আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ণচোরা

১. মাছ আমিষ, ফরমালিন বিষ। ফরমালিনের স্বচ্ছ প্রলেপ মাছকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই ফরমালিন, মাছ বিক্রেতার জন্য আশীর্বাদ, লক্ষ্মী-নারায়ণ। অন্য কথায় 'নগদ নারায়ণ'। যদিও তা অনৈতিক।

কিন্তু তা ভোক্তার জন্য মহাযম- মরণ। বিক্রেতার জন্য হিতকর; ভোক্তার জন্য হানিকর। ফরমালিন মাছ ভোক্তার জন্য বিষ। ভোক্তা পারে তো ফরমালিনের জাত নিপাত করে। কারণ ফরমালিন ওই আমিষের পচন রোধ করে বটে; তবে ভোক্তার জঠর-যকৃত পচায়।

ফরমালিন তার কাছে প্রাণ সঞ্চারক নয়; প্রাণ সংহারক।

২. বাস্তবতার নিরিখে 'পরি' নকল। 'কল্পনা'ও নকল। তবে 'পরিকল্পনা' আসল। প্রণয়নে নয়; বাস্তবায়নে।

অবাস্তব পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পায় না। কল্পনা কল্পতরুর ফল। এটা মানস রচনা; জাগ্রত স্বপ্ন। অনুমান। পরিকল্পনা সুগ্রথিত চিন্তন।

সব উদ্ভাবনের সম্ভাবনাময় বীজ। পরিকল্পনার 'পরি' ডানা কাটা পরি। তাই উড়ে যায় না। 'পরি' উড়ে গেলে যা পড়ে থাকে তার নাম 'কল্পনা'। কল্পনা স্বপ্নের সহোদর।

এ স্বপ্ন জেগে দেখতে হয় বলে একে কিন্তু 'দিবাস্বপ্ন' বলা যায় না। নয় স্বপ্নচারিতা, স্বপ্নবিলাস বা অলিক। ঘুমালে একে দেখা যায় না। বরং এ স্বপ্ন ঘুম কেড়ে নেয়। এর সফল রূপায়ণের আগে ঘুমাবার জো নেই।

কল্পনার রঙে আলপনা এঁকে অপরূপকে রূপ দিতে হয়। স্বপ্নের সঙ্গে কল্পনার সখ্য সুদৃঢ়। তারা উভয়েই একই খেয়ার অলৌকিক অভিযাত্রী। আত্দার আত্দীয়। পরম সুহৃদ।

কল্পনা সব আবিষ্কারের, সব উদ্ভাবনের মূলমন্ত্র। যেখানে কল্পনা রহিত, নব-আবিষ্কার সেখানে স্থবির। ওড়ার কল্পনা মানুষকে বিমান উদ্ভাবনে ব্রতী করেছে। কল্পনাবিলাসী নিন্দিত; কিন্তু পরিকল্পক নন্দিত। তেমনি স্বপ্নদ্রষ্টা বরণীয়, স্বপ্ন-বিলাসী বর্জনীয়।

বিলাসের সঙ্গে হয় আয়েশের অনুগমন আর বাস্তবায়নের সঙ্গে নিরলস প্রচেষ্টার। বিলাস অকর্মণ্যের সহচর, সহযাত্রী। স্বপ্নচারিতা অর্থহীন। স্বপ্নকে কর্মের বর্মে সুরক্ষিত রাখতে হয়। শ্রমের ঘামের রঙে একে রূপায়িত করতে হয়।

সাহসের চাকায় সচল রাখতে হয়। সাধনার ঐকান্তিকতায় সাধতে হয়। হৃদয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে বাঁধতে হয়, পরম সখার মতো। কল্পনার উৎস থেকেই ঘটে সৃজনশীলতার অবাধ উৎসারণ। 'পরি' এবং 'কল্পনা' এ দুয়ে মিলে যখন 'পরিকল্পনা' নামে যুগলবন্দী হয় তখনই তারা বাস্তব হয় বাস্তবায়নান্তে।

তখন তারা আসল।

৩. কলম আসল। কলমদানিও আসল। তবে সব কলমধারীই আসল নয়। কোনো কোনো কলমধারী নকল।

কলম যদি জুলুম করে, তা কলমের দোষ নয়; কলমধারীর দোষ। কলম যদি বাজে কথা লিখে তা কলমবাজের দোষ, কলমের নয়। কলম যদি সত্যতে মিথ্যার চাতুর্য্যে ঢেকে সত্য বলে চালিয়ে দিতে চায়- তা কলমবাজের মতলববাজি। তার কাছে 'মতলব' আর 'কলম' সমার্থক। 'কলম' ও 'মতলব'-কারও আ-কার, ই-কার নেই।

