলেও মানুষ হিসেবে মন্দ ছিলেন না। স্বভাবটিও ছিল যেন কনকনে শীতের রাতে এক মুষ্টি গাঢ় ওম। উচ্চস্বরে যেন কথা বলতে শেখেন নি।

আর সে সুযোগে সংসারের পরিবৃত্তে স্ব-কণ্ঠের অনুরণন স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল বলে, এখনও তা ধরে রাখতে বদ্ধ-পরিকর তিনি। উড়ে এসে জুড়ে বসা ছেলের বউ গ্রীবা বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাবে ব্যাপারটি যেন ভাবতেও পারেন না। এতকাল যে সংসারটিকে আগলে রেখেছিলেন তার কর্তৃত্ব চলে যাবে অন্যের হাতে আর নিজের সংসারে নিজেই ভার বা বোঝা হয়ে পড়ে থাকবেন এক কোণে, সে কথা ভাবনায় এলেও মনে হয় যেদিকে দু চোখ যায় সেদিকে চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর পরই নিজের জীবনটাকে নিয়ে ভাবতে আরম্ভ করেছিলেন। যদিও স্বামীর জীবদ্দশায় তেমন গভীর ভালবাসায় বাঁধতে পারেন নি মানুষটিকে, তবু খানিকটা দায় নেভানোর মতো করে হলেও এক ধরনের টান অনুভব করেছেন।

আর এতেই বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন অল্পে তুষ্ট থাকা মানুষটি। স্ত্রীর কাছ থেকে কতটা পেলেন তার গভীরতা মেপে দেখতে নিক্তি বা গজ ফিতে হাতে তুলে নেন নি। অথচ নিজের দিকে তাকালে জীবনটাকে তেমন ভর ভরন্ত মনে হয় না সায়রা বেগমের। বড় ছেলে লাভলু যদিও হাচড়ে পাছড়ে ব্যবসা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছিল, তবু কোনোক্রমে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন দিয়ে ঠেসে রেখেছে ব্যবসার চারপাশ।

তারাই যে ইঁদুরের মতো ব্যবসাপাতির শেকড়-বাকড় কাটছে না তাই বা কে জানে। এ নিয়ে ছেলে বা ছেলের বউর সঙ্গে ঝঞ্ঝাটে যেতে চান না। ছেলের নামে নেওয়া ব্যাঙ্ক ঋণের কারণে বউ মন্টি আর তিনি আইনগত ভাবে আটকা পড়ে আছেন ব্যাঙ্কের কাছে। মনের মিল না থাকলেও সময়ে সময়ে কোর্টে হাজিরা দিতে যান দুজনেই। তখনও শাশুড়ি আর পুত্রবধূতে তেমন একটা কথা হয় না।

কবে যে ব্যাঙ্ক আর কোর্টের টানা হ্যাঁচড়া থেকে মুক্ত হবেন বুঝতে পারেন না। অন্যদিকে বড় মেয়ে এশার বর হাশমতুল্লা প্রায়ই বলে যে, ছেলে তার বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব শীঘ্রই বিদেশে স্যাটেল হবে। দেশের ব্যবসাপাতি গুটিয়ে ফেলেছে এরই মধ্যে। শেষ বয়সে জেলের হাত থেকে বাঁচলেও পথে বসা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা নেই। মেয়ে-জামাইর কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারেন না তিনি।

তবু মনে কষ্ট পাবে ভেবে কথাটা কোনো বারই ছেলেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না। আবার ছেলের বউ কান কথাকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে দু চার কথা শুনিয়ে দেবে না তারও নিশ্চয়তা নেই। সব মিলিয়েই নিজের প্রাপ্তির দিকটার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ হলে জীবনটাকে তেমন একটা ভর-ভরন্ত মনে হয় না। ছোট মেয়ে ইতি কতো ভাল একটা বর পেয়েছিল, কিন্তু সংসারটাকে টিকাতে পারলো না। আজকালকার মেয়েরা সব কিছুই যেন তৈরি মুড়ি-মুড়কির মতো ভাবে।

আরে খানিকটা কষ্ট তো জীবনে সহ্য করতেই হয়। সিঁড়ি বেয়ে যতটা ওপরের দিকে মানুষ উঠতে চায়, তার শ্রম আর ঘাম তো ততটাই হবে। কিন্তু বুঝল না মেয়ে। সম্পর্কটা ভেঙে দেওয়াটা সহ্য করতে পারেন নি মানুষটা। মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন শেষ পর্যন্ত।

