আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাড়ীর টান ও বিনি সূতার বাঁধনে পি.এইচ.ডি পোলা [এক বিরাট গপ্প]

গুরু সিরাজ সাঁই
৩ দিন পর সমাবর্তন….. অফিসের সামনে ছাত্রদের উপচে পড়া ভিড়,বকুল লাইনে দাঁড়িয়ে আছে গাউন সংগ্রহের নিমিত্তে. আশেপাশে তাকাচ্ছে আর ভিমড়ি খাচ্ছে,ইতিমধ্যেই যারা সংগ্রহ করেছে তারা হাফ-প্যান্ট ও গেঞ্জির উপর গাউন পড়ে ফটুক তুলছে.ছেলেরা থ্রি-কোয়াট্টার পড়া আর মেয়েরা এক্সাট হাফ প্যান্ট. গরমের দিনে যা পড়ে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে এরা সেটাই পড়ে,মেয়েদের শরীরে গরম মনে হয় একটু বেশি লাগে তাই তারা হাফ প্যান্ট পড়ে আর যেসব মেয়ের গরম খুব বেশি তারা হাফের হাফ তথা১/৪ প্যান্ট পড়ে. সমাবর্তন বলে যে কোট-প্যান্ট-টাই পড়ে মাঞ্জা মেরে ফুটু তুলবে এদের অধিকাংশের মধ্যে সেরকম প্রবণতা নেই,এদের পায়ে থাকে কেডস্! অধিকাংশই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলরের কাছ থেকে সনদ নেওয়ার সময়ও এরকমই করে,হাফ-প্যান্ট T-shirt এর উপর দিয়েই গাউন পড়ে হলরুমে ঢুকে পড়ে. চাইনিজদের একটা জিনিস বকুলের খুব ভাল লাগে, ওরা লাইন ব্রেক করে না; ছুডুবেলা থেকেই নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে বড় হয়,কোথাও লোকের জটলা বাঁধলেই অটোমেটিক্যালি সারিবদ্ধ হয়ে যায়. বকুল মজা করার জন্য ইচ্ছা করেই মাঝেসাঝে ডাইনিং হলে খাওয়া শেষে প্লেট জমা দেওয়ার স্হানে লাইনে না দাঁড়িয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঢুকে বাটি,চপস্টিক জমা দিত.কোন কোন চৈনিক অবাক হয়ে ওর মুখপানে তাকিয়ে থাকতো কিন্তু কেউ কিছু বলতো নাহ!এদের ডাইনিং হলের নিয়ম ক্যাফেটেরিয়ার মত,নগদে কিনে নিজেকেই খাবার নিয়ে আসতে হয়. আজ গাউন সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে বকুলের মনে পড়ছে ব্যাচেলর ইউনির কথা,সেখানে এখনও কনভোকেশন হয় নি অথচ এই বৈদেশের ইউনিতে বছর বছরহয়,একটা ছেলে ইউনিতে এডমিশন নেওয়ার সময়ই জানে কত সালের কোন মাসে সমাবর্তন হবে.শিক্ষকরাই ইউনির প্রসিডেন্ট/চ্যান্সেলর. ব্যাচেলর ছাত্রদের কনভোকেশন হয় জুলাই মাসে আর এম.এস.সি ছাত্রদের ক্ষেত্রে যাদের ২ বছর মেয়াদী তাদের জুলাইয়ে অন্যদিকে যাদের ২বছর ৯ মাস মেয়াদী তাদের এপ্রিলে. পি.এইচ.ডি ছাত্রদের ডিফেন্সের উপর ভিত্তি করে কেউ এপ্রিলে কেউ জুলাইয়ে.চীনে পিএইচডির ক্ষেত্রে ফরেন ছাত্রদের বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ৪ বছর মেয়াদী স্কলারশীপ দেওয়া হয়,আর এম.এস.