আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে বিজয় হতাশার...

মুক্ত মন....সারাক্ষণ

.....আঁধার নামার সাথে সাথে কুয়াশাও নামতে শুরু করেছে।
হাত পা ছড়িয়ে মাঝারি গড়নের শরীরখানা চেয়ারের সাথে পুরোপুরি এলিয়ে দিয়ে একাকী বসে আছে আনাস। আনাস ইবনে আব্দুল্লাহ। ছাত্রত্বহীন একজন তরুণ ছাত্রনেতা।
এভাবে সঙ্গী-সাথী বিহীন নিস্তব্ধ হয়ে আনাসের একাকী বসে থাকায় মনে মায়া জন্মালো 'মায়ের দোয়া' রেস্টুরেন্ট-এর ম্যানেজার সালেহ আহমেদের।


ক'দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় করুণ অবস্থা তার। বেচা-বিক্রি একপ্রকার নেই বললেই চলে। সন্ধ্যার পর পর যেখানে কাস্টমারের ভিড় সামলানোই দায় ছিল, সেই মায়ের দোয়ায় এখন মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা। সন্ধ্যার পর হতে এ যাবত আনাস ব্যতীত দ্বিতীয় কোনও কাস্টমারের মুখ-দর্শন হয়নি আজ।
চেয়ার ছেড়ে আলতো পায়ে হাসি হাসি মুখ করে কাছে এগিয়ে এলেন সালেহ আহমেদ।


"ভাইজানের শরীলডা খারাপ নি?" মোলায়েম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন সালেহ আহমেদ।
বুজে থাকা চোখ দুটো হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে খানিকটা কসলে নিল আনাস। ফোস করে ভেতর থেকে বড় মাপের একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তার। এক দৃষ্টিতে খানিক সময় তাকিয়ে রইল সালেহ আহমেদের দিকে। দৃষ্টিজুড়ে রাজ্যের হতাশা আর বিমর্ষতা।


"একটা বেনসন আনাও। " সাহেলহ আহমেদকে উদ্দেশ করে বলল আনাস।

এক দৌড়ে মায়ের দোয়ার পাশেই জুলমতের পানের দোকানে ছুটে গেলেন সালেহ আহমেদ। জুলমতের পানের দোকানেরও একই অবস্থা। কাস্টমার বিহীন দোকানে জবুথবু হয়ে চাদর পেছিয়ে বসে আছে জুলমত।

দোকানের সামনে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছে জুলমতের লাল রঙের মাদি কুকুরটা।
"একটা বেনসন দাও। আনাস ভাইয়ের জন্য। বেচারা একলা একলা বইসা আছে। কেমুন জানি মনমরা হইয়া গেছে গা।

" জুলমতকে লক্ষ্য করে বললেন সালেহ আহমেদ।
আনাসের নাম শুনাতে দেরি করল না জুলমত। সিগারেটের দাম চাওয়ারও সাহস হইল না তার।
দ্রুতপায়ে মায়ের দোয়ায় ফিরে এসে বেনসনটা আনাসের হাতে দিলেন সালেহ আহমেদ।
"আগুন দাও।

" সিগারেটটা মুখে পুরতে পুরতে বলল আনাস।
ড্রয়ার থেকে দেয়াশলাইটা নিয়ে নিজ হাতে আনাসের মুখে লেগে থাকা বেনসনের মাথায় আগুন লাগিয়ে দিলেন সালেহ আহমেদ।

খুব আয়েসি ভঙ্গিতে কুন্ডলি পাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া শূন্যে ভাসিয়ে দিচ্ছে আনাস।
"মনডা ভালো নাই ভাই, মনডা ভালো নাই। " সিগারেটে কষে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল আনাস।


আজ অবদি আনাসের এতটা হতাশা ভড়া কণ্ঠ শুনেন নি সালেহ আহমেদ।
বুকের ভেতরটা আবেগে হু হু করে উঠল সালেহ আহমেদের।
এমন সময় মায়ের দোয়ায় প্রবেশ করল তপু, তার পেছন পেছন রাশেদ। আনাসের অতি নিকটের দুই ছোট ভাই।
"স্লামালাইকুম ভাই।

" দুজনই একত্রে সালাম দিল আনাসকে।
মুঠোফোনের বাটন টিপতে টিপতে ইশারায় সালামের জবাব দিল আনাস।
অনেক্ষণ ধরে কাকে যেন একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে- কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মিলছে না তার।
বাহিরে কুয়াশার প্রকোপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। পৌষের মাঝামাঝি এসে ছোট খাটো একটা শৈত্য প্রবাহ বয়ে চলছে পুরো দেশের উপর দিয়ে।

ক'দিন ধরে তাপমাত্রা বারো তেরোতে খেলা করছে।

অবশেষে মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে সাড়া পেল আনাস।
"স্লামালাইকুম ভাই। " অপর প্রান্তের ব্যক্তিটিকে সালাম দিল আনাস।
"হুম আনাস, পরে ফোন করো একটু ব্যস্ত আছি।

" লাইন কেটে গেল অপরপ্রান্তের।
মুঠোফোনটিকে ধড়াম করে টেবিলের উপর এক প্রকার আছাড় মারল আনাস। বিড় বিড় করে মনে মনে "শালা বাইনচোদ" বলে একটা গালিও দিল সে।
"নমিনেশন পেপার কেনার আগে শালা দিন রাইত ফোন করতে করতে অস্থির বানাইয়া ফালাইছে, আর আইজ কোনো খরচ-মরচ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পাশ কইরা ভাব বাড়ছে শালার। " এক প্রকার চিৎকার করেই কথাগুলো বলল আনাস।


তার বলা কথাগুলো মায়ের দোয়ার চার দেয়ালে আঘাত খেয়ে প্রতিধ্বনির মতো খেলে গেল কিছু সময়।
"তিনজনরে তিন কাপ চা দেই ভাই?" দরদমাখা কণ্ঠে বললেন সালেহ আহমেদ।
"নাহ থাক। আইজ যাইগা মন মেজাজ ভালো নাই। "

চাবির রিং ঘুড়াতে ঘুড়াতে রেস্টুরেন্ট হতে বের হয়ে মোটর সাইকেল র্স্টাট করল আনাস।

তার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো তুপু ও রাশেদ। তাদের মনটাও ইদানীং ভালো নেই।
আনাসের পেছনে ওঠে বসল ওরা দুজন।

তপু ও রাশেদকে সাথে নিয়ে চোখের নিমিষে পৌষের ঘন কুয়াশায় মিলিয়ে গেল আনাস ও তার মোটর সাইকেল।
সালেহ আহমেদ অবাক চোখে আনাসের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন.....বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা রইল না তার।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.