অবশ্য বিধবা হলে কার কেমন লাগে তা ঠিক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বুঝতে চান না তিনি। তবে নিজের ক্ষেত্রে টের পেয়েছিলেন যে, বেশ একটা স্বাধীনতা চলে এসেছে মনের ভেতর। অল্প কিছুদিনের মধ্যে মনটা বেজায় নির্ভার আর ফুরফুরে হয়ে উঠলেও কারো কাছে তা প্রকাশ করেন নি। তবু কোন অসচেতন মুহূর্তে মনের আলগা দরজার ফাঁক গলে ঢুকে পড়েছিলেন আবদুল হাকিম। যার সঙ্গে প্রথম বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল।

সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবার পরও বালির মূর্তির মতো কখন খসে পড়েছিল বুঝতে পারেন নি। হঠাৎ একদিন চমকে উঠে জানতে পেলেন তার বিয়ের তারিখ পার হয়ে গেছে। যদিও বিয়ে ব্যাপারটাকে অতটা বুঝতে পারছিলেন না, তবু কেমন যেন এক ঝাঁক বিষণ্ণতা এসে চেপে ধরেছিল। সে বিষণ্ণতা আর মন থেকে দূর করতে পারছিলেন না বলে মশিউর রহমানের সংসারে মন বসাতে না পারলেও একে একে লাভলু, এশা আর ইতি এসে তাকে অষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে ফেলেছিল সংসারের চাকার সঙ্গে। হয়তো গর্ভে এসে পড়েছিল বলেই নিতান্ত দয়া করে তাদের নিরাপদ ভূমিষ্ঠের ব্যাপারে খানিকটা নমনীয় ছিলেন বলা যায়।

মানুষের সন্তান হিসেবে তাকে বাঁচানোর দায় মানুষের বলেই হয়তো বুকে তুলে নিয়েছিলেন তাদের। আদর-যত্ন যতটা না হলেই নয় ততটুকু দিয়েই বড় হতে সাহায্য করেছেন। সেই থেকে এ সংসারই তার একমাত্র বিচরণ ক্ষেত্র ছিল দীর্ঘকাল। তবু আজকাল বেশ অনুভব করতে পারেন যে, লাভলু, মন্টি আর তাদের ছেলে-মেয়েদের প্রতি কিছুটা বেশিই যেন সদয়। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল আব্দুল হাকিমের সঙ্গে।

আর দূর থেকে তাকে দেখতে পেয়েই মনটা কেমন হুহু করে উঠেছিল। মনে হয়েছিল এই মানুষটির সঙ্গে কেন যে বিয়েটা হলো না। তাহলে তো তাকে এখন বিধবার পরিচয়ে বেঁচে থাকতে হতো না। বিধাতা কেন যে এমন একটি বেহিসাবি কাজে সময় নষ্ট করলেন অযথা। আবদুল হাকিম এখনো দিব্যি সুস্থ আর শক্ত-সমর্থ রয়ে গেছেন।

অথচ তাকে কিনা বিধবা হিসেবে জীবনের সব আলো আর রঙ সমূহ দূরে ঠেলে দিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কতকাল পর দেখা হয়েছে মানুষটির সঙ্গে তারপরও মনে হচ্ছিল এই কিছুক্ষণের জন্যে চলে গিয়েছিলেন দৃষ্টির আড়ালে। সায়রা বেগমকে দেখতে পেয়ে নিজ থেকেই এগিয়ে এসেছিলেন আবদুল হাকিম। আগ্রহী হয়ে ফোন নাম্বার নিয়েছিলেন। সেই থেকে মাঝে মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে কথাবার্তা হয় টুকটাক।

কিন্তু স্বপ্ন থেকে দুজনের কারোরই যেন সাহস বা আগ্রহ নেই। সায়রা বেগম অর্থ্রাইটিসের কারণে প্রায়ই শয্যাশায়ী থাকেন। অন্যদিকে আব্দুল হাকিমও প্রায়ই স্থবির হয়ে থাকেন ডায়াবেটিসের অত্যাচারে। কথায় কথায় জানা হয়ে যায় স্ত্রী হারিয়ে আব্দুল হাকিমও নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন দীর্ঘকাল। ইউরোপের কোনো দেশ হলে হয়তো বৃদ্ধ বয়সেও বিয়ের ব্যাপারটি আরো সহজ হয়ে যেতো।