সি হলে ৩ বছরঅবশ্য কলা/বাণিজ্য হলে কোন কোন বিভাগের ক্ষেত্রে ২ বছর. বকুল এইমাত্র গাউন হাতে পেয়েছে,তার যে কি খুশি লাগছে [পুরাই উড়াধুরা নাচের ইমো হবে], এলিফ্যান্ট রোডের বাটা মোড় সংলগ্ন westecs থেকে কেনা কোট-প্যান্ট-টাই পড়েছে, এটা কেনা নিয়ে সে এক বিরাট কাহিনী :p তখন বসুন্ধরা শপিং মলের অপজিটে OTOBI শোরুম সংলগ্ন বিল্ডিংয়ে তার অফিস ছিল, হঠাৎ করে দুপুরে বস্ মিটিং ডেকেছে. কি ব্যাপার,ঘটনা কি? ঘটনা হইলো গিয়া ডেনমার্ক ও তুরস্ক থেকে দুজন আসতেছে আগামী পরশু প্রকল্প উদ্ধোধন করতে. বসের আদেশ সবাইকে যেন ফিটফাট দেখি [মাথায় বাড়ির ইমো হবে] কিভাবে ফিটফাট হওয়া যায়,এই চিন্তায় বকুলের মাথা ধরছে…যে করেই হোক ফিটফাট তাকে হতেই হবে :p নইলে চাকরি থাকবে নাহ এমন সময় বন্ধু গোলাপের ফোন;ওকে বিষয়টা বলতেই সে জানাল,দোস্ত আমিতো CATS EYE তে নিজে কাপড় চয়েস করে নগদ পয়সা পরিশোধ করে কোট-প্যান্ট বানাইতে দিছি,ওরা কইছে ১ মাস পরে দিবে.তোর কেসটা তো ভিন্ন সেদিনই মাসের মাইনে ১০ হাজার হাতে পেয়েছে,সন্ধ্যায় দু’বন্ধু মিলে কয়েক জায়গায় ঘুরে অবশেষে westecs থেকে রেডিমেড কোট-প্যান্ট কিনল,এজন্য ৯,৫০০ টাকা চলে গেলো. পুরোপুরি ফিট না হলেও একেবারে খারাপ নয়.এবার টাই কেনার পালা,কতক্ষণ ট্রায়াল দিয়ে একটা পছন্দ করলো;দাম বেশি নাহ মাত্র ৬৫০! পরদিন লাঞ্চের ফাঁকে বসুন্ধরাত গেল,বাটার শোরুম থন বেল্ট নিল ১২০০ টাকায় আর Apex থেকে shoe. দুদিন পর জুতার ঔজ্যলতা নষ্ট হয় কিনা বকুলের এমন প্রশ্নে সেলস্ ম্যান কয়,স্যার শাইন করার জন্য আছে এক নম্বর স্প্রে.আহ বাঁচাইলেন,জুতার ২৬০০ পে করলে লগে শাইনার ফ্রি তাইতো. এএএএএএ শখ কতো,জিনিস তো মাগনা আহে বকুল শাইনার না কিনেই বের হয়ে আসলো কেননা হাতে গত কয়েকমাসে যা জমছিল সব শ্যাস.১০ হাজার টাকার বেতনের চাকরিতে ফিটফাট হতে গিয়ে পকেটে লাল বাত্তি জ্বলছে,পেটে ভাত না থাকলেও গেটআপ জোশ হওয়া চাই ই চাই কনভোকেশনের খবরটা এখনও বাবা-মাকে জানায়নি,বকুল ফোন দেওয়ার জন্য VOIP Rynga ওপেন করেও কল বাটনে চাপ দিতে গিয়ে দেয় না,ক্রস করে দেয়.কারো কান্নার শব্দ শুনতে তার ভাল লাগে নাহ,মনটা কেমন বিষিয়ে উঠে;পুরনো সব স্মৃতি আষ্টে ধরে.সে চায় সব সময় হাসিখুশি থাকতে,দুঃখী মানুষদের সঙ্গ থেকে পালাতে.জীবনের নানা সময়ে নানান দিক থেকে আঘাত পাওয়া দুঃখী মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা,তারা ছোট একটা কারনে আঘাত পেলে পূবের সব দুঃখ একসাথে হিয়ায় ফলা বিধাতে থাকে,নূতন করে পাওয়া সামান্য আঘাতেই কেমন যেন হয়ে যায়. একটা ছাত্রের কাছে সমাবর্তন অতি আকাঙ্খিত, জীবনের আনন্দময় ঘটনাগুলোর একটি. গাউন হাতে পাওয়ার পর ছাত্রদের ছবি তোলার পালা,বকুলও তুলছে ফ্রেন্ডদের লগে.চৈনিকরা ভি চিহ্ন সহ ছবি তুলতে খুব পছন করে,গ্রুপ ছবির ক্ষত্রে তো বটেই এমনকি সিঙ্গেল হলেও. কইন্যারা সাধারনত ছবি তোলার সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ডানে/বামে ইট্টু হলেও হেলবেই,সামনে/পেছনে কাত হবে বা মাথা বাঁকাবে আর মুখ ফুলানো কিংবা নানান ধরনের ভঙ্গি করবে.