আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারেক রহমান খালাস

সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার মামলার দায় থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস ও তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন রায় ঘোষণা করে এ আদেশ দেন।

তারেক রহমান প্রসঙ্গে আদেশে বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মামুনের অ্যাকাউন্ট থেকে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ৫০ হাজার ডলার উত্তোলন করে খরচ করেছেন। ওই টাকা খরচ করার কথা তারেক রহমান অস্বীকার করেননি। ২০০৭ সালে তারেক রহমান দুদকের দাখিল করা হিসাব বিবরণীতে তা উল্লেখ করেছেন।

বিধায় তারেকের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হলো। এই আসামির বিরুদ্ধে এর আগে জারিকৃত সব পরোয়ানা রিকল করা হোক।

মামুন প্রসঙ্গে বিচারক তার আদেশে উল্লেখ করেন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে মামুন সাড়ে সাত লাখ ডলার গ্রহণ করেন। অবৈধ পন্থায় কাজ পাইয়ে দিয়ে তিনি এ টাকা গ্রহণ করেছেন। এই টাকা নেওয়ার কোনো অধিকার মামুনের নেই।

কারণ মামুনের কোনো কনস্ট্রাকশন ফার্ম নেই। ওই টাকা অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দেশে গ্রহণ করলে বিভিন্ন ঝামেলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিদেশ গিয়ে ওই টাকা গ্রহণ করা হয়। যা মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড ও চলি্লশ কোটি টাকা জরিমানা করা হলো।

আসামি মামুনের এর আগে এ মামলায় হাজতবাসকালীন ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৩এ(১) ধারার বিধান মতে সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে। আসামিকে দণ্ডভোগের জন্য দণ্ড পরোয়ানাসহ জেলহাজতে প্রেরণ করা হোক।

রায় ঘোষণার আগে গতকাল সকাল ৯টার দিকে আসামি মামুনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় মামুনের গায়ে অফ হোয়াইট সুতির শার্ট পরা ছিল। এদিকে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়াতেই অনুপস্থিত ছিলেন এই মামলার আরেক আসামি বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।

তারেক রহমান খালাস পাওয়ায় রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত কক্ষেই উল্লাস করতে থাকেন। এর পর তারা আনন্দ মিছিল করেন আদালতপাড়ায়। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর আপিলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আদালতের পরিবেশ : রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল আদালত এলাকায় সকাল থেকেই পুলিশ কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করে। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের অতিরিক্ত পুলিশ।

এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আদালত চত্বর ঘিরে রাখে। আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলও সীমিত করা হয়। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হয়। এ ছাড়াও ঢাকার জেলা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ ও মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ভবনগুলো বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ ভবনগুলোতে মোট ৪টি আর্চওয়ে এবং ১০টি মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।

পাশাপাশি পুরো এলাকাটিকে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গতকাল বিচারক মো. মোতাহার হোসেন আদালতের এজলাস কক্ষে এসে পৌঁছেন দুপুর ১২টার দিকে। এ সময় ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের এজলাস কক্ষটিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টায় বিচারক মো. মোতাহার হোসেন এজলাসে আসার পরে এই মামলার আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। এর পর রায় ঘোষণার শুরুতে বিএনপিপন্থি আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, 'যে রায় হবে তা-ই আমরা মেনে নেব।

এজলাস কক্ষে কোনো হৈচৈ করব না কেউ। ' এর পর রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। প্রথমে বিচারক গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের রায়টি ঘোষণা করেন। এর পর তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস পাওয়ার রায় ঘোষণা করেন। তখনই আদালত প্রাঙ্গণে শুরু হয় আনন্দ মিছিল।

এ সময় আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে দুদকের আইনজীবী আনিসুল হক ও মোশাররফ হোসেন কাজল বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা 'ধর ধর' বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা এজলাস কক্ষের দরজায় লাথি ও ধাক্কা দেন। গতকাল সকালে আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের আনাগোনা বেশ দেখা গেলেও রায় ঘোষণার পর অধিকাংশ আইনজীবীকে আর দেখা যায়নি। তবে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা দফায় দফায় আনন্দ মিছিল করেছে। এ সময তারা স্লোগান দেন, বাকশালিদের দিন শেষ, তারেক জিয়ার বাংলাদেশ।

দুদকের দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান।

বিচারকের দরজায় আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের লাথি

তারেক রহমানকে খালাসের রায় ঘোষণার পর আওয়ামী পন্থি আইনজীবীরা দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে দালাল আখ্যায়িত করে ধর ধর চিৎকার দেন। এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল পাশের একটি এজলাস কক্ষে ঢুকে পড়ে। পরে অন্য আইনজীবীরা ওই কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেন। সেখান থেকে বেলা ২টার পরে বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়।

এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং তাতে ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ। একটি হত্যা ও আরেকটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলা। বর্তমান সরকারের আমলে এ দুটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়। তাকে পলাতক দেখিয়েই ২১ আগস্ট-সংক্রান্ত দুটি মামলার বিচারকাজ চলছে।

এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক রহমান ও তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে। এ মামলায় গতকাল তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ঢাকা তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালত। বর্তমান সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় গত বছরের ২ অক্টোবর। ড্যান্ডি ডায়িংয়ের ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলাটি করে সোনালী ব্যাংক। এটা এখন সমন জারির প্রতিবেদন দাখিলের অপেক্ষায় আছে।

গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতারের পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব মামলার কার্যক্রম স্থগিত আছে। এগুলোর মধ্যে আটটি চাঁদাবাজির মামলা। ২০০৭ সালে বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে গুলশান, কাফরুল, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানায় মামলাগুলো করেন। এ ছাড়া কাফরুল থানার পুলিশ বাদী হয়ে জরুরি ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাফরুল থানার মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানও আসামি। একই বছর ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আরেকটি মামলা করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। পরের বছরের ৪ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর আয়কর ফাঁকির অভিযোগে একটি মামলা করে। তারেকের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ ও তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ জানান, এই মামলাগুলোর মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দুই মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও ড্যান্ডি ডায়িংয়ের ঋণখেলাপির মামলা চারটি বর্তমানে সচল আছে।

২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করেন।

এর পর ২০১১ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে দুদক। অভিযোগপত্রে বলা হয়, টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় একটি ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কার্যাদেশ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে "নির্মাণ কনস্ট্রাকশন লি." কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে তারা দুজন মিলে গ্রহণ করে ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরের ৬৫, চুলিয়া স্ট্রিটের ওভারসিজ চাইনিজ ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেডে (ওসিবিসি) পাচার করেছেন। এদিকে অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেকসুর খালাস পাওয়ায় চট্টগ্রাম, বরিশাল, নাটোর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, চাঁদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, মাদারীপুর, ফেনী, শ্রীপুর (গাজীপুর), ঝালকাঠি, নওগাঁ, নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, বাগেরহাট, সাঁথিয়া (পাবনা) ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল, দোয়া ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.