আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেম্পলার এবং ফ্রীম্যাসন by হারুন ইয়াহিয়া (১ম কিস্তি)

যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না। সুরাঃ বনী ইসরাইল আয়াতঃ ১৫

প্রখ্যাত তুর্কি লেখক হারুন ইয়াহিয়ার গবেষণাধর্মী লেখাগুলোর মধ্যে থেকে অনুবাদ করার ইচ্ছা থেকে এই পোস্টের অবতারণা।

সম্মানিত পাঠকদের কাছ থেকে feedback এর আশা রইল। সুচনা নাইট টেম্পলার অথবা শুধু টেম্পলার, একটি গুপ্ত সংগঠন যার শিকড় প্রোথিত আছে মধ্যযুগে এবং সময়ের আবর্তনে এর কর্মকাণ্ড ও সমর্থক পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথম ধর্মযুদ্ধের পরপর এর আবির্ভাব ঘটে যা শীঘ্রই বিস্তৃত রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করে এবং মধ্যযুগের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে টেম্পলারদের কার্যকলাপ তাদেরকে ধর্মভীরু হিসাবে প্রতীয়মান করত। তাদের অর্জিত খ্যাতি ও প্রতিপত্তির বলে সময়ের আবর্তনে তারা এক অন্ধকারাছন্ন সংগঠনে পরিনিত হয় যা নৈতিকতা ও ধর্মীয় আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে তখনকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পারিক ঘৃণা ও ভয় ছড়িয়ে দিতে থাকে।

১৩০৭ সালে শুরু হওয়া কোর্ট অব টেম্পলারের বিবরণী এবং সেই সময়কার ঐতিহাসিক দলিল তাদের অন্ধকারদিক অকপটে প্রমাণ করে। এইসব বেঁচে যাওয়া দলিল এবং এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিকদের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, টেম্পলারদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার অল্প কিছু দিনের মধ্যে তাদের মূল উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে তারা বিকৃত ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণা অনুসরণ শুরু করে এবং খ্রিস্টান ধর্মমত কে পিছনে ফেলে আসে। সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জনের জন্য যেকোনো পথকে টেম্পলাররা বৈধ হিসেবে বিবেচনা করত এবং গুপ্তভাবে তারা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন করত যা তাদের এইসব অন্ধকারাচ্ছন্ন শিক্ষাসমূহের প্রতিফলন ছিল। পার্থিব লক্ষ্যপূরণ ও মুনাফার আশায় যারা ধর্মীয় শিক্ষাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে শয়তানের কাছে সমর্পণ করেছে তাদের সম্বন্ধে পবিত্র কুরআনের সুরা মরিয়মের ৮১ থেকে ৮৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে এরা আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে অন্যদের উপাস্য বানায় যাতে এরা তাদের ক্ষমতা ও শক্তির উৎস হতে পারে, কিন্তু না; (কেয়ামতের দিন বরং) এরা তাদের এবাদতের কথা (সম্পূর্ণ) অস্বীকার করবে, এরা তখন তাদের বিপক্ষে হয়ে যাবে। (হে নবী) তুমি কি লক্ষ্য করনি, আমি (কিভাবে) কাফেরদের উপর শয়তানদের ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, তারা (আল্লাহ্‌ তায়ালার বিরুদ্ধে) তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে, অতএব, তুমি এদের(শাস্তির) ব্যাপারে কোন রকম তাড়াহুড়ো করো না; আমি তো এদের (চূড়ান্ত ধ্বংসের) দিনটিই গণনা করে যাচ্ছি।

বিশেষত শুরুর দিকে পোপদের প্রতিষ্ঠান কতৃক গৃহীত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বলে টেম্পলাররা তাদের কার্যকলাপ দীর্ঘকাল ধরে চালিয়ে যাচ্ছিল। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা তাদের যেসকল বিকৃত কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল তা অবশেষে উন্মোচিত হয় এবং ভ্যাটিকান দীর্ঘমেয়াদী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৩০৫ সালে ফ্রান্সের রাজা চতুর্থ ফিলিপের সহায়তায় পোপ পঞ্চম ক্লেমান্ট টেম্পলারদের নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। টেম্পলারদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ বিচারের ফলে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তা তাদের জন্য এক আকস্মিক প্রতিকূলতার কারণ হয়ে দাড়ায়। যাইহোক এই ঘটনা টেম্পলারদের আরও গুপ্ত ও আরও সংগঠিত হওয়ার শিক্ষা দেয় যা বর্তমানের টেম্পলার-মেসনিক গোপনীয়তার ভিত গড়ে দেয়।

চার্চের প্রতিনিধিত্বকারী প্রত্যেকটি বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ যা টেম্পলারদের বন্দিত্ব ও লাঞ্ছনার কারণ হয়েছে সেগুলোর প্রতি তাদের মনে তীব্র ঘৃণার জন্ম নেয় এবং সেগুলো ধ্বংসের জন্য তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপরীতে তাদের মধ্যে যে ঘৃণা ও শত্রুতার জন্ম নেয় সেটাই তাদের চরম লক্ষ্য পৃথিবীব্যাপী অধর্মের রাজত্ব কায়েম করার প্রারম্ভ। টেম্পলাররা যারা তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ব্যতীত অন্য কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করত না; তারা এবং তাদের অনুসারীরা এই পৃথিবীর বুকে শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করা শুরু করল; যা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাদের আচার অনুষ্ঠানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে তারা বাফোমেট নামক এক শয়তানের উপাসনা করত এবং এই জাহানের একমাত্র মালিক আল্লাহ্‌কে অস্বীকার করত। এই সমস্ত লোকেরা যারা শয়তানকে উপাস্য হিসেবে ভক্তি করত তাদেরকে পবিত্র কুরআনে “শয়তানের দল” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সুরা আল মুজদালার ১৯-২০ নং আয়াতে এই জাতীয় লোকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে শয়তান এদের উপর পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করেছে, শয়তান এদের আল্লাহ্‌র স্মরণ সম্পূর্ণ ভুলিয়ে দিয়েছে; এরা হচ্ছে শয়তানের দল; (হে রাসুল) আপনি জেনে রাখুন, শয়তানের দলের ধ্বংস অনিবার্য। যারা আল্লাহ্‌ ও রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা অবশ্যই সেদিন চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। টেম্পলারদের সম্বন্ধে কোনো ধরনের অনুসন্ধানের আগে একটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে তা হল তাদের সংগঠনের অর্থনৈতিক সক্ষমতা। টেম্পলার অথবা নাইট টেম্পলার যে নামেই ডাকা হোক না কেন তাদেরকে ইতিহাসের সর্বপ্রথম ব্যাংকার হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু কিভাবে তারা এই অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করল? তাদের সম্পদের বিস্তৃতি কতদূর এবং ঠিক কি পদ্ধতিতে তারা এই সম্পদ অর্জন করেছে? এই অশুভ ভাগ্য এখন কাদের দখলে এবং তারা এটা কি কাজে ব্যবহার করছে? তাদের সংগঠন এবং তাদের বর্তমান উত্তরসূরি ম্যাসনদের সম্বন্ধে আমাদের প্রথম বই “দ্য নাইট টেম্পলার” এ আলোচনা করা হয়েছে।

বর্তমান বইয়ে সেই ইতিহাস পুনর্ব্যক্ত করা হবে এবং উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্‌। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে টেম্পলাররা যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে তা প্রকাশ করা হবে।  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।