চৈনিক ললনারা ছবি তুলার সময় চোখ বড় বড় করে তাকায় এবং হাতের আঙুলগুলো মুখের পাশে এমনভাবে প্লেস করে যেন গোটা মুখাবয়ব ফ্রেমে ভালো আসে. ছবির জন্য পোজ দেওয়া শেষে হেঁটে হেঁটে ডরমের দিকে ফিরছে আর পকেট থেক বের করা নোটবুকে চোখ বুলাচ্ছে.তার মধ্যে একটা অদ্ভুত ধরনের পাগলামী আছে; মন ছুঁয়ে যাওয়া গানের কলি লিখে রাখা,এটা কবিতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য.এই পাগলামীটা শুরু হয় পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্হায়,সেবার টাঙ্গাইলের সখিপুর,কালিহাতী সহ বড় একটা এরিয়াজুড়ে ঘুন্নিঝড় হয়,বহুত মানুষ হতাহত হয়.সিনেমা হল ভেঙ্গে ওর নিচে চাপা পড়ে অনেকে.বকুলের দাদার বাড়িও ঝড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়,খবর পেয়ে তার ফ্যামিলির লোকজন বাড়িত যায়,লগে সেও.এক বিদেশী সংস্হা একধরনের বিস্কুট সরবরাহ করে যার একটা খেয়ে এক গ্লাস পানি মেরে দিলেই ক্ষুধা মিটে যায়.কেমন যেন পাউডার জাতীয় হলেও স্বাদ একেবারে খারাপ না  রেডিওতে ঢাকা ‘ক’চ্যানেলে সেসময় সপ্তাহে একদিন রাতের বেলা ১ ঘন্টার জন্য ছায়াছবির গান হত.ঐদিনের ১টা গানের ৪টা কলি বিস্কুটের মোড়কের যে পাশটা সাদা কালার ছিল [অন্য পৃষ্ঠা ছিল সিলভার রঙা] উহাতে লিখার মধ্য দিয়ে তার এই পাগলামীর যাত্রা শুরু- “মন বলে গো………….. মন বলে গো জীবনে কভু তোমারই শুধু আমি হইবো ছায়া হয়ে তবু পাশে রইবো” পেটের মধ্যে চো চো করে ভোগের আভাস দিচ্ছে, ডরমে ফেরার সিদ্ধান্ত বাতিল করে কাবাবের দোকানের দিকে জোরশে হাঁটা দিল লাঞ্চের ভোজনের নিমিত্তে.বকুলের ক্ষুধা লাগলে শরীরটা কেমন যেন থর থর করে কাঁপে... মাথাটাও চিন চিন করে, খাবার চালান না করা পর্যন্ত শান্তি নাই. এখানকার ডাইনিং হল সহ ক্যাম্পাসের ভিতরে যতগুলো খাবার দোকান আছে সবগুলোতে ভাত রান্না হয় মেশিনে, পাতিলে চড়ানোর কারবার নাই. ট্রে তে চাল ও পানি রেখে মেশিনের সুইচ টিপে দিয়ে এবার নাঁকে তেল দিয়ে ঘুমারে বাবা! তলায় লেগে যাওয়া/পুড়ে ছাই হওয়া কিংবা ভাত চাল চাল তথা মাইজ থাকার কোন সম্ভাবনা নাই. কতজন লোকের জন্য রান্না করিত্তে হইবে ১০০... ২০০ নু প্রোবলেম, অল্প সময়েই রান্দন শ্যাস এই ভাতের মেশিনে. প্রবাসে যেসব পিএইচডি স্টুডেন্টরা সিঙ্গেল লাইফ লিড করে মাঝেমাঝে তাদেরও মুঞ্চায় ইস্! আমার যদি বৌ থাকতো তাহলে হয়ত সে মোর লাগি ভাত নিয়ে ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করতো, ফোন দিয়ে বলত “এই তুমি কোথায়,সেই কখন থেকে বসে আছি. খাবার যে ঠান্ডা হয়ে গেল, তোমার বুঝি ক্ষুধা লাগে নাহ” আহ !কতই না মধুর কথা,শুনতেই ভাল লাগে,পরাণডা জুড়াইয়া যায়. কয়জন যুগলই বা আর একইসঙ্গে একই ইউনিতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য আসে,যাদের বৃত্তির ফান্ডের পরিমাণ ভাল তারা অনায়াসে বৌকে নিয়ে আসতে পারলেও যারা খুব অল্প পয়সা পায় জাস্ট নিজে চলার মত এদের আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার নাই.