আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ, ভোগান্তি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মুক্তি দাবিতে ২৪ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে গতকাল সারা দেশ ছিল অচল। দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল না করায় দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। দেশের বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা। মাইক্রোবাস, সিএনজি, লেগুনা ও টেঙ্কি্যাব জাতীয় গাড়িতে দূরপাল্লার যাত্রীদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হয়েছে। এক হাতে ব্যাগ, আরেক হাতে বাচ্চা বা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের হাত ধরে ছুটে চলা- এমন অসংখ্য দৃশ্যের দেখা মিলেছে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে।

গতকাল সকাল ৬টায় শুরু হওয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ২৪ ঘণ্টার এ ধর্মঘট শেষ হবে আজ সকাল ৬টায়। আগামী রবিবারের মধ্যে শিমুল বিশ্বাসকে মুক্তির আলটিমেটাম দিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল বলেছেন, অন্যথায় আগামী সোমবার থেকে টানা পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হবে।

গতকাল সকাল ৬টায় ধর্মঘট শুরু হলে মহাসড়কগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় সকাল ৬টার আগেই। কোথাও কোথাও যান চলাচলের চেষ্টা হলে রাস্তা অবরোধ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

অধিকাংশ জেলা শহরে সিটি সার্ভিসও চলাচল করেনি।

রাজধানীতে সিটি সার্ভিস চললেও তা সংখ্যায় ছিল কম। এতে পরীক্ষার্থীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যানবাহনের জন্য হাজার হাজার যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার ওপর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটো বা অন্য যানবাহনে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে।

বিশেষ করে গাবতলী টার্মিনালের কাছে আমিনবাজার ব্রিজ অবরোধ করে রাখায় কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গের কিছু এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। হাজার হাজার যাত্রীকে এদিন হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা যায়।

ধর্মঘটে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাউন্টারে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়।

বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে টার্মিনালের ভেতরে রাখা হয়। হানিফ পরিবহনের শ্যামলী কাউন্টারের টিকিট মাস্টার কবির জানান, তারা আজ (বৃহস্পতিবার) দিন ও রাতের কোনো টিকিট বিক্রি করছেন না। শুক্রবারের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। কল্যাণপুরে সোহাগ পরিবহনের অভ্যর্থনাকক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ফাহমিদা জানান, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গসহ কোনো সড়কপথে তাদের দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

গাজীপুর : গাজীপুরে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে ফেডারেশনের আওতাভুক্ত দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। তবে স্থানীয় রুটে কিছু বাস ও বিআরটিসির বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।

বগুড়া : বগুড়া থেকে কোনো দূরপাল্লার যানবাহন ও টেম্পো, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করেনি। চলাচল না করায় দূরের যাত্রীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। ধর্মঘট চলাকালে বগুড়া শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চারমাথা, ঠনঠনিয়াসহ জেলার ট্রাক ও বাস টার্মিনাল থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নেন।

সিলেট : সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের দিন সকালে সিলেটে অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এর মধ্যে সংবাদপত্রবাহী একটি মাইক্রোবাসও রয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর চণ্ডিপুল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যরা।

সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, শ্রমিকরা কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাস ভাঙচুর করেছে।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চারজন ভাঙচুরকারীকে আটক করেছে।

ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। এ ছাড়া আঞ্চলিক রুটেও বাস চলাচল করেনি। অনেক স্থানে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যদের বাধার কারণে সিএনজি অটোরিকশা চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গণপরিবহন চলাচল করতে না পারায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

রাজশাহী : ২৪ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে রাজশাহী অচল হয়ে পড়ে। রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা রুটের কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে কাভার্ডভ্যান, ট্রাক ও ট্যাংক লরিসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় রাজশাহী রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। টিকিট না পাওয়ায় অনেকে ট্রেনের মধ্যে দাঁড়িয়ে এবং ছাদের উপর উঠেই রওনা দিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।

যারা তা পারেননি তারা বাড়ি ফিরে গেছেন।

টাঙ্গাইল : পরিবহন ধর্মঘটের কারণে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার কোনো বাস ও ট্রাক ছেড়ে যায়নি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে হাতেগোনা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান চলাচল করছে। তবে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ধর্মঘটের ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

বাস চলাচল না করায় সিএনজি ও অটোরিকশায় ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি।

কুড়িগ্রাম : পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীসাধারণের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সকাল থেকে কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে কোনো দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া ট্রাক, ট্যাংক-লরি এমনকি মাইক্রোবাসও ছিল বন্ধ। অপরদিকে ধর্মঘটের কারণে সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।

ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হাজারো যাত্রী।

দিনাজপুর : দিনাজপুরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। অনেক দূরের যাত্রীরা বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখেন গাড়ি বন্ধ। ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল করেনি।

পাবনা : ধর্মঘটের কারণে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লা রুটের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান চলাচল করছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হলেও সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে অন্যান্য দিনের মতোই। এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা। বাস চলাচল না করায় সিএনজি-অটোরিকশাচালকরা ভাড়া আদায় করছেন বেশি।

এদিকে শিমুল বিশ্বাসের মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পাবনা জেলা ট্রাক, ট্যাংক-লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বরিশাল : ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হলেও অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহীসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করছে। নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ার পাড় এলাকায় বরিশাল বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ১ নং শাখার নেতা-কর্মীরা বেলা ১১টা থেকে চলাচলকারী সব পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি আটকে দেন। সড়কের দুই পাশে কয়েকশ যানবাহন সারিতে দাঁড়িয়ে থাকায় অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

বরিশাল বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ১ নং শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মো. নাসিরউদ্দিন জানান, 'যার যার দল তার তার, সড়ক পরিবহন শ্রমিক একাকার' স্লোগানে ধর্মঘট পালন করছেন। ধর্মঘটে যাত্রীবাহী দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের বাস বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হলেও বরিশালে এগুলো চলছে। যাত্রীবাহী বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠন তাদের আওতাধীন নয়। কিন্তু তারাও ধর্মঘটে থাকার সম্মতি জানিয়েছিল। বাস চলাচল অব্যাহত থাকার বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে।

তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নাসিরউদ্দিন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।