কিন্তু দেশটা বাংলাদেশ বলে এখানকার সংস্কার বেশ জটিল। পান থেকে চুন খসাবার জো নেই। যদিও আবদুল হাকিম মনের ইচ্ছে গোপন করেন নি। এক রকম খোলামেলা প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, যেহেতু ছেলেমেয়ে সবাই দূরে থাকে। আর সায়রা বেগমের ছোট মেয়েটা দু সন্তান নিয়ে তার কাছে থাকলেও তারা যার যার কাজে বেরিয়ে গেলে দীর্ঘ একাকীত্ব হামলে পড়ে।

চাইলে দুজনেই সেই সময়গুলোকে উর্বর করে তুলতে পারতেন। কিন্তু ইচ্ছে করলেই সব হয় না। শরীরের চাহিদা সীমাহীন হলেও পারিপার্শ্বিকতার কথা ভেবে অনেক সময় চেপে যেতে হয় কষ্টগুলো। তার ছোট বোন হাসিনা অতটা সংস্কারপন্থী নয়। বিধবা হলেও তার চাহিদা পূরণে বিকল্প পথ বের করেছে ঠিকই।

তার ছেলে-মেয়েরা তাদের মায়ের ব্যাপারটি জানলেও গলা উঁচু করবার সাহস নেই কারো। মৃত্যুর আগেই হাসিনার স্বামী সব কিছু তার নামে লিখে দিয়েছিলেন বলে, ছেলেমেয়েদের ওপর তাকে নির্ভরশীল হতে হবে না। সায়রা বেগম নিজের ক্ষেত্রে আশা করেছিলেন মা আর ভাইয়েরা মিলে কিছু একটা করবে। কিন্তু মশিউর রহমানের মৃত্যুর পর তার একাকীত্বের ব্যাপারটা যেন কারো চোখেই পড়ল না। এ নিয়ে এখনো মাঝে মাঝে একটা নীরব কষ্টে ভোগেন তিনি।

মেয়েটা একা একা আছে তাও প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেল। ত্রিশের পর কোনো বিধবা বা ডিভোর্সির কলঙ্ক-দুর্নাম কুড়ানো হয়ে গেলে নিঃস্বার্থ বন্ধু পাওয়া বা নতুন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারা অতি সৌভাগ্যের ব্যাপার বলেই মনে করে লোকজন। তবু কেমন করে যেন চার পাশে নানা বয়সের ছেলে বন্ধুদের একটা বৃত্ত ধরে রাখতে পেরেছে ছোট মেয়ে ইতি। প্রীতম বলে এক ছেলে তো এমন ভাবেই জড়িয়ে গিয়েছিল যে, বিয়ের কথাবার্তা সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। কী একটা ব্যাপার নিয়ে শেষে মেয়েটাই বেঁকে বসলো যে, আর সম্ভব হয়নি সেই বিয়েতে তার মত করানো।

বিষয়টা নিয়ে ভাবলে সায়রা বেগমের মনে হয় যে, বিয়েটা না হওয়াতে একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে। তিনি একা একা কী করে থাকতেন? শহরের বাড়ি ছেলে আর তার বউয়ের দখলে দিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হতেন। মন্টির সঙ্গে থাকাটা খুব একটা সুখকর বিষয় যে হতো না, আগের কিছু অভিজ্ঞতা দিয়েই বেশ বুঝতে পারেন। তা ছাড়া ছেলে ছেলের বউ-বাচ্চারা একই বিল্ডিঙে থাকলেও কিছুতেই যেন একাকীত্ব ঘোঁচে না তার। মেয়েটা আছে বলে তার ছেলে-মেয়ে দুটোর সঙ্গে বা মেয়েটার সঙ্গেও নানা চোটপাট দেখিয়ে বেশ স্বস্তি বোধ করেন।

মনে হয় বেঁচে আছেন। টিকে আছে প্রায় বিলীন সাম্রাজ্যটাও। কিন্তু ইদানীং মেয়ের হাব ভাবও তেমন সুবিধের ঠেকছে না। চলনে পোশাকেও অনেকটা পরিবর্তন ফুটে উঠছে। পাছে না মেয়ে কখনো বিদ্রোহ করে বসে তা নিয়ে স্বস্তিতে থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরে ডিভোর্সি আর দুটো ছেলেমেয়ে আছে যেনে কোন আহাম্মক তাকে ভালবাসতে বা বিয়ে করতে এগিয়ে আসবে সে ভাবনাটাই খানিকটা স্বস্তি দেয় মনে।