যাদের মনের মানুষ দেশে আছে সেসব মেয়েরা জীবনসঙ্গিকে নিজের হাতের রান্না খাওয়াতে না পারলেও অন্তত ভাইবারে ভয়েস মেসেজ পাঠায় “জানু খাইছোছোছোছো, কি খাইছো ফেবুতে ছবি আপ দিয়ো” যেসব পিএইচডি পোলা স্বস্ত্রীকও থাকে নাহ কিংবা দেশেও কোন হৃদয়সঙ্গিনী নেই তাদের মা ছাড়া আর কেউ খাওয়ার খোঁজ নেয় নাহ, সব সময় মায়ের একই প্রশ্ন শুনতে শুনতে কখনও কখনও সন্তান বিরক্ত হয়ে যায়.”কি দিয়া ভাত খাইছস” উফরে উফরে বিরক্ত ভাব প্রকাশ করলেও এরমধ্যে আলাদা একটা শান্তি আছে. দুনিয়াত কিছু অভাগা আছে, পারিবারিক সমস্যার কারণে হয়ত মাসে একবারও ফোনে কথা হয় না কিন্তু নাড়ীর টানে ঠিকই ভিতরে ভিতরে পুড়ে. কাবাবের দোকানে ঢুকার সময় বকুল সেটার বাবুচ্চী কাম ওয়েটার মহিলাটিকে “লাউ-পান” বলে সম্মোধন করে. “লাউ-পান” বলতে বস্,গুরু বোঝায়; অনেক স্বামীও তাদের বৌকে আদর করে ডাকে. বকুল ৪টা দোকানের নিয়মিত কাস্টমার, কাবাবের দোকান ছাড়াও আছে নুডলস্ , পিৎজা ও সিচুয়ান শৈয়ে-চ্যু-য়্যু দোকান.ফোন করলেই এরা ডরমে এসে খাবার দিয়ে যায়. বৈদেশে আসার প্রথম ২ বছর নিজেই রান্না করে খেত, এরপর থেকে এতটাই ফেডআপ হইছে যে হাড়ি পাতিলে জং ধরে গেছে. কাবাবের দোকানটি যখন ওপেন করছে তখন থেকেই সে এর কাস্টমার,শুনতে কাবাব মনে হলেও আসলে এটা ভাত-মাংস খাবার.গোল চাকতির মধ্যে মুরগির মাংস ঘুরতে থাকে আর তিনদিক থেকে তাপ দেয়, এরপর উপরের লেয়ার থেকে একটু একটু করে কেটে নিয়ে কুচিকুচি আলু ভাজি, বেগুন আর সালাদ দিয়ে মিশিয়ে ভাতের লগে পরিবেশন করে. প্রথমদিনই দোকানী মহিলাটি জিগাইছিল, তোমার gf আছে! চৈনিকদের কালচার আমাদের থেকে ভিন্ন; প্রথম পরিচয়েই gf ,বয়স এবং চাকরীজীবি হলে বেতনের কথা জিগায় :p জীবনসঙ্গিনীর কথা জিগাইলেই বকুল বানিয়ে বানিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প বলে,এর পেছনে একটা মচেৎকার ঘটনা আছে.একদিন সব ফ্রেন্ডরা মিলে গল্প করছিল তখন ‘আর ইউ পম গানা’ দেশের এক পোলা কয়,”বকুল, r u virgin! আমি তোমার প্রতিবেশী অথচ কখনও তোমারে gf এর লগে দেখি নাহ. বকুল ভিমড়ি খাইয়া চিন্তা করে কবে যে কইয়া বহে,have u any physical problem :p অস্বস্তিকর প্রশ্ন এড়াতে সে সবাইকে gf প্রশ্নে মিথ্যা কথা বলে,এছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে তার মধ্যে মিথ্যা বলার অভ্যাস নাই বললেই চলে. ইডা যে ছুডুবেলা থনই তা নাহ,প্রাইমারী স্কুলে থাকাকালীন সময় কোচিংয়ে পরীক্ষার খাতার নম্বর বাড়িয়ে বাড়িয়ে ডাইরীতে উঠিয়ে ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয় হত.