সেই কলমবাজ নকল। কারণ সে মতলববাজ। কলমবাজ তখন কলম, মলম, মতলব, নকল এসব 'কার চিহ্নহীন' শব্দের মাঝে আর পার্থক্য দেখে না। সবই একাকার। কলম সব সময়ই আসল।

নকল যদি হয়-ই তবে তা কলম নয়, বরং কলমচি, কলমি, কলমবাজ, কলমজীবী।

৪. কলম যেমন আসল, মলম তেমন আসল না-ও হতে পারে। তবে মলম প্রস্তুতকারক নকুলে হলেই এদের ভাগ্যে 'নকল' তকমা জোটে। সমাজ দেহে 'নকল' যে গনগনে ক্ষত তৈরি করে- তা 'কলম' নামের 'মলম' দ্বারা উপশম করা যেত যদি কলমচি আসল হতো। কারণ, আসল ছল জানে না।

চাতুরি জানে না। আসল যা জানে, তা মানে, মাধুরী বিলায়, চাতুরি নয়। আসলে আদর থাকে। যত্নের রত্ন থাকে। স্বস্নেহ সোহাগ থাকে।

প্রীতির প্রসন্নতা থাকে। উদার উঞ্চতা থাকে। প্রাণের ছোঁয়া থাকে। ত্যাগের মহিমা থাকে। কিন্তু নকলে এগুলোর প্রকাশ থাকে বটে, তবে মর্মার্থ থাকে না।

অন্তর্গত অস্তিত্ব থাকে না। গভীর ভিত্তিমূল থাকে না। অবাধ উৎসারণ ঘটায় না। স্বতঃস্ফূর্ততা দেয় না। যা জানে, তা মানে না।

ত্যাগের মহিমার বদলে দেখে ভোগ-ভাগাড়ের হাতছানি। শুভ বোধ আটকে থাকে স্বার্থের শৈবালে। পরতে পরতে থাকে স্বার্থপরতা; স্বার্থত্যাগ নয়। প্রশাসক, বিচারক, নেতা কিংবা নির্বাহীর কলমের এক নকল খোঁচা পুত চরিত্রে লেপ্টে দিতে পারে অমোচনীয় কলঙ্কের কালি। এমন কালি, যে কালি বঙ্গোপসাগরের সমস্ত জল দিয়ে ধুয়েও মোছা যাবে না।

গঙ্গাজলে সিনান করেও সে কলঙ্কের মোচন হয় না। কলমের নকল খোঁচা নিষ্পাপ চরিত্রে এমন গভীর ক্ষত এঁকে দিতে পারে- যে ক্ষত সারা জীবনের সাধনায়ও শুকায় না। পৃথিবীর কোনো মলমই সেই কলমের খোঁচায় সৃষ্ট ক্ষতের যোগ্য আরোগ্য-প্রলেপ হয় না। তাই যারা কলম চোর, তাদের চেয়ে বেশি ঘৃণ্য তারা- যারা 'কলম দিয়ে' চুরি করে। 'কলম চোরের' শাস্তি যতটা হয়, 'কলম দিয়ে চুরি করা চোরদের' শাস্তি ততটা হয় না বলেই সমাজ দেহে এমন গনগনে ক্ষত।

তাই কলম অবলীলায় সাধুকে চোর আর চোরকে সাধুর সনদপত্র দেয়। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যের প্রত্যয়ন দেয়। আসলকে নকল আর নকলকে আসল বলে কলম বসিয়ে দেয়। অবশ্য কলমের অসীম ক্ষমতা এই যে, কালো কলম ও কালো কালিতেও 'সাদা' লেখা যায়। কলমের কালির নিজের কোনো রং নেই।

কলমীর মনের রংই কলমের নিব বেয়ে কাগজের বুকে ঝরে পড়ে। তাই সব লেখাই কলমীর মনোভঙ্গির প্রতিফলন- সে ভঙ্গি আসল হলে চিত্র আসল, সে ভঙ্গি নকল হলে প্রতিফলনও নকল। কলম লেখক নয়; লেখনী। কর্তা নয় করণ। কলম যে কালাম লিখে সে কালাম কমলা, নাকি মাকাল_ তার প্রভেদ করার জন্য চাই আসলের পরিচর্যা, সনিষ্ঠ অনুশীলন।