তবু মাঝে মধ্যে হঠাৎ করেই পাশের রুম থেকে ভেসে আসা ফোনালাপের টুকরো টুকরো শব্দ জোড়া দিয়ে বুঝতে পারেন ইতির জীবনে নতুন করে কারো আবির্ভাবের ইঙ্গিত। মেয়ে ভীতু না হলে বা মায়ের অবাধ্য হবে না, মাকে কষ্ট দেবে না টাইপের সস্তা মানসিকতার না হলে মায়ের সম্মতিতে তার ভাল কিছু একটা হবে সে দুরাশায় পচে মরতো না। একবার লোকটা তাকে খালা-মনি খালা-মনি করে বেশ একটা খাতির জমাতেও চেষ্টা করেছিল। বলেছিল আগের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। মেয়ে আছে চারটি।

কথা শুনে মোটেও পাত্তা দেননি তিনি। আর কেনই বা এসব উটকো সম্পর্ককে পাত্তা দেবেন? তার বয়স যখন আটত্রিশ সে সময় বিধবা হয়েছেন। সেই থেকে দিনে-রাতে পুড়ে পুড়ে যেভাবে নিঃস্ব হয়েছেন তারই গর্ভজাত কন্যা কোন যুক্তিতেই বা অতটা সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে যাবে! তা কিছুতেই তিনি হতে দেবেন না। সেও যন্ত্রণার লাথি খেয়ে জীবনের কোনো একটি কোণায় পড়ে থাকুক। বুঝুক নিঃস্বতা আর নৈঃসঙ্গ্যের সুচ কতটা গভীরে গিয়ে নখ দাবায়! অবশ্য এও ভাবনায় আসে যে, মা হয়ে অতটা নিষ্ঠুর হওয়া ঠিক হয়তো নয়।

কিন্তু তার আরেক মন বলে যে, তিনি তো কেবল জননীই নন, নারীও তো! ছেলে-মেয়েরা কি মায়ের নৈঃসঙ্গ্য টের পায় না, চোখে কি দেখে না তাদের জননী কতটা পোড় খেয়েও বেঁচে আছে কেবল তাদের দিকে চেয়ে? সে-ই ভাল, যারা দেখেও দেখে না, কেন তিনি তাদের সুখে কাঁটা হবেন না? হঠাৎ টিকটিকির ডাকের সঙ্গে সঙ্গে উৎসের দিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে দেয়ালের ঘড়িটার দিকে চোখ পড়ে সায়রা বেগমের। সন্ধে ছটা পঁচিশ। ছেলে পক্ষ ইতির বিয়ের কথাবার্তা পাকা করতে আসবে সাতটার দিকে। তার ভাই-বোনেরাও চলে আসবে ততক্ষণে। সায়রা বেগম উঠে খানিকটা দূর থেকে ইতির ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখলেন সন্তর্পণে।

মেয়েটার চেহারা যেন দপদপ করছে খুশিতে। আর সে দৃশ্য দেখে যেন তার নিজেরই শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হয়ে আসে। বুকের মাঝামাঝি আর কণ্ঠনালীর কোথাও একটা ব্যথা ব্যথা বোধ হতে থাকে। বাঁ হাতে আলতো করে বুকের মাঝামাঝি হাত বুলাতে বুলাতে বিছানায় পড়ে থাকা সেলফোনটা তুলে নিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটি নাম্বারে রিং দিলেন। কারো সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর বললেন, হ্যালো, আপনারা কি বেরিয়ে পড়েছেন? কিছু একটা শুনে তিনি আবার বললেন, আপনাদের আজ আসতে হবে না।

আমি স্যরি, একটা বড় রকমের অসুবিধা হয়ে গেছে! ফোনের ও প্রান্তের কারো কথার উত্তরেই হয়তো সায়রা বেগম আবার বলে ওঠেন, না না! আমরা পরে কোনো একদিন তারিখটা জানিয়ে দেবো। তা ছাড়া মেয়ের মামারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি। সে কথার সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো কথা শেষ হয় সায়রা বেগমের। খানিকটা প্রসন্ন চিত্তে সেল ফোনটা বিছানার দিকে ছুঁড়ে ফেলে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকান। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে ধুলোর পরতে ফ্যাকাসে হয়ে থাকা গাছের পাতা আর ডালপালা।

সেই সঙ্গে মনে হয় তার বুকের ওপর চেপে বসে থাকা কোনো পাহাড় যেন হঠাৎ করেই নেমে গেল দীর্ঘদিন পর। শরীরটাও যেন বেশ হালকা আর ঝরঝরে হয়ে উঠল। যে অনুভূতিটির সঙ্গে দীর্ঘকাল পরিচয় না থাকার কারণে প্রায় ভুলে যেতে বসেছিলেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।