কয়েকদিন পর ধরা খেয়ে যায় এবং পরিচালক তাকে এমন বেত্তাঘাত করছিল যা কোচিংয়ের ইতিহাসে কোন স্যার কোন ছাত্ররে মারে নাই. ছেলেই কি আর মেয়েই কি! ফরেন স্টুডেন্টরা আড্ডা দেওয়ার সময় হঠাৎ করেই বলে উঠে, এখন সবাই জীবনের প্রথম চুম্বনের অনুভূতি নিয়ে বলবে, প্রথম শারীরিক মিলনের অভিজ্ঞতা ; কোন পজিশন বেশি পছন্দ করে! কিংবা আরও কিছু যাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় বলে সসন্তে নফ বা চৈনিক ভাষায় সি-চিবা থিয়েন-পি. আবার এমনও উদ্ভট প্রশ্ন আছে যেমন কার কোন পেশার লোকদের প্রতি fetish কাজ করে. কোন পোলা হয়ত বলে নার্স ,কোন মেয়ে হয়ত হোম মিস্ত্রী. অনেক সময় একটা মিথ্যা বলতে গিয়ে আরও অনেকগুলো মিথ্যা বলতে হয় এস্টাবলিশ করতে, বকুল এব্যাপারে খুবই পটু….ধরা খায় না. কত বছর বয়সে, উত্তরে ১৬ বছর বলতেই চাইনিজ ফ্রেন্ডরা আহ করে উঠেছে! আরে আমাদের সমাজে এমনও মেয়ে আছে যারা ১০ বছর বয়সেই দৈহিক মিলনের স্বক্ষমতা লাভ করে.তখন চৈনিকরা বলে,কি জানি বাপু…তোমরা তো আবার কামাসূত্রের দেশের লোক. কেউ হয়ত প্রশ্ন করে বসে,আচ্ছা ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজন কি কামাসূত্র ব্যাপারটা নিয়ে প্রাউড ফিল করে? পাবলিক প্লেসে এব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে শরম পাইলেও ভিতরে ভিতরে অনেকেই গর্বে গর্ভান্বিত হয় কেননা ক্লিওপেট্রার মিশরীয় সভ্যতা,ব্যাবিলনের উদ্যানের মেসোপটেমিয়া সভ্যতা,কুং-ফুর উদ্ভাবক চৈনিক সভ্যতা কিংবা আমাজান জঙ্গলের মায়া ইনকার রাজা-বাদশারা যেটা পারে নাই ভারতীয়রা সেটা করে দেখাই গেছে.বর্তমান সভ্য বিশ্বের এমন কোন জাতি গোষ্ঠী নাই যারা কামাসূত্রের নাম না জানে, ইউটিউব ই হোক আর চৈনিকদের youku হোক কামাসূত্র মুভির ভিজিটরের সংখ্যা কোটি কোটি. এখন অবধি টোটাল কতজনের পাণি গ্রহণ করেছে,এই প্রশ্নে পাশ্চাত্যের ওরা সত্য বলতে সাধারনত সংকোচ বোধ করে নাহ, সত্যি কথা বলে.কেউ হয়ত বলে, নট ভেরী মাচ only 32! এব্যাপারে এক ব্রিটিশ জেন্টেলম্যান তার ব্যাচেলর ইউনির হাউজমেটের গল্প শুনায়, সে নাকি ডায়রিতে সুন্দর করে টালি পদ্ধতিতে নাম্বারিং করে রাখে. এখন অবধি ৬৪০ হইছে,ইউনিতে পা দেওয়ার আগে ছিল ২০০,ব্যাচেলর লাইফে ২৪০ আর ২ বছরের জব লাইফে যোগ হইছে আরও ২০০.সে কারো সাথে একবারের বেশি বেডে যায় না! বিভিন্ন ধরনের সাইকোদের নিয়ে হলিউডের বানানো মুভিকে আপাতদৃষ্টিতে আজগুবি মনে হলেও সত্যি বলতে কি লেখকদের লেখা ঘটনাগুলি এই আচানক পৃথিবীর কোন না কোন সমাজে ঘটছে আর তাইতো পরিচালকরা sex addict এর মত মুভি বানায়. লাউ-পান মহিলা খাবার রেডি করে সামনে দিল,বকুল চপস্টিক দিয়ে খাওয়া শুরু করলো. সে ভাবে আর অবাক হয় প্রথম যখন আসলো কাঠি ধরতেই পারতো না আর এখন ৩টা বাদাম হরিজনটালী ধরে মুখে পুরতে পারে. এক টুকরা কাবাব মুখে দিতেই মাথাত একটা ভাবনা আসলো, আচ্ছা সব সময় দাম কত? বুঝাতে ‘তুঅ শাও ছিয়েন’বলি কিন্তু price শব্দের এক্সাট চাইনিজ কি? মোবাইলে ইনস্টল করা pleco ওপেন করল.