চাই আসলের সমাদর, আসলের লালন। আর নকলের নির্মোহ দমন।

৫. আয়াস পূজনীয়, আয়েশ বর্জনীয়। আয়াস সত্যের সপর্যা। আয়াস প্রয়াস বটে তবে তা আয়েশী প্রয়াস নয়।

এটা শ্রমলব্ধ, যত্নলব্ধ, কষ্টলব্ধ। সে ঘামের লোনা জলে প্রাণ পায়। আয়াস আর আয়েশের মধ্যে ধ্বনি সাজুয্য থাকলেও তাদের ব্যবধান যোজন যোজন। এ ধ্বনিগত সখ্যের কারণে আয়েশ মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারে। তাই সতর্কতা দরকার।

আয়েশ বিলাসী, আরামপ্রদ। আর আয়াস আরামকে হারাম করে। আয়েশি পথে থাকে অবলীলায় বিছানো ক্ষণস্থায়ী বাহারি ফুল। আর আয়াসীর পথ কাঁটায় আস্তীর্ণ। তাই এ পথে চলতে হলে রক্ত ঝরাতে হয়।

এ রক্তচিহ্ন ধরেই অনাগত প্রজন্ম পা বাড়ায় মহোত্তম অর্জনের মানসে। এ রক্ত-পদ-চিহ্ন তাদের পথিকৃৎ।

আয়াস আয়সের মতো। লৌহকঠিন। পাষাণ, নির্মম।

এই আয়স আয়াসীদের বর্ম। মধুকবির 'আয়সী আবৃত দেহ' সে ব্যঞ্জনাই দেয়। শ্রমের বর্ম আয়াসকে রক্ষা করে। নিদানে সুরক্ষা দেয়। আসল কষ্ট-ক্লিষ্ট বলেই বলা হয়, 'কষ্ট করিলে কেষ্ট মিলে'।

কেষ্ট যেমন কৃষ্ণ, তেমন কর্মফলও। কৃষ্ণকে পেতে হলে ভক্তের কষ্ট-সাধনা চাই। আবার অভিষ্ঠ ফল লাভের জন্যও দরকার কষ্টের। কর্মকুশল হাতের হাতিয়ার হাতুড়ে নয়। শক্ত হাতুড়ি।

এ হাতুড়ি পাথর ভাঙে। মজবুত হাত লোহা পেটায়। হাঁপর টানে। শিলা কাটে। লাঙল ঠেলে।

মুগুরের ঘায়ে কঠিন মাটির ঢেলা ভাঙে। জাল টানে। বৈঠা বায়। গুন টানে। পাল তোলে।

নোঙ্গর ফেলে। এ হাত 'কঠিনেরে ভালোবাসে'। তাই সে বঞ্চনার শিকার হলেও প্রবঞ্চনা জানে না। প্রতারণাকে প্রশ্রয় দেয় না। এ হাত শ্রমে-ঘামে, নিষ্ঠা-নৈতিকতায় মুখের গ্রাস জোগায়।

জীবিকা অর্জন করে। কৌশলের কূটচালে কিছু হাতিয়ে নেয় না। কর্মকুশলতা তার কাছে কোহিনূর। কষ্ট-ক্লেশের দহনে দগ্ধ হয়েই মানুষ কষ্টিপাথর হয়। কষ্টে কষ্টে কষ্টিপাথর হওয়া মানুষ আসল মানুষ।

নকলের প্রলোভনে ভ্রষ্ট হয় না, পথ হারায় না। তখন সে নীলকণ্ঠী, সব্যসাচী, অকুতোভয়। নকল তাকে করতে পারে নানাকাল বিপর্যয়, তাকে করতে পারে না পরাস্ত-পর্যুদস্ত। সে নকলের কাছে পরাভব মানে না। সোজা পথে চলে।

'রক্তমাখা চরণতলে পথের কাঁটা দলে' সে এগিয়ে যায়। তখন অন্ধ যাত্রীও তিমির রাত্রিতে পথ দেখে দীব্য দীপালোকে।

৬. সুকুমার বৃত্তি সমাদৃত। ভিক্ষাবৃত্তি ঘৃণিত। 'পরের দ্বারে ভিক্ষা করে যা পেয়েছিস ধন/সে তো ধন নয় রে, দান নয় রে, মানের বিসর্জন।

