রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৭শতাংশ।
এ সময়ে তৈরি পোশাক খাতের উভেন পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। আর নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“যতো বাধা বিপত্তিই আসুক না কেনো আমাদের রপ্তানি আয় কমবে না। কেননা, আমরা যে কম দামে পোশাক রপ্তানি করি পৃথিবীর অন্য কোন দেশ সে দামে বিক্রি করতে পারবে না।
“সে কারণে ক্রেতারা বাধ্য হয়েই আমাদের পোশাক কিনবে। ”
নতুন নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“জাপান, রাশিয়া, মালয়শিয়াসহ নতুন নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ায় রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
“এক্ষেত্রে সরকারেরও কৃতিত্ব আছে। সরকার আমেরিকা ও ইউরোপ ছাড়া নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে।
”
তিনি বলেন, “এ কথা ঠিক যে, রানা প্লাজা ও তাজরীনের ঘটনা আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। ক্রেতাদের কাছে নানা প্রশ্নের সম্মুখিত হতে হয় আমাদের। এরপরও সব কিছু উপেক্ষা করে ১৬-১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো বলে আমি মনে করি।
“আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা রাজনৈতিক অস্থিরতা। এটা না থাকলে আমাদের রপ্তানি আয় আরও বাড়তো।
“যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেনো, আমরা তাদের অনুরোধ করবো অর্থনীতিকে রাজনীতির বাইরে রাখুন। ”
পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“এখন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা আগের নেয়া অর্ডারের। জুলাই-অগাস্ট সময়ে যে সব অর্ডার নেয়া হয়েছিল সেগুলোর আয়ই এখন দেশে আসছে।
“সাম্প্রতিক সময়ে অর্ডার সত্যিই কমে গেছে। যার ফল আমরা কয়েক মাস পর দেখতে পাবো।
”
ইপিবি’র রপ্তানি আয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৯৭৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার আয় হয়েছে ।
গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮৩৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।
এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে। এই সময়ে এ খাত থেকে ৪০২ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় হয়েছে।
গত বছরের একই সময়ে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ৩৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩২১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
নিট পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। তবে উভেনে বেড়েছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমেছে।
অক্টোবর মাসে আয় হয়েছে ২১২ কোটি ডলার। গত বছরের একই মাসে আয় হয়েছিল ২০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এ হিসাবে চলতি অক্টোবরে গত বছরের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ।
অন্যন্য খাতের মধ্যে জুলাই-অক্টোবর সময়ে হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশ।
কাঁচা চামড়া রপ্তানি বেড়েছে ৫০ শতাংশ। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
তবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশ।
ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক মারা যান।
আহত হন অনেকে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানার পরিবেশের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনবে না বলে হুমকি দেয় বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
এর আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ায় তাজরিন কারখানায় ভয়াবহ আগুনে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর পরও একই ধরনের কথা উঠেছিল।
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই আশুলিয়া-গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে।
হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য রপ্তানি আয় কমে যাবে বলে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ একাধিবার সংবাদ সম্মেলন করে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
ফরাসউদ্দিন বলেন,“আমাদের পোশাক শিল্প মালিকরা সব সময় বলে রপ্তানি আয় কমে যাবে; কমে যাবে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে কখনই কমেনি। বরং প্রতি বছরই বাড়ছে। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।