এখানে বকুল ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে,জাস্ট প্রথম সেমিস্টারে pinyin সিস্টেম শিখছিল ক্লাসে. এম.এস.সি ও পিএইচডিদের সপ্তাহে ৪ঘন্টার একটা ক্লাস থাকে প্রথম সেমিস্টারে এছাড়া আর কোন চাইনিজ ক্লাস নাই বলে সে নিজে নিজেই শেখার চেষ্টা করে.তার খুব ইচ্ছা IETLS/TOEFL এর আদলে করা HSK পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার, HSK3পাশ করতে তেলাপোকার আঁকানো ছবির মত ৬০০ চৈনিক অক্ষর শিখতে হয়, HSK4 হলে ১২০০ আর HSK5 হলে ২৫০০, যারা চাইনিজ মিডিয়ামে ব্যাচেলর করে তাদের অবশ্যই HSK5 পাশ করতে হয়. খেতে খেতে পকেট ডায়রিতে পাতা উল্টাতে উল্টাতে যে গানটির কলিতে চোখ আটকে গেল- “তোর আঁচলে…… তোর আঁচলে মমতার-ই ছায়া চোখে সজল, ঐ মেঘ কাজল মায়া যে তোর প্রাণেরও দুলাল যেনো বাঁচে কোটি সাল” যেদিন এই চরণগুলি লিখেছিল সেদিন বকুলের বাবা চা ভর্তি কাপ তার মায়ের দিকে ফিক্কা মারছিল, যদিও সে অভ্যস্ত এরকম ঘটনা দেখতে কেননা প্রায়ই ঘটে. তবে সেদিন কেন জানি নাড়ীর টান ঐ পিচ্চি বকুলের মাথা হট করে দিছিল, জোর গলায় প্রতিবাদ জানায় এবং সঙ্গে সঙ্গে বাপ তার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে, ঘরে আর একটা শত্রু জন্ম নিছে আমার. এভাবেই তার প্রতিবাদ জানানো শুরু হয় নাড়ীর টানে. একদিন হয়ত গেছে দরজার ডাসা নিয়ে বাপরে মারতে আর একদিন দা নিয়ে. তৎক্ষণাৎ বকুলের ভাগ্যে জুটেছে লাথ্থি গুতা, একদম বিছানায় ফেলে পা দিয়ে পাড়াইছে. নাড়ীর টানে মানুষ পরিবারের সদস্যদের জন্য অনেক আত্নত্যাগ করে আবার এর কারনেই মেজাজ গরম হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে বলে অঘটন ঘটে. বকুলের বাপের সাথে মায়ের বণিবনা হয় না বিয়ের দিন থেকেই. রক্ষণশীল সমাজে জামাই-বৌয়ের মধ্যে শুরুর দিকে মহব্বত না থাকার অনেকগুলো কারনের মধ্যে আছে অসম যোগ্যতা, যৌতুকের লোভে কিংবা ছেলে আর আমগোর খোঁজ নেবে না এইভেবে উচ্চশিক্ষিত পোলারে জোর করে বিয়ে দেয় এক অল্প শিক্ষিত মাইয়ার লগে ছেলের অশিক্ষিত বা গরীব বাবা-মা; অনেক সময় কোন মেধাবী ছেলে শ্বশুড়ের টাকায় বিরাট ক্লাস পাশ দেয় কিন্তু বৌটা অশিক্ষিত. একটা অবাক করা বিষয় হল, এধরনের অনেক জুটির মধ্যে শেষ বয়সে গিয়ে এত মিল মহব্বত তৈরী হয়, চিন্তার বাইরে. কোথাও বেড়াতে গেছে, কেউ ভাল কিছু খেতে দিছে তখন বুড়োটা অল্পখানিক খাবার বুড়িটার জন্য নিয়ে আসে. কি মহব্বত! ভাবনাতেই রাজ্যের শান্তি. যে কোন কারনেই হোক বাবা-মায়ের কোন অবস্হাতেই উচিত না সন্তানের সামনে কাইজ্জা করা, শিশু সন্তানের মানসিক বিকাশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে, দুঃসহ স্মৃতিগুলো সে কোনদিন মুছে ফেলতে পারে না. সামাজিক সিস্টেমগুলোই দায়ী অসম যোগ্যতার অধিকারী