' তাই তো কবিগুরুর আক্ষেপ- 'মা কি তুই পরের দ্বারে পাঠাবি তোর ঘরের ছেলে/ তারা যে করে হেলা, মারে ঢেলা ভিক্ষাঝুলি দেখতে পেলে'। সুকুমার বৃত্তি তো শুধুই হৃদয়বৃত্তি, চিত্তবৃত্তি। কলা-চারুকলা হৃৎগত। হৃৎপিণ্ডগত নয়। হৃৎপিণ্ডের বৈকল্য সারানোর কাজ বদ্যির।

পিণ্ড নিয়ে সে-ই নাড়াচাড়া করে। আর হৃদয়ের বৈকল্য সারানোর কাজ করে শিল্পী। বদ্যির অস্ত্র ছুড়ি, কাঁচি। শিল্পীর অস্ত্র তুলি, কলম। শিল্পকলা তার মাধ্যম।

যে চিত্ত বিত্ত-বেসাতে বিভোর সে চিত্ত বিবেকের চিতায় ভস্ম হয়।

৭. শাসন ভীতিকর। সেবা প্রীতিকর। শাসন-শোষণের দোসর। সেবা কল্যাণের কানাই।

প্রগতির প্রসন্ন প্রসূণ। তাই সেবা ও শাসনে ভারসাম্য দরকার। কর্মে ও ভাষণে দরকার সাযুজ্য। সেবা ও শাসনের মাঝে যোজন-যোজন ফারাক। সেবার নামাবলি পরা কুশাসন নিযুত সমস্যার জন্ম দেয়।

শাসন ধন জয় করে। আর সেবা মন জয় করে। শাসনের আসন যতই মজবুত- তা আসলে বুদবুদ, জলবিম্ব। স্ফুলিঙ্গের মতো ক্ষণস্থায়ী। আর সেবার আসন পাতা থাকে অন্তরে।

শাসনের গদি টলমলে হয়। সেবার সিংহাসন অটল থাকে প্রাণের পাটাতনে। তাই এ সিংহাসনের ভিত মজবুত থাকে। বুদবুদের মতো হারিয়ে যায় না। যুগান্তর কিংবা কালান্তরে স্মৃতির মিনার হয়ে জেগে থাকে প্রাণে-প্রাণে।

তাই রাজনীতি শুধু 'রাজ' কারবার নীতি নয়। রাজত্ব করার কূট-কৌশল নয়। রাজনীতি মূলত সেবা করার প্রীতিময় নীতি। রাজনীতিও শিল্প। এ শিল্পের নাম সেবাশিল্প।

হ্যাঁ। তা সেবা-আশ্রম নয়। 'দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন' এর মূলমন্ত্র। ফন্দি-প্রবঞ্চনা এর সঙ্গে যায় না। শঠতা একে মানায় না।

কারণ হঠকারিতার মাধ্যমে মহৎ অর্জন হয় না। কৌশলের কানাগলি দিয়ে এ শিল্প হাঁটে না। কল্যাণের রাজপথ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে এ শিল্পের চর্চা করতে হয়। চোরাগলিতে গেলে তা চোরাবালিতে হারিয়ে যায়। তখন সে আর বলতে পারে না 'মোরা বুঝিব সত্য, পূজিব সত্য, খুঁজিব সত্যধন'।

তখন জনতা রুষ্ট হয়, ক্ষুব্ধ হয়। কংস বধের কানাই হয়। প্রতিবাদে-প্রতিরোধে একাট্টা হয়। প্রতারণার বিপরীতে তারা দাঁত ভাঙা জবাব দেয়- 'তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান। '

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে মস্তকই দেননি; মগজও দিয়েছে।

আর এ মগজময় মস্তককে স্থাপন করেছেন দু'বাহুর উপর। তাই তা তাৎপর্যবহ। বাহুবলের চেয়ে বুদ্ধিবলকে প্রাধান্য দিতে হয়। মুখ একটি, কান দুটি, হাত দুটি। যাতে আমরা যতটুকু বলি, তার অন্তত দ্বিগুণ শুনি।

দ্বিগুণ কাজ করি। কিন্তু আদতে আমরা করি তার উল্টোটা। এমন উল্টোরথে চলার প্রেক্ষাপটে সবই উলট-পালট। জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষের সংখ্যা কমছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, মূল্যবোধ কমছে।

