আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গলির নাম ৪/এ, ধানমণ্ডি, ঢাকা (জীবনের গল্প::পর্ব-০১)

‘’Love killed my soul, My body seeks revenge’’

কুয়াশায় আচ্ছন্ন বিকেল। বারান্দার দাড়িয়ে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকি ২০ গজ দুরের একটি সাদামাটা বিল্ডিংয়ের দিকে। নিজের অজান্তে চোখের কোনে জল আসে। মন ডুবে যায় বিষন্নতার অন্ধকারে। সরু গলিটাকে আজকাল অনেকটা নিষ্প্রাণ আর নি:স্ব মনে হয়।

গলিটার বুক চিরে হেটে গেলে হৃদয় মাঝে হাহাকার জেগে ওঠে। এতদিনের চেনা গলিটাকে খুব অচেনা মনে হয়।

এই গলিটার নাম ৪/এ,ধানমণ্ডি, ঢাকা। এ গলিতেই আমার বসবাস। আমার ময়নাপাখির গলিও ছিল এটি।

আজ সে এ গলিতে নেই। আমার প্রতি অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গেছে সে। অথচ এই গলিতে তার হাত ধরেই এসেছিলাম। এবার যেতে হবে একাকী,বুকভরা দু:খ আর কষ্ট নিয়ে।


মাঝে মাঝে ভাবি,মেয়েটি আমাকে কখনো ভালবাসেনি।

শুধু করুণা করেছে। আর সহানুভূতি কিংবা করুণা থেকে যে সম্পর্কের সূচনা, তা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। একসঙ্গে আমাদের বেশিদিন থাকা হয়ে উঠেনি। কেন হয়নি সেটা নিয়ে এখন আর ভাবতে ভাল লাগে না। বয়সের ব্যবধান খুব একটা বেশি না হলেও মনের দিক থেকে দুজন ছিলাম খুবই কাছের।

ঘোড়দৌড়ের নিসঙ্গ জীবনের বিষণ্ণতায় ওর ফোন কিংবা মিসকল ছিল আমার ভালোলাগার একমাত্র সম্বল। খুব আদর করে নামি দিয়েছিলাম ময়নাপাখি। কতদিন হয়ে গেল তাকে সে নামে ডাকা হয়ে ওঠেনা। যে ময়নাপাখির জন্য প্রতিদিন ৩০ টাকা রিচার্জ করতাম । কয়েকমাস হয়ে গেলে সেই সিমে এখন আর কোন টাকা রিচার্জ হয়না।

অপরাটের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লোভনীয় অফারের এসএসএম পাঠায়। সে অফার আমার নজর কাড়েনা। অপারেটর জানেনা,আমার ময়নাপাখি আমার কাছ থেকে অনেক দুরে চলে গেছে। যে সিমে রাত বিরাতে কথা বলতাম তার সেই সিমটিও এখন বন্ধ।

যেদিন মধ্যরাতে প্রথম বর্ষার চোখের মুখোমুখি হয়েছিলাম হাজারো প্রশ্ন ছিল তার চোখে।

এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি তখন প্রস্তুত ছিলাম না। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত জীবনের কয়েকটি মাস কেটেছিল দুজনার আড্ডা, গল্প আর মান,অভিমান দিয়ে। সময়গুলো কিভাবে কেটে গেলে টেরই পাইনি। ব্যস্ত শহরে রিক্সার হুড লাগিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরে বেড়ানো। পার্ক কিংবা চায়ের দোকানে বসে একটু গল্প করা আরো কত কিঁ!!!