দুজনে বিয়ের ঘটনার জন্য. এখানে মেয়েদের গৃহিণী হওয়ার ব্যাপারটাও অনেক সময় বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়. চাইনিজ মাইয়ারা যখন শুনে বকুলের মা একজন গৃহিণী তখন যেন ওরা আকাশ থেকে পড়ে! খুব অবাক হয়ে মন্তব্য করে তাহলে কি চলার জন্য যা খরচ সব তোমার বাবা দেয়! আরও বলে তোমরা ধনী, তোমার বাবা অনেক টাকা ইনকাম করে তাই তোমার মায়ের জব করার প্রয়োজন হয় না! বকুল ওদের এতো বলে, ভাই রে.....আমার বাপের সংসার চালাতে হইছে অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্হার মধ্য দিয়ে কিন্তু ওরা কিছুতেই বিশ্বাস করে না বরং উল্টা প্রশ্ন করে তাহলে তোমার মা জব করে নাই কেন???? বেশ কিছু চৈনিককে দেখা যায় খুব আফসোস করতে ইস!!! এরকম যদি হতে পারতাম, জব টব করতে হবে না, কোন প্রেসার নাই, খালি বইয়া বইয়া খাও! একথা সত্য গৃহিণীদের বাইরে কাজ করতে হয় না বলে বস্ নামক জমদূতের ঝারি খাওয়ার টেনশন নাই কিন্তু তারা সবাই কি স্বাধীনভাবে পয়সা খরচ করতে পারে! কয়জন গৃহিণীই বা আর মনের ইচ্ছামত জিনিস কিনতারে??? সমাজের নিয়মই হল যখন কেউ ফিনানসিয়ালি অন্যের উপর ডিপেন্ডেন্ট হয় তখন তাকে সমীহ করেই তার ইচ্ছানুযায়ী চলতে হয়, ছাত্র অবস্হায় ছেলে বাপের আদেশ অনুযায়ী চলে, নিজের খুশীমত পয়সা খরচ করতে পারে না. যখন জব করে তখন মন ভইরা পয়সা উড়াইতারে, আবার বৃদ্ধ বাপ পোলার কাছ থেকে পয়সা নিয়ে চলে বলে তখন সেও আর স্বাধীন থাকে না; ছেলের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে চলা বাপ পোলা/বৌমার একটু আধটু ঝারি খায় না এরকম ভাগ্যবান পিতা খুবই কম.ডিপেডেন্সির কারনেই সমাজের অধিকাংশ গৃহিণীই তাদের স্বামীর কথামত চলতে বাধ্য হয় বলে নিজের খুশিমত খরচ করতারে না, এমনও দেখা যায় স্বামীর পকেট থেকে টাকা চুরি করে তার বাবা-মায়ের জন্য এটা ওটা কিনে পাঠায়, গ্রামের মহিলাদের দেখা যায় স্বামীর অজান্তে চুপ করে খোলের ধান/মটকা থেকে চাল/গাছের ফল কিংবা বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ বিক্রি করে নিজের ইচ্ছাপূরণ করতে. অনেক গৃহিণী তাদের মনের ইচ্ছা মেটাতে পারলেও অনেকে পয়সা হাতে না পাওয়ায় একজোড়া মোটা সোনার বালা পড়ার খায়েস মেটাতে পারে না শুধুমাত্র স্বামী হাতে পয়সা দেয় না বলে. চাইনিজ মেয়েদের দেখা যায় নিজে কামাই করে বলে কারো ধার ধারে না, যখন যেটা খুশি করতে মন চায় সেটা করে, মনের রঙ্গিন ইচ্ছাগুলো বাস্তবে রুপ দিতে পারে. শুধুমাত্র সেসব গৃহিণীই ভাগ্যবান যাদের প্রাণপ্রিয় লক্ষী স্বামী বেতন পেয়ে পুরোটাই বউয়ের হাতে এনে দেয়, এরপর যখন যা লাগে বউয়ের কাছ থেকে নেয় আর কোন হিসাব চায় না, সে কোথায় কত টাকা কিভাবে খরচ করেছে. স্বামীর ইনকাম ভাল হলে বাড়িতে কাজের বুয়া রেখে বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে