আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

যশোর শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১২ কিলোমিটার গেলেই সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি ইউনিয়নের আমবটতলা এলাকা। আর এখানেই আড়াই সহস্রাধিক জ্ঞান সাধকের নিত্য পদচারণা। ৩৫ একর জমির ওপর পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, ৫০০ ছাত্র এবং ৫০০ ছাত্রীর জন্য আলাদা দুটি পাঁচতলাবিশিষ্ট হল, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ডরমেটরি, ক্যাফেটেরিয়া, মসজিদ, লাইব্রেরি_ সব কিছুতেই আধুনিক ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। এটিই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রদানের নবীনতম শিক্ষালয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সাল থেকেই।

সে বছরই প্রথম চারটি বিষয়ে ২০০ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি অনুষদে ১৬টি বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এখানে এমন কিছু বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে, যা বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস অনুসরণ করে ওই বিষয়গুলো সংযোজন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা যেন বেকার না থাকে, তারা যেন দেশে-বিদেশে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে, সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি এখনো অপরাজনীতিমুক্ত রয়েছে। বর্তমানে জীব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের অধীনে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়ো-সায়েন্স বিভাগ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগ, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদে নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগ এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি অনুষদের অধীনে কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কেমিকৌশল বিভাগ এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফিজিক্যাল এডুকেশন, ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ইথিক্যাল স্টাডিস অনুষদের অধীনে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ এবং ইংরেজি বিভাগ, বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগ এবং গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগ চালু রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই নার্সিং সায়েন্স, টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার টেকনোলজি, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংসহ যুগের চাহিদা অনুযায়ী আরও অনেক বিষয় চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো যখন ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকও ছিলেন না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক এনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিচালনা করা হয়।

বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের তত্ত্বাবধানে ১৬টি বিভাগে ৮৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া আছেন ৪১ জন কর্মকর্তা ও ১০৯ জন কর্মচারী। শুরুতে কোনো ভৌত অবকাঠামো না থাকায় যশোর শহরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হতো। খুব দ্রুত একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে ২০০৯ সালের ১০ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, ৫০০ ছাত্রের জন্য পাঁচতলাবিশিষ্ট শহীদ মশিয়ুর রহমান হল, ৫০০ ছাত্রীর জন্য পাঁচতলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল, পাঁচতলা প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের থাকার জন্য ডরমেটরি, উপাচার্যের বাসভবন, ক্যাফেটেরিয়া, সুরম্য মসজিদ, ২০ হাজারেরও বেশি বই, থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালসমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে।

এ ছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক ল্যাব সুবিধা, ক্রীড়া সরঞ্জামাদিসহ প্রশস্ত খেলার মাঠ, ২২টি ছোট ও একটি বড় পুকুর, নিজস্ব দুজন ডাক্তারের পরিচালনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অগ্রণী ব্যাংকের শাখা, পোস্ট অফিস, সাইবার ক্যাফে, নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, পাম্প হাউস প্রভৃতি। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীলতার বিকাশের পথ প্রশস্ত রাখা হয়েছে এখানে। শারীরিক শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে বিভিন্ন আন্তঃসেমিস্টার/ আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্ট, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১৭টি স্বর্ণ, চারটি রৌপ্য ও পাঁচটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় যবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নাট্য, সাংস্কৃতিক ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, ব্লাড ডোনেশন ক্লাবসহ আরও কয়েকটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সংগঠন রয়েছে।

২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের চার বছরের অনার্স শিক্ষাক্রম শেষে ২০১৩ সালে ১০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। নবীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর চার বছরের মাথায় প্রথম সমাবর্তন করা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবদুস সাত্তার এ উচ্চ বিদ্যাপীঠ সম্পর্কে বলেন, বিশ্বের সব উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিষয়টি থাকলেও আমাদের দেশে তা ছিল না। আমরাই প্রথম যবিপ্রবিতে বিষয়টি চালু করি। এ ছাড়া, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংসহ কয়েকটি বিষয় বাংলাদেশে আমরাই প্রথম শুরু করেছি।

যবিপ্রবিতে এ ধরনের আরও কিছু বিষয় চালু করার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তারা নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও প্রসারের মাধ্যমে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।

* সাইফুল ইসলাম, যশোর

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।