শিক্ষিতের হার বাড়ছে, শিক্ষার মান কমছে। মৃদু কথন কমছে, অতিকথন বাড়ছে। শ্রদ্ধাবোধ কমছে, হুকুম-হুমকি-হুঙ্কার বাড়ছে। গলাগলি কমছে, গালাগালি বাড়ছে। মাথার চুল কমছে, চুলোচুলি বাড়ছে।

উপাসনালয় পাকা হচ্ছে, বিশ্বাস কাঁচা হচ্ছে। ভাইয়ের আদর কমছে, শ্যালকের আদর বাড়ছে। খালামণির সোহাগ বাড়ছে, ফুফুর সোহাগ কমছে। স্বজনপ্রীতি বাড়ছে, নীতিবোধ কমছে। কাণ্ডারি কমছে, কাণ্ডজ্ঞানহীন বাড়ছে।

গাছ কমছে, আগাছা বাড়ছে। সুখীর সখা আছে। দুঃখীর দোসর নেই। নেতা বাড়ছে, কমছে কর্মী। মমতা কমছে, মতভেদ বাড়ছে।

অযোগ্য মূল্য পাচ্ছে, যোগ্য সমাজচ্যুত হচ্ছে। ছাত্রের হাতে বই নেই; বারুদ আছে। কলম নেই, কিরিছ আছে। দুষ্ট পুষ্ট হচ্ছে; শিষ্ট ক্লিষ্ট হচ্ছে। রুষ্টের সংখ্যা বাড়ছে, তুষ্টের সংখ্যা কমছে।

কমছে আন্তরিকতা, বাড়ছে লৌকিকতা। কর্মীর হাত কমছে। হাতিয়ে নেওয়ার হাত বাড়ছে। রাজনীতিজীবীর সংখ্যা বাড়ছে, রাজনীতিবিদের সংখ্যা কমছে। 'কলম চোর' হয়তো কমেছে, তবে 'কলম দিয়ে চুরি'র প্রবণতা বেড়েছে।

সমাজের এমন হতচ্ছাড়া অবস্থায় একমাত্র সহায় কল্যাণমুখী উদ্যোগ। যার অন্য নাম সুশাসন বা সেবা। আর তা নিশ্চিত করতে পারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সত্য থেকে বিচ্যুত হলেই যত বিপত্তি। তখন আসল শূলে চড়ে; নকল জয়ধ্বনি পায়।

ফার্সি বয়ানটা তাই তাৎপর্যবহ : 'গোর্বা আমির, ছাগে উজির, মৌশে দর্বা মিকুনাদ/ ইছুনি আর্কানে দৌলত মুল্কে রা-বি রাকুনাদ'। সোজা কথায়-সারমেয়, মার্জার, মুষিক অধ্যুষিত সাম্রাজ্যের ধ্বংস অবধারিত।

আধুনিক বিশ্বে রাজনীতি নিরপেক্ষ কিচ্ছুটি নেই। রাজনীতিবিদদের চলার পথেই বিছানো থাকে জনগণের বহুলালিত স্বপ্ন। তাদের হাতেই ক্ষমতার দণ্ডের পাশাপাশি প্রগতির পতাকা তুলে দিয়ে জনগণ প্রার্থনা করে- 'তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।

' তাদের চাওয়াটাও তারা সমবেত কণ্ঠে উচ্চকিত করে- 'অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু/ চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু'। মেহনতি মানুষের ঘামে, শহীদের তাজা খুনে আর মায়ের বিলাপের অশ্রু ধারায় সিক্ত ও উর্বরা আমাদের সোনাফলা প্রিয় স্বদেশ। আরোপিত যে কোনো সংকটের রক্তপাত ঘটাবে। কুটিল সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি জটিল করবে। সমাধান দেবে না।

আমরা রাজনীতিবিদদের পথে পথে বিছানো আমাদের স্বপ্ন-সম্ভাবনার সফল রূপায়ন চাই। কিন্তু সে স্বপ্ন এতটাই স্পর্শকাতর, এতটাই নাজুক যে, অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ কিংবা সদম্ভ কোনো পদাঘাত একে চুরমার করে দিতে পারে অবলীলায়। গণমানুষের স্বপ্নের ওপর দিয়ে হাঁটতে হয় আলতো পায়ে, ভারসাম্য রেখে, মৃদুপদে। কারণ, জনগণের স্বপ্নভঙ্গের অপর নাম সর্বনাশ।

 

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।