হিন্দি সিরিয়াল/ স্টার জলশায় "মা" সিরিয়ালে ঝিলিকের কষ্ট দেখে চোখের পানি ফেলে ! চীনা সমাজের দ্রুত উন্নতির কারন হল মোট শ্রমশক্তির ৫০% যারা কিনা মহিলা তাদের কেউই গৃহিণী নয়, ছেলেমেয়ে সবাই দেশের GDP বৃদ্ধিতে হাত লাগাচ্ছে. আসলে পৃথিবীটা জটিল একখান জায়গা একটা পেলে আর একটা পাওয়া যায় না, গৃহিণী হিসেবে আরাম ভোগ করতে চাইলে, বউয়ের হাতে ৩ বেলা গরম ভাত কিংবা মায়ের আচলের তলায় সন্তানের বড় হওয়ার জন্য মহিলাদের গৃহিণী হিসেবে দেখতে চাইলে দেশের উন্নতি মন্হর হবে. তয় কারো কারো মতে আমাদের সিস্টেমই ভালো, 'নুন আনতে পান্তা ফুরালেও' সুখি পরিবার, মা তার বাচ্চাকে মনের মত করে মানুষ করতে পারে, একইসঙ্গে রিলিজিয়াস ব্যাপারও আছে. কোনটা ভাল এটা জেনারালাইজড্ ভাবে বলা মুশকিল; অনেক পরিবারের পুরুষরা তার স্ত্রীর মন বুঝার চেষ্টা করেন, বৌয়ের চাহিদা অনুযায়ী হাতে পয়সা দেন আবার অনেক স্বামী আছেন যারা অনেক বাজে শব্দ ব্যবহার করেন, এমনও বলেন- পয়সা কামানোর যে কি ঠেলা সেইটা ঘরে বইয়া বইয়া টিভি দেইখা কোথ থেকে বুঝবি, পয়সা চাইলেই বৌকে মারধর করে, এমন দুঃখী গৃহিণীর সংখ্যাও সমাজে নেহায়েত কম নয়.কোন মেয়ের স্বামী কেমন হবে সেটা তো বিয়ের আগেই বলা যাবে না; তাই যেটা মনে হয়, প্রত্যেক মেয়ের ই লেখাপড়া করা উচিত এবং একইসঙ্গে চাকুরী ,বিয়ের পরে স্বামীর মতিগতি দেখে পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত চাকুরী কন্টিনিউ করবে নাকি ছেড়ে দিবে, আফটার অল পরিবারে সুখ-শান্তিটাই আসল ; যদি ছেড়েও দেয় সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে জামাইয়ের হাবভাব চেঞ্চ হলে পুনরায় অন্তত ছোটোখাটো একটা জব ম্যানেজ করতে পারবে. দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতির যুগে একজনের ইনকাম দিয়ে চলা আসলেই কষ্টকর, সহযোগী পেলে অনেক পুরুষই হাফছেড়ে বাঁচে. যাই হোক স্বামী-স্ত্রী, সন্তানরা ও তাদের অভিভাবকরা যদি মনে করেন জবের দরকার নেই এমনিতেই তারা সুখে আছে সেক্ষেত্রে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবে,সবার উপরে সংসারের সুখ-শান্তি বলে কথা. বকুলের পাশে বসা একজনের মোবাইলে একটি গানের রিংটোন বেজে উঠল, সুর অতি পরিচিত এবং কয়েকটি কলি তার নোটবুকে লেখাও আছে- “Cause I only feel alive When I dream at night Even though she is not real, it’s all right Cause I only feel alive When I dream at night; Every move that she makes holds my eyes I had never known what’s right for me Till the night she opened my heart And set me free” গপ্প চলবে…………. বিদ্রঃ গপ্পের সব চরিত্র কাল্পনিক তাই কারো সাথে আংশিক মিলে গেলে সেজন্য আমি দায়ী দায়ী নহি , এই বলে রাখলুম
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.