আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালেদার বক্তব্য মিথ্যাচারে ভরপুর : আওয়ামী 

সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যাচারে ভরা বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এটা উপলব্ধি করেই খালেদা জিয়া এর দায় সরকারের ওপর চাপাতে চাইছেন। গতকাল সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভূমি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে দলের নেতাদের নিয়ে টেলিভিশনে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনও দেখেন তিনি।

আমির হোসেন আমু বলেন, বিরোধী দল আন্দোলনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সে ব্যাপারে আমরা এবং দেশের মানুষ সজাগ, সচেতন। তা করার কোনো সুযোগ নেই। করতেও দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, দেরিতে হলেও খালেদা জিয়া ভুল বুঝেছেন। আমরা অনুরোধ করব উনার এ উপলব্ধি থেকেই উনি যেন এসব কাজ (নাশকতা) থেকে বিরত থাকেন, এগুলো বন্ধ করেন। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে খালেদা জিয়া আন্দোলন করছেন। লংমার্চে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। তার প্রতিটি আন্দোলনই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য। আমরা আশা করেছিলাম তিনি পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নেওয়া প্রস্তাবের নিন্দা করবেন। তা করেননি। এ বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি (খালেদা) যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করছেন। দেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। এ জন্য গণহত্যা চালাচ্ছেন। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে গেছেন। বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে আমু বলেন, জেগে থেকে ঘুমালে কেউ জাগাতে পারবে না। জামায়াত নির্বাচন করতে পারছে না বলেই তাদের দোসর হিসেবে তিনিও (খালেদা) নির্বাচনে আসবেন না। আমু বলেন, সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন জনগণকে উপহার দেব। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা (বিএনপি) জিতল, কোনো উচ্চবাচ্য তো হলো না। তাহলে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অসুবিধা কোথায়? আমির হোসেন আমু বলেন, তত্ত্বাবধায়কের দরকার নেই কারণ আমরা মিথ্যা ভোটার করিনি। আমরা চুরি করেও ধরা পড়িনি। কেন তিনি (খালেদা জিয়া) এ দাবি করছেন আমাদের বোধগম্য নয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রহসন কি না, একদলীয় কি না তা নির্বাচনের পরেই বোঝা যাবে। কে নির্বাচনে এলো না এলো এর জন্য নির্বাচন প্রহসনের হতে পারে না। ভূমিমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা নাকি গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন উনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার কেন? আজকে কেন এ সরকারের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক হবে? আমরা কি ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করেছি? উনারা নির্বাচনে চুরি করে ধরা খেয়ে তত্ত্বাবধায়ক দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমরা নির্বাচনে চুরি করিনি, তত্ত্বাবধায়ক দিতে যাব কেন? আমরা তত্ত্বাবধায়ক দিতে যাব না। উনার (বেগম জিয়া) বক্তব্য মিথ্যাচার, প্রতিটি বক্তব্য উনার নিজের বিরুদ্ধেই যায়। নির্বাচন প্রহসনের নয়, নির্বাচনে ১২টি দল এসেছে। এ নির্বাচনকে প্রহসনের বলা যাবে না। সংবিধান সংশোধন নিয়ে বিরোধীদীলয় নেতার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, সংশোধনের সময় উনাদের প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছিল উনারা প্রতিনিধি দেননি। আমরা ১১ মাস কাজ করেছিলাম। উনারা কেন ১১ মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন কমিটিতে এলেন না। পরবর্তীতে যখন সংবিধান সংসদে পাস হলো তখনো উনারা সংসদে এলেন না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নূহ-উল-আলম লেনিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, ডা. বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, মৃণালকান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।

জনগণই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে : আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এ নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না। এতে বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষক দলও লাগবে না। তারা না এলেও সমস্যা নেই। দেশের জনগণই এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।

বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ১৪ দল আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে গতকাল জোটের নেতারা এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়া, নুরুর রহমান সেলিম, ড. ওয়াজেদুল ইসলাম, ডা. অসিত বরুণ রায়, মাহবুব-উল আলম হানিফ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা। আমির হোসেন আমু বলেন, খালেদা জিয়া ধরা পড়ে গেছেন। তিনি যে যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, কাদের মোল্লার ফাঁসিতে পাকিস্তানের নিন্দা প্রস্তাবের পর তার নিশ্চুপ থাকায় তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদের সহযোগী হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ভারতের নির্বাচনে কোনো দেশের পর্যবেক্ষক লাগে না, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের নির্বাচনেও পর্যবেক্ষক (অবজারভার) যায় না। আমাদের দেশেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কারও পর্যবেক্ষণের দরকার নেই। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। সুরঞ্জিত বলেন, বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না। এসব বাইরের লোকদের দিয়ে চাপ দিয়ে কোনো লাভ হবে না। মঞ্চে উপস্থিত রাশেদ খান মেননসহ তোফায়েল আহমেদের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দেখেন নাই তারা মন্ত্রিত্ব নিতে চায় নাই। কিন্তু তাদের নেওয়াইয়া ছাড়ছে। এটার নাম শেখ হাসিনা।' ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন নেই। জনগণই যথেষ্ট। জনগণই পর্যবেক্ষণ করবে। আপনাদের দরকার নেই। বিদেশি তৎপরতার সমালোচনা করে মেনন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনাদের কিসের এত তৎপরতা। জামায়াতের সঙ্গে তাদের (বিদেশিদের) কিসের সংলাপ। নির্বাচনকালীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছেন। তাই তিনি জঙ্গির ট্রেনে উঠেছেন। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'সন্ত্রাস, গাড়ি পোড়ানো ও নাশকতা বন্ধ করুন। সমঝোতা চাইলে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়ুন, সন্ত্রাস বর্জন করুন। সমঝোতা চাইলে সংবিধান মেনে সংলাপে বসুন। না হয় জঙ্গিবাদীদের ও আপনার পরিণতি একই হবে। এ লড়াই এসপার-ওসপারের লড়াই।

আপনি আপনার পথ ঠিক করুন। আপনি বাংলাদেশের ট্রেন না ধরলে আপনাকে ট্রেনে আফগানিস্তান বা পাকিস্তান পাঠিয়ে দেওয়া হবে। গায়ের জোরে সন্ত্রাস চালিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যায় না।

প্রতিবাদ সমাবেশে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করলে ৫ জানুয়ারির পর বিএনপিকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। সমাবেশে তিনি আরও বলেন, ৫ জানুয়ারির পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো জনগণের সরকার গঠন করা হবে। সমাবেশ শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে নূর হোসেন চত্বর হয়ে মুক্তাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.