মেয়েটি এখন আমাকে প্রচণ্ড ঘৃর্ণা করে।

কেন করে তার কারণও অনেক। আমাকে তার সহ্য হয়না। একদিন বর্ষাকে দেখেছি রিকশার হুড খুলে গলির সরু পথ ধরে এগিয়ে যেতে। যে চোখের মায়াজালে আমাকে আকড়ে রেখেছিল সে চোখে আজ বড় ক্লান্ত,বিধ্বস্ত ,বির্মষ। অসংখ্য নির্ঘুম রাত তার চোখের লাবণ্যতাকে ম্লান করে দিয়েছে।

চোখের সামনে দিয়ে রিকশাটি স্বপ্লগতিতে চলে গেল। আমি পিছনে ফিরে একপলকে তাকিয়ে রইলাম রিকশাটির দিকে। মনে মনে ভাবলাম মানুষের জীবন হয়ত এমনি। অনকে গতীশীল। বহমান নদীর মত।

দুজন একসময় খুব কাছের ছিলাম। কত রাত কত বিকেল একসঙ্গে কাটিয়েছি। সময়ের স্রোতে আজ আবার দুজন অচেনা হয়ে গেলাম।

দীর্ঘদিন একজন মানুষের সঙ্গে যখন দেহমন অভ্যস্থ হয়ে যায় সে মানুষটি চলে গেলে বিষাদে ভরে ওঠে প্রতিটা জীবন। প্রতিটা অনুভূতির সঙ্গে যে মানুষটি জড়িয়ে ছিল, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও কি সেই অনুভূতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? আসলে স্মৃতিগুলো সবসময় খুব যন্ত্রণার, বড়ই করুণ!!!!

মাঝে মাঝে মনে পড়ে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো কিংবা সোনালি বিকেলের ফ্রেমবন্দি মুহূর্তগুলো।

কখনো কখনো এটি হজম করা সহজ আবার কখনো খুব কষ্টদায়ক হয়ে যায়। জীবনের তীব্র ব্যস্ততার মাঝেও কোন এক অসময়ে মনের দরজায় ঢুকে পরে হারানো সময়ের ডাক। কর্ম ব্যস্ততার চাপেও মনের এক কোণ জুড়ে থাকে আমার হারিয়ে যাওয়া ময়নাপাখি। জানি,একদিন হয়ত অন্য কোন নারীর বুকে নিশ্বাস পড়বে আমার। কিন্তু যে ময়নাপাখি চলে গেছে আমাকে অনেকটা নিসঙ্গ আর অতৃপ্ত করে তাকে ভুলি কি করে? পথ চলতে চলতে যদি কখনো দেখা হয়ে যায় চেনা কোন পথে,সে কি চিনবে আমায়? ডাকবে কি সেই চেনা নামটি ধরে ? নাকি পথের অচেনা পথিক ভেবে চলে যাবে দূরে।

যদি হঠাৎ কখনো দুজন মুখোমুখি হই কোন পার্ক কিংবা রেস্তোরায়!!কি বলে ডাকব তাকে???

পৌষের রাত। ঝির ঝির করে প্রতিদিন তুষার ঝড়ে পড়ে জানালা কাচ গড়িয়ে । আমি তাকি তাকিয়ে গলির শেষ দিকটায়,যতদুর চোখ যায়। গলির শেষ প্রান্তের বাড়িটা কেমন যেন অভিমানী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাতের বেলায় ফাঁকা ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় সরু গলিটাকে বড় নিষ্প্রাণ আর বিষণ্ণ লাগে।

মনে হয়,গলিটা আমাকে ক্রমশ গ্রাস করতে চাইছে। এভাবে রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। তুষারে ঢাকা পড়তে থাকে বাইরের সবকিছু। ব্যস্ত শহরটাও ক্রমশ শান্ত হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে প্রকৃতির সবাই ।

আশপাশের ভবনগুলোর ভেতরে জলতে থাকা বাতিগুলোও নিভে যায়। কিন্তু আমার চোখে ঘুম আসে না। আমি আর ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন বাতিগুলো প্রতিরাত জেগে থাকি অজানা কিছুর অপেক্ষায়……!!!

উৎসর্গ: আমার ময়নাপাখিকে। কতদিন হয়ে গেল তাকে এই নামে আর ডাকা হয়না।



সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.