আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোরাচালানের স্বর্গ শাহ আমানত

স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বাংলাদেশ বিমানসহ বিদেশ থেকে আসা প্রতিটি ফ্লাইটেই অবৈধভাবে স্বর্ণ আসছে। তিন মাসে আট দফা স্বর্ণ আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে চারবারই বিজি-০৪৮ ফ্লাইট থেকে স্বর্ণ আটক করেছেন কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। স্বর্ণের বার পাচারে সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর এবং দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কিছু অসাধু কর্মচারী। এর আগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ৫টি স্বর্ণের বারসহ শফিকুর রহমান নামের একজনকে আটক করে জিআরপি পুলিশ। তবে অভিযুক্ত একজনকে বদলি করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলেও চিহ্নিত কয়েকজন কর্মচারী রাজনৈতিক আশ্রয়ে বহাল তবিয়তেই কাজ চালিয়ে আসছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে অাঁতাত করে প্রতি চালানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ করে থাকে। এদের মধ্যে বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ম্যানেজারের পিএস মোমেন মকসুদ (বর্তমানে চোরাচালানের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বদলি), বিমানবন্দরের সিকিউরিটি নিজাম, সিভিল এভিয়েশনের সুপারভাইজার মেসকাতসহ ফটিকছড়ির ব্যবসায়ী আবু, ওসমান, আজিজ, সিহাব অন্যতম। বিমানবন্দরের দোতলায় আন্তর্জাতিক ছিনতাই প্রতিরোধ কেন্দ্রের পাশেই এসএম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি দোকান থাকায় কর্মচারী নিজাম ও মেসকাত অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। শাহনেওয়াজ মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি কারাগারে থাকলেও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং মামলা থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন তদবিরও চলছে। চোরাচালান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কিছু চিহ্নিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিহ্নিত রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে গোপন সখ্যতার কারণে তারা আইনকে পাত্তা না দিয়ে প্রতিনিয়ত এ কাজ করে আসছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান মণ্ডল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে সাড়ে চার কেজির ৪০টি স্বর্ণের বার আটক করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য দুই কোটি টাকা। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। এর আগেও প্রায় ৮টি চালান আটক করা হয়েছে। স্বর্ণ চালান রোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ ও কাস্টমসের যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল গঠন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পাচার কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করতে হবে। তবে বিজি-০৪৮ ফ্লাইটে বারবার স্বর্ণ চালান আটক হওয়ায় বিষয়টির সঙ্গে কারা জড়িত তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাহিদ নওশাদ মুকুল। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, শীর্ষ চোরাকারবারিরা আটক ব্যক্তিদের দ্রুত জামিনে বের করে নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে এবং চোরাকারবারিরাও রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার নূর ই আলম বলেন, স্বর্ণের বার পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ায় তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে মোমেন মকসুদকে। অন্যদেরও তদারকিতে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, শাহ আমানত বিমানবন্দরে তিন মাসে আট দফা স্বর্ণের বার আটক করা হয়। এর মধ্যে চারবারই বিজি-০৪৮ ফ্লাইট থেকে আটক করা হয়। গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় দুবাই থেকে আসা এ ফ্লাইট থেকে আটক করা হয় ১২৮টি স্বর্ণের বার। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ সময় চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত খায়রুল বশর নামে এক যাত্রীকেও আটক করা হয়। বুধবার দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-০৪৮ ফ্লাইটটি বিমানবন্দরে আসার পর কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে জামাল উদ্দিন নামে এক যাত্রীর ব্যাগের বেল্টে রাখা সাড়ে ৮ কেজি ওজনের প্রায় ৮৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিমানের বিজি-০৪৮ ফ্লাইটে দুবাই থেকে আসা নজরুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর লাগেজের পাইপ থেকে এক কেজি ওজনের ৯টি স্বর্ণের বার আটক করে। সর্বশেষ গতকাল দুবাই থেকে আসা বিমানের বিজি-০৪৮ ফ্লাইটের যাত্রীর লাগেজে তল্লাশি করে সাড়ে চার কেজি ওজনের ৪০টি স্বর্ণের বারের চালান আটক করা হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.